আমার ফ্রেন্ডলিস্টে কিছু বিবাহিতা নারী আছেন, ইনবক্সে যাদের সাথে আমার পরিচয়ের শুরুটা হয়েছিলো এভাবে,
- আপনার প্রফেশন কি??
উত্তরে তারা প্রায় সবাই বলেছে,
- "কিছু করি না, গৃহিণী"
. . আমার বরাবরের মতই এই জায়গায় আপত্তি হয়!
আমাদের সমাজ কিংবা রাষ্ট্রব্যবস্থা এই একটা কাজকে কখনই কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না... একজন নারী শত শিক্ষিত হলেও বিয়ের পর চাকরি না করলে নিজেকে বেকার বলে পরিচয় দিতে হয়... তারাও ধরে নেয়, গৃহিণী মানে একটা অনিবার্য কাজ, যেটা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত করে যেতে হবে...
আদতে বিষয়টা দাঁড়ায়, পৃথিবীতে গৃহিণী মানে এমন এক ধরনের বেকারত্ব যেখানে একজন মানুষ পৃথিবীর অন্য সব চাকুরিজীবী শ্রমিকদের চাইতে বেশি কাজ করেও নিজেকে বেকার হিসেবে পরিচয় দেয়... অথচ;
– একজন কর্মজীবী মানুষের তুলনায় সপ্তাহে একজন গৃহিণী ৩৮ ঘন্টা বেশি কাজ করেন...
– সপ্তাহে একজন গৃহিণী শুধুমাত্র রাধুনি হিসেবে ১৪ ঘন্টা চুলার তাপে দাঁড়িয়ে রান্না করেন.. এই লকডাউনে বুয়াকে ছুটি দিয়ে আমি সেটা পার্সনালি টের পেয়েছি, এটার ভয়াবহতা কতটুকু! কতটা কঠিন একটা কাজ!
– একজন গৃহিণী তার সন্তানকে মানুষ করার জন্য সপ্তাহে ১০ ঘন্টা শিক্ষকের কাজ করে থাকেন, সন্তানের লেখাপড়ায় সাহায্য করেন
– ঘর ক্লিনার হিসেবেও একজন গৃহিণী সপ্তাহে ১০ ঘন্টা কাজ করেন..
এছাড়াও, পরিবারের সবার জামাকাপড় ধোয়া, স্বামী সন্তানের জন্য টিফিন রেডি করা, সংসারে আয় ব্যয় এর হিসাব রাখা, টুকিটাকি বাজার করা সহ নানান রকম কাজ করে থাকেন একজন গৃহিণী...
অথচ কোন পুরুষকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, "আপনার ওয়াইফ কি করে??"
যদি ওয়াইফ গৃহিণী হয়, তখন সবাই প্রতি উত্তরে বলে, "কিচ্ছু করেনা!"
. . উপরের জরিপগুলো করা হয়েছে উন্নত দেশগুলোর বিচারে... বাংলাদেশের পেক্ষাপটে তো এই জরিপ আরও ভয়াবহ!! আমি গ্রামে বেড়ে উঠা ছেলে... খুব কাছ থেকে দেখেছি ইভেন এখনও দেখি আমার মায়ের সংসারে করা কাজ ও কষ্টগুলো...
গৃহিনীদের কাজের বিনিময়ে যদি অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে মজুরি দেয়া হতো, তবে সেই কাজের মজুরি দাড়াতো বৎসরে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা!!
. . এখন কথা উঠতে পারে, সব কিছু টাকা দিয়ে বিবেচনা করতে হবে কেন?? আমার মাও একজন গৃহিণী ছিলেন, আমার বৌ একদিন গৃহিনী হবেন... সব কিছুকে টাকা দিয়ে বিবেচনা করা যায়না... যে আমাকে লালন পালন করে বড় করেছে, সেটার বিনিময়ে তাকে কি বা দিতে পারবো??
হ্যাঁ, এই কথাটাই সত্য... গৃহিনীদের দেয়া যায় এমন কিছু পৃথিবীতে নেই একমাত্র সম্মান আর ভালবাসা ছাড়া... পুরো লিখাটা লেখার উদ্দেশ্য মুলত এটাই... তারা যেটা ডিজার্ব করে সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাদের দেয়া... কাজের স্বীকৃতি, ভালবাসা আর সম্মান...
. . . দিনশেষে একজন গৃহিণীও একজন শ্রমিক... দেশের অর্থনীতির চাকার একটি স্পোক এই গৃহিনীরাও... এই শ্রমিক দিবসে আসুন তাদের কাজের প্রাপ্য স্বীকৃতি আর মূল্যটুকু দেই, টাকা দিয়ে নয়, সম্মান আর ভালবাসা দিয়ে...
"যারা গৃহের রানী, তারাই গৃহিণী"
... আজ শ্রমিক দিবসে পৃথিবীর সকল শ্রমিকদের পাশাপাশি সকল গৃহের রানীদের জন্য রইলো সম্মান আর ভালবাসা!
ফেসবুকে আমিঃ http://www.facebook.com/zrshuvoo
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৬