১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানী সৈন্যদের ভয়াবহ হত্যাকান্ড ও ধংসলীলার মাত্র ৬ দিন পর পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে এক ভাষণ দেন। এ বেতার ভাষণ শুনে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল যুগপৎ বিস্মিত ও আশঙ্কিত হয়ে পড়েন। কারণ, গোলাম আযম বা জামায়াতে ইসলামী পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন কেউ ছিলো না। পূর্ব পাকিস্তানে তখন পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছিল। যেমন, মুসলিম লীগের বিভিন্ন গ্রুপ, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, পিডিপি প্রমুখসহ আরও দল ছিল। কিন্তু একমাত্র গোলাম আযমই ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে উস্কানীমূলক বেতার-বক্তৃতা দেন, তার ভাবটা এমন ছিল যেন ২৫ মার্চের কাল রাত্রির পর বুঝি জামায়াতে ইসলামী পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতায় চলে এসেছে। গোলাম আযম তার এই বক্তৃতায় মূল প্রতিপক্ষ করেন ভারতকে। এই বক্তৃতায় মোট ১৬টি স্তবক ছিল এবং তিনি এই ১৬টি স্তবকের ৪০টি লাইনের ভাষণে সর্বমোট ৩৩ বার 'ভারত' শব্দটি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন,
"সম্প্রতি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হয়েও ভারতীয় লোকসভায় পূর্ব পাকিস্তানের জন্য এমনভাবে সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন, যা আমাদের মনে ঔৎসুক্য জাগায়। ...ভারতের মনে রাখা উচিত ছিল যে পূর্ব পাকিস্তানীরা তাহাদের নায্য দাবী আদায়ের ব্যাপারে কোন দেশের নিকট হতে সাহায্য চায় না। এটা তাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ...ভারতীয় বেতার যে জঘন্য মিথ্যা প্রচার করেছে ঢাকার প্রতিটি নাগরিক তা ভালভাবে বুঝে, ভারতীয় বেতারের মতে সমগ্র ঢাকা নগরী মাটির সাথেই মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। ...এটা কি করে সম্ভব যে, ঢাকার জনগণ নিজ চোখে যা দেখেছে, নয়াদিল্লী তার চেয়ৈ বেশী দেখেছে। ... ভারত সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ করে কার্যত পূর্ব পাকিস্তানীদের দেশপ্রেমকে চ্যালেঞ্জ করেছে। ...আমি বিশ্বাস করি যে, এই অনুপ্রবেশকারীরা পূর্ব পাকিস্তানী মুসলমান জনগণের নিকট হতে কোন প্রকার সাহায্য পাবে না।" (সূত্র: দৈনিক পাকিস্তান ৭ এপ্রিল, ১৯৭১)
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস- ডঃ মোহাম্দ হান্নান, গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ দুপুর ২:২০