নব্বই দশকের পর থেকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ভরাডুবি অবস্থা। নব্বই দশক বা তার আগে বেশ সংখ্যাক চলচ্চিত্র অভিনেতা, অভিনেত্রী, পরিচালক, কন্ঠ শিল্পী, সুরকার, গীতিকারে এসে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আলোর পথ দেখালেও এখন খুবই বেহাল অবস্থা। এখন শুধু বেহাল অবস্থা না, তার থেকেও চরম অবস্থায় দাঁড় করাচ্ছে আমাদের দেশেরই কিছু মাথা মোটা লোকগুলো সাথে বিদেশী কালপিটেরা....
অভিনয় একটি শিল্প। যেখানে আঙ্গিক (অঙ্গ বা শরীর), বাচিক (বচন ভঙ্গি), সাত্ত্বিক (মনকে অভিনয়ের ভিতর দেওয়া), আহার্য (পোশাক) বিদ্যামান থাকতে হয় কিন্তু এখন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কোনটাই ভাল পাওয়া যায় না। একটি ভাল চলচ্চিত্র মানুষ তখন গ্রহন করে যখন তার ভিতর পরিপূর্ন কিছু পায় যেমন: একটি ভাল গল্প, অভিনেতাদের গঠনমুলক অভিনয়, কিছু ভাল গান ইত্যাদি। এগুলো তো এখন তেমন দেখা যায় না বরং কিছু বস্ত পচাঁ গল্প, একগুয়েঁমী গান আর অভিনেতাদের অদ্ক্ষ অভিনয় আমাদের চলচ্চিত্র সাগরের অতল গভীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের অভিনয় শিল্পে এখন হিরো আলমের কথা না বললেই নই। সারা দেশ না এখন বহিবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছেন তিনি। তার উদ্দ্যেগ কে আমি অপমান করবো না কিন্তু তাকে বেশি দুর যেতে দেওয়া মোটেই ঠিক হবে না বাংলাদেশের চলচ্চিত্র’র জন্য। ইউটিউবে তার ভিডিওর কমেন্টগুলো দেখলে বুঝা যায় কেমন করে অপমান করা হয় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কে। অনন্ত জলিল, হিরো আলম, মডেল আরিফ মার্কা অভিনেতা কিছু সমায়ের বিনোদনের কারন হতে পারে কিন্তু অভিনয় জগতের উন্নতি হতে পারে না। এদের এখন না থামালে কিছু দিন পর গোটা কয়েক ডজন হিরো আলম, অনন্ত জলিল তৈরি হবে আর বহিবিশ্ব জানবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জলিল, আলম মার্কা।
আমরা দু দিন পর পর স্টার জলসা, স্টার প্লাস, সুলতান সুলেমান বন্ধ করার জন্য আন্দোলন করি (আমি নিজেও এর বিপক্ষে পোষ্ট করেছিলম)। আন্দোলন না করে একটু অন্য পথে হাঁটলে কেমন হয়? বাংলাদেশের সাংস্কৃতি নিয়ে সুন্দরভাবে আকর্ষনীয় কিছু তৈরি করুন। একসময় ইত্যাদি, রুপনগর, কোথাও কেউ নেই ইত্যাদি অনুষ্ঠান দেখতো মানুষ নেশার মত। এখন নতুন করে নেশার লাগানোর মত কিছু পায় না তাই নেশা চলেগেছে অন্য জায়গাতে। এগুলো আমাদের ব্যর্থতা ছাড়া কিছুই না। কোন অনুষ্ঠান বন্ধ করে এযুগে মানুষকে ফিরিয়ে আনা যাবে না।
কোন কিছুর ভিতর প্রতিযোগীতা না থাকলে উন্নতি করা কঠিন ব্যাপার। নব্বই দশক বা তার আগে বাংলাদেশের সিনেমার প্রান ছিল। মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে সিনেমা হল গুলোই কিন্তু লজ্জার বিষয় বাংলাদেশের বর্তমান জেনারেশনকে যদি চলতি বছরের কয়েকটা বাংলা সিনেমার নাম বলতে বলেন তাহলে খুব কঠিন ব্যাপার হয়ে যাবে কিন্তু বলিউড সিনেমার নাম চোখ বন্ধ করে ডজন খানেক বলে দিবে। বাংলা সিনেমা একদম যে মানুষ এখন পছন্দ করে না তা নয়। প্রজাপতি, আয়নাবাজি, লালটিপ, মনপুরা ইত্যাদি সিনেমা গুলো এখনও মানুষ দেখে। মানুষ চাই মানসম্মত সিনেমা কিন্তু এটা আমরা দিতে পারছি না।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন বোর্ডের উচিত হবে এখন দেশের চলচ্চিত্র'র জন্য কিছু নিয়মকানুন প্রণয়ন করা, নিজেদের ভিতর দক্ষ শিল্পীদের বাছায় করা, মানসম্মত অনুষ্ঠান তৈরি করা, নিজেদের অভিনয়ের ভিতর প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা। মানসম্মত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ফিরে আসুক আমাদের চলচ্চিত্র’র প্রাণ.......
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪৫