ইংল্যান্ডের একটি ফুটবল ক্লাবের লড়াই করার গল্প যেন সুলিখিত উপন্যাসের কাহিনীকেও হার মানিয়েছে! ১২৫ বছর পুরনো ক্লাবটির ইতিহাসে যতটা উত্থান পতন রয়েছে গত দুই দশকের নাটকীয়তা তার সবটাকেই যেন ছাপিয়ে গেছে!
১৯৯৭ সালে প্রথমবারের মত ক্লাবটির দেউলিয়া হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে প্রাণপ্রিয় ক্লাবকে বাঁচাতে এলাকাবাসী, খেলোয়াড় আর সমর্থকেরা টাউন হলে জমায়েত হয়েছিলেন। এক পাউন্ড দুই পাউন্ড করে যে অর্থ তারা একত্রিত করতে পেরেছিলেন তাতে দ্যা চেরিরা সে যাত্রায় বেঁচে যায়। আর এভাবেই কমিউনিটি ফান্ডে গড়ে উঠে ইউরোপের প্রথম কমিউনিটি বেইজড ফুটবল ক্লাব। আর এরই ধারাবাহিকতায় এএফসি বর্নমাউথ ফুটবল ক্লাবের যাত্রা চলছে যা গল্প উপন্যাসের রূপকথাকেও হার মানায়।
ভাগ্যদেবী সহায় না থাকায় ২০০৮ সালে ক্লাবটি আবারো অর্থ সংকটে পড়ে! ৪০ লক্ষ পাউন্ডের দায় মেটাতে সবকিছু বিক্রি-বাট্টা করে দেয়ার চিন্তা শুরু হয়। চেয়ারম্যান মস্টিন এক মাস খরচ চালানোর সমপরিমাণ অর্থ জোগাড় করতে পারায় তারা এক দশকের ভিতর দ্বিতীয়বারের মত দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রেহাই পায়। কিন্তু যে উপায়ে তারা তাদের অর্থ সংকট দূর করেছিল তা লীগ কর্তৃপক্ষ আইনানুগ মনে না করায় তাদের ১৭ পয়েন্ট কেটে নেয়া হয়। ক্লাব কর্তৃপক্ষ এই দণ্ড মেনে নেন, চেরিরা লীগ টু-তে অবদমিত হয়!
এরপর আরেক প্রস্থ দুঃখের আখ্যান শুরু হয়। তাদের ২০০৮-০৯ মৌসুম শুরু হয় যাচ্ছে-তাই ভাবে। যার জন্য মৌসুমের মাঝপথে ম্যানেজারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। দলের হাল ধরেন ক্লাবের সাবেক খেলোয়াড় এডি হাওয়ি। ঘরের মাঠে লীগের শেষ ম্যাচে ২-১ গোলে বিজয়ী হওয়ায় তারা সেইবার কোনভাবে লীগ থ্রিতে অবদমন ঠেকাতে পেরেছিল।
এডি হাওয়ির তত্বাবধানে ২০০৯-১০ মৌসুমে এএফসি বর্নমাউথ দুই ম্যাচ হাতে রেখেই লীগ ওয়ান-এ জায়গা করে নেয়। উনি বার্নলিতে চলে গেলে দলের ম্যানেজারের হাল ধরেন লি ব্রেডবারি। ২০১০-১১ মৌসুমে তিনি ক্লাবকে প্লে-অফ অবধি নিয়ে গিয়েছিলেন। পরের মৌসুমে ফলাফল খুব ভালো না হওয়ায় এএফসি বর্নমাউথকে লীগ ওয়ানেই খেলতে হয়। আবারো দলের হাল ধরেন এডি হাওয়ি। ২০১২-১৩ মৌসুমের শুরুতে তারা পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে ছিল। রেলিগেশন যখন প্রায় নিশ্চিত তখন হাওয়ি এক ভেল্কিতে ক্লাবকে পয়েন্টে টেবিলের উপরে নিয়ে আসেন। আর দ্য চেরিরা প্রোমোশন পেয়ে চ্যাম্পিয়নশিপে জায়গা করে নেয়।
তাদের এই ঊর্ধ্ব গমন এখানেই থেমে থাকেনি। ২০১৪-১৫ মৌসুমে অনেক রেকর্ড ভেঙ্গে-চুড়ে তারা চ্যাম্পিয়নশীপ (প্রথম বিভাগ ফুটবল) থেকে বনেদি ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে জায়গা করে নেয়। নতুন মৌসুমে ৩ খেলায় এক জয়ে এখন পর্যন্ত তাদের সংগ্রহ ৩ পয়েন্ট। লীগ টু থেকে লীগ ওয়ান সেখান থেকে চ্যাম্পিয়নশিপ আর এখন প্রিমিয়ার লীগ, এক কথায় অসাধারণ!
সাউথ কোস্টের পাড়া গাঁয়ের একটি ফুটবল ক্লাব দেউলিয়াত্ব থেকে প্রিমিয়ার লীগের বিশ্ব ফুটবল দরবারে পদার্পণ করেছে, যা চিন্তা করতেও ঢের সাহসের প্রয়োজন, তাই না?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৩২