আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “শীঘ্রই মানুষ তোমাদেরকে আক্রমণ করার জন্য আহবান করতে থাকবে, যেভাবে মানুষ তাদের সাথে খাবার খাওয়ার জন্য একে অন্যকে আহবান করে ৷”
জিঞ্জেস করা হলো, “তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হবো ?”
তিনি বললেন, “না, বরং তোমরা সংখ্যায় হবে অগনিত কিন্তু তোমরা সমুদ্রের ফেনার মতো হবে ৷ যাকে সহজেই সামুদ্রিক স্রোত বয়ে নিয়ে যায় এবং আল্লাহ তোমাদের শত্রুর অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দুর করে দিবেন অর্থাৎ তারা তোমাদের ভয় করবে না এবং তোমাদের অন্তরে আল-ওয়াহ্হান ঢুকিয়ে দিবেন ৷”
জিঞ্জেস করা হলো, “হে আল্লাহর রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল-ওয়াহ্হান কি ?”
তিনি বললেন, দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং ক্বিতাল ( যুদ্ধ) কে অপছন্দ করা ৷
[ মুসনাদে আহমদ, খন্ড-১৪, হাদীস নম্বর ৮৭১৩,]
(হাইসামী বলেছেন, হাদীসটির সনদ ভাল, শুয়াইব আল আর নাউতের মতে হাদীসটি হাসান লি গাইরিহি)
অপর বর্ণনায় সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা ৷
[ সুনানে আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদ, হাদীস হাসান]
উক্ত হাদিস থেকে একথা স্পষ্ট যে, আমরা যখন দুনিয়ার ভোগ বিলাস সাজ সরঙ্জাম নিয়ে ব্যতি ব্যাস্ত হয়ে পড়বো, মৃত্যুকে ভয় পাবো (যদিও মৃত্যু নিশ্চিত) আর আল্লাহর বিধান জিহাদ-কিতালকে অপছন্দ করবো তখন আমাদের উপর থেকে আল্লাহর রহমত উঠে যাবে এবং শাস্তি নেমে আসবে। যেদিন থেকে মুসলিমের অস্র গুলো কোষ বদ্ধ হতে শুরু করেছে, আমলে উওম না হয়ে কে আমলে বেশি পরিমাপ করতে শুরু করেছে সেদিন থেকেই কাফেরা জেগে উঠেছে মুসলমানের বিরুদ্ধে। তারা কখনো বসে নেই ষড়যন্ত্র করা থেকে । বরং আমরা তাদের পাতানো ফাদে পা দিয়ে তাদের দেখানো পথেই চলছি। কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর বিধানের একচুল পরিমান পরির্বতন হবে না। আমরা একথা স্বীকার করলেও দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে পারছি না। যদি বিশ্বাস করতেই পারতাম তবে আল্লাহর বিধান জিহাদকে অপছন্দ করতাম না। উপরের হাদিস দ্বারা রাসুল সঃ এটাই বোঝাতে চেয়েছেন,
প্রথমত :
‘তোমাদেরকে আক্রমণ করার জন্য লোকজন একে অন্যকে আহবান করবে, যেভাবে খাবারের জন্য আহবান করা হয়। এখানে মুসলমানদের খাবারের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যা থেকে মেহমান রুপী কাফেররা ভাগ করে নিবে। যার শক্তি যত বেশি সে খাবার থেকে ততটাই নেবে। বর্তমান বিশ্বে আজ আমরা অনেকটাই তার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। পৃথিবী থেকে খেলাফত বিলুপ্ত হওয়ার পর এই কাফেররাই প্রথমে মুসলিম ভুমি গুলোকে পৃথক পৃথক সীমা রেখায় আলাদা করেছে। মুসলিমদেরকে আলাদা আলাদা রাষ্টের সীমানায় জাতীয়তা বোধের মাধ্যমে আলাদা করে হামলা করছে। হিওয়া উচিত ছিল প্রত্যেক মুসলমান একটা দেহের ন্যায় কিন্তু বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ দলে দলে বিভক্ত, আল-কুরআনও সুন্নাহ হতে দূরে সরে যাওয়ার কারণে। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে দুনিয়ার অন্যান্ যজাতি, মুসলিম উম্মাহর উপর সরাসরি আক্রমণ চালাচ্ছে (এবং একে অন্যকে আক্রমণের জন্য উৎসাহ দিচ্ছে (দাওয়াত খাওয়ার মতন করে) যার শক্তি অস্র যতবেশি সে তত বেশি হামলা করছে। যেমন : ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ফিলিস্তান, কাশ্মীর ইত্যাদি- আদর্শকে টিকিয়ে রেখে মুসলমানদের কে আল্লাহ যে সম্পদ দিয়েছেন তাও লুটে নিয়ে যাচ্ছে এসব জাতি। কেউ আক্রমণ করছে সরাসরি আগ্রাসী সেনাবাহিনী পাঠিয়ে, কেউবা কুটনৈতিক (diplomacy) এর মাধ্যমে, কেউবা আদর্শিকভাবে (ideologically),কেউবা সংবাদ মাধ্যম, প্রিন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে, কেউবা তাদের আবিস্কৃত শিক্ষা- ব্যবস্থা রপ্তানী করে তাদের মানসিক দাস তৈরির প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আর এক্ষেত্রে তারা গণতন্ত্র রক্ষা, মানবতা, নারী-মুক্তি, শিশু-অধিকার, সবার জন্য শিক্ষা,সামাজিক-উন্নয়ন ইত্যাদি বিভিন্ন শব্দের মোড়কে তাদের কার্যক্রমকে ঢেকেনিয়েছে। বস্তুতঃ ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস করার পর থেকেই পশ্চিমাবিশ্ব মুসলিম উম্মাহর উপর এই আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে অনবরত। আর এটা প্রত্যক্ষ করেও আমরা মুসলমানরা আমাদের পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া গৌরব উজ্জল অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে কুন্ঠা বোধ করছি।
