পরীক্ষা শেষ হইবা মাত্র আমার হৃদয়হীনা জননী কহিলেন, “তোমাকে লইয়া আর পারা গেল না। এই ক’দিনে নিজ কামরার কি হাল করিয়াছ? আবর্জনার স্তূপও ইহার চাইতে উন্নতমানের। কেননা তাহা হইতে কিছু উপকারী দ্রব্যাদী বাহির হইলেও হইতে পারে কিন্তুক তোমার কামরা হইতে তেলাপোকা আর ইঁদুর ব্যতীত কিছুই বাহির হইবে বলিয়া মনে হয় না”।" অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, “আমার মাঝে মাঝে সন্দেহ জাগে তোমার মত একটি অকর্মন্য কন্যাকে কি আমি নিজ গর্ভে ধারণ করিয়াছিলাম নাকি হাসপাতালেই আমার সন্তান অদলবদল হইয়া গিয়াছিল কে জানে”।" একবার ভাবিলাম আমার মাতৃদেবীকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাতে তেলাপোকা ও ইঁদুরের মহান অবদানের উপর সুদীর্ঘ একখানা লেকচার প্রদান করিয়া তাহার অন্তর্দৃষ্টি খুলিয়া দিই। কিন্তুক তাহার চিন্তিত চেহারা এবং তাহাতে সন্দেহের সুস্পষ্ট ছাপ দেখিয়া বুঝিলাম এইবেলা আমার কপালে খারাপি আছে। সুতরাং হৃদয়ের ভাব হৃদয়ে লুকাইয়া মুখে একখানা তেলতেলে হাসি ঝুলাইয়া নিজ কামরা ছাপ সুতরার মহান কার্যে কোমর বাঁধিয়া লাগিয়া গেলাম।
কিন্তুক মহাপুরুষেরা তো আর এমনি এমনি কহেন নাই, “যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার মানিক রতন”।" সুতরাং আমার জননীকে ভুল প্রমাণিত করিয়া আমার আবর্জনার স্তূপ হইতে যে অমূল্য রতন বাহির হইল তাহা দেখিয়া এহেন “মাইঙ্কাচিপায় পড়া” পরিস্থিতিতেও আমি হাসিয়া কুটিকুটি হইয়া লুটিয়া পড়িলাম। কিন্তুক আমার এহেন টাল্টুদশা দেখিয়া আমার মাতৃদেবী যে এইবেলা পাবনার টিকিট কিনিতে উদ্দত হইলেন তাহা দেখিয়া বুঝিতে পারিলাম এইবেলায় বোধকরি ঘটনাটা একটু খুলিয়াই বলিতে হয়...
সবেমাত্র তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হইয়াছে। এমন সময়ে আমাদের একঘেয়ে আটপৌঢ় জীবনে খানিকটা ঢেউ তুলিতে ডিপার্টমেন্টে এক নতুন শিক্ষকের আগমন ঘটিল। তরুণ প্রভাষক। সর্বদা মাথায় দুনিয়া উদ্ধারের পোকা কিলবিল করিতেছে। হঠাৎ তাহার মাথায় কি ভূত চাপিল তিনিই জানেন আর তাহার ভগবান। ঠিক করিলেন এখন থেকে সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার আমাদের প্রবলেম সল্ভিং এর ক্লাস হইবে। এই বিষয়টি আজীবনই আমার নেটওয়ার্কের উপর দিয়া যায়। একজন বিবেকবান সুস্থ মানুষ নিজ জীবনের অসংখ্য সমস্যাকে কাঁচকলা দেখাইয়া এমন কি যখন দেখি- প্রেমিকার দজ্জাল পিতাকে কি করিয়া পটাইবে ইহার কথা না ভাবিয়া; কি করিয়া ফিওনা নামক এক ব্যাংগানিকে কস্ট এফিসিয়েন্ট ওয়েতে তাহার ব্যাংগ রাজপুত্ররূপী প্রেমিকের কাছে লইয়া যাইবে তা লইয়া আপাদমস্তক ঘামায়; তখন তাহা আমার বোধগম্যতার সীমাকে ছাড়িয়া যায়। সুতরাং এহেন বাস্তবতাবর্জিত অপকর্মে আমাকে কোনকালেই খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। কিন্তুক অনুরোধে যে শুধু ঢেঁকি নয় পুরো ধানছাঁটার কলই ভক্ষণ করিতে হয় সেদিন উপলব্ধি করিলাম যেদিন আমার অতি উৎসাহী এক বান্ধুবীর (যিনি বন্ধুমহলে ঢিলু, ঢিল্কা, ঢিলঢিল প্রভৃতি নামে পরিচিত তাহার ঢিলামির জন্যে!!!) ই,বি,এম (ইমোশানাল ব্ল্যাক মেইল) এর ঠেলায় এহেন পাপের ভাগীদার হইয়া প্রবলেম সল্ভিং ক্লাসে নিজেকে আবিষ্কার করিলাম। (তবে আজ এতকাল পর এইবেলায় ভাবি আসলে আমার বন্ধুটির প্রকৃত উদ্দেশ্য কি ছিল? প্রবলেম সল্ভিং নাকি তরুণ প্রভাষক দর্শন!!!)
