প্রথম পরিচয়টা কিভাবে হয়েছিল তা মনে করতে পারলেও বন্ধুত্বতার শুরুটা যে কখন, কোথায় আর কিভাবে- আজ তা আর মনে পড়ে না। অথচ আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন এই দু'টো মানুষকে ছাড়া এক কথায় বর্ণহীন! অথচ "বন্ধুত্বতার সূচনাটা কোথায়" এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা আজ আর মনে করতে পারি না! (বয়স তো আর কম হল না। স্মৃতি বোধকরি ধোঁকা দেওয়া শুরু করে দিয়েছে!!!)
সে যাই হোক - আমি, মুনা আর শবনম (কিরে ঢিলু "শবনম" শুনে কি চমকে উঠলি? হা হা হা!)- আমরা ত্রিমাত্রিক! নামটা দিয়েছিলাম ACM এর account খোলার সময়। কি অদ্ভুতই না ছিল সেইসব দিনগুলো! ভোঁ-কাট্টা ঘুঁড়ির মত - উদ্দেশ্যহীন, ছন্নছাড়া। চাইলেও কি ভোলা যায়!
প্রথমবর্ষের এক্কেবারে প্রথমদিকের দিনগুলো - প্রজাপতির ডানায় রঙ মেখে ভেসে বেড়ানোর দিনগুলো! কি পাগলামিটাই না করতাম। মনে কি পড়ে তোদের - মুফতি, ফেরদৌস আর কায়সারদের নিয়ে কি দুষ্টুমিটাই না করতাম! মনে আছে মুফের গুরুগম্ভীর প্রোগ্রামিং আর প্রব্লেম সল্ভিং বিষয়ক ওয়েব সাইটে কমেন্ট করেছিলাম, "কি হবে অংকের খাতায় হিসেব মিলিয়ে যদি জীবনের খাতায় হিসেব নাই বা মেলে!" হা হা হা... সেই কমেন্ট পেয়ে মুফের মুখটা দেখার মত হয়েছিল। আর ACM প্রবলেম নিয়ে আমাদের সেই কি উত্তেজনা। একটা সল্ভ করতে পারলে যেন রাজ্যজয়ের আনন্দ! আর যদি একজন পেরে যায় তখন ঐ প্রবলেমটা সল্ভ না করা পর্যন্ত দিনের তো বটেই রাতের ঘুমও হারাম! এখন ভাবলে মনে হয় কি বাচ্চাটাই না ছিলাম! আচ্ছা মনে আছে তোদের - সায়েন্স লাইব্রেরীর পাশে বসে হেরে গলায় গান গাওয়ার সেই দিনগুলো, দেশ বদলে ফেলার স্বপ্ন দেখার ক্ষণ, রিকশা করে ক্যাম্পাসে ঘোরা, গলা খুলে গান ধরা; সুমন - নচিকেতার প্রেমিকার (শবনম) সেইসব গানগুলো - আজও যেন বাতাসে কান পাতলে শুনতে পাই...
ইসসস... কি ফাজিলটাই না ছিলাম আমরা! ক্লাসের ছেলেপেলেদের না হয় বাদই দিলাম; স্যারেরাও বাদ যেতেন না আমাদের পঁচানি আর উৎপাত থেকে। মামুন স্যার আর ফয়সাল স্যারকে নিয়ে কি বদমায়েসিটাই না করতাম আমরা। এখন ভাবলে রীতিমত লজ্জাই লাগে। পিঁচকে ফাজলামির একটা সীমা থাকে। উফফফ আমাদের তো তাও ছিল না। ভাগ্যিস জুলিয়াস স্যারকে মুন্না গুরু বানিয়েছিল বলেই সে দফায় আল্লাহ আল্লাহ করে রক্ষা পেয়েছিলেন তিনি! রানা স্যারের সে কি ভাব!!! নাসের স্যারের ইংরেজী উচ্চারণ!!! বাপ্পি স্যারের স্টাইল!!! আর বাবু স্যারের সেই "ম্যাডাম" বলার ভঙ্গি - কি পঁচানিটাই না দিতাম আমরা!!!
ইলেক্ট্রনিক্স আর ডিজিটাল লজিক ভি, এল, এস, আই বরাবরি আমার প্রিয় বিষয় ছিল। আর তাই তো প্রথমবর্ষের ইলেক্ট্রনিক্সকে উৎসর্গ করেছিলাম আমার লেখা প্রথম (এবং সেটাই শেষ অপচেষ্টা ছিল) আধুনিক কবিতা (কবিতা না ছাই!) -
"ছন্দের আজ ছন্দ পতন ঘটেছে,
কবিতারা তাই গৃহহীন!
এখন আমার প্রিয় বই ফ্লয়েড - ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস!"
হা হা হা... আর এই কোর্সের প্রথম ইনকোর্স দিয়ে মাথা পুরা ৬৯ করে বের হলাম আমরা! সার্কিট গেল আওলায়ে! মুন্না তার ফ্লয়েডের বই ছুঁড়ে ফেলল। জীবনের সকল উদ্দেশ্য হারিয়ে আমরা গিয়ে বসলাম TSC তে। সেখানে বসে sms করলাম আহমেদ রুবেলকে (কোথা থেকে যে এই নম্বরটা উদ্ধার করা হয়েছিল আল্লাহ মালুম!)! শেষমেষ কার হাতে যে মেসেজটা পড়েছিল কে জানে (তবে আহমেদ রুবেলের হাতে যে পৌঁছায়নি সে ব্যাপারে ১০০% নিশ্চিত!)। অথচ রাতে সেই মেসেজের রিপ্লাই পেয়ে সে কি উত্তেজনা আমাদের! ইসসস, কি দিনই না ছিল সেইসব...
তারপর সময় চলে সময়ের নিয়মে আর আমরা - আর আমরা খুঁজে পাই আমাদের নামের সার্থকতা! ত্রিমাত্রিক - তিন মাত্রার তিন মানুষ। যাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল একবিন্দু থেকে কিন্তু তারপর সেই যাত্রা চলে নিজ নিজ অক্ষে - যেখানে মেলে না দেখা অন্য কারও...
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০০৮ রাত ৯:৫৩