দ্বিতীয় :
‘তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হবো?’ তিনি বললেন, ‘না, বরং তোমরা তখন অগণিত হবে।’ এখান থেকে বুঝা যায়, বেশি সংখ্যক হওয়া ইসলামের কোন আবশ্যকীয় বিষয় নয়।। ইসলাম চায় উত্তম আর্দশধারী মুসলমান।, সংখ্যা এখানে মূখ্য নয়। আল্লাহ চেয়েছেন, “তোমাদের মধ্যে কে আমলে উত্তম ’ (আ’মালুন সালিহান), এটা চাননি যে, ‘তোমাদের মধ্যে কে আমলে বেশি ’ (আ’মালুন কাছিরান)।” বদরের যুদ্ধে কাফিরদের সংখ্যা ছিলো মুসলিমদের তিনগুণ। ইয়ারমুকের যুদ্ধে কাফিররা ছিলো মুসলিমদের ৭০ গুণ। উভয় যুদ্ধেই মুসলিমরা বিজয়ী হয়। পরদিকে, হুনায়ুনের যুদ্ধে মুসলিমদের সংখ্যা ছিলো পূর্বেকার থেকে বেশি। কিন্তু সে যুদ্ধে তারা পরাজয়ের দাঁড় গোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহর রহমতে বিজয় আসে। আফসোস, বর্তমান মুসলিম উম্মাহ, তাদের সংখ্যাধিক্যের পরিসংখ্যান দেখেই শান্ত।, কোন ধর্ম সবচেয়ে বেশি গতিতে বেড়ে চলেছে, কোনদেশে মুসলিম কত উন্নতি করছে ইত্যাদি ব্যাপার নিয়ে তারা ব্যস্ত। কিন্তু মুসলিমদের উওম আদর্শ নিয়ে কোন চিন্তা হচ্ছে না। অথচ আল্লাহ আল-কুরআনে বারবার বলেছেন, “বিজয় শুধুমাত্র তাঁর কাছ থেকে আসে, আর তাঁর বিজয় দানের ওয়াদা শুধু মুমিনদের জন্য।”
তৃতীয়ত :
‘তোমরা হবে সমুদ্রের ফেনা রাসির মতো, যা স্রোতে সহজেই ভেসে যায় ।’ এটা হচ্ছে, বেশি সংখ্যক হওয়ার পরও মুসলিম উম্মাহর এই অবস্থার বর্ণনা। সাগরের ফেনার যেভাবে কোন শক্তি নেই, শুধু উপর থেকে দেখতে অনেক মনে হয়, অন্যদিকে নিচের পানির স্রোত তাকে যেদিকে ইচ্ছা নিয়ে যায়। মুসলিম উম্মাহও সংখ্যায় বেশি, কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই তাদের বলার কিছু নেই। তাদের প্রতিটি দেশই সুদভিত্তিক অর্থনীতি দিয়ে পরিচালিত, আল-কুরআন সুন্নাহ বিবর্জিত পশ্চিমাবাদের আবিস্কৃত গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র-পুঁজিবাদী- রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় তাদের দেশগুলি পরিচালিত হচ্ছে। আর ইসলামের গন্ডি শুধুমাত্র মসজিদ ও কতিপয় পারিবারিক আইনে সীমাবদ্ধ। এ যেন সংখ্যায় বেশি হয়েও তারা সীমিত। কাফের-মুশরিক- ইসলামের শত্রুরা ঔদ্ধত্যের সাথে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে কিন্তু মুসলিমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের একটি কথাও বলতে পারে না। মুসলিম দেশের হাজার হাজার সৈন্যবাহিনী থাকলেও মুসলিমদের উপরে এত হামলা হওয়ার পরও তারা কোন পদক্ষেপই গ্রহন করছে না। আল্লাহ এবং তার রাসুলকে কটুক্তি করার পরও তারা নিশ্চুপ অবস্হান গ্রহন করে আছে। অথচ সমুদ্রের ফেনা রাশির মতোই মুসলিমউম্মাহ ও সংখ্যাধিক্য নিয়ে আনন্দিত, উল্লাসিত, গর্বিত।
চতুর্থত :
‘আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দিবেন এবং তোমাদের মধ্যে আল- ওয়াহ্হান ঢুকিয়ে দিবেন।’ এখান থেকে দুটি বিষয় প্রতীয়মান হয়।
ক).
মুসলিমদের শত্রু আছে, মিত্র আছে। ইসলাম কোন বৈরাগ্যবাদী ধর্ম নয়, কিংবা ‘অহিংস পরমধর্ম’ প্রকৃতির গৌতমীয় বাণীতে বিশ্বাস করে না। বরং, ইসলামে ভালোবাসা ও ঘৃণা (আন ওয়ালা ওয়াল বা’রা)একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারনা। । অনেক অধুনিক এবং মুসলিম যাদের মন-মগজ পশ্চিমা শিক্ষা-ব্যবস্থা, ডিস, ইন্টারনেট প্রভৃতির মাধ্যমে সঠিক ইসলামের শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে, তারা যতই এ ব্যাপারটায় তাদের বিদেশি বন্ধুদের কাছে অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়েন না কেন। আল্লাহর রহমত, তিনি আল-কুরআন ও সহীহ হাদিসকে অবিকৃত রেখেছেন। না হলে এরা ইসলামকে বিকৃত করে কোথায় নিয়ে যেতো। আল্লাহ বলেন : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহূদ ও নাসারাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদের মধ্যেই গণ্য হবে। আল্লাহ জালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।” (সুরা- মায়েদা : ৫১) মুসলিমদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে বাদ দিয়ে, বিজাতীয় প্রভুদেরকে বন্ধু অভিভাবক করে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
খ).