যাহাই হোক না কেন প্রবলেম সল্ভিং ক্লাস চলাকালীন সময়ে মেসেঞ্জারে রসের আলাপ, সামনে সুদর্শন প্রভাষক আর ক্লাস শেষে ফ্রি খাবার; ইয়ে মানে সব মিলায়ে খুব একটা ক্ষতির বিজনেস ছিল না পুরো বিষয়টা। কিন্তুক সবই কপাল- কপালের নাম গোপাল! উপরওয়ালার বোধকরি আর আমার সুখ সহ্য হইল না। সুতরাং যেদিন স্যার ক্লাসে আসিয়া বলিলেন যে এখন থেকে প্রতি ক্লাসের শুরুতে ২ ঘন্টা কন্টেস্ট তাহার পর আলোচনা তখন মনে হইল – হে ধরনী দ্বিধা হও, আমি তোমাতে আশ্রয় লই। কিন্তুক কলিকাল, ছাগলে চাঁটে বাঘের গাল। সুতরাং ধরনী দ্বিধা হইল না এবং পূর্বের ন্যায় এইবারও আমার বান্ধবীর যন্ত্রণায় অতিষ্ট হইয়া আমাকে কন্টেস্টে বসিতে হইল...
কন্টেস্টে বসিবামাত্র প্রবলেম দেখিয়া আমার বাস্তববাদী মন অতিমাত্রায় বিক্ষিপ্ত হইয়া গেল। কিন্তুক আমার বান্ধবীর ঢিলাঢালা চেহারার দিকে তাকাইয়া অতি কষ্টে নিজেকে সামলাইয়া লইলাম। অতঃপর দু’জনা আবজাব মারিয়া দু’টি প্রবলেম এক্সেপ্টেডও করাইয়া ফেলিলাম (লজ্জাস্কর হইলেও সত্য যে ঐ দু’টি শিশুতোষ প্রবলেম বৈ কিছুই ছিলনা!!!)। কিন্তুক কথায় বলে না – মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্তই। সুতরাং যখন আমরা ওই দুটি সাবমিট করিয়া আংগুল চুষিতেছি, দেখিলাম গুরুদের র্যাংক বাড়িতেছে পাল্লা দিয়া। ইহা পরিলক্ষণ করিয়া আমার বন্ধুটি চুল ছিঁড়িতে উদ্দত হইলেন। আমার মাথায় পূর্ব হইতেই টাক রহিয়াছে বিধায় ঐকাজে না গিয়া মেসেঞ্জার খুলিয়া রসের আলাপে মনোনিবেশ করিলাম। আমার এহেন ঔদাসীন্য বন্ধুটির হৃদয়ে যে সেদিন সেলের মত আঘাত করিয়াছিল আজ এতদিন পরে তাহা উপলব্ধি করিতে পারিলাম। তাহার প্রমাণস্বরূপ সেদিনের সেইসকল প্রবলেমগুলোর পেছনে লেখা তাহার অনুকাব্যগুলো নিম্নে উপস্থাপন করিতেছিঃ
অনুকাব্য ১ - প্রথম অনুকাব্যটিতে কবি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে আত্মসমালোচনা করিয়াছেন। শুধু তাই নয় তিনি নিজ ভ্রাতাদেরও সমালোনা করিতে এতটুকু দ্বিধা করেন নাই। যখন স্বজনপ্রীতির পরাকাষ্ঠায় দেশ ও জাতি পর্যদুস্ত তখন এধরনের বলিষ্ট পদক্ষেপ আমাদের জন্য মাইলফলকের ন্যায় গৃহীত হইতে পারে বলিয়া আমি মনে করিঃ.
