ফাল্গুনের প্রথম দিন...
রাতে শীতের তেমন আমেজ ছিলনা বলে এসিটা বাড়িয়ে দিয়েই ঘুমিয়েছি... আর এতেই ঘটে যায় লঙ্কাকান্ড!! আমার পুরো পরিবারের ঘুম ভাঙ্গে সকাল ৮ টায়...!
.
কে কাকে ফাল্গুনের শুভেচ্ছা জানাবো তার তোয়াক্কা না করে আমি সোজা মেয়েকে কোলে নিয়ে চলে গেলাম ওয়াশরুমে... আর বউ দৌড়ে গেল কিচেনে..
ঘুমের চোখে প্রণয়াকে তার ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে দিয়ে আমি তার আম্মুর ব্রাশ দিয়ে দাত ব্রাশ করা শুরু করে দিছি... ভাগ্যিস মেয়ে আমার খেয়াল করে বলেছিল, "এ কি করছো আব্বু!! এটা তো আম্মুর ব্রাশ!!"
. .আমি তব্দা খেয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আবার মেয়েকে নিয়ে চলে গেলাম রেডি হতে
. . ওদিকে প্রণয়ার আম্মু রান্নাঘরে তুলকালাম করে ফেলেছে..
চা বানাবে নাকি আমার লাঞ্চ রেড়ি করবে নাকি মেয়ের টিফন..
''হ ঝ ব র ল'' অবস্থা একেবারে.. বউয়ের কষ্ট দেখে গিয়ে বললাম,
"এত তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই.. আমি লাঞ্চ বাহিরে করে নিব, তুমি মেয়ের টিফিন রেডি করে দাও"
বউ ঠোঁট বাকিয়ে জানিয়ে দিল,
- জ্বি না!! আপনার বাহিরে খাওয়া চলবে না.. প্রয়োজনে ফ্রিজের বাসি খাবার খাবে লাঞ্চে.. আর একটু টাইম দাও...
- "তুমি যা বলো তাই সই" বলে রান্নাঘর ত্যাগ করলাম...
.
আধা ঘন্টার মধ্যে বাবা মেয়ে দুজনের খাবার বক্স রেডি করে ব্যাগে ভরে সামনে নিয়ে হাজির বউ... আমি অবাক!!
- কি ব্যাপার! আমিতো এতদিন ভাবছিলাম তুমি কচ্ছপ গতির, আজ এত কিউট খরগোস হইলা কেমনে??
- বউ আমার মোড নিয়ে বলল, " হুহ! আমি সব পারি!!"
.
... প্রণয়াকে কোলে তুলে এক দৌড়ে রিক্সা ধরলাম.. মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমি সোজা অফিসে.. এমনিতেই সকালে নাস্তা করার সময় পাইনি.. কাজের চাপে ক্ষিদার কথা ভুলেই গেছি.. হঠাৎ ফোনে মেসেজের শব্দে খেয়াল ফিরলো.. দেখি বউ আমাকে টেক্সট করে ফাল্গুনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে.. মেসেজের নিছে ছোট্ট করে নোট লিখে দিয়েছে, "বাহিরে একদম খাবেনা, লাঞ্চে যা দিয়েছি তাই খাবে কিন্তু!"
বউয়ের খাবারের মেসেজ দেখে ক্ষিদা আরও বেড়ে গেল.. তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে খাবার বক্স বের করে খুলে দেখি ভিতরে একটা ডিম সেদ্ধ আর দুই খন্ড পাওরুটি জেলি লাগানো..!! এতবড় পেটের জন্য এটুকুন খাবার!! বুঝতে বাকি রইল না ম্যাডাম আমার অতি তাড়াহুড়ায় খাবার বক্স অদলবদল করে দিয়েছে.. বাধ্য বালকের মত সেদ্ধ ডিম চিবাতে চিবাতে হঠাৎ মেয়ের কথা মনে পড়লো.. হায়! আমার মেয়েটা কি খাচ্ছে!!
সাথে সাথে ফোন দিলাম স্কুল অথরিটিকে.. ফোনে মেয়েকে বললাম,
- মা! টিফিনে কি খেয়েছো??
- আব্বু! আজ আম্মু আমাকে এত্তগুলা টিফিন দিয়েছে... সব আমি একা খেতে পারিনি তাই আমি আমার সব বন্ধু মিলে খেয়েছি..
... আমি "আচ্ছা মা" এই বলে ফোন রেখে দিলাম
.
. .এই খাবার খেয়ে বাবা মেয়ের ফাল্গুনের প্রথম দিন এভাবে কাটানো ঠিক হবেনা ভেবে একটু আগে আগেই বেরিয়ে গেছি অফিস থেকে.. মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে সোজা বাসায়..
দরজা খুলেই বউ চোখ বড় বড় করে হা হয়ে আছে.. অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কি ব্যাপার!! আজ এত তাড়াতাড়ি মেয়েকে নিয়ে হাজির যে!! রহস্যটা কি শুনি??
. .আমি পেটে রাজ্যের ক্ষিদা নিয়ে এক গাল হাসি দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম... ব্যাগটা বউয়ের হাতে দিয়ে মাথায় ফুলের ব্যান্ড পড়িয়ে দিয়ে বললাম,
-"তোমাকে পহেলা ফাল্গুনে সারপ্রাইজ দিতে চলে এলাম"
ভর দুপুরে আমার এমন রোমান্টিক এটিটিউড দেখে বউ তো আমার মহা খুশি... ইচ্ছে ছিলোনা বউকে আজকের "টিফিন-লাঞ্চ" ট্রাজেডির কথা বলি কিন্তু আমার মহা পাকনা মেয়ে আগ বাড়িয়ে বললো,
- আম্মু! আম্মু! তুমি আমাকে আজ এত্তবড় টিফিন দিয়েছো কেন? আজ পহেলা ফাল্গুন বলে??
.. বউ তো হা করে আছে.. আমিও সুযোগ পেয়ে বলে দিলাম, "আজ আমাকে লাঞ্চে একটা সেদ্ধ ডিম আর জেলি মাখানো রুটি দিলে কেন?? আজ পহেলা ফাল্গুন বলে??
.
... বউয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মন খারাপের আভা ভাসছে... আর বিড় বিড় করে বলছে,
"আসলে আমি ইচ্ছে করে দেইনি!! তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এমনটা হয়েছে…মাফ করে দাও আমাকে.. আমি আসলেই একটা কচ্ছপ"
আমি প্রণয়াকে কাছে টেনে বললাম,
- জ্বি না!! আপনাকে এত সহজে মাফ করা যাবেনা.. আজ আমরা বাবা মেয়ে আপনাকে শাস্তি দিব
- বল কি শাস্তি দিবে, আমি মাথা পেতে নিবো
... মেয়েকে বললাম, "মা তুমি তোমার আম্মুকে কি শাস্তি দিবে বলো??"
মেয়ে আমার গালে আঙ্গুল দিয়ে কিছুক্ষন চিন্তা করে বলল, "আম্মু তুমি আজ আমার জন্য গাজরের হালুয়া বানাবে"
. . বউ মেয়েকে সম্মতি দিয়ে আমার দিকে ইশারায় বলল, "তুমি কি শাস্তি দিবা বলো?"
আমিও সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বলে দিলাম,
"আজকে রাতে মশারিটা তুমি টানাইবা"
...... ফাল্গুনের শুভেচ্ছা
ফেসবুকে আমিঃ http://www.facebook.com/ZRShuvoo
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৪১