শিরোনামটি দেখে হয়তো অনেকেরই চোখ কপালে উঠবে!!..
কিন্তু বর্তমানে এটাই বাস্তবতা। কৃষক তার সবস্ব উজার করে নিপুন যত্নে উৎপাদিত করেছে কৃষিপণ্য কিন্তু দেশের উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্হিতিতে পরিবহনের অভাবে বাম্পার ফলন হওয়া সত্বেও এইসব কৃষিপণ্য আর দাম হারাচ্ছে…পচেঁ যাচ্ছে….গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে!!...
আজ একটু বাজারের পাইকারী আড়তে গিয়ে খোজ নিলাম কৃষিজাত পণ্যর সরবরাহ এবং দাম কেমন। শুনতে অবাক হয়ে গেলাম….ফুলকপি মাত্র ৫০ টাকা ধরা!!.. অর্থাৎ ১০ টাকা কেজি। রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার চিত্র এটাই। শীতের এইসব সবজী রাজধানী ঢাকার বাজারগুলিতে সাপ্লায়ের অভাবে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রী হচ্ছে সেখানে লাগাতার তিন সপ্তাহের অবরোধে এইসব পণ্য ঢাকা যেতে না পারার কারনে উৎপাদিত অন্ঞ্চলে মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রী হচ্ছে!!...
রাস্তার পাশে দাড়িয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ…..
হঠাৎ চোখে পড়লো ভ্যন বোঝাই সাগর কলা নিয়ে ফেরী করে বিক্রী করছেন একজন কৃষক!! দাম জিজ্ঞাসা করতে বললো আটটাকা হালি!! চমকে উঠলাম আরেকবার…. বলে কি এই লোক!! এতবড় সাইজের কলা কখনো ১২ টাকা হালির নিচে কিনতে পারিনি কখনো তাছাড়া আমাদের অন্ঞ্চলের উৎপাদিত কলা ভালো সাইজেরগুলি আমরা কখনো পাইনা কারন এগুলি সবসময় দাম বেশি দিয়ে ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য স্হানের ব্যপারীরা কিনে নেন।আর যেসব কলার সাইজ ছোট কেবল সেগুলিই স্হানীয় পর্যায়ে বিত্রী হয়ে থাকে।
অবাক হওয়ার পালা তখনো শেষ হয়নি….
যখন দেখলাম এই কৃষক চোখের সামনে মাত্র ৫ টাকা হালি দরে কলা বিক্রী করলো তখনতো চোখ এক প্রকার কপালে ওঠার মত দশাই!! আমিও কিনলাম এককান্দা কলা!! যাতে তিন হালি দুইটা ছিল!! মাত্র সতের টাকায় কিনলাম এই বিশাল সাইজের কলা।
কিছুক্ষণ পরে দেখি একভ্যন ভর্তি লাউ!!...
দাম জিজ্ঞাসা করলাম…বললো বড়গুলি ৩০ টাকা!! মাঝারী ২০ আর ছোট দশটাকা!! অবশেষে বড়সাইজের একটি লাউ ২০ টাকায় কিনলাম। অথচ এই সাইজের লাউ মাত্র ২০-২৫ দিন আগেও ৬০-৭০ টাকায় কিনতে হতো আমাদের!!...
পোল্টি মুরগীঃ
পোল্ট্রি শিল্প এক প্রকার ধংসই হয়ে গেছে!! এখন যা অবশিষ্ট আছে তা শুধু এই শিল্পের কন্কালসার দশা!!....
ঢাকার বাজারে যখন পোল্ট্রি মুরগি প্রতি কেজি বিত্রী হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকায় ঠিক তখন পোল্ট্রি খামারের জনপদ নামে খ্যত গাইবান্ধায় পাইকারী দাম মাত্র ৭১ টাকা কেজি!!... তারপরও সেইসব মুরগি স্হানীয় বেপারী ছাড়া অন্য কোন জেলার ব্যপারী নাই!! অনেকে বিক্রী করতে চাইলেও ক্রেতার অভাবে বিক্রী করতে পারছেনা!!... এগুলি উৎপাদন করে কি পরিমান লোকসান হচ্ছে তার খবর কেও জানেন??....
একটি পরিসংখ্যান দেখিঃ
১০০০ মুরগী উৎপাদন করতে খরচ হয়।
১. ১ দিনের ব্রয়লার বাচ্চা ১০০০পিছ যার দাম ২২,০০০ টাকা
২. ৫০ বস্তা খাবার যার দাম ২২১০ করে ১,১০,৫০০ টাকা
৩. ধানের গুড়া ২০ বস্তা যার দাম ৩২০ টাকা হলে৬,৪০০ টাকা
৪. ঔষধ এবং ভ্যকসিন বাবদ সর্বমোট ১৫,০০০ টাকা
৫. ইলেকট্রিক বিল বাবদ খরচ ৮,০০০ টাকা
৬. একজন শ্রমিকের বেতন একমাসের ৫,০০০ টাকা
৭. পরিবহন বাবদ খরচ ১,৫০০ টাকা
মোট খরচ =১,৬৮,৪০০ টাকা
১০০০ মুরগি ৩০ দিনে ভালো ওয়েট আসলে উৎপাদিত ওজন দাড়াবে ১,৫০০ কেজি। এখন শীতকাল মোরগ মুরগীর অসুখ বিসুখ বেশী তাই মর্টালিটির হারও বেশি সে হিসেবে ১০% মর্টালিটি ধরলে ১৫০০ কেজি-১০%=১৫০কেজি বাদ দিলে সঠিক উৎপাদিত ওজন দাড়ায় ১৩৫০ কেজি।
১৩৫০ কেজি ব্রয়লার মুরগির বাজার দর ৭১ টাকা দরে দাম আসে ৯৫,৮৫০ টাকা??...
আসুন দেখি আজ যারা ব্রয়লার মুরগি বিক্রী করলেন তাদের লোকসানের পরিমান কত??...
সর্বসাকূল্য উৎপাদন খরচ ১,৬৮,৪০০ টাকা
সর্বমোট মুরগি বিক্রী -৯৫,৮৫০ টাকা
তাহলে ওই খামারীর লোকসানের পরিমান=৭২,৫৫০ টাকা!!
এরকম লোকসান হলে পোল্ট্রি খামারী কি দেশে অবশিষ্ট কেও থাকবে??....
তাদের কি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে….আল্লা!! দড়ি ফালাও…বায়া উপ্রে উডি যাই!!...
এভাবে প্রতিটা কৃষক, শ্রমিক থেকে ব্যবসায়ী সহ প্রতিটা লোক আজ ক্ষতিগ্রস্ত!!.. এই ক্ষতি কে পুষিয়ে দেবে??...
আর এরকম ক্ষতি বেশিদিন হতে থাকলে কৃষক তার পূঁজি হারিয়ে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে তার প্রতিটা উৎপাদিন পণ্য যা দেশের এবং দেশের মানুষের জন্য দূর্ভিক্ষের অন্যতম কারন হতে পারে।
তাই আরেকবার রাজনীতিবিদদের অনুরোধ করছি….আপনাদের গোয়ার্তুমিতে এইসব শিল্প কৃষি যেন বন্ধ হয়ে না যায় এবং খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ যেন দূর্ভিক্ষে পতিত নাহয়।।