মুসলিমদের উচিত তাদের শত্রুদেরকে ভীত সন্ত্রস্থ রাখা। আর তাদের অন্তরে আমাদের ভয় থাকাটাই স্বাভাবিক পরিস্থিতি. যদি না থাকে, বুঝতে হবে, কোন সমস্যা আছে। কারণ রাসুল (সা.), আমাদের দুরবস্থার একটি কারণ হিসেবে তাদের মনে, আমাদের ভয় না থাকাকে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমরা আজ নিজেদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে কাফেরদের মন থেকে ভয় দূর করে দিয়েছি। কিন্তু হওয়া উচিত ছিল সম্পূর্ন ভিন্ন। আজ আমরা ইসলাম শান্তির ধর্ম ইসলাম শন্তির ধর্ম বলে মুখে ফেনা তুলে অস্রকে পুরোপুরি বির্সজন দিয়ে ফেলেছি। কিন্তু কাফেররা কিন্তু ঠিকই আজও বহন করছে। যার করনে আমরা পদে পদে লাঞ্চনার স্বীকার হচ্ছি। বাগদাদ শহরে যখন তাতাররা হামলা চালানোর হুমকি প্রদান করে তখন সেখানের মুসলমানরা অস্র ফেলে রেখে মসজিদে ঢুকে গিয়েছিল দোয় করার জন্য। বাদশাহর বিপুল পরিমান সম্পদ জমা ছিল বায়তুল মালে। কিন্তু সেখান থেকে সেনা বাহিনী গঠনে কোন কিছুই ব্যয় করেনি। ফলসরূপ বিনা বাধায় তাতাররা বাগদাদ শহরকে দখল করে নেয় এবং ইতিহাসের ন্যাক্কার জনক হত্যাযজ্ঞ চালায়। ভোগ বিলাসে মেতে না থেকে, আল্লাহর নেয়ামত হাদীদকে ব্যবহার করে তার ফরয করা জিহাদকে অস্বীকার না করে, (কুরআনে বলেছেন: আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি (যুদ্ধশক্তি) এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ জেনে নিবেন কে, না দেখে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে সাহায্য করে (জিহাদ করে বা অন্যান্য মাধ্যমে), আল্লাহ্ শক্তিধর, পরাক্রমশালী…) [আল-হাদিদ, আয়াত-২৫]
শুধু মসজিদে দোয়ার মধ্যে না থাকতো তবে সেদিন তাতারদের ইতিহাস অন্যরকম লেখা হতে পারতো। যেমনটি মিশর হামলা করতে গিয়ে হয়েছিল। ইতিহাসের প্রথম হারটাই শেষ হার হিসাবে পুরো তাতারদেরকে ধংস করে দেয়। পুর্নগঠনের কোন সুযোগই পায়নি তারা। আমাদের সমাজেও আজ এমন অনেককে দেখা যায়, যারা শুধু মসজিদ ভিত্তিক ইবাদতকেই দ্বীন হিসাবে গ্রহন করেছে আর বদর ওহুদকে ভুলে বসে আছে। যার সুযোগ গ্রহন করে মুসলমানের উপর একের পর এক হামলা করে যাচ্ছে কাফিররা। আজ আমরা আমাদের শৈশব, কৈশোরে, পড়ালেখা করে চাকরি নেওয়া, টাকা আয় করে পরিবারের ভরণপোষণ করা, বিয়ে করে পরবর্তী বংশধর উৎপাদন করা, বৃদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি যা ‘গবাদি- পশুর’ সাথে অনেক মিল পাওয়া যায়।
কিন্তু আমাদের তো আল্লাহ এমন দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছে যা পশুদের দেয়নি। আমরা আমাদের করণীয়গুলো যথাযথভাবে করছি না, হয়তো আমরা ইসলামের কিছু কিছু নিয়ম-কানুন, রসুমাত-রেওয়াজ পালন করি, কিন্তু নিজের জীবনে ইসলামকে ধারণ করিনি, ইসলাম আমাদের জীবনের মিশন ভিশন হয়ে উঠেনি-যা মুসলিম মাত্রই হওয়ার কথা ছিলো।
আর আল্লাহ তাআ’লা এ ব্যাপারটিই কুরআনে বলেছেন : “ ‘তাহলে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশকে বিশ্বাস করো এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান করো? অতএব তোমাদের যারা এমন করে তাদের পার্থিব জগতে লাঞ্ছনা ও অবমাননা ছাড়া আর কী প্রতিদান হতে পারে? এবং ক্বিয়ামাতের দিন তারা কঠিন শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হবে, আর তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ গাফেল নন।’” (সুরা-বাক্বারা : ৮৫)
যারা শহীদদের ভুলে যায়, নির্যাতিত মানুষের কথা ভুলে যায়, তারা বিজাতির গোলাম হয়। যে জাতি গাদ্দারদের মাথায় তুলে নাচে তাদের অন্ধকার রজনী কোনদিন ভোরের আলো দেখেনা। আর গাদ্দাররা মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির প্রয়াস খুজে পায়। বিবেক বর্জিত পথে ঠেলে দেয় মানুষকে। যখন থেকে আমরা এই দুনিয়াকে নিজের জন্য জেলখানা মনে করবো, নিজেদের মুসাফির মনে করবো , শুধু কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছি, কিংবা যখন থেকে আমরা আল্লাহর রাস্তায় ক্বিতালকে আমাদের লাঞ্চনা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে জানবো, তখন আমরা এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবো ইনশাআল্লাহ। এছাড়া আমাদের দ্বিতীয় কোন পথ নেই। মুসলিম উম্মাহর সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে রাসুল (সা.)- এর একটি হাদিসের মধ্যে। তিনি বলেছেন : ‘যখন মানুষ দিনার এবং দিরহামের মধ্যে ডুবে যাবে, এবং যখন ঈনা নামক (সুদী) ব্যবসায় জড়িত হয়ে যাবে, আর গরুর লেজ-এ সন্তুষ্ট হয়ে যাবে এবং জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ছেড়ে দিবে, আল্লাহ তাদের উপর লাঞ্চনা চাপিয়ে দিবেন, তিনি তা উঠিয়ে নিবেন না, যতক্ষণ না তারা তাদের দ্বীনে ফিরত না যাবে।’ [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ (২/২৮), তাবরানী (১২/৪৩৩), বায়হাকী (শুয়াবুল ঈমান ৭/৪৩৪), আবু ইয়ালা (১০/২৯), আবু নাঈম (১/৩১৩)।]
