somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নর স্বপ্ন পূরণ

১৩ ই মে, ২০১৬ সকাল ৮:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেটির নাম স্বপ্ন।
ভালোবাসে কল্পনা করতে। স্বপ্ন দেখে বড় হওয়ার।

ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন খুব বেশি চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে ছিলো না। কিছুটা লাজুকতা কাজ করত। লেখা পড়ায় মোটামুটি ধরনের ছাত্র ছিলো... 

সিক্স সেভেন পর্যন্ত মোটামুটি ভালোই চলছিল তার পড়ালেখা। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে ক্লাস এইটে ওঠার পর। বাবা মা বছরের শুরু থেকেই চাপ দিতে থাকেন জেএসসিতে গোল্ডেন এ+ পেতেই হবে। রেগুলার পড়াশোনা নিয়ে এক ঘ্যানঘ্যানানি স্বপ্ন'র ভালো লাগত না। জীবনটাকে দুর্বিষহ মনে হতে লাগে তার..

কোনো রকমে জেএসসি পরীক্ষা দিলো। মোটামুটি রেজাল্ট হলো। তবুও তার বাবা মায়ের মনোমতো হয় নি। নাইনে ওঠার পর ফ্যামিলির জোরাজুরিতে তাকে নিতে হলো সাইন্স!

এখন থেকে শুরু হলো স্বপ্নর কম্পিউটার নেশা। বলে রাখা ভালো হাই স্কুলে ওঠার পর তার বাবা তাকে একটি কম্পিউটার কিনে দিয়েছিলেন। অতিরিক্ত পড়ার চাপ  নিতে না পেরে সারাদিন কম্পিউটারেই বসে থাকতো সে। কম্পিউটারের খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানা, নতুন নতুন জিনিস শেখা, ইউটিউবে প্রোগ্রামিংয়ের টিউটোরিয়াল দেখা.....  আরও কত কি!

কম্পিউটার চালনায় প্রায় অভিজ্ঞই হয়ে গেলো স্বপ্ন। কিন্তু পাঠ্যবইয়ে ঠিক ততটাই অনভিজ্ঞ হয়ে পড়ল!

স্রোতের বেগে চলতে লাগল সময়। এসএসসি পরীক্ষাও চলে এলো। আধা আধি প্রিপারেশন নিয়ে পরীক্ষা দিলো।

দুইমাস পর রেজাল্টের দিনও ঘনিয়ে আসছে। সবার মনে টেনশন। কারও এ প্লাসের জন্য টেনশন, কারেও পাশ নিয়ে টেনশন। স্বপ্ন ছিলো দুই নাম্বার দলের লোক।  

রেজাল্ট হলো। স্বপ্নর বন্ধুরা পেলো এ প্লাস। আর স্বপ্ন পেলো এ মাইনাস।

যেসব আন্টি আংকেলরা সারা বছরে কোনো খোঁজ খবর নিতো না এখন তারা এক হাত নিতে আসছে,

- হায় হায় ভাবী! আপনার ছেলে এ প্লাস পায় নাই!! অমুকের ছেলে তো মাশাল্লাহ গোল্ডেন পাইসে
- কি বলেন ভাই! এই যুগে এ প্লাস ছাড়া চলে? অর তো জীবন শ্যাষ...
- ইয়ে মানে বুজলেন ভাই আমার ছেলেটারে আল্লায় খুব ব্রেনী বানাইসে। সারাদিন বইয়ের মধ্যে পইড়া থাকে। জামা কাপড় খাওয়াদা নিয়া কোনো জিদ নাই

আশেপাশের মানুষের এমন খোঁচা শুনে স্বপ্নর বাবা মা খুব ভেঙে পড়লেন। আর যত রাগ আছে সব স্বপ্নর ওপর ঝাড়লেন। উঠতে বসতে সারাক্ষণ বকা হজম করতে হলো। তার সব বন্ধুরা ঢাকার নামীদামী কলেজে ভর্তি হলো। আর স্বপ্ন ভর্তি হলো স্থানীয় একটা কলেজে....