আমি একটা আবুল,
ঘুরে এলাম কাবু্ল,
ভাইটি আমার হাবুল।
লেখকের মন্তব্যঃ
দোস্ত একটা কথা বুঝিতে পারিলাম না! তোর মাথায় মগজের পরিমান যে একটি বাদামের দানার চাহিতে বড় নহে ইহা তুই এই কন্টেস্টে বসিয়াই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করিয়া ফেলেছিস। ইহার জন্য আবুল বা মফিজ ভাইকে এইবেলায় না ডাকিলেও চলিত। কিন্তুক কথা হইল যে বড়দা বা মেজদাকে এর মাঝে না আনিলেই কি হইত না? লোকমুখে শুনিলাম মেজদার বিবাহের তোড়জোর চলিতেছে। এহেন নাজুক মুহূর্তে এমন স্পর্শকাতর মন্তব্য যে পাত্রের যোগ্যতার স্বাস্থ্যহানি ঘটাইতে পারে – এ কথা একবার ভাবিয়া দেখিলে কি হইত না? বুঝিলাম তোর লাভলাইফের সবচেয়ে বড় কাঁটা তিনিই। তাই বলিয়া একই মায়ের পেটের ভাইকে জব্দ করিবার এহেন ইনএফিসিয়েন্ট এবং টাইম কঞ্জিঊমিং এলগরিদম! তোর কি ধারনা যে এই দুনিয়ার তাবত পাত্রীর বাপ-মায়েরা তাহাদের কন্যাদান কালে সামহোয়ারে আসিয়া আমার ব্লগ পড়িয়া যাইবে! বেয়াক্কেল মাইয়্যা! খবরদার, এহেন ভুয়া এলগরিদম লইয়া ফের যদি দেখি ফিল্ডে নামিয়াছিস তবে বাস্তবিকই তোকে পার্সেল করিয়া কাবুল প্রেরণ না করিয়াছি তো প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের নিকটে যাইয়া স্বয়ং আমার পিতৃপ্রদত্ত নাম বদলাইয়া ফেলিব; এইক্ষণে বলিয়া রাখিলাম। কেননা এহেন ইনএফিসিয়েন্ট এলগরিদমে প্রেজেন্টেশন এররের সহিত টাইম লিমিট এক্সিড করিবারও সমূহ সম্ভাবনা রহিয়াছে; যাহা বরদাস্তের বাহিরে।
অনুকাব্য ২- ইহার পরে গ্রাফ থিওরি সংক্রান্ত একখানা প্রবলেমে আসিয়া যে তাহার মেমরী লিমিট এক্সিড করিয়াছিল এবং তাহারি বাই প্রোডাক্ট এর ফসল সরূপ পরবর্তী কবিতাটির জন্ম বলিয়া মালুম হইতেছেঃ
আমার মন ভাল নেই
থাকবে কি করে?
কিছুই যে পারিনা
জীবনে যখন যেখানে হাত রেখেছি
ধূলো হয়ে গেছে তা
তাই কিছুতে হাত দিতে সাহস পাইনা আজকাল
ব্যর্থতা ঢেকে দিয়েছে আমার সব উৎসাহ
উৎসাহের লাল রংগুলো আজ কেবলি ধূসর মনে হয়...
হতাশার আরেকটি প্রতিচ্ছবিঃ
হে মেইন (main)
তুমি রিটার্ন কর জিরো,
যদি রিটার্ন করতে ওয়ান
তবে হতাম আমি হিরো।
লেখকের মন্তব্যঃ
দোস্ত এই কবিতাটি আমার মনে ধরিয়াছে। এই কবিতার সহিত “বাতাসে উড়িতেছে আমার লুংগি” এই জাতীয় আধুনিক কবিতার চরম মিল মুহাব্বত খুঁজিয়া পাইতেছি। এহার মাঝে জীবন- যৌবনের প্রতি তোর এক অদ্ভুত ধরনের অনীহা ও বিতৃষ্ণা ফুটিয়া উঠিয়াছে যা আমার হৃদয়কে চরমভাবে স্পর্শ করিয়াছে। তুই প্রোগ্রামিং এর বন্ধুর পথে চলিয়া চাপ্পলের তলা খসাইয়া ‘প্রব্লেম’ নামক প্রেমিকাকে তাহার দজ্জাল ‘কম্পাইলার’ পিতার কব্জা হইতে এক্সেপ্টেড করাইতে না পারিলেও; চাহিলেই যে তুই ব-কবিদের পাঠশালায় তোর প্রতিভার ছাপ রাখিয়া আধ্যাত্মিক পর্যায়ে পৌঁছাইয়া যাইতে পারবি তাহা আমি নিশ্চিত। তোর এহেন আধুনিক কবিতা পাঠ করিয়া আমি গুরুর পাঠশালায় লেখা আমার প্রথম আধুনিক ব-কবিতাটি জুড়িয়া দেওয়ার লোভ সামলাইতে পারিলাম নাঃ
একদা এক প্রভাতে- পথ চলেছি আমার পথে...
