somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওরা নয়জন

০৩ রা মে, ২০০৯ দুপুর ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের বসন্ত দিনের এক গল্প বলি। তখন বন্ধুদের নিয়মিত আড্ডা হাসেম ভাইয়ের চায়ের দোকানে। পড়াশুনা,রাজনীতি আর আড্ডা জীবনের প্রধান অংগ।এটা প্রায় সহজাত ছিলো যে কিছুদিন পরপরই আড্ডা গুমোট হয়ে উঠত আর আমরা বেরিয়ে পড়তাম নানা প্রান্তে। এভাবেই হিরণপয়েন্ট থেকে কলকাতার ট্রাম,মিরিকের লেক,কামরুপ কামাক্ষ্যার মন্দির,ঘুম ষ্টেশনে জীন এ মত্ত হয়ে সত্যজিতের কানচনজংগা কিংবা শিলিগুড়ির হোটেলে ভরপেট চিতল খেয়ে পকেট উজার...এবং আরও কত....

এক.
কুমিল্লা রেলওয়ে ষ্টেশন। নয়জন তরুনের প্রতীক্ষা ট্রেনের,গন্তব্য শাহজীবাজার। বিনা টিকিটের ট্রেন গন্তব্যে পোঁছে দিলে,সংগী বন্ধুর বাসায় প্রবেশ।বন্ধু মাতার চোখে অবিশ্বাস খবর না দিয়ে...ছোট্ট একটা চার কামড়ার ঘরে নিজেদের ছাড়াও এই নয়জনের স্হান কোথায়?
আমাদের পরম আশ্বাস..খালা একটা রুমেই আমাদের চলবে। তিনি বিরক্তি নিয়েও আশ্বস্হ হন যেহেতু নিজের সন্তানকেও চেনেন।
(আমাদের সেই বন্ধু এখন কারবারে বিশাল উন্নতি করেছে আর এবার ঢাকায় থাকাকালীন সময়ে ওর সংগে গ্রামের বাড়ী বেড়াতে গিয়ে খালার রান্না আবার খেয়ে এসেছি।)

দুই.
সকাল। আমরা তৈরী দুটি পাতা একটি কুঁড়ি দর্শনে। সবুজের পাশে হাটতে হাটতে আমরা পৌছে যাই কুলিদের আস্তানায়। ওদের বানানো মদিরার সুনাম শুনেছি অনেক। আমরা বসে যাই ছোট্ট ঘরে। জমতে থাকে দ্রাক্ষ্যা রস আর পানে মত্ত হয়ে প্রবল বাক্যলাপে মেতে উঠি এবং চোখের সামনে উজ্জল হতে থাকে ভালোবাসার জমকালো স্মৃতি। প্রবল ভিজতে থাকি ভালো লাগার বৃষ্টিতে।

তিন.
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। পেটের সব নাড়ি ছোঁ ছোঁ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল মুড়ি ছাড়া আর কোন আহার্য্য নেই অতএব তাই সই। মুড়ি-পানে মধ্যান্হভোজন।
জগতের সকল তৃষনা আমাদের...আমরা আকন্ঠ পান করে যাই আর মত্ত থাকি নিজেদের ভালবাসায়।

চার.
সন্ধ্যা হয়। আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে পাহাড়ের কোলে সূর্যাস্ত দেখি। জীবনের অনির্বচনীয় আনন্দে আমরা আবারো পানে মত্ত হই।

পাঁচ.
রাত গভীর হলে আমাদের ফেরার কথা মনে পড়ে। শরীর ও মনে ঢুলুঢুলু আমরা ফেরার আয়োজনে ব্যস্ত হই। 'আন্ধাইর রাইত....জোছনা করেছে আঁড়ি' আর অন্ধকারে আমরা পথ হাতড়ে চলি। ভুল করি আর হাটি। কখনো পাহাড়ের চূড়োয় আবার কখনো নামতেই থাকি..পথ যেন আর শেষ হয় না। সঠিক পথের নির্দেশনা নিয়ে প্রচন্ড বিতন্ডা নিজেদের মধ্যে। আমরা সবাই তখন অন্যলোকে তারপরও পৌছে যাই আলোক সীমানায়।

ছয়.
ক্লান্তি আমাদের বিশ্রামে বাধ্য করে। তিন পথের এক ছোট জংশনে আমরা বসে যাই। ঢলে পড়ি একে অন্যের কোলে।এক বন্ধু অন্য বন্ধুর কোলে মাথা রেখে প্রশ্ন করে ..বমিকরি? অন্য বন্ধু উত্তর দেয়.. কর। অন্যজন গড় গড় করে মদিরা উগড়ে দিতে থাকে সারা শরীর জুড়ে। বন্ধু ধরে থাকে বন্ধুকে পরম মমতায়।

সাত.
পানি পানি বলে চিৎকার করে উঠে একজন। আমাদের কাছে পানি নেই আছে মদিরা। পানির তৃষনা তো আর ওতে মেটে না। একবন্ধু ছুটে চলে পানি আনতে,বন্ধুর জীবন বাঁচাতে...অন্যরা সবাই তিন পথের মোড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।

আট.
অন্ধকারে বিশাল দুটো চোখ নিয়ে ছুটে আসে যন্ত্রদানব। পানি আনতে ছুটতে থাকা বন্ধুটি ওই উজ্জল আলোর সামনে কাবু হয়ে পড়ে। দুহাত তুলে রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে যায়...যন্ত্রদানব অনিচ্ছা নিয়ে থামে..আলোর পিছন কেউ একজন চিৎকার করে ...ঐ সর রাস্তা থেইক্কা। বন্ধু চিৎকার করে বলে সামনের তিন রাস্তার মোড়ে আমার বন্ধুরা শুয়ে আছে ...সাবধানে যাবেন। আলোর পিছনের মানুষটি গালি দিয়ে উঠে..ঐ মাতাল সর..নাইলে ডইলা দিয়া যাইমু.....

নয়.
মাতাল-উন্মাতাল আমরা নয়জন বড় কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই ঐ রাতে বন্ধুগৃহে ফিরি।

পুনশ্চ: কফি হাউজের নষ্টালজিয়া বাঙালী জীবনের এক প্রধান অনুষঙ্গ। আমরা সবাই কোন না কোন কফি হাউজের সাথে জড়িয়ে আছি। আমার সেই সব বন্ধুরা আজ পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে। আই লাভ ইউ গাইজ.....



সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০০৯ দুপুর ১:২১
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×