মাদের লাঞ্চনার কারণ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ছেড়ে দেয়া, ক্বিতাল করতে গিয়ে আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুকে ভয় করা আর দুনিয়ার জীবনকে আখিরাত থেকে বেশী ভালোবাসা। আমরা এ অবস্হা থেকে মুক্ত হতে চাই ফিরে যেতে চাই আমাদের ইতিহাসের পথে। যদি রাষ্টের স্লোগন এমন হতে পারে “একাওরের হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেকবার” তবে আমরা মুসলিমরা কেন বদরের হাতিয়ারকে সহস্রবার গর্জে ওঠাতে পারবো না। বরং এটাই সুন্নাহ। কিন্তু যখনই আমরা একথা গুলো বলতে চাই, ইসলামের ভ্রান্ত ধারনা এবং বিশ্বাস গুলি সংশোধনের ক্ষেত্রে যখন কোন কথা উঠে এবং পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত হয়ে উঠে তখন আমরা বলে থাকি ইসলাম শান্তির ধর্ম, তাই তোমরা তর্ক করো না। ইসলাম শান্তির ধর্ম তোমরা অস্ত্র হাতে নেয়ার কথা চিন্তাও করো না…ইত্যাদি। আমাদের মনে রাখতে হবে ইসলাম শুধু
একটি ধর্মই নয় বরং পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্হা। এর একটি অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে জিহাদ। .
রবার্ট বিন বলেছেন:“অতীতে মুসলিমরা সারা বিশ্ব জয় করে ছিল এবং তারা আবারও তা করতে পারে।”
পাশ্চাত্যের অধিবাসীরা ইসলামের ব্যাঙ্গ করে বলে যে ইসলাম বিস্তার লাভ করেছে তলোয়ারের দ্বারা।
থমাস আর্নল্ড তার বইয়ে এমন ভাবে লিখেছে ইসলাম সম্পর্কে, যেন ইসলাম থেকে জিহাদের মানুসিকতা উঠে যায় এবং প্রমান করেছেন যে ইসলাম তলোয়ার ব্যবহার করে বিস্তার লাভ করে নি, বরং এটি বিস্তার লাভ করেছে শান্তিপূর্ণ দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে, কোন বল প্রয়োগ ছাড়াই।
মুসলিমরা তাদেরই উপর পাতা ফাঁদে পরে গিয়েছে। যখন মুসলিমরা অমুসলিমদের কাছ থেকে শুনে যে, ইসলাম প্রচার হয়েছে তলোয়ারের মাধ্যমে তখন তারা বলে, তুমি ভুল করছ, তোমাদেরই একজনের কাছ থেকে এর প্রত্যুত্তর শুন, এই টমাস বলেছে এই, এই।
কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাsmile বলেছেন: “আমাকে পাঠানো হয়েছে তলোয়ারের সাথে, যেন ভবিষ্যতে একমাত্র আল্লাহ্র প্রার্থনা করা হয় এবং আমার শক্তি দেয়া হয়েছ আমার বর্শার ছায়ার মধ্যে এবং মানহানী তাদের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে যারা আমার আদেশের বিপক্ষে এবং যারা তাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে তারা তাদের দল ভূক্ত।” [ বর্ণনা করেছেন আহমেদ, ৪৮৬৯, সাহিহ আল-জামি’ই, ২৮৩১।]
প্রকৃতপক্ষে তলোয়ার এবং ক্ষমতা ছিল একটি মাধ্যম যার দ্বারা ইসলামের বিস্তার ঘটানো হয়েছে, যা ইসলামের জন্য লজ্জাজনক নয়। পক্ষান্তরে এটা এক প্রকার শক্তি এবং গুন, কারন তা মানুষকে ইসলাম গ্রহন করাবে যার সুফল তারা পাবে এই জীবনে এবং পরকালেও। সর্বপরি আমাদের মনে রাখতে হবে, ইসলাম পালন বা প্রতিষ্ঠায় আমরা যে পদক্ষেপই গ্রহন করি না কেন, তা অবশ্যই হতে হবে আল্লাহ এবং তার রাসুল সঃ এর দেখানো পথ অনুসরে। এর বাহিরে কোন পন্হা উত্তম হতে পারে না। সাময়িক সুফল পেলেও তার করুন পরিনতি সুদূর প্রসারি। ইতিহাসের বাগদাদ শহর তার জ্বলন্ত নির্দশন। বর্তমান বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এমন অসংখ্য নির্দশন আছে। জ্ঞানীরা একটু পর্যবেক্ষন করলেই বুঝতে পারবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। - See more at: Click This Link হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “শীঘ্রই মানুষ তোমাদেরকে আক্রমণ করার জন্য আহবান করতে থাকবে, যেভাবে মানুষ তাদের সাথে খাবার খাওয়ার জন্য একে অন্যকে আহবান করে ৷”
জিঞ্জেস করা হলো, “তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হবো ?”
