এই কয়েকদিন ব্যাপক ঘুরাঘুরি মধ্যে ছিলাম। কলেজের পুরোনো যত দোস্ত আছে, সবার সাথে আবার জমজমাট খাতির। কয়েকজন বাসাতেও আসল, আমিও গেলাম।
এর মধ্যে JU তে আমার পরিচিত লোকজন অনেক বেড়ে গেছে। একজন দেখি নেতা হয়ে গেছে। ক্যাম্পাসে এরে ওরে ডাইকা হালুম হুলুম করে। দোস্ত আমারেও চরম খাতির করল।
ত আমার মেইন যাওয়ার কারণ হল ওখানকার নাট্যকলা। মম রে দেখলাম এখানে ওখানে ঘুরতাছে। বড়ই মনোরম পরিবেশ, এক ডালে কত ফুল। আহা ! এসব ফুল আর ফুলের অবস্থা দেখে JU বলে বুঝাই যায় না, মনে হয় NSU।
যাই হোক, এই ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কে নিজের ধারণা কম ছিল।সবার সাথে তাই নতুন আহরিত জ্ঞান শেয়ার করলাম। সুশীলদের আমার পুস্টে ঢুকা মানা, এরপরও আমি কী বলতে চাচ্ছি প্রতি প্যারা শেষে তা প্যারান্থিসিসের ভেতরে ক্লিয়ার করে বুঝাতে চাইছি। যেন সুশীলরা ব্যাপারটাকে অন্যদিকে না নিয়ে যেতে পারে।
পুরা পোস্টটা কিন্তু নাট্যকলা নিয়েই, পরে আবার সমগ্র JU কে কেউ জড়াবেন না। ভার্সিটি টা এতবড় যে, সবখানের পার্থক্য ব্যাপক।
ত বেশ কয়েকদিন নাট্যকলার আশেপাশে ঘোরাঘুরির পরে চরম কিছু প্রত্যক্ষ জ্ঞান হল। পোলাপানের সাথে অনেক কথাটথা হল। এখানে ইউনিফর্ম আছে। আসমানী কালারের টিশার্ট আর ট্রাউজার। নারী পুরুষ, সবারই। এটা বাধ্যতামূলক, না মানলে টিচাররা খায়া ফালাইবো। মেয়েগুলি ইহা পড়িয়া বাসে যায় আর আসে, আর বাসের গ্যানী লোকেরা মনে করে মেয়েগুলি কোন প্রাইভেটে পড়ে। আর, এরপরে মেয়েগুলি মন খারাপ করে, কারণ তারা ত আসলে জাহাঙ্গীরনগরের (নাট্যকলার)।
ক্যাম্পাসে কিছু মেয়েকে দেখলাম, সুযোগ পেয়ে স্কিন টাইট জিনিস্পত্র পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বড়ই মনোহর। দেখতে ভাল লাগে। ওরে আমি খাওয়াই না,তাই ওর কী পড়া উচিত বা অনুচিত, তা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নাই। কিন্তু অনেকে হয়ত আনইজি ফিল করবে, বিশেষ করে অনেক মেয়েকে দৈহিক গড়নের কারণে খুবই অড লাগে, তারা ত দেখলাম ছেলেদের সামনে কুঁচকে গেছে। কিন্তু এই আনইজি ভাবটা নিশ্চয়ই এক সপ্তাহের বেশি থাকবে না। এরপর তারাও সবাইকে শো অফ করতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
লেটেস্ট ব্যাচে দেখলাম মেয়ে মাত্র ৫ জন। এরা দেখি সবার চোখে চোখে থাকে। শীতের কারণ দেখিয়ে অনেকে জ্যাকেট পড়ে আসে, কিন্তু এই এক্সকিউজ ত একমাসের বেশি খাটবে না।
(গ্যানীরা খেয়াল রাখিয়েন, আমি সবার কথা বলি নাই।উচিত অনুচিত বলি নাই।অনেকেই হয়ত ইজি ফিল করে।কিন্তু অনেক মেয়ে করেনা আর অনেককে দৈহিক গড়নের কারণে খুবই অড লাগে।)
