somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা বানান: সিদ্ধান্ত বিভ্রাট

২৮ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১) লেখা না লিখা? শোনা না শুনা?

বানান নিয়ে জানা ক্ষেত্রেও মাঝে মধ্যে কোনটা সঠিক এ নিয়ে খটকা লাগতে দেখা যায়। "লেখা" হবে, না "লিখা", "শোনা" না "শুনা" এরকম বিভ্রাট অনেকের মাঝেই দেখা যায়!

এর সমাধান জটিল নয়। "আমি চিঠি লিখেছি", আর "আমার লেখা চিঠি" - দুটোর পার্থক্য বুঝতে পারছেন? লিখেছ, লিখেছি, লিখব, লিখুন এই কয়টি রূপ ক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন অবস্থাকে নির্দেশ করে মাত্র। খেয়াল করে দেখুন তো, আপনি গান "শোনা" বলেন, না গান "শুনা" বলেন? "শোনা" বলেন, "শুনা" নয়। আবার কাউকে শুনতে বললে বলেন, "শোন"; "শুনো" বলেন না। গানের ক্ষেত্রেও খেয়াল করে দেখুন, শোন গো দখিন হাওয়া, কিংবা শোন শোন ইয়া এলাহি.. উচ্চারণটা "শোন"ই।
ব্যাপারটা এখানেই। আপনি কিভাবে উচ্চারণ করছেন, তার উপর নির্ভর করবে আপনার বানান চেতনা। যাঁরা আঞ্চলিক ভাষায় অভ্যস্ত, তাঁরা মনের অজান্তেই বানান জানা সত্ত্বেও "তোমার"কে লেখেন "তুমার", "কোথায়"কে লেখেন "কুথাই"! এগুলো মনের অন্তঃকরণে গেঁথে আছে বলেই অবচেতনভাবে বের হয়ে আসে। এক্ষেত্রে সচেতনতাই মূল সমাধান।

কিন্তু তারপরও যাঁরা "শোনেন" আর "শুনেন", "লেখেন" আর "লিখেন" এর মধ্যে কোনটা সঠিক খুঁজে পান না বা দুটোকে গুলিয়ে ফেলেন, তাঁদের জন্য পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করার আরেকটু আছে। এক কথায় বলতে গেলে "শোনা", "লেখা" শুদ্ধ, "শুনা", "লিখা" অশুদ্ধ। তবে কেবল পুরাঘটিত ক্রিয়ার বেলাতে "শুনা" "লিখা" প্রযোজ্য। যেমন, আপনি শুনে থাকবেন, আমি শুনেছি, আমি লিখেছি, লিখে রাখব, লিখিত হয়েছে ইত্যাদি। তাছাড়া, লিখুন, শুনুন ইত্যাদি ব্যবহৃত হয় অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়ার ক্ষেত্রে।

মূলতঃ লিখা, শুনা, কিনা, চিনা, শিখা অনেকটা সাধু রূপের চলিত প্রকরণ। যেমন, শুনিয়াছি> শুনেছি; লিখিয়াছি> লিখেছি; শুনিতে> শুনতে; লিখিতে> লিখতে ইত্যাদি। আমরা ওই সাধু রূপটাকে মনে রাখতে গিয়েই চলিতে এই ভুলটা করি।

তাহলে সঠিক সিদ্ধান্ত এই যে, কেবল "লিখা" বা কেবল "শিখা" (শেখা) বা "শুনা" বা "কিনা" (কেনা) বা "চিনা" (চেনা) বলতে কোন শব্দ নেই, এরা অশুদ্ধ! এই লেখা এবং শোনা হতেই সাধিত শব্দে লিখিত, লিখব, লিখেছি, শুনুন, শুনব, শুনেছি ইত্যাদি আসবে!

২) হিসাব না হিশাব? সাদা না শাদা? জিনিস না জিনিশ না জিনিষ?

