তখন ছিলো আজম খান, ফকির আলমগির, ফিরোজ সাঁই, ফেরদৌস ওয়াহেদ, পিলু মমতাজ, নকিব খান,ফুয়াদ নাসের বাবুদের মত গুণি শিল্পীদের যুগ। ৭১ এ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে এদের মত শিল্পীরা প্রচলন শুরু করেন পপ মিউজিকের। গান গুলো শ্রোতারাও দারুণ ভাবে গ্রহন করে নেয়। সেটা ছিলো বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিকের প্রথম ধাপ। পপ মিউজিক পুরোদমে শ্রোতাপ্রিয় হতে থাকে। এমন সময় স্কুল পড়ুয়া কিছু রক্ত গড়ম ডানপিটে বালক আড়ম্ভ করেন রক মিউজিক। ব্যান্ডের নাম দিলেন "ওয়ারফেজ"। পপ সংগীতের যুগে রক সংগীত বাংলাদেশের মানুষের কাছে এক নতুন নাম।
১৯৮৪ সালের ৫ই জুন সেন্ট জোসেফ স্কুলের ক্লাস নাইনে পড়ুয়া একদল গান পাগল ক্ষ্যাপা কিশোরদের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে কালজয়ী ব্যান্ড "ওয়ারফেজ"। এই কিশোরগুলোই সর্বপ্রথম বাংলাদেশে রক মিউজিকের প্রচলন ঘটান। পপ সংগীতের যুগে এই ঘরানার গান আধুনিকই বটে! শুরু থেকেই তাদের ইচ্ছে ছিলো রক-হেভি মেটাল গান করার। এমনই আশা নিয়ে গান শুরু করেছিল ঢাকার ৪টি নতুন ব্যান্ড - ওয়ারফেজ, এইসেস , ইন ঢাকা ও রকস্ট্রাটা । ভালোবাসাকে পেশা হিসেবে চালিয়ে যাওয়ায় এদের মধ্যে শুধু ওয়ারফেজই এখনও রাজত্ব করে চলেছে ।
শুরুতে ওয়ারফেজের লাইন আপ ছিলো- কমল (বেস), হেলাল (ড্রামস), বাপ্পী (ভোকাল) এবং মীর ও নাইমুল (গিটার)। তবে এই লাইন আপ খুব বেশিদিন স্থায়ী হতে পারে নি। বাপ্পী,হেলাল ও মীর ব্যান্ড ছেরে দেন। এরপর বেস গীটার ছেড়ে লীড গীটার বাজাতে শুরু করেন ইব্রাহীম আহমেদ কমল । শেখ মনিরুল আলম টিপু দায়িত্ব নেন ড্রামসের। বাপ্পীর পরিবর্তে লীড ভোকালিস্ট হিসেবে যোগ দেন রাশেদ। তখন থেকেই ওয়ারফেজের ড্রামার হিসেবে আছেন টিপু। একমাত্র এই জায়গাটায় কখনো পরিবর্তন ঘটতে দেখা যায় নি। আর তাইতো তিনি এখন ও্যারফেজের দলনায়কের ভুমিকা পালন করছেন!