২০০১ সালের ব্যাচ বের হইছে খুব বেশি দিন হয় নাই। ২০০২ সালের ব্যাচ এখনও বর্তমান। এদের কারও কাম কাজ মনে হয় নাই, সারাদিন নতুন আসা পোলাপানের সাথে দেখা সাক্ষাত করে, আর ইউনিটি ধরে রাখার জন্য বলতে থাকে। একটু পর পর র্যাগ। এই ওকে গান গাইতে বলল, তাকে নাচতে বলল, এরকমই। মানে, ব্যাপারটা কিছুই না এ ভাবে দেখলে। কিন্তু ভার্সিটির পোলাপান বলে কথা, ব্যাপারটাকে গভীরে নিতে কারও কোন সমস্যা নাই। আমি ছোট্ট একটা উদাহরণ দেখাই। মেয়েকে বড় ভাইরা বলল ফোন নাম্বার দিতে। মেয়ে দিতে রাজী হল না। পরে দিল একটা ঝাড়ি, মেয়ে সাথে সাথে ফোন নাম্বার দিয়ে দিল।
মেয়েটা হলে থাকে। সেই দিন রাতেই মেয়েটাকে ফোন করে রাত ৩ টায় নিচে নামাইছে। বড় ভাইরা রিহার্সাল করবে, মেয়েটাকে পাশে থেকে গান গেয়ে উৎসাহ দিতে হবে।
সিম্পল গান গাওয়াটাকে অনেক দূর পর্যন্ত টানা যায়/হয় এভাবেই। রাত ৩ টায় হল থেকে একটা নবাগত মেয়েকে নামানো খুবই সাংস্কৃতিক মনোভাবমূলক আধুনিকতার পরিচয় দেয় বলেই আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করার চেষ্টা করছি।
এখানে সবার মাঝে ইউনিটি ধরে রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ (নইলে পরবর্তীতে সম্ভবত মিছিলে সমস্যা হয়)। তাই সবাইকে খুব ক্লোজলি মেশানোর চেষ্টা করে টিচাররা আর বড় ভাইরা। যেমন বাধ্যতামূলক ভাবে সবার হাত ধরে গ্রুপিং করা। হাত ধরা টা কখনই খারাপ কিছু না। আর একটা মেয়ে কারও হাত ধরলে কিছু যায় আসেও না। আমিও আমার বান্ধবীর হাত ধরতে পারি, কিন্তু সেই বান্ধবী(ধরা যাক, নিরীহ ভদ্র মেয়ে) তখনই ব্যাপারটায় কমফোর্ট ফিল করবে যখন সে জানে, এই বন্ধুত্ব বোনের দিকে যাবে, প্রেমিকা এর দিকে না। এখানে তার চয়েসের একটা সুযোগ থাকে। ভার্সিটিতে অনেক পলিটিক্স থাকে, চাইলেও চয়েস করা যায় না যে কার হাত ধরবে। বাধ্যতামূলক ব্যাপারটা।
( গ্যানীরা খেয়াল রাখিয়েন, হাত ধরা মানে কিন্তু শুধু হাত ধরাই না। তাইলে এত কথা বলার কিছু ছিল না। ব্যাপারটাকে বলা হয়, বাধ্যতামূলক ঘেঁষাঘেঁষি।যেমন, ক্লাসে দেরী করে আসলে পানিশমেন্ট হিসেবে ছেলে মেয়ের ১০ মিটার যায়গাতে ১০০ বার শুয়ে শুয়ে গড়াগড়ি। দেখলাম একটা ছেলে পারলে মেয়েটার গায়ের উপর উঠে পড়ে। টিচাররা দেখেও দেখল না এখানে সিনিয়রেদের প্রতিটা কাজে টিচারদের ব্যাপক সমর্থন। মানে একেবারে দেখার মতন।)
কেউ যদি একদিন না আসে (গভীরভাবে বললে, মেয়েরা যদি একদিন অনুপস্থিত থাকে) তাহলে বড় ভাইরা পুরা ক্লাসকে খায়া ফেলে। কেন আসে নাই, না আসলে হবে না, ইউনিটি থাকবে না, ইজি না হলে অভিনয় করতে পারবা না এইটাইপ। ছেলেগুলার কাছ থেকে মেয়েগুলার নাম্বার নেয়া হয়। যেসব মেয়েরা সেদিন যায় নাই, তাকে রাত ১২ টার পরে কয়েকটা নাম্বার থেকে কল দেয়া হয়। স্বাভাবিক ভাবেই কিছু ভদ্র মেয়ে থাকবে, যারা রাত বিরাতে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল রিসিভ করবে না। ত, পরের দিন এরা ঝাড়ি খাবে। কারণ, তাদের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য বড় ভাইরা কষ্ট করে কল করছে, কেন মেয়েগুলা ফোন নাম্বার ধরবে না !! ত, পরের দিন এদেরকে রাতে কল রিসিভ করতেই হবে(র্যাগের আরও একটা উদাহরণ)।
