প্রথম কবে তাঁর সাথে পরিচয় হয়েছিল তা আমার ঠিক মনে নেই। যখন থেকে বই পড়া নামক একটা মারাত্বক আমৃত্যু ব্যাধিতে আক্রান্ত হই ঠিক তখন থেকে এই লোকটার সাথে আমার পরিচয়। এ এমন এক রোগ যার থেকে সুস্থ হবার কোন সুযোগই নেই। একটাই পথ্য সেটা হচ্ছে বেশি বেশি বই পড়া আর বইয়ের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া।
এই লোকটার সাথে পরিচয়, তাঁর বই পড়া এবং এই লোকটাকে অল্প অল্প করে ভালো লাগা। একজন লেখক কিভাবে পারেন এতোটা জীবন ঘনিষ্ঠ করে লিখতে??? নন্দিত নরক থেক দেয়াল, একটা সাফল্যধারা, একটা ইতিহাস, একটা অস্পর্শনীয় ঈর্ষনীয় জনপ্রিয়তা, একটা স্বর্ণযুগ, সাহিত্যের একটা দিগন্ত, নতুন একটা কাল।
তিনি শিখিয়েছেন কিভাবে জীবনটাকে দেখতে হয়, উপভোগ করতে হয় কিভাবে প্রতিটি মুহূর্ত, বৃষ্টি নামক আশীর্বাদে কিভাবে নিজেকে ভিজাতে হয়, জোছনা নামক তীব্র সৌন্দর্য কিভাবে গিলে খেতে হয়, কিভাবে প্রেমে পড়তে হয়, কিভাবে হাঁটতে হয় পিচঢালা ওই রুক্ষ পথে, কিভাবে মনের একেলা ঘরে তাঁকে নিয়ে বসত তৈরি করতে হয়। শিখিয়ে গিয়েছেন কিভাবে সকল বাধার মাঝে নিজের মত করে চলতে হয়। অটল, অবিকার্য, অদূষ্যভাবে।
জীবনের সবচে কঠিন সময়টাতে তাঁর লেখনীতে ভরসা পেয়েছি, প্রথমবার লুকানো ভালবাসা প্রকাশে তাঁর সাহস পেয়েছি, কোন একজনের চলে যাওয়া আর ছুড়ে ফেলে দেওয়ার সময়ে তাঁর সহানুভূতি পেয়েছি।
লেখনীর প্রত্যেকটা অঙ্গনে তাঁর অস্পর্শনীয় আর অতুলনীয় সাফল্যগাথা। উপন্যাস, কবিতা, ছোট গল্প, সায়েন্স-ফিকশন, ভ্রমণকাহিনী কোন দিকটাতে ছিলেন না তিনি??? নাটক আর চলচিত্র, শিল্পকলার এই দুই মাধ্যমে একটা অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন তিনি। এই দুইটি ধারাতে তৈরি করেছেন অনন্য এবং উৎকর্ষিত ধাঁচ। হোক নাটক কিংবা চলচিত্র, তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলো ছিল অনন্য অসাধারণ এবং জীবন সন্নিকট। দর্শকের মনে চরিত্রগুলোর জন্য তৈরি করেছেন আলাদা টান আর ভালবাসা।
হিমু হবার চেষ্টা কোন ছেলেটি না করে? রুপা কিংবা তিথি হওয়ার ইচ্ছা কতো মেয়ের? মিসির আলির মত যুক্তি কে না দিতে চায়? কিংবা বাকের ভাই? কিংবা শুভ্র? কিংবা বদি? কিংবা মহামান্য ফিহা? কিংবা 'দুই দুয়ারী'র নাম না যান সেই যুবক? 'কবি'র আতাহার হতে চেয়েছে আমার মত কত নির্বোধ...
প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ, মাফ করবেন। গুরুদাক্ষিনাটা দেয়া হয় নি আপনাকে। দাঁড়ানোর সাহস পাইনি আপনার সামনে কখনো। মেঘের ওপারে চলে গেলেন আজ এক বছর হল। এখনো কেন জানি বিশ্বাস হয় না। কেন জানি মনে হয় আপনি আছেন, এখনো আছেন এই সাজঘরে। হয়ত দেখা হবে গৌরীপুর জংশনে রোদনভরা এক বসন্তে কিছুক্ষণের জন্য। চলে যাক বসন্তের দিন মেঘের ছায়া হয়ে, আমি থাকব অপক্ষায় যদি সে আসে ধীরে আমাদের এই নগরে কোন অন্যদিনে......
"চোখ মোছ, কলমটা নে হাতে।
কী লিখবি, মন যা লিখতে চায়।
কাগজ তো নেই, বিছিয়ে দিলাম আঁচল।
আর দেরি না, লিখতে বস রে পাগল।
আমি লিখতে বসেছি, লিখে যাচ্ছি।"
(স্যারের লেখা শেষ কবিতার শেষ পাঁচ লাইন।)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৩:১০