somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় শেখ হাসিনা সমীপেষু : এই প্রজন্ম ভয়ংকর, একেকটা আগুনের ফুলকি, দয়া করে গ্যাস ইস্যুতে এদেরকে আপনার মুখোমুখি করবেন না

০২ রা জুলাই, ২০১১ সকাল ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় শেখ হাসিনা, জানি না আপনি কিংবা আপনার অতীব বিজ্ঞ উপদেষ্টাদের কেউ এই লেখা পড়বেন কিনা। আপনার তো এই সমস্ত কাজকর্ম করে দেয়ার জন্য অনেক পার্সোনাল স্টাফ থাকার কথা, আমি নিজেকে ব্যাপক সৌভাগ্যবান মনে করব, যদি তাদের কেউও এই লেখাটি পড়ে আপনার কানে তোলে।

প্রিয় বঙ্গবন্ধু তনয়া, আপনি তখন সংসদ ভবন এলাকার সাব-জেলে বন্দী, খালেদা জিয়াও তাই। তখন উভয় দলেরই হাতে গোনা সামান্য কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী প্রকাশ্য ছিলেন। দেশ চালানোর ক্ষমতা ছিল একটি অনির্বাচিত এবং কিছু ক্ষেত্রে অযাচিত একটি গোষ্ঠীর হাতে। যদিও সেই অযাচিত গোষ্ঠী আপনাদের তাবত অস্বস্তির কারণ হয়েছে তবু কি কারণে- সাধারণ মানুষ, যারা রাজনীতি বোঝে না তাদের বৃহত্তম অংশ সেই অযাচিত গোষ্ঠীর আমলে সুখী ছিল, মানুষের মনে সাহস ছিল, আত্মবিশ্বাস ছিল। এটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নাই- তখন টুকটাক ছিনতাই, চাঁদাবাজি, লুণ্ঠন, জবরদখল ইত্যাদি খুচরা অন্যায় কাজ আর্মির ভয়ে অনেক কমে গিয়েছিল, ফলে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে ছিল। অন্তত রাজনীতিকে ভর করে বেড়ে ওঠা যাবতীয় সন্ত্রাস থেকে দেশের মানুষ মুক্ত ছিল, এমন পরিবেশে মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে যায়। সেরকম প্রত্যাশার একটি হচ্ছে- যুদ্ধাপরাধের বিচার।

তখন সবেমাত্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম সংগঠিত হচ্ছে। এমনি এক সময় আমরা বন্ধু-বান্ধব প্রতিবাদ হিসেবে বুকে- ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই’ লিখে ঘুরে বেড়ানো শুরু করলাম। এক দুই তিন এমন করে আমাদের হাজার হাজার বন্ধু-বান্ধব সেই লেখা বুকে ধারণ করেছে। আরও হাত, আরও চিন্তা যোগ হয়ে সেই হাজার এরপর বিদ্যুৎ গতিতে লাখ হয়েছে, লাখ ছাড়িয়ে কোটি হয়েছে, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে হয়েছে বিশ্বময়। আপনার দল বাধ্য হয়েছে বিষয়টিকে নির্বাচনী অঙ্গীকার হিসেবে রাখতে এবং তারপরের ফলাফল তো আপনি সবচেয়ে ভালো জানেন। যে জামায়াত যুদ্ধাপরাধের দায়ে সবচেয়ে বেশী অভিযুক্ত তাদের নির্বাচনে ভরা ডুবি ঘটেছে অথচ তার আগের নির্বাচনেও অবস্থা তেমন ছিল না। শুধুমাত্র জামায়াতের শরিক হওয়ার কারণে বি.এন.পি কেও এই বিষয়ে অনেক জায়গায় নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে।

ডিয়ার ডটার অব পিস, আপনি নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন আজকের প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই আওয়াজটা না তুললে আপনাদের জন্য অনেক কিছুই অনেক কঠিন ছিল। আপনার দল ও জোটকে মানুষ বিপুল পরিমাণে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, সেই সুবাদে আপনারা এখন যেমন খুশি সংবিধান বদলে দিতে পারেন। আজকের প্রজন্ম হয়ত আপনার মতো অত্তবড় দেশপ্রেমিক না, আপনি সরকার প্রধান, বঙ্গবন্ধু তনয়া, ডটার অব পিস, নিঃসন্দেহে পারিবারিকভাবেই আপনার দেশপ্রেম বেশী। তবু এই প্রজন্ম কোনভাবেই মানতে পারছে না আমাদের গ্যাসের ৭৭.৫% কেন কনকো-ফিলিপস পাবে? আমাদের ২২.৫% গ্যাস আনতে আমাদের যে ২৮০ কিলোমিটার পাইপলাইন করা লাগবে তা কেন কনকো-ফিলিপস করে দেবে না? কেনইবা চুক্তিতে গ্যাস রফতানির সুযোগ রাখা হল? কনকো-ফিলিপস যদি আমাদের গ্যাস ক্ষেত্রের ক্ষতি করে তাহলে আমরা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাব না, কারণ আমরাই ‘অদক্ষতা’ শব্দটি বাদ দিয়েছি, কেন বাদ দিলাম? কনকো-ফিলিপস আসলে তার পিছু পিছু মার্কিন নৌ-বহর আসবে, এসেই অভ্যাসবশত একটা ঘোঁট পাকানোর তাল করবে, তখন সেটা কিভাবে সামলানো যাবে? কনকো-ফিলিপস ছাড়া কি পৃথিবীতে আর যোগ্য প্রতিষ্ঠান নেই যারা আরও সহজ শর্তে গ্যাস তুলে দেবে? কাউকে একছত্র ভাবে না দিয়ে, লোকজন ভাড়া করে কি আমাদের বাপেক্স কাজটা করতে পারত না?