তিনি বললেন, “না, বরং তোমরা সংখ্যায় হবে অগনিত কিন্তু তোমরা সমুদ্রের ফেনার মতো হবে ৷ যাকে সহজেই সামুদ্রিক স্রোত বয়ে নিয়ে যায় এবং আল্লাহ তোমাদের শত্রুর অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দুর করে দিবেন অর্থাৎ তারা তোমাদের ভয় করবে না এবং তোমাদের অন্তরে আল-ওয়াহ্হান ঢুকিয়ে দিবেন ৷”
জিঞ্জেস করা হলো, “হে আল্লাহর রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল-ওয়াহ্হান কি ?”
তিনি বললেন, দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং ক্বিতাল ( যুদ্ধ) কে অপছন্দ করা ৷
[ মুসনাদে আহমদ, খন্ড-১৪, হাদীস নম্বর ৮৭১৩,]
(হাইসামী বলেছেন, হাদীসটির সনদ ভাল, শুয়াইব আল আর নাউতের মতে হাদীসটি হাসান লি গাইরিহি)
অপর বর্ণনায় সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা ৷
[ সুনানে আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদ, হাদীস হাসান]
উক্ত হাদিস থেকে একথা স্পষ্ট যে, আমরা যখন দুনিয়ার ভোগ বিলাস সাজ সরঙ্জাম নিয়ে ব্যতি ব্যাস্ত হয়ে পড়বো, মৃত্যুকে ভয় পাবো (যদিও মৃত্যু নিশ্চিত) আর আল্লাহর বিধান জিহাদ-কিতালকে অপছন্দ করবো তখন আমাদের উপর থেকে আল্লাহর রহমত উঠে যাবে এবং শাস্তি নেমে আসবে। যেদিন থেকে মুসলিমের অস্র গুলো কোষ বদ্ধ হতে শুরু করেছে, আমলে উওম না হয়ে কে আমলে বেশি পরিমাপ করতে শুরু করেছে সেদিন থেকেই কাফেরা জেগে উঠেছে মুসলমানের বিরুদ্ধে। তারা কখনো বসে নেই ষড়যন্ত্র করা থেকে । বরং আমরা তাদের পাতানো ফাদে পা দিয়ে তাদের দেখানো পথেই চলছি। কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর বিধানের একচুল পরিমান পরির্বতন হবে না। আমরা একথা স্বীকার করলেও দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে পারছি না। যদি বিশ্বাস করতেই পারতাম তবে আল্লাহর বিধান জিহাদকে অপছন্দ করতাম না। উপরের হাদিস দ্বারা রাসুল সঃ এটাই বোঝাতে চেয়েছেন,
প্রথমত :
‘তোমাদেরকে আক্রমণ করার জন্য লোকজন একে অন্যকে আহবান করবে, যেভাবে খাবারের জন্য আহবান করা হয়। এখানে মুসলমানদের খাবারের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যা থেকে মেহমান রুপী কাফেররা ভাগ করে নিবে। যার শক্তি যত বেশি সে খাবার থেকে ততটাই নেবে। বর্তমান বিশ্বে আজ আমরা অনেকটাই তার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। পৃথিবী থেকে খেলাফত বিলুপ্ত হওয়ার পর এই কাফেররাই প্রথমে মুসলিম ভুমি গুলোকে পৃথক পৃথক সীমা রেখায় আলাদা করেছে। মুসলিমদেরকে আলাদা আলাদা রাষ্টের সীমানায় জাতীয়তা বোধের মাধ্যমে আলাদা করে হামলা করছে। হিওয়া উচিত ছিল প্রত্যেক মুসলমান একটা দেহের ন্যায় কিন্তু বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ দলে দলে বিভক্ত, আল-কুরআনও সুন্নাহ হতে দূরে সরে যাওয়ার কারণে। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে দুনিয়ার অন্যান্ যজাতি, মুসলিম উম্মাহর উপর সরাসরি আক্রমণ চালাচ্ছে (এবং একে অন্যকে আক্রমণের জন্য উৎসাহ দিচ্ছে (দাওয়াত খাওয়ার মতন করে) যার শক্তি অস্র যতবেশি সে তত বেশি হামলা করছে। যেমন : ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ফিলিস্তান, কাশ্মীর ইত্যাদি- আদর্শকে টিকিয়ে রেখে মুসলমানদের কে আল্লাহ যে সম্পদ দিয়েছেন তাও লুটে নিয়ে যাচ্ছে এসব জাতি। কেউ আক্রমণ করছে সরাসরি আগ্রাসী সেনাবাহিনী পাঠিয়ে, কেউবা কুটনৈতিক (diplomacy) এর মাধ্যমে, কেউবা আদর্শিকভাবে (ideologically),কেউবা সংবাদ মাধ্যম, প্রিন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে, কেউবা তাদের আবিস্কৃত শিক্ষা- ব্যবস্থা রপ্তানী করে তাদের মানসিক দাস তৈরির প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আর এক্ষেত্রে তারা গণতন্ত্র রক্ষা, মানবতা, নারী-মুক্তি, শিশু-অধিকার, সবার জন্য শিক্ষা,সামাজিক-উন্নয়ন ইত্যাদি বিভিন্ন শব্দের মোড়কে তাদের কার্যক্রমকে ঢেকেনিয়েছে। বস্তুতঃ ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস করার পর থেকেই পশ্চিমাবিশ্ব মুসলিম উম্মাহর উপর এই আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে অনবরত। আর এটা প্রত্যক্ষ করেও আমরা মুসলমানরা আমাদের পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া গৌরব উজ্জল অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে কুন্ঠা বোধ করছি।
