স্কুলে পড়ার সময় আমরা ঐকিক নিয়মের একটা অংক করিতাম এবং সেটি পরীক্ষায় প্রায় আসিত। তাহা হইল-
একটি বানর একটি তৈলাক্ত বাঁশ বাহিয়া ১ম মিনিটে ৫ ফুট উপরে উঠিল আর তার পরের মিনিটে ৪ ফুট নিচে নামিয়া যায়। বাঁশটির উচ্চতা ১০০০ হাজার ফুট হইলে বাঁশটির মাথায় উঠিতে বানরটির কতো সময় লাগিবে?
তৈলের প্রতি আমার সবসময় একটা অনিহা ছিল। তৈল জাতীয় পিঠা আমার পেটে হজম হইত না। মাথায় এবং শরীরে কখনো তৈল মেখেছি বলিয়া মনে পড়ে না। কাহারো মাথায় তৈল দেওয়া দেখলে আমার শরীরে শির শিরানি অনুভুতি হইত। তাই এই অংকটি সমাধান করিতে গেলে আমার সেরকম অনুভুতি হইত। মনে হইত আমার হাত যেন তৈলে ভরিয়া গিয়াছে। কলমখানা বুঝি পিছলাইয়া পড়িয়া যাইবে। আরো একখান কষ্ট হইত যে, বানর তো স্বইচ্ছায় এরকম কর্ম
করিত না। অবশ্যই তাহার পশ্চাৎ দেশে কেহ একজন সজোরে আঘাত করিত আর সে তাহা সহিতে না পারিয়া অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঐ তৈলাক্ত বাঁশে উঠিবার কসরত করিত। আহা বানর! বঙ্গ দেশে তোমার জন্ম হইয়াছে বলিয়া এরকম খেলা খেলিয়াছে। ইউরোপ আমেরিকায় হইলে তোমাকে নিয়া নানা গবেষণা করিত। এইডসসহ নানা রোগের টিকা আবিষ্কার করিয়া তোমার উপর পুন: পুন: প্রয়োগ করিত। তবুও তৈলাক্ত বাঁশ বাহিয়া উঠার চেয়ে মানব জাতির কল্যানে নিজেকে উৎসর্গ করা মনে হয় অনেক মহৎ হইত।
এখন কথা হইল বানরতো তৈলাক্ত বাঁশ বাহিয়া উপরে উঠিল। কিন্তু বাঁশে তৈল মর্দন করিল কে? আমরা। আমরা সেই ছোট বেলা থেকে বাঁশে তৈল মর্দন করা শিখিয়াছি। তা বড় হইয়া ভুলিতে পারি নাই। তাই যখনই সুযোগ পাই সেই শিক্ষাটাকে কাজে লাগাই। আর এভাবে বাঙালির তৈল মর্দন চর্চা চলছে।
ইদানিং শিশু শ্রেণির পাঠ্য পুস্তকে ছাগলে গাছে উঠিয়া আম খাওয়া ছবি সংযুক্ত হইয়াছে। তাহাতে জাতি উপর ইহার কি প্রভাব পড়িবে তাহা আপাতত বলিতে পারিব না।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:১১