হঠাৎ চলা আমার স্তব্ধ হল এক উষ্ণ স্পর্শে...
ভাবলাম বুঝি তুমি এলে...
চেয়ে দেখি – উড়ন্ত পাখির পড়ন্ত মজা পড়েছে মোর কাঁধে...
অনুকাব্য ৩- শেষ কাব্য পাঠে বুঝিতে পারিতেছি তোর সেইক্ষণে আমাদের প্রবলেম সেটারের উপর কি রূপ আক্রোশ জন্মাইতেছিল। পাঠকেরাও আশা করি তাহা খানিকটা উপলব্ধি করিতে পারিবেনঃ
আমাদের প্রিয় !!!য়ার
আসলে সে একটা জানোয়ার
বাইরে সে গোবেচারা
আসলে পাজীর গা- ঝাড়া।
তার ভাই জুব্বা
পড়াশোনায় ডাব্বা
প্রোগ্রামিং করে খালি
খায় সকলের গালি।
আর আছে পিংকু
স্বভাবে সে ডাংকু
কেয়ার করেনা কাউকে
প্রথমে বাপ বানায় সবাইকে
বাপ হয় এরপর ভাইয়া
ভাইয়া থেকে তারপর সাইয়া
স্বভাব তার বড় বাজে
সময় কাটায় সে ফালতু কাজে...
লেখকের মন্তব্যঃ
ঢিলু এই কি তোর বন্ধুত্বের পরিচয়! ভালবাসাহারাম!!! তুই তোর কিংবা প্রবলেম সেটারের ফরটিন্থ জেনারেসন নিয়ে যাহা ইচ্ছা তাহাই করিতে পারিস। আমি তাহার নিকুচি করি। কিন্তুক তাই বলিয়া আমার মত সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের মাইয়্যারে তুই কি না শেষমেষ বিশ্বপ্রেমিকা বানাইয়া দিলি। আমি আমার সকল রোমান্টিক ডেট বাতিল করিয়া কেবল তোর জন্যে টিসির বেরসিক পর্দায় অর্থহীন কোডিং করিয়া যাই আর সেই আমাকে এহেন অপবাদ দিতে তোর হৃদয়ে বাজিল না। কি পাষাণ তোর হৃদয়। আজ বুঝিলাম তোর মত বন্ধুদের কারণেই বাংলা সিনেমার এই টাল্টু হালাত – তাই তো আমিও ঠিক করিয়াছি যেহেতু প্রোগ্রামিং লাইনে আমার ভাত জুটিবে না তাই আমি হাল ধরিব এই বেহাল ঢালিউডের আর আমার প্রথম সিনেমা আমি উরসর্গ করিব তোকে!!! (আসিতেছে আসিতেছে আসিতেছে... বল্টু কর্তৃক পরিচালিত ও পরিচালিত, ঈদের বিশেষ আকর্ষণ - বন্ধু কেন বেঈমান... বেঈমান.. বেঈমান.. বেঈমান..)
আশা করি পাঠকেরা ইতোমধ্যেই অনুমান করিয়াছেন যে উহাই ছিল আমার তথা আমাদের প্রথম ও শেষ কন্টেস্ট!!! তবে ভাবিতেছি যে এই লাইনে ভাত না পাইলে বাংলা চলচ্চিত্রের গতি করিতে আরো দু’একবার ঢু মারিয়া দেখিব এই ঘাটের মরা কন্টেস্টে। আশা করি ইহাতে বাংলা চলচ্চিত্রের মুকুটে আরো কিছু রত্ন সংযোজিত হইবে...
[ পূর্বে প্রকাশিত - Click This Link ]
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০০৮ সকাল ৭:২৯