জননেত্রি শেখ হাসিনা, আপনার একজন ডক্টরেট ডিগ্রীধারী সহকর্মী সম্প্রতি মহান সংসদে দাঁড়িয়ে যে ভাষায় তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির লোকজনের সমালোচনা করেছে তা কোনও শিক্ষিত মানুষ করতে পারে না। তাহলে কি আমরা সত্যিকারের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারছি না? সরকার প্রত্যেক বছর শিক্ষা খাতে যে বিপুল পরিমাণে খরচ করছে তার অধিকাংশই বিফলে যাচ্ছে? এই সমস্ত বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের চিন্তার শেষ নাই, তারা মনে করে আপনার মন্ত্রীপরিষদের বিরাট একটা অংশ ডাল-ভাত গোছের, ডাল-ভাত মন্ত্রীরা মাঝে মধেই এমন সব কথা বলবে, এমন সব কাজ করবে যা ধরলে চলবে না, হাসাহাসি করেও লাভ নাই, নিজগুনে ক্ষমা করে দিতে হবে। জনগণের একটা বিরাট অংশ মনে করে শুধু মোটা কমিশনের লোভ নয় বরং আগামীতে ক্ষমতায় আসার তীব্র অভিলাষের কারণেই নাকি আপনারা দেশের স্বার্থ পরিপন্থী এই চুক্তিটি করেছেন; আপনিই বলেছেন- ২০০১ সালে বেশী ভোট পাওয়া সত্ত্বেও ক্ষমতায় যেতে পারেননি কারণ সে সময় কিছু বিদেশী কোম্পানিকে আপনারা গ্যাস দিতে চাননি। কেন আপনারা আবারো ক্ষমতায় যেতে চান তা মূর্খ পাবলিক বোঝে না, তারা শুধু বোঝে- ক্ষমতায় থাকা মানেই আপনাদের ব্যাক্তিগত লাভ, এর মধ্যে যে সুগভীর দেশপ্রেম লুকিয়ে আছে তা এরা কোনদিনই বুঝতে পারবে না! পরিতাপের বিষয় হচ্ছে- গরীব বলে এদের মনটাও দিনকে দিন গরীব হয়ে গেছে!

গণতন্ত্রের মানসকন্যা, এই প্রজন্মকে আড়াল করে কিছুই করা যাবে না, যতই বাণিজ্যিক গোপনীয়তার কথা বলুন, সমস্যা বাড়বে ছাড়া কমবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চুক্তির খুঁটিনাটি সমেত বিস্তারিত জনগণের জানার জন্য উন্মুক্ত করে দিন। যতদূর বুঝতে পারছি এটি একটি অসম চুক্তি, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে স্নাত এই দেশের মানুষ প্রতিনিয়ত দারিদ্রের সাথে লড়ে যাচ্ছে, এই চুক্তির ফলে দারিদ্রের সাথে চলতে থাকা সেই লড়াই আরও কঠিন হবে। সুতরাং এই অসম চুক্তি থেকে সরে আসুন, এই প্রজন্মের কথাটি শুনুন। এই প্রজন্ম যদি আপনার সাথে থাকে তো আপনার অনেক কিছুই সোজা হয়ে যাবে। আর আপনি ইচ্ছা করেই যদি আমাদের এই প্রজন্মকে দূরে সরিয়ে রাখেন তো আমার কিছুই বলার নাই। শুধু এইটাই কামনা- এই প্রজন্মের সাথে আপনি বা আপনার দল যেন কোন ইস্যুতে মুখোমুখি না হন, কারণ- এরা ভয়ংকর, একেকটা আগুনের ফুলকি, এরা যা চায় তা এরা করে দেখায়, এরা রাজনীতি বোঝে না, হয়ত খুব বেশি দেশপ্রেমও এদের মধ্যে নাই। তবু আন্দোলনে-সংগ্রামে এই প্রজন্মই সেরা, মাতৃভূমিকে এরা আদতেই মায়ের ভূমি মনে করে, এরা চাইলে কনকো-ফিলিপস এদেশ ছেড়ে পালাবে, এরা চাইলে আপনার মসনদও নড়ে উঠবে। আপনি অবশ্যই এ কথা জানেন, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- কতটুকু মানেন? ৩ জুলাইয়ের হরতালে পুলিশ-দলীয় ক্যাডার-মোবাইল কোর্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে হয়ত আপনারা বিরাট কঠোরতা দেখাতেই পারবেন, কিন্তু তার পরিণতি হবে আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার মত... তা কি জানেন?
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×