দ্বিতীয় :
‘তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হবো?’ তিনি বললেন, ‘না, বরং তোমরা তখন অগণিত হবে।’ এখান থেকে বুঝা যায়, বেশি সংখ্যক হওয়া ইসলামের কোন আবশ্যকীয় বিষয় নয়।। ইসলাম চায় উত্তম আর্দশধারী মুসলমান।, সংখ্যা এখানে মূখ্য নয়। আল্লাহ চেয়েছেন, “তোমাদের মধ্যে কে আমলে উত্তম ’ (আ’মালুন সালিহান), এটা চাননি যে, ‘তোমাদের মধ্যে কে আমলে বেশি ’ (আ’মালুন কাছিরান)।” বদরের যুদ্ধে কাফিরদের সংখ্যা ছিলো মুসলিমদের তিনগুণ। ইয়ারমুকের যুদ্ধে কাফিররা ছিলো মুসলিমদের ৭০ গুণ। উভয় যুদ্ধেই মুসলিমরা বিজয়ী হয়। পরদিকে, হুনায়ুনের যুদ্ধে মুসলিমদের সংখ্যা ছিলো পূর্বেকার থেকে বেশি। কিন্তু সে যুদ্ধে তারা পরাজয়ের দাঁড় গোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহর রহমতে বিজয় আসে। আফসোস, বর্তমান মুসলিম উম্মাহ, তাদের সংখ্যাধিক্যের পরিসংখ্যান দেখেই শান্ত।, কোন ধর্ম সবচেয়ে বেশি গতিতে বেড়ে চলেছে, কোনদেশে মুসলিম কত উন্নতি করছে ইত্যাদি ব্যাপার নিয়ে তারা ব্যস্ত। কিন্তু মুসলিমদের উওম আদর্শ নিয়ে কোন চিন্তা হচ্ছে না। অথচ আল্লাহ আল-কুরআনে বারবার বলেছেন, “বিজয় শুধুমাত্র তাঁর কাছ থেকে আসে, আর তাঁর বিজয় দানের ওয়াদা শুধু মুমিনদের জন্য।”
তৃতীয়ত :
‘তোমরা হবে সমুদ্রের ফেনা রাসির মতো, যা স্রোতে সহজেই ভেসে যায় ।’ এটা হচ্ছে, বেশি সংখ্যক হওয়ার পরও মুসলিম উম্মাহর এই অবস্থার বর্ণনা। সাগরের ফেনার যেভাবে কোন শক্তি নেই, শুধু উপর থেকে দেখতে অনেক মনে হয়, অন্যদিকে নিচের পানির স্রোত তাকে যেদিকে ইচ্ছা নিয়ে যায়। মুসলিম উম্মাহও সংখ্যায় বেশি, কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই তাদের বলার কিছু নেই। তাদের প্রতিটি দেশই সুদভিত্তিক অর্থনীতি দিয়ে পরিচালিত, আল-কুরআন সুন্নাহ বিবর্জিত পশ্চিমাবাদের আবিস্কৃত গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র-পুঁজিবাদী- রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় তাদের দেশগুলি পরিচালিত হচ্ছে। আর ইসলামের গন্ডি শুধুমাত্র মসজিদ ও কতিপয় পারিবারিক আইনে সীমাবদ্ধ। এ যেন সংখ্যায় বেশি হয়েও তারা সীমিত। কাফের-মুশরিক- ইসলামের শত্রুরা ঔদ্ধত্যের সাথে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে কিন্তু মুসলিমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের একটি কথাও বলতে পারে না। মুসলিম দেশের হাজার হাজার সৈন্যবাহিনী থাকলেও মুসলিমদের উপরে এত হামলা হওয়ার পরও তারা কোন পদক্ষেপই গ্রহন করছে না। আল্লাহ এবং তার রাসুলকে কটুক্তি করার পরও তারা নিশ্চুপ অবস্হান গ্রহন করে আছে। অথচ সমুদ্রের ফেনা রাশির মতোই মুসলিমউম্মাহ ও সংখ্যাধিক্য নিয়ে আনন্দিত, উল্লাসিত, গর্বিত।
চতুর্থত :
‘আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দিবেন এবং তোমাদের মধ্যে আল- ওয়াহ্হান ঢুকিয়ে দিবেন।’ এখান থেকে দুটি বিষয় প্রতীয়মান হয়।
ক).
মুসলিমদের শত্রু আছে, মিত্র আছে। ইসলাম কোন বৈরাগ্যবাদী ধর্ম নয়, কিংবা ‘অহিংস পরমধর্ম’ প্রকৃতির গৌতমীয় বাণীতে বিশ্বাস করে না। বরং, ইসলামে ভালোবাসা ও ঘৃণা (আন ওয়ালা ওয়াল বা’রা)একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারনা। । অনেক অধুনিক এবং মুসলিম যাদের মন-মগজ পশ্চিমা শিক্ষা-ব্যবস্থা, ডিস, ইন্টারনেট প্রভৃতির মাধ্যমে সঠিক ইসলামের শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে, তারা যতই এ ব্যাপারটায় তাদের বিদেশি বন্ধুদের কাছে অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়েন না কেন। আল্লাহর রহমত, তিনি আল-কুরআন ও সহীহ হাদিসকে অবিকৃত রেখেছেন। না হলে এরা ইসলামকে বিকৃত করে কোথায় নিয়ে যেতো। আল্লাহ বলেন : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহূদ ও নাসারাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদের মধ্যেই গণ্য হবে। আল্লাহ জালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।” (সুরা- মায়েদা : ৫১) মুসলিমদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে বাদ দিয়ে, বিজাতীয় প্রভুদেরকে বন্ধু অভিভাবক করে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
খ).