টিচাররা খুবই ইন্সপায়ার করে যেন ছাত্র ছাত্রীরা নিজেদের মাঝে কোন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এতে পোলাপান ডিপার্টমেন্টেই থাকে। নইলে অনেকেই হয়ত ডিপার্টমেন্ট চেঞ্জ করে ফেলত।
এদের পড়াশোনা বলতে যা আছে তা হল, ৩ ঘণ্টার শরীর চর্চা, যেন দর্শকের চোখে ভাল্লাগে। আর এরপরে ১ ঘণ্টার যে কোন বিষয়ে লেকচার। যেমন, একিদিন দিল বাংলাদেশের নদী আরেকদিন বাংলাদেশের পাহাড়। টিচাররা যেসব নাটক পরিচালনা করে তা সন্ধ্যা ৭ টায় দেখতে যাওয়া আবশ্যক। কোন ছেলে বা মেয়ে হলে না থাকলেও তাকে যেতেই হবে।
যেসব ছেলে মেয়েদের সাথে আমার কথা হল, এরা বেশিরবভাগই ২য় বার পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়েছে। আর, এদের সবারই ড্রিম নাট্যকলায় পড়া। এদের অনেকেই ডি ইউ এর অন্যান্য সাবজেক্টে চান্স পেয়েও এখানে এসেছে, কারণ তাদের স্বপ্নই ছিল এখানে নাট্যকলায় পড়বে।
আমি এসব ব্যাপার বুঝি না। এদের কী ফিউচারের কোন চিন্তা নাই? এদের বেশিরভাগেরই ইচ্ছা ফিল্ম ডিরেকশানে যাবার। কিন্তু নাট্যকলায় ত সেটা শিখায় না। আর, এক্টিং করার জন্য এখান থেকে ডিগ্রী কী বাধ্যতামূলক নাকি !! তাহলে? মঞ্চে অভিনয় করা কারও শখ থাকতেই পারে, কিন্তু তার জন্যেও কী এখান থেকে ডিগ্রী বাধ্যতামূলক? মঞ্চ নাটকের গ্রুপে জয়েন করলেই পারে। ভার্সিটিতে পড়লে এমনিতেই ত এসব সুযোগ সুবিধা থাকে। কিন্তু এটাকে সাবজেক্ট বানানোর কারণ কী?
এরা সবাই ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আসে। আর, খুব যে সোজা প্রশ্ন হয়, তাও না। একটা লেভেলের মেধা ত লাগেই। তাহলে এসব মেধাবী পোলাপান এখানে এসে এসব করে ক্যান? এটা কী মেধার অপচয় না? নাট্যকলা একটা গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যাপার। এটা শখ হতে পারে, কিন্তু চার বছর মেয়াদী অনার্স ডিগ্রী কী করে হয়?
(কোন অতি সাংস্কৃতিমনা সুশীলের উলটাপালটা কমেন্টে কিছু যায় আসে না, কারণ আমি আগেই বলছি প্রত্যক্ষ জ্ঞান। সুতরাং আমার কোন কথাকে কেউ যদি ভুল ইনফর্মেশন বলে থাকে, বা অন্যভাবে ব্যাখ্যা করে, সে নিজেই ভুল জানে।কারণ, ঐ যে, “প্রত্যক্ষ জ্ঞান”।)
ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পাওয়া পোলাপানকে এসব আনপ্রোডাক্টিভ কাজে লাগানো কী আমাদের মত গরীব দেশে মানায়? আমাদের দেশে কী নাটকে অনার্স নিয়ে গবেষণা করা কী খুব জরুরী, যেখানে মানুষ না খেয়ে থাকে?
