somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজব খাবার, মজার খাবার-৩ (আরব ডায়েরি-১০৪)

১৬ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আজব খাবার, মজার খাবার-১
আজব খাবার, মজার খাবার-২

আগের ২টি পর্বে আমার পছন্দের কিছু এ্যারাবিয়ান খাবারের কথা এসেছে। এই পর্বে আরো কিছু খাবার নিয়ে হাজির হলাম।

আমার বিভিন্ন লেখায় ‘তমিজ’ নামক রুটি’র কথা বলেছি। বড় তন্দুরে তমিজ বানানো হয়। সাধারণত আফগানীরা এখানে তমিজ বানিয়ে থাকে। তমিজের দোকানগুলোতে সকাল কিংবা সন্ধ্যায় লাইন ধরে পাকিস্তানী ও সৌদিরা তা কিনে থাকে। পাকিস্তানীরা একজনে শুধু মাত্র চায়ের সাথে ১ টি রুটি শেষ করে ফেলতে পারে। আমি কখনো অর্ধেক রুটি শেষ করতে পারিনি।



রুটিটি খেতে বেশ মজার। আমার পছন্দের তালিকার শীর্ষে। তবে গরম গরম না খেলে অল্পক্ষনেই রুটিটি শক্ত হয়ে যায়। আমি মাঝে মাঝে তমিজের সাথে ‘ফুল’ কিনে আনি, অথবা ঘরে মাংসের তরকারী দিয়ে খাই। ‘ফুল’ হচ্ছে কিডনি বিন পিষে তৈরি করা একটি ডাল বিশেষ। দেয়ার সময় অলিভ অয়েল মিশিয়ে দেয়। স্বাদের কথা নাইবা বলি।



আরেকটি খাবার হচ্ছে ‘তামিয়া’। ডাল, সেলারি ও ধনেপাতা পিষে এই বড়া বানানো হয়। মচমচে কিন্তু ভেতরটা নরম। সাধারণত স্যান্ডউইচ বানাতে তামিয়া ব্যবহার করা হয়। আমি শুধু ‘তামিয়া’ কিনে প্রায় সময়ই খেয়ে থাকি। মুখে দেবার সাথে সাথে চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে আসে।



আমাদের পাশেই ইয়েমেনের বর্ডার। আর আমরা যেখানে থাকি তা একসময় ইয়েমেনের অংশ ছিল। তাই এ অঞ্চলে অনেক ইয়েমেনি দেখতে পাওয়া যায়। তারা অনেকেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় জড়িত। তাদের খাবারের খানদানী ঐতিহ্য আছে। সৌদি আরবের প্রায় লোভনীয় খাবারগুলোরই ইয়েমেনি অরিজিন।



আমি, মাহমুদ ভাই ও জহির ভাই রাতে ইয়েমেনি রেস্টুরেন্টে রুটি খেতে যেতাম। তাদের রুটিটা তমিজের মতো মোটা না, পাতলা ও ক্রিসপি। সাথে থাকত-টুনা, ডিম এবং ডাল। আড্ডা ও গল্পে গল্পে কখন খাবার শেষ হয়ে যেত টেরও পেতাম না। এখন ইয়েমেনি রেস্টুরেন্টে তেমন একটা যাওয়া হয়না।

অফিসে বিভিন্ন মিটিং থাকে, প্রায় সময় নাস্তা দেয়া হয়। মিষ্টি, কেক অথবা ক্রোসেন্ট। আমি ক্রোসেন্ট পছন্দ করি। সাধারণত ক্রোসেন্টে ফিলিং হিসাবে পনির অথবা মিস্টিজাতীয় কিছু একটা থাকে। তবে ইউনিভার্সিটি ক্যাটারিং এর ক্রোসেন্ট একটু ভিন্ন রকমের। এতে সসেজ, মাংসের কিমা, পনির, অলিভ অথবা জমাট লাবান (দুধ হতে তৈরি এক ধরনের পানীয়) ফিলিং হিসাবে থাকে। সংক্ষিপ্ত নাস্তা হিসাবে এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না।



এখন মাছের প্রতি ঝোক বেড়েছে। রাতে সবাই মিলে চাঁদা দিয়ে বড় দেখে হামুর কিংবা কোরাল মাছ কিনি। আমাদের জহির ভাই এই সমন্বয়ের দায়ীত্ব পালন করেন। মাছের দোকানেই আভেন আছে। সেখানে বিভিন্ন সব্জি দিয়ে মাছটি গ্রিল করে নেই। সাবাই মিলে কোন একটা পার্কে চলে যাই। উষ্ণ বাতাসে রুটি দিয়ে সেই মাছ খেতে যে কি মজা তা লিখে বোঝানো যাবে না।



আগের কোন এক পর্বে হানিদের কথা বলেছিলাম। ইয়েমেনি এই খাবারটি পুরো আরবেই অনেক জনপ্রিয়। খাসীর মাংস ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে তন্দুরের প্রচন্ড হিটে সেদ্ধ করা হয়। তারপর আলাদা করে রান্না করা ভাতের সাথে খাওয়া হয়। মাংসে অল্প পরিমানে লবন ছাড়া অন্য কোন মশলা ব্যবহার করা হয় না। অথচ তার স্বাদ জীভে লেগে থাকে অনেকদিন। আমরা যখন একসাথে হানিদ খেতে বসি, তখন কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। আস্ত খাসীর মাথা ভেঙ্গে সেদ্ধ মগজ আর জিহবা বের করতে আমাদের লিটু ভাই সব সময় তার মুন্সিয়ানা দেখান। বেশীরভাগ সময়ই অতৃপ্তি থেকে যায়- এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল !


এই খাবারটির কোন কিছুই আর বাকী থাকেনি।


অফিসের একটি পার্টিতে হানিদ খাওয়া হচ্ছে। সাথে ভুড়ির ঝোল এবং সেদ্ধ মাংসের স্যুপ। আফসোস! এর বেশীরভাগ খাবারই নষ্ট হয়েছে। সৌদিরা যে পরিমান খাবারের ব্যবস্থা করে তার অর্ধেকই নষ্ট করে। এরা কখনো পরিমান মতো খাবার নিয়ে বসতে পারেনা।

হানিদ বা মান্দি’র মতো খাবারের সাথে রেস্টুরেন্টে “সালসা” দেয়া হয়। এটা একধরনের সস টাইপ খাবার। টমেটো, কাচা মরিচ, পেয়াজ ও পনির দিয়ে এটা বানানো হয়। রিচ ফুডের সাথে খেতে ভালো লাগে। আমি বাসায় বানাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু কখনোই রেস্টুরেন্টের মতো হয়নি।



কয়েকদিন আগে লিটু ভাই ‘মাসুব’ খাওয়ালেন। খেয়ে এত মজা পেয়েছি যে বারে বারে খেতে গিয়েছি। এই খাবারটির খোঁজ আগে কেন পাইনি তা ভেবে এখন আফসোস হয়। এত মজার একটি খাবার।



দুধের সর, মধু, পনির, পাকা কলার সাথে একধরনের জবের রুটি পিষে দেয়া হয়। খেতে খেতে মনে হবে – অমৃত বলে যদি কিছু থেকে থাকে, তার স্বাদ কি এমন হবে?


সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৩:১৩
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×