প্রচলিত বানানে হিসাব, হিসেব, সাদা, জিনিস ইত্যাদি বানান প্রাধান্য পায়। হিশাব, হিশেব, শাদা, জিনিশ, জিনিষ ইত্যাদি বানান যে অশুদ্ধ, তাও নয়। কিছু ভাষা সচেতন ব্যক্তি এই ক্ষেত্রে "স" এর বদলে "শ" লেখার পক্ষপাতী এবং এক্ষেত্রে তাঁদের যুক্তিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

তাঁদের মতে, স শ এবং ষ এর মধ্যে বাংলাতে ষ তৎসম শব্দের জন্য নির্ধারিত, এবং স ও শ বাংলা ভাষার অন্যান্য শব্দের জন্য নির্ধারিত আছে। আর বিদেশি শব্দের বেলায় উচ্চারণ অনুযায়ী স বা শ প্রয়োগ করার নিয়ম। সেক্ষেত্রে হিশেব, শাদা, জিনিশ এরা প্রত্যেকেই বিদেশি শব্দ (হিসেব ও জিনিস আরবি শব্দ এবং সাদা ফার্সি)।
আর যেহেতু বিদেশি শব্দে শিস ধ্বনিযোগে স এর উচ্চারণ শ হবে, সেহেতু ওই বানানগুলোতে "শ"ই হওয়া উচিত (Select > সিলেক্ট, Sharp > শার্প)।
তবে আমি অবশ্য হিসেব, জিনিস, সাদাই লিখি। প্রচলিত বানান, তাছাড়া এত বছরের ব্যবহারে এই শব্দগুলোকে এখন আর ভিনদেশি মনেও হয় না, অভিধান অনেক আগেই একে আত্তীকরণ করে ফেলেছে।
আর হ্যাঁ, "জিনিষ" বানানটি অভিধান সমর্থন করলেও এটি বেশ দুর্বল একটি বানান, আমাদের উচিত একে পরিহার করা।

৩) ভাল, না ভালো? কাল, না কালো? হয়ত না হয়তো?

এই বানাগুলোর দুই পক্ষই শুদ্ধ, কেউ ভুল নয়। তবে ব্যবহারের পেছনে যুক্তি আছে।
"ভাল" শব্দটির অর্থ কী? অর্থ মঙ্গল, কল্যান। আরও একটি অর্থ আছে, "ভাল" অর্থ কপাল, ললাট। তাহলে "ভাল"র দুই রকম অর্থ আছে, কিন্তু "ভালো"র অর্থ একটাই। এক্ষেত্রে দুই রকম অর্থ প্রকাশ না করে যেটা সুনির্দিষ্ট অর্থই প্রকাশ করে সেটিকেই ব্যবহার করা উচিত নয়?
একইভাবে, "কাল" শব্দের অর্থ কালো, আবার "কাল" অর্থ সময়, পরের দিন, ঠাণ্ডা!
তাহলে কালো বোঝাতে কাল না লিখে কালো লেখাই তো উত্তম হয়।
এমন আরও আছে, যেমন "মত" লিখবেন, না "মতো"?
মত বললে মতামত বা রায়ের সঙ্গেও অর্থ গুলিয়ে যেতে পারে। সেটা এড়াতে "মতো"ই লেখা ভাল হয় না?

হয়ত নয়ত তে ও কার দিয়ে বা না দিয়ে দুটোই সঠিক। তবে ও কার দিলেই সুন্দর দেখায়, দিতেই হবে এমনও নয়।

ক্রিয়ার শেষে ও কার জুড়ে দেওয়াতে খুব আভিজাত্যের কিছু নেই, বরং প্রয়োগের ভুল আছে। তুমি কী কর? এখানে "কী করো" লিখলে সেটা সোজা কথায় ভুল। "দেখ" না লিখে "দেখো", "লিখ" না লিখে "লিখো" ইত্যাদিতে অর্থগত ঝামেলা আছে!
লিখো, করো, দেখো, শুনো, কিনো, বলো ইত্যাদি ওই প্রাগুক্ত অনুজ্ঞা। এগুলো অনুরোধ, আদেশ বা প্রার্থনাবাচক ক্রিয়া রূপ। করো শব্দের অর্থ দাঁড়ায়, করিও বা কইরো; লিখো মানে, লিইখো বা লিখিও, অন্যগুলোও এরকম। এখানে বল না লিখে বলো লিখলে অর্থ বিভ্রাট ঘটবে।

আরেকটা মজার জিনিস বলে এই জবরদস্তি জ্ঞান বিতরণ শেষ করছি, দেওয়া এবং দেয়া, নেওয়া এবং নেয়া ইত্যাদি শব্দজোড় নিয়ে বিতণ্ডা আছে। দুটোকেই সঠিক মানা হয়, কেন সঠিক আর কেন সঠিক নয়, এ বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা কেউ দেয়নি আমার দেখা মতে। আমার একটি বিধান আছে। দেয়া পুরাঘটিত ক্রিয়া, দেওয়া সাধারণ ক্রিয়া। এটা আসলে কেবল উপলব্ধি, অকাট্য কোন যুক্তি নেই, বিতর্ক করারও কিছু নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৯
১৫টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×