পাশাপাশি ফ্ল্যাটের পাশাপাশি জানালার এই এক সমস্যা, সকাল থেকে পিচ্চি এক মেয়ে গলা ফাটিয়ে পড়ছে, “উম্মউম্মউম্ম, অসির চেয়ে মসি বড়; দ্যা পেন ইজ মাইটার দ্যান দ্যা সোর্ড; অসির চেয়ে মসি বড়; উম্মউম্মউম্ম অসির চেয়ে মসি বড়; দ্যা পেন ইজ মাইটার দ্যান দ্যা সোর্ড; অসির চেয়ে মসি বড়” সে এক চরমভাবাপন্ন অবস্থা! পেন নিজেই সোর্ড হয়ে পেইন দিচ্ছে ভয়ংকর রকম। আরে বাবা আজকালকার যুগে মসির কোন বেইল আছে না কী? যত্তসব! এই সব কেতাবি কথাবার্তা কোমলমতিদের না শিখিয়ে বরং অসির কারিগরি ও ব্যবহারিক শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া উচিত বেশি বেশি করে। জনাকয়েক অসিধারী গ্লেডিয়েটরের সামনে শখানেক মসিধারী পাবলিক ছেড়ে দিলে কি পরিণতি হবে ভেবে আমি হেসেই খুন।
তবে মসির শক্তি একেবারেই ফেলে দেওয়ার মত ব্যাপার না, এটা প্রথম টের পেয়েছিলাম প্রাইমারি স্কুলে পড়াকালীন; যখন আমাদের সবচেয়ে গোবেচারা বন্ধুটি শ্রেণী শিক্ষকের ব্যাঘ্র দৃষ্টির সামনে কোন রকমে হামাগুড়ি দিয়ে পুলসিরাত পার হওয়ার মত করে পড়া বলে নিজ টুলে ধাম করে বসে। পাশের যে রসিক গোপাল মসির চোখা অংশটা ঊর্দ্ধমুখী করে তার টুলে পেতে রেখেছিল সে নিজেও কি মসির এই ক্ষমতা ঠিকঠিক অনুধাবন করতে পেরেছিল? নাহ মনে হয়! তবে আমার সেই বন্ধুটির আত্মচিৎকারে নিশ্চয় সে বুঝতে পেরেছিল যে মসি মশায় জায়গা মতোই মসিয়ে গেছেন। সে যাক, আমাদের ম্যাস, মুশিও কি কম যায় না কী? বেচারা নিউজিল্যান্ড থেকে অতিথি হয়ে উড়ে আসা কিউই পাখিকে মুশির দল যেভাবে মসিয়ে দিয়েছে! উফ! মসি-অসি থেকে ক্রিকেটে চলে গেলাম কি করে? যাক সে কথা যা বলছিলাম, যুগে যুগে অসিই মসির উপর ছড়ি ঘুরিয়ে জয় লাভ করেছে, কিন্তু ইতিহাসের পাতায় স্বমহিমায় টিকে আছে শুধুই মসি।
আমি বরাবরই মসির উপর আস্থাভাজন, কালিবিহীন মসি দিয়ে যে বার মেসো মশায়কে এপ্রিলফুল বানিয়েছিলাম সেবার দুআঙ্গুলে মাঝে মসি রেখে উনি মসির ক্ষমতার যে প্রেক্টিক্যাল দেখিয়েছিলেন তা আজও অম্লান। সেই থেকে আমি মসিয়াল, মসি খাই, মসি পড়ি, মসি করি ও সর্বোপরি মসি চালাই। তবে মসি নিয়ে ইদানিং কিঞ্চিৎ ভীত আমি, সরকার না কী হাজার হাজার কোটি টাকার অসি নিয়ে আসিতেছে রুশিদের কাছ থেকে? জলে স্থলে অন্তরীক্ষে অসি; এখন নাকি পাতালেও অসির জয়জয়কার? আকাশে বাতাসে শুধুই অসির গন্ধ! অবশ্য বাঘের ন্যাঁজ দিয়ে কান চুলকানো যায়, কিন্তু অসিয়াল দিয়ে? নাহ বাবা কে সেই বাপধন? মিশরে প্রেডিসেন্ট চেষ্টা করেছিলেন আলতো করে চুলকে নিতে, কি দেখলাম? ঠিকই অসিতন্ত্র আরব বসন্ত নামে গণতন্ত্র হয়ে মঁসিয়ে মুর্সির ভেতর মসিয়ে গিয়েছে। অচিরেই হয়তো তাকে নিয়ে রচিত হবে মর্সিয়া, হায় মুর্সি হায় মুর্সি রবে।
শাসকগোষ্ঠির আছে নানান অসিয়াল বাহিনী, কালো অসি, দ্রুত অসি, গুপ্ত অসি, সর্পঅসি, অশ্বারোহী অসি। আমি অখ্যাত মসিয়াল, কি চালাতে কি চালিয়ে দেব আর আমাকে মসিয়ে দেবে চোদ্দ পনের বছরের জন্য, হয়তো শুধু পকেটে ঢাকনাবিহীন মসি নিয়ে ঘোরার জন্য কিংবা লাল কালিতে মসি চালানোর দায়ে। কেই বা আমার জন্য মানব বন্ধন করবে, কেই বা করবে অনশন? নতুন আইন হয়েছে, অসি চালালে জামিন আছে কিন্তু যদি ভুলেও মসি চালিয়ে বস তাহলে বাছা মর্সা নেই; টিপে টিপে সব মসি বের করে নেওয়া হবে তোমার ভেতর থেকে, বুঝে শুনে কিন্তু! অবশ্য “অসির চেয়ে মসি বড়” এক্ষেত্রে এটা হাতে নাতে প্রমান করার জন্য শাসকগোষ্ঠি একটা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
