রূপার রূপচর্চা বন্ধ...!
. . . শহরজুড়ে লকড ডাউনে সব পার্লার সাময়িক বন্ধ থাকায় রূপার রূপচর্চা করা হচ্ছে না!
সংসারে কাজ তো কচুও করেনা... দিনের অধিকাংশ সময় আছে শুধু ফেসবুক আর টিকটক নিয়ে
. . ইদানীং রূপাকে দেখা যায় চুলে প্লাস্টিকের গেন্ধা ফুল লাগিয়ে নিজেকে বড়লোকের বেটি দাবী করতে... আরে ভাইরে ভাই! তুই গরীব, গরীবই থাকনা!! তোরে ক্যান জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ সাজা লাগবো!?? স্ট্রেইঞ্জ!!
.
হিমু হোম কোয়ারেন্টিনে...!
রাস্তায় খালি পায়ে হাটতে বেরিয়েছিল বেচারা, কিন্তু সেনাবাহিনীর দৌড়ানি খেয়ে গত দুইদিন ঘরবন্দী...
. . নাকের মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে উদাস বসে আছে... দিনকাল খুব একটা ভাল যাচ্ছে না... এই পরিস্থিতিতে বাকের ভাই বিড়ি কিনতে বাহিরে যায় কিভাবে তাই বসে বসে ভাবছে সে..
. . এদিকে রূপা সময়ে অসময়ে তাকে ভিডিও কল দিচ্ছে কিন্তু হিমু পাত্তা দিচ্ছে না..! হিমুরা অদ্ভুত এক পাত্তা না দেয়ার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়... হিমুর ডায়েরি জুড়ে সব মুভির লিস্ট আর ফোন জুড়ে ভিডিও গেমস এর এপ! আজকাল পাত্তা দেয়ার টাইমটাও খুঁজে পাচ্ছেনা সে...
.
বাকের ভাই আত্মগোপনে...!
. . . বাকের ভাই হোম কোয়ারেন্টিনের নামে আত্মগোপন করেছে!
গত চারদিন তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না... তার বিশ্বস্ত দুই হাত বদি আর মজনু হিসেবটা কোনভাবেই মিলাতে পারছে না.. গতকাল থেকে দুই বেচারা সেনাবাহিনীর বেত্রাঘাত উপেক্ষা করে মুনার বাসার নিছে গিয়েও চেক করে আসছে, অথচ বাকের ভাইয়ের দেখা পায়নি... কাহিনী কি!! মুনাকে বাদ দিয়ে বাকের ভাই কি এই করোনার দিনে নতুন ক্রাশ পেলো নাকি ইনবক্সে..!!
. . বদি বুদ্ধি করে গলির মোড়ে বিড়ির দোকানদার আজিজ চাচাকে ফোন দিলো... জানতে চাইলো বাকের ভাইয়ের কথা..
আজিজ চাচা বললো,
সে নাকি দারোয়ান কে বিড়ি আনতে টাকা দিয়েছিল, দারোয়ান শালা সেই টাকা দিয়ে স্পীড এনার্জি ড্রিংক কিনে খাইছে... এই রাগে সে দারোয়ান কে পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফেলেছে... এখন বাকের ভাই জেলে!
.
মুনার করোনার দিনগুলো...!
. . মুনার হোম কোয়ারেন্টিন কাটছে সিরিয়াল দেখে আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে. . বাসায় কাম নাই কাজ নাই হুদাই বসে বসে গ্যালারি থেকে খুঁজে খুঁজে কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন বিরিয়ানি, মোরগ-পোলাও এসবের ছবি ডে দেয় আর ক্যাপশনে লিখে "করোনার দিনগুলো"
মাঝেমাঝে বাচ্চা মেয়েদের মত দুই একটা ট্রুথ ডেয়ার খেলে আবার চুপি চুপি ডিলেটও করে দেয়... বলা চলে শী ইজ ডুইং গ্রেট ইন দিস ক্রুয়েল টাইম!
.
. . এদিকে বাকের ভাইয়ের বিড়ির কথা ভাবতে ভাবতে হিমুরও বিড়ির নেশা পেয়ে বসলো... বাসায় কোন বিড়ি নেই, ইভেন বিড়ি কেনার টাকাও নেই! কিন্তু বিড়ি তো খাওয়া লাগবেই!!
ঘরে বসে বসে নিজের চুল নিজে ছিড়ছে... বাহিরে যাওয়ার কোন উপায় খুজে পাচ্ছেনা.. পায়ের তালু হাটার জন্য কিলবিল করছে...
নাহ! এভাবে আর ঘরে থাকা যায়না!! বের হওয়ার একটা উপায় বের করতেই হবে!!
যেই কথা সেই কাজ! তাড়াতাড়ি ফেসবুকে ঢুকে একটা পোস্ট লিখলো সে...! নিজেকে প্রথম আলো পত্রিকার গুপ্ত সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিলো,
"ঢাকা শহরে আগামী দুই মাসের বাসা ভাড়া মওকুফ করলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা!"
মুহুর্তেই পোস্ট ভাইরাল হয়ে গেলো!