এরা কী দেশের টাকা দিয়ে পড়ে না? গার্মেন্টসের একটা মেয়ে বা কৃষক,সে যখন কিছু কেনে, সে আমার সমান ট্যাক্স দিয়েই কেনে। এমন গরীব লোকের সংখ্যাই ত বেশি। এদের টাকা দিয়েই ত আসলে দেশটা চলে। সেই টাকা থেকে নাট্যকলা, দর্শন, ইসলামিক ইতিহাস, ছবি আঁকা এইটাইপ সাবজেক্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। এটা কী ফাজলেমি না? আমার জানা মতে, জেনারেল পাবলিক ভার্সিটির স্টুডেন্টদের পেছনে প্রতি মাসে জনপ্রতি ১৩ হাজার টাকা(১-২ হাজার কম বেশি হতে পারে) করে বরাদ্দ দেয়া হয়। আসলেই কী এত টাকা লাগে? বিল্ডিং বেঞ্চ এমনকী অকেশনেও আলাদা টাকা বরাদ্দ থাকে। তাহলে বাকি টাকা কোথায় যায়? দেয়া হয়ই বা কেন ? এসব সাবজেক্ট নিয়ে গবেষণার কারও এত ইচ্ছা থাকলে নিজের টাকা দিয়ে করুক। অথবা এসবের সিট ১০ টা করে থাকুক। সবখানে এরকম হাজারো সাবজেক্ট আছে, যা শেষপর্যন্ত দেশের কোন কাজেই লাগে না। এসব বিষয়ে কোর্স চালু করা যায়। ২ বছরের ডিপ্লোমা দেয়া যায়, তাই বলে চার বছর মেয়াদী অনার্স?কেন? নাটক বা এই টাইপ সাবজেক্টের যতটুকু দরকার আছে, তার জন্য আলাদা ইন্সটিটিউট করলেই হয়। তাই বলে ভার্সিটিতে অনার্স ডিগ্রী হিসেবে দেয় কেন? আজ্জব। এর চেয়ে প্রোডাক্টিভ বা দেশের কাজে লাগবে এমন সাবজেক্টে সিটের সঙ্খ্যা বাড়ালে অনেক ভাল হত। সারাদিন কিছু পোলাপান কত ল্যাব করে, কত এসাইনমেন্ট করে সব শেষে ব্যাচেলর ডিগ্রী/অনার্স, আর কিছু পোলাপান নাটক করে অনার্স। এইটা কেমন বিচার?যেহেতু এদের পড়াশোনার প্রেশার নাই,পাশ করার ২ বছর আগে থেকে এরা বিসিএস এর গাইড মুখস্ত শুরু করবে। সারাজীবন নাটক করে শেষে অফিসার। ভাল।
দেশের মানুষের টাকা কীভাবে খরচ করা হবে সেটা কারও চিন্তা নাই। যার যা ইচ্ছা করুক।
(ব্যক্তিগত চিন্তা এইটা। পক্ষে বা বিপক্ষে অন্য কোন ভাল যুক্তি থাকলে সাদরে গ্রহণ করা হইবে।)
শেষে একটা রিয়েল লাইফ জোক।
নাট্যকলায় টিচাররা ছাত্রছাত্রীদের এই ডিপার্টমেন্ট এর ফিউচার সম্পর্কে অনেক ভাল কিছু বলল। গত বছর নাকি জ়ে ইউ এর নাট্যকলা থেকে ২৫ জন নিউজ রিপ্রেজেন্টার হইছে।
ইয়ে, আমার এক বান্ধবী ডি ইউ তে জার্নালিজম পড়ে। তাকে তার টিচাররা বলছে গত বছর ওই ডিপার্টমেন্ট থেকে নাকি ২০ জন্য মিডিয়া তে নাটকে নিয়মিত অভিনয়ের সুযোগ পাইছে।
হে হে হে হে হে
এরা নিজেরাই নিজেদের ব্যাপারে কনফিউজড।
হে হে হে হে
(JU এর কিছু দোস্ত কয়েকদিন ধরে সারাদিন আমার সাথে ছিল, এদের একজন লেখাটা দিতে না বলল।তার ধারণা, নাট্যকলার কোন বড় ভাই দেখলে জুনিয়র ব্যাচের সমস্যা হতে পারে।তাই এ ব্যাপারটা পরিষ্কার করি।আমি এমন কেউ না যে, জুনিয়র ব্যাচের কেউ এসে আমার কাছে অভিযোগ দিবে।যা বলছি তা কারও থেকে জানা লাগে না, একদম সরাসরি আর স্পষ্টই দেখা যায়।তাই দায় দায়িত্ব একান্তই আমার।)