মুসলিমদের উচিত তাদের শত্রুদেরকে ভীত সন্ত্রস্থ রাখা। আর তাদের অন্তরে আমাদের ভয় থাকাটাই স্বাভাবিক পরিস্থিতি. যদি না থাকে, বুঝতে হবে, কোন সমস্যা আছে। কারণ রাসুল (সা.), আমাদের দুরবস্থার একটি কারণ হিসেবে তাদের মনে, আমাদের ভয় না থাকাকে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমরা আজ নিজেদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে কাফেরদের মন থেকে ভয় দূর করে দিয়েছি। কিন্তু হওয়া উচিত ছিল সম্পূর্ন ভিন্ন। আজ আমরা ইসলাম শান্তির ধর্ম ইসলাম শন্তির ধর্ম বলে মুখে ফেনা তুলে অস্রকে পুরোপুরি বির্সজন দিয়ে ফেলেছি। কিন্তু কাফেররা কিন্তু ঠিকই আজও বহন করছে। যার করনে আমরা পদে পদে লাঞ্চনার স্বীকার হচ্ছি। বাগদাদ শহরে যখন তাতাররা হামলা চালানোর হুমকি প্রদান করে তখন সেখানের মুসলমানরা অস্র ফেলে রেখে মসজিদে ঢুকে গিয়েছিল দোয় করার জন্য। বাদশাহর বিপুল পরিমান সম্পদ জমা ছিল বায়তুল মালে। কিন্তু সেখান থেকে সেনা বাহিনী গঠনে কোন কিছুই ব্যয় করেনি। ফলসরূপ বিনা বাধায় তাতাররা বাগদাদ শহরকে দখল করে নেয় এবং ইতিহাসের ন্যাক্কার জনক হত্যাযজ্ঞ চালায়। ভোগ বিলাসে মেতে না থেকে, আল্লাহর নেয়ামত হাদীদকে ব্যবহার করে তার ফরয করা জিহাদকে অস্বীকার না করে, (কুরআনে বলেছেন: আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি (যুদ্ধশক্তি) এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ জেনে নিবেন কে, না দেখে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে সাহায্য করে (জিহাদ করে বা অন্যান্য মাধ্যমে), আল্লাহ্ শক্তিধর, পরাক্রমশালী…) [আল-হাদিদ, আয়াত-২৫]
শুধু মসজিদে দোয়ার মধ্যে না থাকতো তবে সেদিন তাতারদের ইতিহাস অন্যরকম লেখা হতে পারতো। যেমনটি মিশর হামলা করতে গিয়ে হয়েছিল। ইতিহাসের প্রথম হারটাই শেষ হার হিসাবে পুরো তাতারদেরকে ধংস করে দেয়। পুর্নগঠনের কোন সুযোগই পায়নি তারা। আমাদের সমাজেও আজ এমন অনেককে দেখা যায়, যারা শুধু মসজিদ ভিত্তিক ইবাদতকেই দ্বীন হিসাবে গ্রহন করেছে আর বদর ওহুদকে ভুলে বসে আছে। যার সুযোগ গ্রহন করে মুসলমানের উপর একের পর এক হামলা করে যাচ্ছে কাফিররা। আজ আমরা আমাদের শৈশব, কৈশোরে, পড়ালেখা করে চাকরি নেওয়া, টাকা আয় করে পরিবারের ভরণপোষণ করা, বিয়ে করে পরবর্তী বংশধর উৎপাদন করা, বৃদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি যা ‘গবাদি- পশুর’ সাথে অনেক মিল পাওয়া যায়।
কিন্তু আমাদের তো আল্লাহ এমন দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছে যা পশুদের দেয়নি। আমরা আমাদের করণীয়গুলো যথাযথভাবে করছি না, হয়তো আমরা ইসলামের কিছু কিছু নিয়ম-কানুন, রসুমাত-রেওয়াজ পালন করি, কিন্তু নিজের জীবনে ইসলামকে ধারণ করিনি, ইসলাম আমাদের জীবনের মিশন ভিশন হয়ে উঠেনি-যা মুসলিম মাত্রই হওয়ার কথা ছিলো।
আর আল্লাহ তাআ’লা এ ব্যাপারটিই কুরআনে বলেছেন : “ ‘তাহলে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশকে বিশ্বাস করো এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান করো? অতএব তোমাদের যারা এমন করে তাদের পার্থিব জগতে লাঞ্ছনা ও অবমাননা ছাড়া আর কী প্রতিদান হতে পারে? এবং ক্বিয়ামাতের দিন তারা কঠিন শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হবে, আর তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ গাফেল নন।’” (সুরা-বাক্বারা : ৮৫)
যারা শহীদদের ভুলে যায়, নির্যাতিত মানুষের কথা ভুলে যায়, তারা বিজাতির গোলাম হয়। যে জাতি গাদ্দারদের মাথায় তুলে নাচে তাদের অন্ধকার রজনী কোনদিন ভোরের আলো দেখেনা। আর গাদ্দাররা মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির প্রয়াস খুজে পায়। বিবেক বর্জিত পথে ঠেলে দেয় মানুষকে। যখন থেকে আমরা এই দুনিয়াকে নিজের জন্য জেলখানা মনে করবো, নিজেদের মুসাফির মনে করবো , শুধু কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছি, কিংবা যখন থেকে আমরা আল্লাহর রাস্তায় ক্বিতালকে আমাদের লাঞ্চনা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে জানবো, তখন আমরা এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবো ইনশাআল্লাহ। এছাড়া আমাদের দ্বিতীয় কোন পথ নেই। মুসলিম উম্মাহর সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে রাসুল (সা.)