. . অনেক অনলাইন পত্রিকা নিউজটা দেদারসে প্রকাশ করলো... অনেক চাকরিজীবী ব্যাচেলর এক বুক আশা আর স্বস্তি নিয়ে তার সেই পোস্ট শেয়ার করলো...
এদিকে এই পোস্ট নজরে আসে মিন্টু রোড়ে ডিবি কার্যালয়ের প্রধান হারুন সাহেবের চোখে... মুহূর্তেই হিমুকে গুজব ছড়ানোর অপরাধে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়... হিমুও বাসার বাহিরে বের হতে পেরে খুশি..!
জেলে ঢুকেই হিমুর সাথে বাকের ভাইয়ের দেখা... জেলার থেকে এক প্যাকেট বিড়ি ম্যানেজ করা গেলো... আজ রাত জমিয়ে গল্প হবে দুজনের...
এদিকে হিমুর জেলে যাওয়ার খবর গেলো রূপার কানে... বেচারি হু হু করে কাঁদছে... দেখলাম ফিলিং স্যাড দিয়ে ফেসবুকে পোস্টও করেছে... একটু আগে আমাকে ইনবক্সে নক দিয়ে বললো, "ভাইয়া একটা হেল্প লাগবে... প্লিজ!!"
আমি হাসি হাসি মুখ করে রিপ্লাই দিলাম, "কি হেল্প লাগবে বলো!"
মেয়েটা ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলছে, "ভাইয়া, হিমু জেলে!! এখন আমি কি করবো??
বললাম, "ভিডিও কল দাও, বুঝিয়ে দিচ্ছি.."
. . . ভিডিও কল দিবে বলে সেই যে গেলো এখনো তার হদিস নাই.. বোধহয় কল দেয়ার আগে সাজুগুজু করে নিচ্ছে
যাইহোক, আমিও ভাবছি তাকে কিভাবে বাসা থেকে না বেরিয়ে হেল্প করতে পারি!
ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ... তাকিয়ে দেখি বদি আর মজনু দরজায় এসে হাপাচ্ছে... কারন জিজ্ঞেস করার আগেই চিৎকার দিয়ে বললো,
- ভাইজান! বাকের ভাই জেলে!!!
- হু, উনার তো জেলেই থাকার কথা!! কিছুদিন পর ফাসিও হবে... এত বিচলিত হওয়ার কি আছে!!
মজনু চেচিয়ে বললো, "কি বলেন ভাই!! দারোয়ান কে পিটানোর জন্য ফাসি!!??
মজনু ছেলেটা একটু বোকা... কথায় কথায় অবাক হওয়ার ভং ধরে... তাকে বললাম,
- অবাক হচ্ছিস কেন?? মুলা চুরির ফাসি হতে পারলে তোর বাকের ভাইয়ের কেন হবে না???
. . এই বলে দরজায় তাকিয়ে দেখি টিফিন ক্যারিয়ার হাতে মুনা দাঁড়িয়ে আছে...!
- আরে মুনা ভাবি যে!! হঠাৎ কি মনে করে??
- ভাই আপনার একটা হেল্প লাগবে আমার!
- বলেন ভাবি, কি হেল্প?
- আর ভাই বইলেন না.. হঠাৎ শুনি বাকের নাকি জেলে... ও ওখানে কি খায় না খায়, তাই ওর জন্য রান্না করে নিয়ে এসেছি... কিন্তু বাহিরে তো বের হওয়া নিষেধ, থানায় যাব কিভাবে?? আপনি যদি একটু হেল্প করতেন!!
. . আমি আবার কেউ হেল্প চাইলে না করতে পারিনা.. থানায় প্রতিদিন টিফিন ক্যারিয়ার পৌঁছে দিবো বলে মুনা ভাবি কে আস্বস্ত করলাম... উনি চলে গেলেন...
. . বদি আর মজনু আগামী দুই সপ্তাহ ঘর থেকে বের হবেনা... কারন তারা বাকের ভাইয়ের ডান হাত আর বাম হাত.. বাকের ভাইয়ের ফাসি হলে তাদের তো এটলিস্ট জেল হবেই.. এই ভয়েই লুকিয়ে থাকবে.. হাহা
এদিকে এতক্ষণে রূপার ভিডিও কল দেয়ার সময় হলো!!
. . মেসেঞ্জারে টোন বাজছে... আমি টিফিন ক্যারিয়ার খুলে দেখি মুনা ভাবি চিকেন বিরিয়ানি নিয়ে এসেছে.. বিরিয়ানির ভিতর থেকে লেগ পিসটা তুলে কামড় দিতে দিতে রূপাকে বললাম,
"তোমাকে আজ বেশ রূপবতী লাগছে"
রূপা লজ্জা পেয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো... আমিও হাসলাম, মনে মনে ভাবছি, কাল টিফিন ক্যারিয়ারে মুনা ভাবি কাচ্চি নিয়ে আসলে জমবে ভালো!!
ফেসবুকে আমার ফেইক প্রোফাইলঃ http://www.fb.com/ZRShuvoo
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০৫