কমন নদ নদী নিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সমস্যা আজকের নয় । যেদিন থেকে পৃর্বপাকিস্তান নাম ঘুচিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ নাম হল সে দিন থেকেই এ সমস্যার শুরু হয়েছে । অবশ্য আসল ঘটনার সূত্রপাত আরো অনেক আগে থেকেই ।
১৯৫০ সালের দিকে ভারতের পানি বিশেষজ্ঞরা অনুধাবন করতে পারেন যে কোলকাতা বন্দর দিন দিন তার নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে । পূর্বভারতের অন্যতম নদীবন্দর হল কোলকাতা । কোলকাতা নদীবন্দরের সমস্যা হওয়া মানে পূর্ব এবং উত্তর পৃর্ব ভারতের পানি পথের সমস্ত ব্যবসা বানিজ্য হুমকির সম্মুখীন হওয়া । তাই ভারতের বাঘা বাঘা পানি বিশেষজ্ঞরা অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষার পর এই সিদ্ধান্তে উপনিত হন যে, হুগলি নদীর নাব্যতা ঠিক রাখতে
পশ্চিম বংগে গঙ্গাবক্ষে একটি বাঁধ নির্মান অত্যান্ত জরুরী । আর তার ফলশ্রুতিতে ভারত মালদহের নিকট গঙ্গাবক্ষে ফারাক্কা বাঁধ নির্মান করে ।
কোলকাতা হুগলি নদী বন্দরের নাব্যতা সমস্যার সমাধান করতে যেয়ে ভারত দেখতে পায় যে সুতার একটি অংশ যেমন ভারতের হাতে তেমনি আরেকটি অংশ বাংলাদেশের হাতে । গঙ্গার যেমন একটি শাখা নদী হুগলি তেমনি অন্য একটি গুরুত্বপূর্ন শাখা নদী বাংলাদেশের পদ্মা । সুতরাং হুগলি নদীর নাব্যতার নামে ভারতের একক সিদ্ধান্ত শেষ কথা এমন কখনও হতে পারে না । ভারতের এই গঙ্গা সমস্যা সংক্রান্ত যে কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশেরও মতামতের প্রয়োজন ছিল বলে ভারত, বাংলাদেশ তথা আন্তর্জাতিক পানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন । তাছাড়া আন্তর্জতিক পানি আইন অনুযায়ী ` যে নদীর স্রোত পাশাপাশি দুইটি দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সে নদীর স্রোতের গতিপথ আংশিক অথবা সম্পর্ন ভাবে বন্ধ করার ক্ষমতা একক ভাবে কোন দেশের নেই` । সেই দিক দিয়া বিচার করলে দেখা যায় ভারত গাঁয়ের জোরে অথবা আইনকে বৃদ্ধা আংগুল দেখিয়ে ফারাক্কা বাঁধ নির্মান করেছে যা সম্পূর্ন বেআইনি, অনৈতিক এবং অমানবিক ।
ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে বাংলাদেশ শুক্না মৌসুমে মরুভূমিতে পরিনিত হয় আর বষা মৌসুমে তলিয়ে যায় অতল পানিতে । ফারাক্কার প্রভাবে বাংলাদেশের এই বেহাল অবস্হার সমাধান কল্পে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে অনেক আলাপ আলোচনার পর ঠিক হয় যে , প্রয়োজন অনুযায়ী দুই দেশ কিউসেক মেপে পানি ভাগ করে নিবে । কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে চুক্তি থাকা সত্তেও ভারত কখনু বাংলাদেশকে তার পানির নাজ্য হিস্যা প্রদান করে নাই ।
ভারত এবং বাংলাদেশ দুই মূলত কৃষি প্রধান এবং নদী মাতৃক দেশ । গঙ্গার জল উভয় দেশের সেচের কাজে ব্যাবহ্রত হয় । শুক্না মৌসুমে নিজের দেমের কৃষিক্ষেত্রে পানি প্রবাহ অব্যাহত রাখতে গিয়ে ভারত চুক্তি ভঙ্গ করে অধিক পরিমান পানি ব্যাবহার করে বলে বাংরাদেশের অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে । এবং এ কারনেই ভারতের প্রবল আপত্তি সত্তেও ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে পানি বন্ঠনের সুষ্ঠ সমাধান চেয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করে ।
অবশেষে ১৯৭৭ সালে কোন মৌসুমে ফারাক্কা থেকে কে কত কিউসেক পানি পাবে তা নিয়ে পৃর্নরায় বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । এই চুক্তির বলে পানি সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব ন্যাস্ত হয় জয়েন্ট রিভার কমিশনের হাতে । বলা বাহুল্য সেই কমিশনও আর যাই করুক এই স্পর্শকাতর বিষটির সমাধানে কোনও দীর্ঘস্হায়ী পদক্ষেপ নিতে পারেনি ।
ফারাক্কার পানি সমস্যার সুষ্ঠ সমাধান আদেও কোন দিন হবে কিনা সে ব্যাপারে আমরা সন্দিহান।তার উপর আবার মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো ভারত পায়তারা করছে টিপাইমুখ বাঁধ তৈয়ারীর ।
টিপাইমুখ বাঁধ এটি আমাদের জাতীয় সমস্যার আর একটি ইস্যু । তাই সরকারের কাছে আমদের বিনিত
আবেদন সর্ব দলীয় একটি কমিঠি করে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন । জনগনকে অন্ধকারে রেখে দেশের স্বার্থবিরোধী কোন চুক্তি করলে জাতি আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না ।
)