কলেজে ওঠার পর তার প্রোগ্রামিং ভূত আবার জেঁকে বসল। তবে রুটিনের কড়া নিয়মে সে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলল।  ২৪ ঘন্টার মধ্যে ছয় ঘন্টা ঘুম, নয় ঘন্টা পড়ালেখা, সাত ঘন্টা প্রোগ্রামিং প্র্যাকটিস এবং বাকি দুই ঘন্টা রেস্ট ও খাওয়াদাওয়া। কলেজে নিয়মিত ক্লাস হতো না বিধায় খুব একটা কলেজে যেত না স্বপ্ন। যেসব বিষয় না বুঝতো সেগুলো প্রাইভেট পড়ে কভার দিত।  বন্ধুবান্ধব আড্ডা সব কিছুই নিজের হাতে কবর দিয়েছে সে....

প্রোগ্রামিংয়ের হাতেখরি শেখার পর সে ফ্রিল্যান্সিংয়ে যোগ দিলো। ক্লায়েন্টদের সাথে নমনীয় আচরণ আর কাজের দক্ষতার মাধ্যমে খুব সহজেই ফ্রিল্যান্সিং জগতে পরিচিতি পেয়ে গেলো। এদিকে এইচএসসি পরীক্ষাও চলে এলো। এবার স্বপ্নর প্রস্তুতি মোটামুটি ভালো। পরীক্ষা শেষ হলো। এ প্লাস না পেলেও এ গ্রেড থাকছে এটা সে নিশ্চিত। 

রেজাল্ট হলো। অল্পকিছু নম্বরের জন্য প্লাস আসে নি। ৪.৮৯ জিপিএ এসেছে....

নামকরা বেসরকারি একটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। এখন থেকে বদলে যেতে শুরু করল স্বপ্নর জীবন।

প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রোগ্রামিংয়ে আরও দক্ষতা অর্জন করল। ভালো ভালো সব কাজ আসতে লাগল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর স্বপ্ন বাসা থেকে কোনো টাকা পয়সা নিতো না। প্রোগ্রামিং থেকে আয় করা টাকা থেকেই সব ম্যানেজ হয়ে যেতো। 

কাজের প্রতি আগ্রহ ও সততার ফলে সে আস্তে আস্তে দেশ  সেরা ফ্রিল্যান্সারদের কাতারে চলে আসে। প্রায় তিন বছরের দাঁতে দাঁত চেপে কাজ করার ফল এটা....

আরও দুই বছর পর স্বপ্ন একটি আইটি ফার্ম খুলে বসে। এবং বর্তমানে স্বপ্ন উঠতি বিজনেসম্যান হিসেবে যথেষ্ট পরিচিতি পেয়েছে।

ফুটনোটঃ কেবলমাত্র  ইচ্ছা আর অধ্যবসায়ের ফলে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পেরেছে স্বপ্ন। কেউ যেনো শুধুমাত্র পড়ালেখার কাছে নিজের স্বপ্নকে জলাঞ্জলি না দেয়। মধ্যবিত্তদের স্বপ্ন দেখা পাপ নয় মধ্যবিত্তরাই স্বপ্নকে বাস্তবে নিয়ে আসবে   


উৎসর্গঃ এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রাপ্ত সকল ভাইয়া ও আপুদের জন্য। এবং আগামি বছর এই দিনে আমার জন্য
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ সকাল ৮:৩৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানব সভ্যতা চিরতরে ধ্বংস হবে কি করে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৬



সে এক বড় অদ্ভুত বিষয়।
চিন্তা করে দেখুন এত দিনের চেনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশাল বিশাল ইমারত ভেঙ্গে যাবে, গুড়িয়ে যাবে। মানুষ গুহা থেকে বেরিয়ে আজকের আধুনিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×