somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেবদূতের বিবাহনামা ---- ৪

০৭ ই মে, ২০০৯ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
চার পাঁচ দিন আগে কয়েকজন বন্ধু চেপে ধরলো, "চল সমুদ্রের পাড় থেকে বেড়িয়ে আসি", আমি আর না করতে পারলাম না। বউ কয়েকদিন আগে দেশে চলে গেছে, ভাবলাম এইতো সুযোগ। খুব সকাল সকাল গিয়ে বিকাল বিকাল ফিরলেই হবে, সারাদিন আর বউকে ফোন দিব না, রাতে ঘরে ফিরে বলবো, "আমার একদমই ইচ্ছা ছিলো না যাওয়ার, কিন্তু বন্ধুরা জোর করে ধরে নিয়ে গেল, না করতে পারিনি"।

পানিতে নেমে খুব লাফালাফি করছি, ভালোই মজা হচ্ছিলো, যেহেতু সাঁতার পারি না তাই তীরের কাছাকাছিই থাকতাম সবসময়। তীরের কাছাকছি ছিলো কিছু বিশাল আকারের পাথর। এক বন্ধু আঁচড়ে পাঁচড়ে পাথরের উপর উঠে বেশ ভাব নিয়ে কয়েকটা ছবি তুললো, শেষে আমাকেও ডেকে বললো, "আরে কোন ব্যাপার না, উঠে আয়"। আমিও বাহাদুরী দেখাতে গিয়ে পাথরটার উপর উঠার জন্য দিলাম একটা লাফ, ঠিক সেই সময় বিশাল একটা বেরসিক ঢেউ আছড়ে পড়ে আমার উপর। হুড়মুড় করে পাথরটার উপর পড়ার সময় হাত,পা সামনে এগিয়ে দিয়ে কোন রকমে সংঘর্ষটা এড়ালাম। কিন্তু বা হাতের তালুতে আর বা পায়ের হাটুতে বেশ কিছু অংশ কেটে ও থাতলে যায়। আমি পানিতে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে তীরে এসে বালিতে বসে পড়ি ।

কিছুক্ষণ পরেই তার ফোন । প্রথমেই প্রশ্ন তুমি কোথায় ?

আমি মিনমিন করে বললাম, "বন্ধুরা জোর করে সী বিচে বেড়াতে নিয়ে এসেছে"

আমি এতদিন ছিলাম, কৈ আমাকে তো একদিনও সী বিচে নিয়ে যাওনি ?

আসলে সী বিচটা অনেক দুরে তো, তাই তোমাকে নিয়ে আর আসা হয়নি। পরের বার তোমাকে নিয়ে আসলেতো কয়েক দিন থাকবো তাই আগে একবার এসে পর্যবেক্ষণ করে গেলাম।

মনে হলো একটু শান্ত হয়েছে । তার পরপরই বললো, খবরদার কোন বিকিনি পড়া মেয়ের দিকে তাকাবে না ! খবরদার !

আরে নাহঃ ! এখানে কোন বিকিনি পড়া মেয়েই নাই।

তারপর আমাকে চমকে দিয়ে হঠাৎ বললো, "তুমি কেমন আছ ?"

তার গলায় কেমন যেন একটা আকুতি ছিলো, আমি মুহূর্তক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম, "হাতে ও পায়ে একটু ব্যাথা পেয়েছি"

সাথে সাথে সে চিৎকার দিয়ে বললো, "আমার মনে টান দিয়েছিলো, যে তোমার কিছু একটা হয়েছে !"

আমি একটু অবাক হলাম, এই মনে টান দেওয়া ব্যাপারটা আমি কখনই ঠিক মত বুঝি না। এই ব্যাপারটা আমার মায়ের মধ্যেও দেখেছি। যখনই মন খুব খারাপ বা অস্হির থাকে, তখনই ফোন দিয়ে বলে, "বাবা, মন খারাপ করে না" আর সাথে সাথে আমার মন ভাল হয়ে যায়।

আগেও দেখেছি, অনেক সময়ই আমার মনের কথা কিভাবে যেন সে টের পেয়ে যায়। আর কিভাবে টের পেলে জিজ্ঞেস করলে বলে, "আমি তোমাকে নিয়ে যেভাবে ভাবি, তোমাকে নিয়ে যেভাবে চিন্তা করি, তোমাকে যেভাবে ভালোবাসি , সেভাবে তুমি বাসলে তুমিও বুঝতে পারবে আমার মনের কথা, আমার কষ্টগুলো, আমার আনন্দগুলো। নিজেকে তখন অনেক ক্ষুদ্র, তুচ্ছ মনে হয়, তার অনুভূতির সামনে।

২.
আজ অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছি। কাজের খুব একটা চাপ নেই, তাই হাতমুখ ধুয়ে, দুপুরের খাবার খেয়ে একটা মুভি দেখলাম, সাইন্স ফিকশন। তারপর খুব ফুরফুরে মেজাজে ল্যাবে এসে ব্লগিং করতে বসে গেলাম। এক ফাঁকে মেইলটাও চেক করে নিয়েছি। সবকিছুই ঠিকঠাক, কোন অসঙ্গতি নেই কোন দিকে। শিস্ দিতে দিতে কফি বানিয়ে নিয়ে এসে আবার ডেস্কে বসলাম।

একটু পর তার ফোন, এবার প্রথমেই জিজ্ঞেস করলো, দুপুরে কি খেয়েছ ?

বললাম এইতো এটা সেটা খেয়েছি। কিন্তু তোমার গলা এমন শুনাচ্ছে কেন ?

আমার কথা শুনে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো বললো, "একটু আগে বারান্দায় হাটতে গিয়ে পড়ে হাত ভেঙ্গে ফেলেছি।"

বুকটা ধ্বক করে উঠলো, নিজের অজান্তেই গলার আওয়াজ বেড়ে গেলো, বললাম, "কি?"

হুমম, এইমাত্র প্লাস্টার করে বাসায় ফিরেছি। উহঃ, কি যে অসহ্য ব্যাথা ! মুহূর্তের মধ্যে মনে হলো আমার হাতটাই নেই হয়ে গেলো। পেইন কিলার খেয়েছি, তারপরও ভয়ানক ব্যাথা করছে। আচ্ছা, এখন রাখি কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে, আজকে আর ফোন দিও না ।

কিছুক্ষণ থ্ মেরে বসে ছিলাম । আমার বউ হাত ভেঙ্গে তীব্র ব্যাথায় কোকাচ্ছে আর আমি মুভি দেখছি, শিস্ দিয়ে দিয়ে কফি খাচ্ছি, আমি কিছুই টের পেলাম না ! ইচ্ছে করছে ছুটে তার কাছে চলে যাই, ইস তার ব্যাথাটা যদি আমি নিয়ে নিতে পারতাম! তার এই তীব্র ব্যাথায় কিছুই আমি অনুভূব করিনি, একেবারে কিছুই না !

হায় ! এখনও তোমার মত করে ভালোবাসতে পারলাম না । ক্ষমা করে দিও ।

দেবদূতের বিবাহ নামা ----- ১

দেবদূতের বিবাহ নামা ----- ২

দেবদূতের বিবাহ নামা ----- ৩
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৪
৯৭টি মন্তব্য ৯৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×