বউ এক কাপ চা বিছানার পাশে দিয়ে কিচেনে গেলো..
অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর হেলান দিয়ে ক্লান্ত শুয়ে আছি.... এদিকে প্রণয়া বাবাকে কাছে পেয়ে বাবার সেবাযত্ন করছে.. ছোট্ট নরম হাতে আমার পা টিপে দেয়ার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে...
মেয়ে আমার হঠাৎ কেঁদে উঠলো পায়ের কাছে বসেই.. কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না, এরই মধ্যে ঘ্যানঘ্যান করে কাঁদতে কাঁদতে সোজা কিচেনে মায়ের কাছে গিয়ে হাজির!
বউ তো চোখ কপালে তুলে তেড়ে আসলো আমার দিকে... বউয়ের হাতে ভাতের চামুচ! আমার কাছে এসে চেঁচিয়ে বললো,
"কই!! সারাদিন তো মেয়েটা আমার কাছেই ছিলো, একটুও কান্না করলো না.. আর তুমি অফিস থেকে ফিরেই মেয়েটাকে কাঁদিয়ে দিলে!! মেয়েটাকে একটু আদর করা যায়না?? তুমি কি আজীবন রোবটই থাকবে??"
আমি শুধু মা মেয়ে দুজনের দিকে হুতোমপ্যাঁচার মত ১৩৫ ডিগ্রী ঘাড় ঘুরিয়ে ২৭০ ডিগ্রী কোনে তাকিয়ে আছি... (জেনে রাখা ভালো, প্যাঁচা তার মাথাকে একদিকে ১৩৫ ডিগ্রী কোণে ঘোরাতে পারে... তাই দুই দিক মিলে এদের দৃষ্টিসীমা ২৭০ ডিগ্রী.. ফলে এরা নিজের কাঁধের উপর দিয়ে পেছনে দেখতে পায়)
প্যাঁচাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে বউয়ের ঝাড়িতে হুশ ফিরলো.. ভাতের চামুচ নাড়াতে নাড়াতে বললো, "কি হলো! উত্তর দিচ্ছনা কেন?? প্রণয়া কাঁদছে কেন?? উত্তর দাও!"
কি উত্তর দিবো, আমি নিজেই তো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম মেয়ের কান্না দেখে.. প্রণয়াকে কাছে টেনে বললাম, "মা তুমি কাঁদছো কেন?? কি হয়েছে বলো!! আব্বু কি তোমাকে মেরেছি??"
মেয়ে আমার আরও জোরে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়িয়ে বললো, "না"
আমি বউকে বললাম, "দেখলেতো!! হুদাই আমার দিকে তেড়ে আসলে...! আমি আমার মেয়েকে কোন দুঃখে মারতে যাব!!"
. . এই বলে মেয়েকে কোলে তুলে বউকে বললাম, "তুমি একটু বেশিই বুঝো!! মেয়ে আমাকে সারাদিন মিস করে, এইজন্য বাবাকে কাছে পেয়ে একটু আবেগ আপ্লুত হয়েছে, তাই একটু কাঁদছে.. এটা আমাদের বাপ বেটির ব্যাপার... প্লিজ নাক গলাবেন না!" (যদিও আমি নিজেও সিওর না মেয়ে আমার কাঁদলো কেন!)
বউ এবার কিঞ্চিৎ অপমানবোধ করলো... কপালে বিরক্তির ভাজ একে মেয়েকে শাসিয়ে বললো,"এই মেয়ে কাঁদছো কেন? বলো!!"
মেয়ে আমার পায়ের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললো,"আব্বুর পা দুটো অনেক শক্ত, আমি টিপতে গিয়ে আঙুলে ব্যাথা পেয়েছি!"
...এই বলতে বলতে আবারও কেঁদে দিলো!!
মেয়ের কথা শুনে আমি বউয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ... মেয়ে কাঁদছে, আমরা হাসছি... কি একটা নিষ্ঠুর অবস্থা...!!
মেয়েকে শান্ত করার জন্য বললাম, "আচ্ছা মামনি, কাল থেকে আমি পা দুটো নরম করে আসবো... আর এমন হবে না.. এখন তুমি বাবার কাছে কি চাও বলো?
মেয়ে এই কথা শুনেই পিক করে হেসে দিয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে...! বউও দেখি মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে চোখ বড় করে... মেয়ে আমার কোন কিছু আবদার করার আগে মায়ের চোখের দিকে তাকায়.. কি যেন ইশারা ইংগিত করে... আমি একটা বিষয় বুঝিনা এরা মা-মেয়ে কিভাবে যেন চোখে চোখে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে ফেলে... আমি জানি, মেয়ে আমার এখন এমন একটা সিদ্ধান্ত দিবে যা আমার ইনোসেন্ট বউয়ের গালেও হাসি ফুটাবে..
মা মেয়ে দুজনের চোখাচোখি পর্ব শেষে মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, "আব্বু আমি বানিজ্য মেলায় যাব"
মেয়ের কথা শুনে বউয়ের দিকে তাকালাম.. বউ যেন একটু স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে মুচকি হেসে চুলে খোপা বাধতে বাধতে কিচেনে চলে গেলো.. কিছু একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছিলাম... পা টিপার মত ছোট্ট একটা ইস্যুর ফলাফল কিনা স্ব-পরিবারে বানিজ্য মেলা ভ্রমন!
মেয়েকে বললাম, "ওকে ডান! কবে যাবে বলো..!"
মেয়ে আমার কোল থেকে এক লাফে নেমে দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে বললো, "মা! মা! বাবা রাজি হয়েছে, কবে যাবো জিজ্ঞেস করছে..! তাড়াতাড়ি বলো!!"
. . বউ লজ্জায় কিচেন থেকে বের হতে পারছে না... পুরো ইনিংস ভাল খেলে এসে মা-মেয়ে দুজনই স্লগ ওভারে আউট হয়ে গেল! কিচেনে মা-মেয়ের এই অসহায় অবস্থা দেখে একটু এগিয়ে গিয়ে সার্কাস্টিক ওয়েতে বললাম , "কাল অফিস থেকে ফেরার পথে পুচকা, চকলেট, আইসক্রিম, বিরিয়ানি সব কিনে নিয়ে আসবো... মেলায় কিছু কিনে খেতে পারবে না... যা মন চাইবে, ব্যাগ থেকে বের করে খাবে"
. . আমার কথা শুনে বউ খুব সাবলীল ভাবে প্রফেশনাল ওয়েতে উত্তর দিলো, "কি দরকার এত কষ্ট করার!! অফিস থেকে ফেরার পথে একটা টিফিন ক্যারিয়ার কিনে নিয়ে আসলেই'তো হয়, বাসা থেকে ভাত, ডাল, শাকসবজি রান্না করে নিয়ে যাবো..."
. . বউয়ের কথা শেষ হতে না হতে প্রণয়া বললো, "বাবা আমার টিফিন বক্স আছে, আমার জন্য কিনতে হবে না"
নাহ! এদের মা-মেয়ের সাথে আর পারা গেলো না... আমার তো দেখি ঘরভর্তি সার্কাজম!!
ফেসবুকে আমার ফেইক প্রোফাইলঃ http://www.fb.com/ZRShuvoo
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৩০