১.
বিয়ের দেড় বছর আগে আমাদের এনগেইজম্যান্ট হয়, বলতে গেলে এই দেড়টা বছর আমার জীবনের সেরা সময় আবার সবচেয়ে খারাপ সময়ও বটে। সারা জীবনে পরিচিত যত মানুষ আছে তাদের সবার কাছ থেকে সবমিলিয়ে যত বকা বা ঝাড়ি খেয়েছি, এই দেড় বছরে একজনের কাছ থেকে তার চেয়ে ঢের বেশি ঝাড়ি খেয়েছি ।
সুদর্শন হওয়া সত্যেও আমি তার কাছে "কালা মোটা" .... ঐতিয্যবাহী সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের ছেলে হয়েও আমি তার কাছে "ছোটলোক" .... শহরে শহরে বড় হওয়া শিক্ষিত ছেলে হয়েও আমি তার কাছে "গাঁইয়া ভূত" ..... আর যত যাই হওক না কেন, দোষ সব আমার ।
ভি.ও.আই.পির সুবাদে দেশে কল রেট কম হওয়াতে প্রতিদিনই ২০/২৫ মিনিট করে কথা হতো। এর মধ্যে ৯৫% সময় শুধু ঝগড়া আর ঝাড়ি চলতো ...... যেন আমার জীবনের একমাত্র স্বার্থকতা তার ঝাড়ি খাওয়ার মধ্যে।
মাঝে মাঝে ভালো লাগে , কিন্তু অনবরত একই ক্যাচাল কত আর ভালো লাগে ? তাই মাসে দুই এক দিন আমিও বাঘের মত গর্জে উঠতাম। এ সময় আমি দুইটা টেকনিক খাটাতাম, তার উপর ।
১ম টেকনিক অনেকটা হোমিও প্যাথিক ট্রিটমেন্টের মত, প্রথমে রোগটা বাড়িয়ে চরম পর্যায়ে নিয়ে যেতাম। এতে সে রাগের মাথায় তর্জন গর্জন শুরু করতো, তার লজিক উল্টা পাল্টা হয়ে যেতো। এক পর্যায়ে যখন রোগটা পেঁকে যেতো, সাথে সাথে সার্জারি করে কেটে ফেলে দিতাম। হা হা হা .... একেবারে ক্রিমিলান বুদ্ধি .....
হোমিও প্যাথিক ট্রিটমেন্ট হিসাবে একটা কথাই বলতাম, "আমি জানি আমি কোন ভুল বা অন্যায় করিনি, তার পর আমিও আন্তরিক ভাবে দুঃখিত, আই এম রিয়েলি ভেরি ভেরি সরি" ... এর পরে তার প্রতিক্রিয়া হতো দেখার মতো হা হা হা হা ।
তারপর একটা মোক্ষম সময় বুঝে স্যার্জিকেল ট্রিটমেন্ট হিসাবে বলতাম, "দেখ, আমাদের শুধুমাত্র এনগেইজম্যান্ট হয়েছে, বিয়ে হয়নি, তুমি সামাজিক ভাবে ও আইনত আমার বউ না, তাই তুমি আমার উপর কোন জোর খাটাতে পারো না " .....এর পর সে একেবারে ফুটা বেলুনের মত চুপসে যেত .... আর আমি ফোনটা কেটে দিতাম.....হা হা হা
--------------------------------------------------------------------
২.
বিয়ের দিন সকাল বেলা আমাকে বাসায় একা রেখে মুরুব্বিরা সবাই গেল ওদের বাসায় মেয়ের "কাবিন" আনার জন্য । তার পর ওদের বাসার মুরুব্বিদেরকে নিয়ে আমার মুরুব্বিরা আমার বাসায় আসে আমার "কাবিন" নিতে।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর ঘুরে ঘুরে সবার সাথে কথা বলছিলাম, শ্যালক শালিকারা খাবার , মিস্টি তুলে তুলে খাওয়াচ্ছিল ...... ঐ দিক দিয়ে আমি অস্হির হয়ে ছিলাম কখন তার সাথে কথা বলবো। এই সময় মনে হচ্ছিলো, শ্যালক শালিকারা আসলেই একটা "শালা" । এমন ভাবে পিছনে লেগে ছিলো, যে কি আর বলবো ..... উফ্ !!!!
অনেক কষ্ট করে একটা বাথরুম ফাঁকা পেয়ে চট করে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। আহঃ, তার পর খুব আয়েস করে তাকে ফোন দিলাম।
হ্যালো , আমার সোনা বউ ?
সে প্রথমেই যে কথাটা বললো ...... "আজ থেকে সামাজিক ভাবে ও আইনত আমি তোমার বউ, তাই এখন থেকে আমি তোমার উপর যে কোন রকম জোর খাটাতে পারি" ......
জীবনে নিজেকে এতটা অসহায় মনে হয়নি .... বুঝতে পারলাম , নিজ হাতে নিজের স্বাধীনতাকে গলা টিপে ধরেছি ..... এখন থেকে পরাধীনতাই জীবনের ব্রত .....
আগে শুধু গানটা শুনতাম, এই বার হাড়ে হাড়ে অনুধাবন করতে পেলাম ,
"আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান
প্রানেরও আশা ছেড়ে সপেছি প্রান"
=============================================
সবাই কে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার এই সিরিজ পড়া জন্য ও প্রতি পর্বের পরে ব্যাপক উৎসাহ দেওয়া জন্য।
শেষে আমার খুব প্রিয় একটা গান দিলাম সবার জন্য
জেনে শুনে বিষ করেছি পান
আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান ।।
প্রাণেরও আশা ছেড়ে সপেছি প্রাণ ।।
যতই দেখি তারে ততই দহি
আপনো মনো জ্বালা নিরবে সহি
তবু পারিনে দুরে যেতে, মরিতে আশে
লইবো বুক পেতে অননও বান
জেনে শুনে বিষ করেছি পান
আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান ।।
যতই হাসি দিয়ে দহনও করে
ততই বাড়ে তৃষা প্রেমেরও তরে ।।
প্রেমও অমৃত ধারা যতই যাচি
ততই করে প্রাণে অশনি দ্বান
আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান ।।
প্রাণেরও আশা ছেড়ে সপেছি প্রাণ ।।
আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান ।।
গানটির লিংক
নবম পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:১৫