সাহিত্যে এবছর নোবেল পেয়েছেন জার্মানির হেয়ার্টা ম্যুলার। রুমানিয়ায় জন্মগ্রহণকারী এ নারী তার লেখায় বলেছেন ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া মানুষের কষ্টের কথা। নির্ভয়ে, নিঃশঙ্কচিত্তে কথা বলার অধিকারের জন্যও সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সুইডিশ একাডেমি ২০০৯ সালে সাহিত্যে তাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ‘অধিকার হারানো মানুষের গল্প’ বলার তার সামর্থ্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
১৯৫৩ সালে জন্ম নেওয়া ম্যুলারকে রুমানিয়ায় নিকোলাই চসেস্কুর বর্বর শাসনামলে নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছিল। কষ্টের জীবন কেটেছে তার। কমিউনিস্টদের চর হতে অস্বীকার করায় রুমানিয়ার গোপন-পুলিশ তাকে নাজেহাল করেছিল অনেকবার। তার মাকেও পাঁচ বছরের জন্য পাঠানো হয়েছিল সোভিয়েত শ্রমশিবিরে।
১৯৮২ সালে বেশকিছু গল্প নিয়ে তার প্রথম বই প্রকাশিত হয় রুমানিয়ায়। ‘নিদারুনজেন’ নামের বইটির ওপর সেন্সরশিপের কাঁচি চালায় কর্তৃপক্ষ। কিন' দমে না গিয়ে দু’বছর পর তিনি প্রকাশ করেন ‘দ্রুয়েচেকান্দার টাঙ্গো (নির্যাতিত টাঙ্গো)।’ রুমানিয়ায় গ্রামাঞ্চলে জার্মান ভাষাভাষীদের ওপর নিপীড়ন ও দুর্নীতি নিয়ে গড়ে ওঠে বইটির কাহিনী।
একনায়ক নিকোলাই চসেস্কুর আমলে রুমানিয়ার বেড়ে ওঠা মানুষের জীবন-কাহিনীই উঠে এসেছে ম্যুলারের লেখায়। ১৯৮৯ সালে চসেস্কুর দুঃশাসনের অবসান হয় ফায়ারিং স্কোয়াডে তার মৃত্যর মধ্য দিয়ে।
সুইডিশ একাডেমি ম্যুলারের ‘গভীর অনুভবের কবিতা এবং অকপট গদ্যের’ প্রশংসা করেছে। পুরস্কার পাওয়ার খবর শুনে তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কী ছিল তা রয়টার্সকে বলেছেন একাডেমির স'ায়ী সচিব পিটার এনগ্লান্ড। তিনি বলেন, “সে খুবই, খুবই খুশি। বলেছেন, তার নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসে, মনে হয়েছিল খবরটি অবাস্তব। প্রতিক্রিয়া জানানোর শব্দও খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি।”
এনগ্লান্ড যোগ করেন, “তবে তিনি এটাও বলেছেন, ডিসেম্বরে যখন (পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে) আমাদের আবার দেখা হবে, তখন তিনি তার ভাষা খুঁজে পাবেন।”
ম্যুলার তার ‘দ্য ল্যান্ড অব প্লামস’ এবং ‘দ্য অ্যাপয়মেন্ট’ গ্রনে'র জন্যও বেশ পরিচিত। ‘দ্য ল্যান্ড অব প্লামস’ বইটি তিনি চসেস্কুর কমিউনিস্ট শাসনামলে নিহত তার বন্ধুদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। দ্য অ্যাপয়মেন্ট’ এর গল্পে এক রুমানিয়ান নারী ‘আমাকে বিয়ে কর’ লেখা একটুকরো কাপড় ইতালির উদ্দেশে যাত্রাকারী এক লোকের স্যুটের সঙ্গে সেলাই করে দেয়।
এনগ্লান্ড বলেছেন, “তিনি যা লেখেন তা সত্যিকার অর্থেই শক্তিশালী...অসাধারণ তার বার্তা।” “রুমানিয়ায় নিবর্তনমূলক পরিবেশে তার অতীত যেমন ওইসব লেখায় ছায়া ফেলেছে, তেমনি পরে স্বদেশে তার পরবাসী হয়ে পড়ারও গাঢ় ছাপ পড়েছে লেখায়।”
১৯৮৭ সালে স্বামী রিচার্ড ওয়াগনারের সঙ্গে রুমানিয়া ত্যাগ করেন ম্যুলার। এখন বাস করছেন বার্লিনে।
গত এক দশক জুড়ে সাহিত্যে নোবেল জয়ে ইউরোপীয় লেখকদেরই প্রাধান্য দেখা গেছে। তাই কেউ কেউ সমালোচনা করে বলেছেন, বিশ্বের সবদিকে তাকানোর ফুরসত সুইডিশ একাডেমির নেই।
ম্যুলার সাহিত্যে নোবেল পাওয়া ১২তম নারী। পুরস্কারের মেডেলের সঙ্গে তিনি পাচ্ছেন ১০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রাউন (১৪ লাখ ডলার)।
২০০৯ সালের এটি চতুর্থ বিষয়ে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা। রীতি অনুযায়ী সোমবার প্রথম চিকিৎসাবিজ্ঞানে, মঙ্গলবার পদার্থ বিজ্ঞানে, বুধবার রসায়নে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
ডিনামাইট আবিষ্কারক ও ব্যবসায়ী আলফ্রেড নোবেলের দান করা অর্থে ১৯০১ সাল থেকে বিজ্ঞান, সাহিত্য ও শানি-তে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়।