কিছুদিনের মাঝেই ওয়ারফেজের ভিতর আরেকদফা পরিবর্তন ঘটে। নাইমুল ব্যান্ড ছেড়ে দিয়ে আমেরিকা চলে গেলে ইন ঢাকার কী-বোর্ডিস্ট ফুয়াদ আর গীটারিস্ট মাশুক অতিথি শিল্পী হিসেবে বাজাতে থাকেন। বলে রাখা ভালো প্রথম দিকে ওয়ারফেজ ইংরেজি গান কাভার করত। বিভিন্ন বড় অনুষ্ঠানে ইংরেজি গান শোনানোর জন্য তাদের ভারা করে নেওয়া হতো। সে সময় তারা হোয়াইটস্নেক, ডিপ পার্পল ও আয়রন মেইডেনের গানগুলো দারুণ কাভার করত।
আস্তে আস্তে ওয়ারফেজের সুনাম, সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এভাবে একদিন তাঁরা বাংলা ব্যান্ড সংগীতের অন্যতম পুরাধা ও সমাজসচেতন শিল্পী মাকসুদুল হকের নজরে আসেন। একদিন মাকসুদুল হক তাদের নিয়ে মীরপুর পল্লবীতে বসেন। আলোচনার মুল টপিক ছিলো "কিশোররা কেনো বাংলা গান করছে না?" প্রায় কয়েক ঘন্টা আলোচনার পর কিশোররা মাকসুদ সাহেবের কথা আমলে নেয় ।
এর পরে তো শুধুই ইতিহাস। যা সবারই জানা। মাকসুদুল হকের অনুপ্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে কিশোরের দল বাংলায় রক-হেভি মেটাল গান শুরু করে ও ১৯৯১ সালের ২৬শে এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বামবার একটি কনসার্টে গান গেয়ে রীতিমত সারা ফেলে দেয়। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেয় অ্যালবাম বের করার। অবশ্য এরই মাঝে ওয়ারফেজের লাইন আপে তৃতীয় রদবদল হয়ে গেছে। কয়েকজন মেম্বার পড়ালেখার জন্য দেশের বাইরে চলে গেলে ব্যান্ডে যোগ দেন এখন পর্যন্ত বাংলা রক মিউজিকের সেরা ভোকাল সাঞ্জয়। তখন তাদের লাইন আপ হয় - সাঞ্জয় (লীড ভোকাল), কমল (লীড গীটার), বাবনা (বেইজ গীটার), টিপু (ড্রামস) ও রাসেল (গীটার/কি-বোর্ড)
১৯৯১ সালের ২৮শে জুন "ওয়ারফেজ" শিরোনামে বের হয় তাদের প্রথম অ্যালবাম। আগেই বলেছি বাংলাদেশে হার্ড রক মিউজিক সে সময়ে একদমই নতুন নাম। তাই একটু সময় নিলেও ওয়ারফেজের প্রথম অ্যালবাম দারুণ হিট করে। ওয়ারফেজই প্রথম ব্যান্ড যারা হার্ড রক মিউজিক করে শুরুতেই সাফল্যের মুখ দেখে। এর আগে রকস্ট্রাটা একটা অ্যালবাম বের করলেও তেমন শ্রোতামুখী করে তুলতে পারে নি। প্রথম অ্যালবামের "একটি ছেলে", "বসে আছি একা", "স্বাধিকার", "কৈশর" এখনো মানুষের মুখে মুখে থাকে। "বসে আছি" ও "একটি ছেলে" এই গান দুটো এতটাই জনপ্রিয় যে প্রায় প্রত্যেকটা কনসার্টেই তাদের অবশ্যই গাইতে হয়।
১৯৯২ ও ১৯৯৩ সালে টানা দুবার "কোকাকোলা ব্যান্ড অ্যাওয়ার্ড" এ সেরা ব্যান্ডের পুরষ্কার পায়। তৎকালীন সেরা ব্যান্ড ফিডব্যাক, সোলস, উচ্চারণ এদের পিছনে ফেলে সেরা ব্যান্ডের কাতারে চলে আসে ওয়ারফেজ।
প্রথম অ্যালবাম হিট হওয়ার পর তাঁরা দ্বিতীয় অ্যালবাম নিয়ে কাজ শুরু করে। তবে সবে মাত্র যখন ওয়ারফেজ হাটঁতে শিখেছে তখন আবারও জটিলতায় পরতে হয় তাদের। রাসেল আর কমল পড়াশোনার জন্য বিদেশে চলে গেলে ওয়ারফেজের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পরে। রাসেল-কমল মাঝে মাঝে ছুটিতে দেশে এলে চলে রেকর্ডিং।
এভাবে করেই ১৯৯৪ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর প্রকাশ পায় ওয়ারফেজের দ্বিতীয় অ্যালবাম "অবাক ভালোবাসা"। এই অ্যালবামটির টাইটেল ট্র্যাক গেয়েছিলেন বাবনা কবির এবং এই গানটি দারুণ শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছিল। অসাধারণ লিরিক্স ও কম্পোজিশনের গানটি এখনো অনেক জনপ্রিয়। দ্বিতীয় অ্যালবাম প্রকাশের পর পরই ব্যান্ড ছেড়ে আমেরিকা পাড়ি জমান রাসেল আলী। যিনি আমেরিকা গিয়েও মিউজিককে পেশা হিসেবে নিয়েছে ।
১৯৯৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ঈদের মধ্যে বের হয় ওয়ারফেজের তৃতীয় অ্যালবাম "জীবনধারা"। প্রথম দুটো অ্যালবামের চেয়ে একটু আলাদা করার লক্ষ্য নিয়েই এই অ্যালবাম করা। হার্ড রক ছেড়ে এবার একটু সফট রক উপহার পেলো ওয়ারফেজ ভক্তরা। জীবনধারা অ্যালবামের বাবনার কণ্ঠে "মৌনতা" ও গানটি ছিলো এক কথায় অসাধারণ। এছাড়া সাঞ্জয়ের গলায় "ধুপছায়া" গানটি ছিলো মায়াকারা এক ধরনের গান।
এবার একটু পিছনে ফেরা যাক, রাসেল আলীর সাথে বাবনা করিমও বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। ছুটিতে ফিরে রেকর্ডিং এর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। জীবনধারা অ্যালবামটিই ওয়ারফেজের সাথে বাবনা করিমের শেষ অ্যালবাম।
১৯৯৮ সালের ২ এপ্রিল, রোজার ঈদে মুক্তি পায় ওয়ারফেজ তথা বাংলাদেশের রক মিউজিক ইতিহাসের অন্যতম সেরা অ্যালবাম "অসামাজিক" । এই অ্যালবামে যুক্ত হন দেশ সেরা বেজিস্ট বেজবাবা-সুমন (অর্থহীন) ও লীড গীটারিস্ট ইকবাল আসিফ জুয়েল। যে অ্যালবামে রয়েছে দেশ সেরা বেজিস্ট, দেশ সেরা লীড গীটারিস্ট ও দেশ সেরা ড্রামারদের সংমিশ্রণ সেই অ্যালবাম কি হিট না হয়ে পারে!! এই অ্যালবামের সেরা তিনটি গান "অসামাজিক", "ধুসর মানচিত্র" " ও "অশনি সংকেত" বাংলা রক মিউজিকে আলাদা ভাবে স্থান করে নিয়েছে।
এই অ্যালবামের পরেই ওয়ারফেজ সবথেকে সংকটাপন্ন অবস্থা পার করে। ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে ব্যান্ড ত্যাগ করে হৃদয় গ্রাসী শিল্পী সাঞ্জয়। ভক্তদের হতাশ করে ব্যান্ড ছেড়ে চলে যান সাঞ্জয়। আর এই সাঞ্জয়ের বিকল্প খুঁজে পেতে ওয়ারফেজকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল সুদীর্ঘ দুইটি বছর। অতঃপর ওয়ারফেজ ও তার ভক্তরা পায় বর্তমান লীড ভোকাল মিজানকে। এরই মাঝে পুরো ব্যান্ড আবারো এলোমেলো হয়ে যায়। কমল আর টিপু বাদে পুরোনো বাকি সবাই ব্যান্ড ত্যাগ করে। নতুন যোগ দেন বালাম (গীটার ও ভোকাল), শামস (কি-বোর্ড) ও বিজু (বেজ গীটার)। উল্লেখ্য, বালাম অনেক আগে থেকেই ওয়ারফেজের সাথে ছিলেন। অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে তাঁর লেখা একটি লিরিক্স নিয়ে ওয়ারফেজ গান করেছিল।
নতুন লাইন আপ নিয়ে ২০০১ সালে মুক্তি পায় পঞ্চম অ্যালবাম "আলো"। গত তিনটি অ্যালবামের মত এটাও যথারীতি শ্রোতারা তৃপ্তি সহকারে খেয়েছিল। এই অ্যালবামে মিজানের গলায় "বেওয়ারিশ" গানটি প্রবল জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়া বালামের গাওয়া "সময়", "যত দুরেই থাকো", "সেই স্মৃতি গুলো" গানগুলোও দারুণ সমাদৃত হয়। আর মিজানের গলায় হতাশা গানটিতো ছিলো আগুনের গোলা! সাঞ্জয়-বাবনা চলে যাবার পর এই অ্যালবাম টিই সবচেয়ে বেশি ব্যবসা সফল হয়।। "আলো" অ্যালবামটি কমলের আপন ছোট ভাইকে উৎসর্গ করা হয়। যিনি সরক দুর্ঘটনায় মৃত্যবরণ করেছিলেন।