একটা কাক কা কা রবে এসে ব্যালকোনিতে বসে কা কা চালিয়েই যাচ্ছে। মসিয়াল আমি মসি তাক করে বার কয়েক তাড়ানোর চেষ্টা করলাম হতচ্ছড়াটাকে; বিফল হলে দর্শণ চিন্তা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে, “প্রাণীকূলও কি তবে মসিকে অগ্রাহ্য করা শিখে গেছে?”, হাতে নাতে প্রমাণ পেলাম যখন মসি কে অসি বানিয়ে হাওয়ার সাঁই করে চালিয়ে চালিয়ে দিলাম বদমায়েশ কাকটাকে লক্ষ করে। মসিয়াল আমরা যতোই মসি চালাই না কেন তা সকলই কাকশ্য পরিবেদন, মসিজীবি ও মসিবাজদের ভীড়ে প্রকৃত মসিয়ালরা নিতান্তুই অসহায়। এসকল মসিজীবি ও মসিবাজরা অসিয়ালদের চাইতেও বেশি অনিষ্টকারী, বুকে জড়িয়ে পিঠে মসিয়ে দিতে এনাদের জুড়ি নেই। অসুরের হাতে অসি আর মসিবাজদের হাতে মসি সেয়ানে সেয়ান কেউ কাহারে নাহি হারাইতে পারে।
আজকাল গোদের উপর বিষফোঁড়ার ন্যায় জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছে জাল মসিয়াল। জীবনে দুহাত মসি চালিয়েছেন কি না জানি না তবে টিভির টকশোতে যেন বিরাট মসিয়াল নাইট, দিগ্বিজয়ী আলেকজেন্দার একেকজন। উনারা কল মিসকল, লাল টেলিফোন আর দাওয়াত নিয়েই পড়ে আছেন দিনের পর দিন; ও দিকে যে জাতির ভেতর মসিয়ে যাচ্ছে মশাই, সেই খেয়াল আছে? এ যেন “কালির অক্ষর নাইকো পেটে, চণ্ডী পড়ে কালীঘাটে” অবস্থা।
পবিত্র মহাগ্রন্থ কোরআনের প্রথম নাজিলকৃত আয়াত গুলোর মধ্যে “......পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলমের সাহায্যে......”, এখানেও সেই মসির মাহাত্ম্য! কিন্তু আমার ভ্রু কুঁচকে যায় যখন দেখি যেই তীর্থভূমিতে এই মহাগ্রন্থ নাজিল হয়েছে তার ধ্বজায় মসির পরিবর্তে আসিই হয়ে উঠে মুল উপজীব্য। তাহলে কি অসিই বড়? কি জানি! এই প্রশ্ন করতেই আমার মেষহৃদয় প্রকম্পিত থরথর, নিজের অজান্তেই হাত-পা এর রগে পরম মমতায় হাত বুলাতে লাগলাম; সাধের এই রগে কখন আবার মেশিনম্যানের মুষ্কনির্গত মেশিনবয়রা মসি রেখে অসি চালিয়ে দিবে! একদিকে মেশিনম্যান আরেকদিকে শাসকগোষ্ঠির অসিয়াল বাহিনী, আমার মত মসিপেষা ছাঁপোষা কেরানীরা আছে মহ হ্যাপায়। না পারি রাখিতে শ্যাম, না পারি রাখিতে কূল, আর রাঁধাতো বহু আগেই গিয়েছে ছাড়িয়া।
মসিয়ালরা বেশ বাড় বেড়েছে, এদের প্লাটফর্মও অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে, ঘরে ঘরেই নাকি এখন অনলাইন মসিয়াল? এত্ত বড় সাহস! তোরা অসি ছেড়ে মসি ধরেছিস? মা কা দুধ নেহি পিয়া তুম লগোনে? ধর শালাদের, দে পা হাতের রগ কেটে, দে কল্লা বরাবর অসি চালিয়ে, দে শালাদের চোদ্দ বছরের জন্য চোদ্দশিকে মসিয়ে। কারেন্ট জাল তৈরি হচ্ছে মসিয়ালদের জন্য। ধরা হবে একটা একটা করে। কিসের আবার ট্রায়াল, কিসের জামিন! থাকিতে অসি কোন সাহসে বাছা তুই চালাস মসি, হ্যাঁ? তাই তো আজ দেখি মসি হাতে মহারথিগন মূষিক বনে গিয়েছেন, আর জাতির পাশ্চাৎদেশে মসি মশায় মসিয়ে যান সগৌরবে।
রুশ সাহিত্যের সবচেয়ে বিকাশ ঘটেছিল রক্তচক্ষুর অন্তরালে, সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাসের উজ্জ্বলতম মসিয়াল গন এই যুগেই আবির্ভুত হয়েছিলেন। অসি চলে গাছে গাছে তো মসি চলে পাতায় পাতায়; অসি চলে পাতায় পাতায় তো মসি চলে শিরায় শিরায়। মসির প্রকৃত ক্ষমতা তার অদৃশ্যতায়, অসির কোপ দেখা গেলেও মসির কোপ যে গায়েবি মশায়! দাগ কিন্তু দেখা যাবে না বন্ধু। আমি অন্ধকারের বুকচিরে সেই সম্ভাবনার আলো দেখছি দিগন্ত রেখায়।
আরে ধুরু! আবার কোথা থেকে হেথা চলে এলাম! যা বলছিলাম আমাদের গোবেচারার বন্ধুটির কথা। তার পশ্চাতদেশে মসিয়ে যাওয়া মসি মশাইকে বের করা হেতু শৈল্যচিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়েছিল, আর উনি পরম যত্নে মসি নিষ্ক্রান্ত কর্মে অসি চালিয়েছেন জায়গামত। সাবধান।