আমেরিকান ম্যানেজার আমার টেবিলে ঝুঁকে বলল হাবিব রাইট ডাউন “আ নাইন্টিনাইন”। যেহেতু ইংরেজিতে “আ” উচ্চারণে কোন এলফাবেট(অক্ষর) নাই,আমি ধরেই নিলাম এটা একের অধিক এলফাবেইটধারী কোন শব্দ, কিন্তু কিছুতেই মাথায় আসছে না শব্দটি কি হতে পারে? আমি মাথার মধ্যে গুগল-সার্চ দিতে আছি আর ও বেটা দিকে স্থিরদৃষ্টিতে আমার ল্যাপটপ স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে আছে।সে কিছুটা অবাক আর আমি কিছুটা বিব্রত।গেলো, নিজের ক্যারিয়ার ও দেশের ইজ্জত-এর বারোটা মনে হয় বেজে গেলো।এমনিতেই বাংগালির ইংরেজি জ্ঞান নিয়ে বাজারে হাজারটা গল্প প্রচলিত।শেষ পর্যন্ত ভাগ্যদেবি আমার প্রতি সুপ্রসন্ন হলো।বিদ্যুত ঝিলিকের মত মাথায় আসলো এইটা হবে R99.আপনারাই বলুন কেউ যদি জ্বলজ্যন্ত R(আর) কে “আ” উচ্চারন করে তাইলে আমার কিইবা করার আছে?
ইংরেজি’তে জাহাজ না হলেই কাজ চালানোর মত বলতে কিংবা লিখতে পারি।বিবিসি কিংবা সি,এন,এন সহজেই বুঝতে পারি,হলিউডের ছবি সাবটাইটেল ছাড়াই দেখি।(অবশ্য ইদানিংকার হলিউড-এর ছবি আমি সাব-টাইটেল ছাড়া কিছুই বুঝিনা।জনৈক ব্রিটিশ পরিচালক মন্তব্য করেছেন, এখানকার হলিউডি ছবিগুলোকে ইংরেজিতে ডাবিং করা দরকার।সে যদি এই কথা বলে, তাইলে আমি মূর্খ বাংগালী ত কোন ছাড়।) ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি,ফিলিপিনো,মালোয়েশিয়ান এদের সাথে ইংরেজি কথোপকথনে কোন সমস্যা হয়না।কিন্তু আমার এই “এ শর্ট লিসেনিং এক্সিপেরিয়েন্স উইথ এন আমেরিকান” স্থির সিন্ধান্তে আসছি আমি সবার কথাই বুঝি শুধু নেটিভ ইংলিশ স্পিকার ছাড়া।হাসবেন না, আরো কয়েকটা ঘটনার কথা বললে আমার এই ব্যার্থতাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।
কোন অস্ট্রেলিয়ান যদি বলে “আই’ম গোয়িং টুডায়”। আশা করি আমার মত আপনিই মনে মনে বলবেন “মরবি ত দূরে গিয়া মর, আমারে জিগাস কেন”। আসলে সে ” টু’ডে(Today)” কে “টুডায়” উচ্চারণ করেছে।বুঝুন অবস্থাটা!
আবার আসুন আম্রিকান ম্যানেজারের প্রসংগে।তার একটা বাতিক আছে, কথায় কথা গো’টা(Gotta) উচ্চারন করার। আই গোটা ডু , আই গোটা পার্ক, আই গোটা রিড্,আই গোটা রাইট, আই গোটা গিট্ (“গেট্” নয় কিন্তু)।এই গিট্ (Get) নিয়ে একবার এক ফ্যাসাদে পড়ছিলাম।নতুন একটা নোড্ (Node) আসবে, ওইটার নাম ই,জি০১.আমি কাগজে লিখলাম EG01. সে তখন বললো “নো,নো, দ্যাট’স্ ই,জি”। তার মুখের দিকে বোকার মত তাকায়া রইলাম।তখন সে নিজে লিখলো IG01.জীবনে দেখছেন কেউ আই(I)’কে এইভাবে “ই” উচ্চারণ করে! এরপর থেকে আমার কাছে গিট্ (গেট) রহস্য পরিষ্কার।
ম্যানেজার মহাশ’য় বেশ হাসিখুশি, রসিক লোক।প্রায়ই সে হাসির কথা বলে আমি মোটামুটি তার ৫০-৭০ কথা বুঝতে পারি, আমিও তাই হাসি।আজকের মীটিং সে অনেক ধরে হাসল আমিও হাসলাম কিন্তু আমার সাথের মালেয়েশিয়ান দেখি মুখ গোমড়া করে বসে আছে।ম্যানেজার তাকে জিজ্ঞেস করে তার মুড-অফ্ কিনা, সে হাসেনা কেন? আসলে হাসবে কি, মালেয়েশিয়ান বেটা তার কোন কথা বুঝলে তো।এই মালেয়েশিয়ান একটা চিজ্ বটে।ইংরেজি ভাষায় টেনস্ বলে যে একটা বস্তু আছে সে তার কোন ধারই ধারেনা। মাঝে মাঝে ক্রিয়াপদ ছাড়াই মনের ভাব প্রকাশ করে ফেলে। যেমন , “হাবিব, হ্যোয়ার ইউ গো ইয়েস্টারডে”? আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার ত অনেক টাকা তাইলে দেশের বাইরে খেপ্ মারতে আসছো কেন? সে বলল” ইফ আই মোর মানি, আই নট ওয়ার্ক আউটসাইট’।বুঝুন অবস্থাটা!
তার প্রিয় খাবার বিরিয়ানী আর বাগ্গা(এইটা নতুন কোন খাবার না, আমাদের অতি পরিচিত বার্গার(Berger),আমি তার উচ্চারণে তার প্রিয় খাবারের নামটা লিখলাম শুধু।)
চলবে