২০০২ এ ব্যান্ড ত্যাগ করে ব্যক্তিগত কাজে বিদেশে পারি জমান মিজান । এর কিছুদিন পরেই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ব্যান্ড ত্যাগ করেন প্রতিষ্ঠা সদস্য কমল ও ২০০৬ এ তিনি অর্থহীন ব্যান্ডের গেস্ট মিউজিসিয়ান হিসেবে যোগ দেন। একা হয়ে পরেন সিনিয়র সদস্য টিপু। তবে জাহাজের অভিজ্ঞ নাবিক টিপু শক্ত হাতে ব্যান্ডের নেতৃত্ব দেন। কমলের জায়গায় আসেন সাজ্জাদ আরেফিন । মুল ভোকালে আসেন বালাম। সে বছর বিজুও ব্যান্ড ছেড়ে দেন। বেজে আসেন সেজান।
নতুন লাইন আপে ২০০৩ সালে বের হয় ওয়ারফেজের ষষ্ঠ অ্যালবাম "মহারাজ"।
এই অ্যালবামে বালামের গলায় আরও কিছু আগুন ঝড়া গান উপহার পায়। "মহারাজ' অ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাক এতটাই জনপ্রিয় যে "একটি ছেলে", "বসে আছি একা"র মত প্রত্যেকটা কনসার্টেই গাইতে হয়। এছাড়া "সুখ", "বাঙালিরা আর কত দেখবে" ও "স্বপ্ন তুমি নও" গান গুলো ভালোই জনপ্রিয়তা পায়।
এরপর, ২০০৬ এ লীড গীটারিস্ট সাজ্জাদ আরেফিন ওয়ারফেজ ছেড়ে দেন। প্রায় একই সময় সেজানও পড়াশোনার তাগিদে বিদেশে গমন করেন। সেজানের জায়গায় পাকাপাকি ভাবে যোগ দেন রজার। কিছুদিন পর প্রচলিত ধারায় সলো ক্যারিয়ারের উদ্দেশ্যে ভোকালিস্ট বালামও ওয়ারফেজ ত্যাগ করেন। কমল ২০০৭ এ অর্থহীন-ওয়ারফেজ উভয় ব্যান্ডেই বাজান। ওদিকে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসছে যে! মিজান আবার ওয়ারফেজে জয়েন করলে পরিবারটি পুনরায় আগের মত হতে থাকে। সাথে ভাইব ব্যান্ডের গীটারিস্ট অনি হাসান যুক্ত হন। অনি নিজের গীটার বাজানোর দক্ষতা আর অ্যামাইজিং স্টেজ অ্যাটিটিউডের মাধ্যমে খুব সহজেই স্থান করে নেন ওয়ারফেজ ভক্তদের হৃদয়ে।
এবার ওয়ারফেজের লাইন আপ দাঁড়ায়- ভোকাল: মিজান, লীড গীটার : কমল, লীড গীটার : অনি হাসান, বেজ গীটার: রজার, ড্রামস : টিপু। এই লাইন আপ নিয়ে, ২০০৮ সালে "পথচলা" নামের একটি অ্যালবাম বের করে যাতে পুরোনো কিছু গান নতুন করে রেকর্ড করা হয়। অবশ্য নতুন দুটি গানও থাকে- "তোমাকে" ও "অমানুষ"। এদের মধ্যে দারুণ লিরিক্স ও কম্পোজিশনের মিলন হওয়ায় অমানুষ গানটি ব্যাপক প্রশংসা কুড়োয়। ফলে শ্রোতারাও ভালোভাবেই হজম করে নেয় অ্যালবামটি।
আগের লাইন আপ নিয়েই ওয়ারফেজ ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর বের করে তাদের সপ্তম অ্যালবাম "সত্য"। অ্যালবামটিতে পূর্ণতা, জনস্রোত, যেদিন রূপকথা, সত্য, না, আগামী, প্রজন্মের মত প্রভৃতি নতুন গান শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়া ২০০০ সালের একটি অপ্রকাশিত গানও এই অ্যালবামে যুক্ত হয়।
গত দশ বছর চলছিল খুব ভালোই । কিন্তু আবারও ভাঙণের সুর বেজে উঠল ওয়ারফেজের সংসারে ।
বছর দেড়েক আগে অসমাপ্ত লেখাপড়া শেষ করার কারণ দেখিয়ে ব্যান্ড ছেড়ে ইউনাইটেড কিংডমে পারি জমিয়েছেন লীড গীটারিস্ট অনি হাসান। তার বদলে এসেছেন পাওয়ার সার্জ ব্যান্ডের সামির হাফিজ। এবং কিছুদিন আগে সবচেয়ে হৃদয় ভাঙা খবর শুনেছে আর তা হলো ভোকাল মিজানের ওয়ারফেজ ত্যাগ করা । পুণরায় একা হয়ে পড়লেন কমল ও টিপু….
