নাম তাঁর মোঃ গোলাপ মিয়া। যদিও তিনি কোন স্কুল কিংবা কলেজে পড়ান না, তবুও সবাই তাকে চেনে গোলাপ মাষ্টার হিসেবে। শুধুমাত্র গৃহশিক্ষক হিসেবে তিনি অত্র এলাকার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। বিখ্যাত হওয়ার আরেকটি কারন হচ্ছে তাঁর অতি সাধের সাইকেল। লোকমুখে শোনা যায়, সত্তরের দশকে তাঁর বিয়েতে শশুরমশাই যৌতুক হিসেবে দিয়েছিলেন এটি। সেই থেকে এটাই গোলাপ মাষ্টারের একমাত্র বাহন। মরিচা রঙ্গের এই সাইকেলের বেল, ব্রেকের বালাই নেই। যখনই রাস্তায় তার সাথে দেখা হতো, প্রায়শই দেখতাম মাথা ঝুঁকে সাইকেলের কোন না কোন যন্ত্রাংশ ঠিক করতে। আর রাস্তায় কোন বাস ট্রাকের সামনে পড়ে গেলে আগেভাগেই যেভাবে লাফ দিয়ে নামতেন, মনে হতো মঙ্গলগ্রহ থেকে প্যারাসুটের মাধ্যমে এ ধরাতে এইমাত্র ল্যান্ড করলেন।।
একদিন তিনি রাত ৯ টার দিকে আমার পাশের বাড়িরই এক ছাত্রকে শিক্ষাদান করছিলেন। হঠাৎ করেই তিনি আবিষ্কার করলেন বারান্দায় রাখা তাঁর অতি সাধের সাইকেলটা গায়েব!!! শুরু হয়ে গেল চিল্লাচিল্লি। তাঁর চিৎকারের চোটে পরিমরি করে ছুটলাম ঘটনাস্থলে। গিয়ে দেখি, সাইকেলের শোকে তাঁর মুর্ছা যাওয়ার মতো অবস্থা। সঙ্গে সঙ্গেই চারিদিকে খোঁজ লাগানো হলো তা উদ্ধারের জন্য এবং আমরাও কয়েকজন মোটরসাইকেলে করে বেড়িয়ে পড়লাম সাইকেল উদ্ধার অভিযানে। মাত্র দুই কি তিন কিলোমিটার যাওয়ার পরই দেখি, চোর মহাশয় মাথা ঝুঁকে চুরি করা সাইকেলের কি যেন ঠিক করছে।। ঘটনাস্থলেই তাকে আচ্ছামতো ধোলাই দেওয়ার পর বাড়িতে এনে সারারাত বেধেঁ রাখা হলো। এরপর দিন সকালে বাড়ির উঠানে বিচার বসেছে। শতশত মানুষ দেখতে এসেছে, কার এই স্পর্ধা যে, গোলাপ মাষ্টারের সাইকেল চুরি করে নেয়!!! গ্রামের এক মুরুব্বি সেই চোরকে মৃদুমন্দ মার দিতে দিতে বলে, "চুরি করলি আবার ধরা পড়লি কেন? কেমন চোর হইছস? "
চোরটির সম্ভবত প্রেস্টিজে লেগে গেল। কাঁদো কাঁদো গলায় অভিমানের সুরে বললো, "এহ্ ...... সাইকেলের শুধু চেইন পড়ে। "
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১১:৪৩