- প্রতিদিন ইফতারের পর যে প্যারাসুট মেলে শুয়ে থাকো, মেয়েটাকে নিয়ে অন্তত একটু পড়ার টেবিলে বসতে তো পারো নাকি?
. . প্রণয়ার আম্মুর রোজ এমন দুই একটি ঝাড়ি ইফতারির পর আমার ভাগ্যে জোটে.. কোনদিন বলবে পানির বোতল ভরে ফ্রিজে রাখতে, কোনদিন বলবে বাথরুমের লাইট সব অফ করতে... প্রণয়া খেজুর খেয়ে খেজুরের বিচি কেন বেসিনে ফেললো, এটা নিয়েও সেদিন আমার সাথে তুলকালাম পাকিয়ে দিলো..
বললাম, ছোট মানুষ নাহয় ভুল করে বেসিনে খেজুরের বিচি ফেলেছে, থাক না!
আমাকে রিপ্লাই দিলো, "আমি তো ছোট মানুষকে কিছু বলছি না, বড় মানুষটা কি পারেনা বেসিন থেকে বিচিগুলো নিয়ে ফেলে দিতে? এদিকে যে বেসিনে পানি জ্যাম হয়ে আছে তার কি কোন হুশ আছে?
. .
আজ সব ঠিকটাক ছিলো কিন্তু কে জানতো মেয়ের পড়াও আজ আমার ঝাড়ি খাওয়ার টপিক হবে..?
মেয়েকে বললাম, "প্রণয়া, যাও বইপত্র নিয়ে এসো, পড়তে বসো"
মেয়ে তার মায়ের মতো কোমরে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে আমাকে উত্তর দিলো, "বাবা তুমি জানোনা লকডাউন চলছে! লকডাউনে সব পড়ালেখা বন্ধ"
এদিকে বউ আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে.. আমি অসহায় একবার মেয়ের দিকে তাকাই আবার বউ এর দিকে তাকাই.. বিধিবাম, আমি তাদের মতিগতি বুঝে উঠতে পারছি না..
বউকে বললাম, এমন করছো কেন? একটু মানবিক বউ হও!
বউ এবার আমার নাক বরাবর এসে দাড়িয়ে বললো, "এই ওয়েট! তুমি এই মানবিক বউ শব্দটা কই পেলে? ঘটনা কি শুনি?
- আরে মানবিক বলতে আমি মহানুভবতা, ভালবাসা বুঝিয়েছি!
- না না! সামথিং ওয়েন্ট রং! সত্যি করে বলো তো কোথায় কাকে রেখে আমার সাথে অভিনয় করছো? তাই তো বলি, সারাদিন তুমি এত উদাস থাকো কেন আজকাল?
- আরে কি যা তা বলছো.. এই রোজার দিনে যে গরম পড়ছে.. নিজেকে তো মরুভূমির উট মনে হয়! আর দেখোনা, উট কিভাবে উপরের দিকে তাকাই থাকে উদাস হয়ে!
বউকে কনভিন্স করতে না করতে মেয়ে বলে উঠলো,
- আচ্ছা বাবা, গরমকালে তুমি উট হলে শীতকালে তুমি কি?
মেয়ের প্রশ্ন শুনে বউ কিঞ্চিৎ হাসলো.. মেয়েটা পাকনা হচ্ছে দিন দিন.. তবুও ভাল! ঘরের পরিস্থিতি শিথিল করতে মেয়ের এমন উদ্ভট প্রশ্ন টনিক হিসেবে কাজ করে।
বউ চলে গেলো রান্না ঘরে, আজ সেহেরিতে স্পেশাল চিংড়ি ভুনা হবে..
এদিকে মেয়ে বার বার প্রশ্ন করেই যাচ্ছে.. মেয়ের একটাই কিউরিওসিটি, গরমকালে আমি উট হলে শীতকালে কি?
কি মুশকিল! মেয়েকে কিভাবে বুঝাই যে এটা একটা উপমা ছিল!
বউকে ডেকে বললাম, তুমি এই সনামধন্য ঘরের শীর্ষস্থানীয় ব্যাক্তি, সো তোমার মেয়েকে তুমি থামাও!
বউ এবার এক রাজ্য বিরক্তি নিয়ে বললো,
- তোমার শীর্ষস্থানীয়, সনামধন্য, মানবিক এসব বাংলা সাহিত্যচর্চা ছোটাচ্ছি আমি! সারাদিন ফেসবুকে ঘুরে ঘুরে এসব আয়ত্ত করছো আজকাল? আজ থেকে তোমার ইন্টারনেট চালানো বন্ধ!
আমি অবাক হয়ে বললাম,
- আরে এই বাংলা শব্দগুচ্ছের সাথে ইন্টারনেট চালানোর সম্পর্ক কি? আজব!
বউ এবার এক আঙুল নেড়ে নেড়ে আমাকে বললো,
" ভাল হয়ে যাও শুভ! ভাল হয়ে যাও! তোমাকে আমি অনেক সময় দিয়েছি, ভাল হয়ে যাও! তুমি কি কোনদিনও ভাল হবে না শুভ?"
. . বউ কথাগুলো বলার একটু পরেই মুখে হাত দিয়ে মিটমিট করে হাসছিলো.. কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না ঘটনা কি হচ্ছে.. হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ঘটনা কি? হাসছো কেন?
বউ আমার পাশে এসে বসে চুল বাঁধতে বাঁধতে বললো,
- শুভ যেটা বুঝলাম, আমারও ইন্টারনেট চালানো বন্ধ করা উচিৎ.. সারাদিন ফেসবুকের টাইমলাইনে ঘুরে ফিরে একই ইস্যু-টপিক আমাদের মাথায় গেঁথে যাচ্ছে.. আমাদের রিয়েল লাইফেও এর ইমপ্যাক্ট পড়া শুরু করেছে.. এক কাজ করো, তুমি কাল বাসার ওয়াইফাই কেটে দাও..
- হুম, তা মন্দ বলোনি.. কিন্তু বাসায় বসে সময় কাটাবো কিভাবে?
- কেন! মেয়েকে নিয়ে খেলবা.. তুমি'ই তো নিজেকে উট দাবি করলে একটু আগে, সো মেয়েকে পিঠে চড়িয়ে মরুভূমি ঘুরাবা সারাদিন!
- কি বলছো! বিনোদন বলতে কিছুই থাকবে না বাসায়?
- অবশ্যই থাকবে, বিটিভিতে দুপুরে দুজন মিলে "সুখী পরিবার" দেখবো, আর সান্ধায় "কৃষি দিবানিশি"
. . প্রণয়া আমাদের দুজনের মাঝখানে বসে জিজ্ঞেস করলো, "আম্মু আমি কি দেখবো তাহলে?"
আমিও মেয়ের সুরে সুর মিলিয়ে বললাম, "তাইতো! প্রণয়া কি দেখবে তাহলে?"
বউ বললো,
- কেন, তোমাকে দেখবে!
- আমাকে কেন?
- কারন তুমি কার্টুন যে!
এই বলে এক দৌড়ে চলে গেলো... বললাম,
- এই কই যাও?
- উটের জন্য চিংড়ি ভুনা করতে..
এদিকে মেয়ে নিষ্পলক আমার দিকে তাকিয়ে আছে.. নিজেকে এখন সত্যি সত্যি কার্টুন মনে হচ্ছে!!
ফেসবুকে আমার ফেইক প্রোফাইলঃ http://www.facebook.com/zrshuvoo
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০২১ রাত ১০:৪৪