- এর একটি হাদিসের মধ্যে। তিনি বলেছেন : ‘যখন মানুষ দিনার এবং দিরহামের মধ্যে ডুবে যাবে, এবং যখন ঈনা নামক (সুদী) ব্যবসায় জড়িত হয়ে যাবে, আর গরুর লেজ-এ সন্তুষ্ট হয়ে যাবে এবং জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ছেড়ে দিবে, আল্লাহ তাদের উপর লাঞ্চনা চাপিয়ে দিবেন, তিনি তা উঠিয়ে নিবেন না, যতক্ষণ না তারা তাদের দ্বীনে ফিরত না যাবে।’ [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ (২/২৮), তাবরানী (১২/৪৩৩), বায়হাকী (শুয়াবুল ঈমান ৭/৪৩৪), আবু ইয়ালা (১০/২৯), আবু নাঈম (১/৩১৩)।]
মাদের লাঞ্চনার কারণ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ছেড়ে দেয়া, ক্বিতাল করতে গিয়ে আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুকে ভয় করা আর দুনিয়ার জীবনকে আখিরাত থেকে বেশী ভালোবাসা। আমরা এ অবস্হা থেকে মুক্ত হতে চাই ফিরে যেতে চাই আমাদের ইতিহাসের পথে। যদি রাষ্টের স্লোগন এমন হতে পারে “একাওরের হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেকবার” তবে আমরা মুসলিমরা কেন বদরের হাতিয়ারকে সহস্রবার গর্জে ওঠাতে পারবো না। বরং এটাই সুন্নাহ। কিন্তু যখনই আমরা একথা গুলো বলতে চাই, ইসলামের ভ্রান্ত ধারনা এবং বিশ্বাস গুলি সংশোধনের ক্ষেত্রে যখন কোন কথা উঠে এবং পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত হয়ে উঠে তখন আমরা বলে থাকি ইসলাম শান্তির ধর্ম, তাই তোমরা তর্ক করো না। ইসলাম শান্তির ধর্ম তোমরা অস্ত্র হাতে নেয়ার কথা চিন্তাও করো না…ইত্যাদি। আমাদের মনে রাখতে হবে ইসলাম শুধু একটি ধর্মই নয় বরং পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্হা। এর একটি অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে জিহাদ। .
রবার্ট বিন বলেছেন:“অতীতে মুসলিমরা সারা বিশ্ব জয় করে ছিল এবং তারা আবারও তা করতে পারে।”
পাশ্চাত্যের অধিবাসীরা ইসলামের ব্যাঙ্গ করে বলে যে ইসলাম বিস্তার লাভ করেছে তলোয়ারের দ্বারা।
থমাস আর্নল্ড তার বইয়ে এমন ভাবে লিখেছে ইসলাম সম্পর্কে, যেন ইসলাম থেকে জিহাদের মানুসিকতা উঠে যায় এবং প্রমান করেছেন যে ইসলাম তলোয়ার ব্যবহার করে বিস্তার লাভ করে নি, বরং এটি বিস্তার লাভ করেছে শান্তিপূর্ণ দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে, কোন বল প্রয়োগ ছাড়াই।
মুসলিমরা তাদেরই উপর পাতা ফাঁদে পরে গিয়েছে। যখন মুসলিমরা অমুসলিমদের কাছ থেকে শুনে যে, ইসলাম প্রচার হয়েছে তলোয়ারের মাধ্যমে তখন তারা বলে, তুমি ভুল করছ, তোমাদেরই একজনের কাছ থেকে এর প্রত্যুত্তর শুন, এই টমাস বলেছে এই, এই।
কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: “আমাকে পাঠানো হয়েছে তলোয়ারের সাথে, যেন ভবিষ্যতে একমাত্র আল্লাহ্র প্রার্থনা করা হয় এবং আমার শক্তি দেয়া হয়েছ আমার বর্শার ছায়ার মধ্যে এবং মানহানী তাদের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে যারা আমার আদেশের বিপক্ষে এবং যারা তাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে তারা তাদের দল ভূক্ত।” [ বর্ণনা করেছেন আহমেদ, ৪৮৬৯, সাহিহ আল-জামি’ই, ২৮৩১।]
প্রকৃতপক্ষে তলোয়ার এবং ক্ষমতা ছিল একটি মাধ্যম যার দ্বারা ইসলামের বিস্তার ঘটানো হয়েছে, যা ইসলামের জন্য লজ্জাজনক নয়। পক্ষান্তরে এটা এক প্রকার শক্তি এবং গুন, কারন তা মানুষকে ইসলাম গ্রহন করাবে যার সুফল তারা পাবে এই জীবনে এবং পরকালেও। সর্বপরি আমাদের মনে রাখতে হবে, ইসলাম পালন বা প্রতিষ্ঠায় আমরা যে পদক্ষেপই গ্রহন করি না কেন, তা অবশ্যই হতে হবে আল্লাহ এবং তার রাসুল সঃ এর দেখানো পথ অনুসরে। এর বাহিরে কোন পন্হা উত্তম হতে পারে না। সাময়িক সুফল পেলেও তার করুন পরিনতি সুদূর প্রসারি। ইতিহাসের বাগদাদ শহর তার জ্বলন্ত নির্দশন। বর্তমান বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এমন অসংখ্য নির্দশন আছে। জ্ঞানীরা একটু পর্যবেক্ষন করলেই বুঝতে পারবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৫:৩১