এই ত্রিশটি বহু মিউজিসিয়ানের ছোঁইয়া পেয়েছে ওয়ারফেজ । কেউ এসেছেন ,কেউ একা ফেলে চলে গেছেন । এরজন্যই ওয়ারফেজকে বলা হয় ভাঙা গড়ার আরেক নাম । কেননা যতবারই ভাঙনের মুখ থেকে উঠে এসেছে ততবারই ফিরে এসেছে আগের চেয়ে আরও রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। প্রতিবারই বাউন্স ব্যাক করেছে তারা , ওয়ারফেজ ভক্তরা পেয়েছে দারুণ সব ট্র্যাক। এ সবকিছু সম্ভব হয়েছে টিপু ও কমল ভাইদের মত যোগ্য নেতারা আছেন বলেই ।
শিরোনামে বলেছি চিরতরুণ ওয়ারফেজ । আসলে কাগজে কলমে বয়স বাড়ছে ওয়ারফেজের, কিন্তু ভক্ত সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে!! আর তাদের লাইভ পারফর্মেন্স দেখে তো মনে হয় ২০ বছরের যুবক বুক উচিয়ে গান করছে!!
আবার দেখুন লীড গীটারিস্ট কমলের স্টাইলও ১৪/১৫ বছরের কিশোররা অনুকরণ করছে। মাথায় স্ট্রেইট লম্বা চুল, তার ওপর কান টুপি, কুনুই পর্যন্ত ওঠানো কালো ফুল হাতাওয়ালা টি-শার্ট। এত গ্ল্যামার যাঁদের আছে তাদের তরুণ সম্বোধন না করে কি পারা যায়?
বাংলাদেশে হার্ড রক ঘরানার গান ওয়ারফেজই এনেছিল। আগে মানুষ রক মিউজিক বলতে বুঝত শুধু দ্রিম দ্রিম শব্দ আর কান ফাটানো চিৎকার। কিন্তু ওয়ারফেজ সবাইকে বুঝিয়েছে দ্রিম দ্রিম শব্দ, চিৎকার চেঁচামেচি দিয়ে রক মিউজিক হয় না। রক মিউজিকের একটা নিজস্ব স্টাইল আছে। ভালোবাসা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তাঁরা সেই স্টাইলকে রপ্ত করে নিয়েছেন। অবশ্যই ওয়ারফেজের ড্রামার টিপু ও গীটারিস্ট কমল দেশসেরা তো বটেই , এশিয়ার বেস্ট মিউজিসিয়ানদের একজন। কোথায় কোন সুর দিতে হবে তা খুব ভালোভাবেই জানা আছে তাঁদের। স্প্যানিশ গীটারে বাংলা গানের সুর দিতে জানেন । আর তাইতো ওয়ারফেজ গত তিন দশক ধরে বাংলা রক ব্যান্ডের এক নম্বর স্থান ধরে রেখেছে। বর্তমানে নতুন যেসব হেভি মেটাল রক ব্যান্ড মঞ্চ কাঁপাচ্ছে তাদের সকলের আইডল হয়ে আছে ওয়ারফেজ।
তথ্যসূত্রঃ গুগল
ফুটনোটঃ মাস ছয়েক আগে ফেসবুকে প্রকাশ করেছিলাম । আজকে এটাকেই সামুতে আমার প্রথম পোস্ট হিসেবে ব্যবহার করলাম ।