আজব খাবার, মজার খাবার-১
আজব খাবার, মজার খাবার-২
আগের ২টি পর্বে আমার পছন্দের কিছু এ্যারাবিয়ান খাবারের কথা এসেছে। এই পর্বে আরো কিছু খাবার নিয়ে হাজির হলাম।
আমার বিভিন্ন লেখায় ‘তমিজ’ নামক রুটি’র কথা বলেছি। বড় তন্দুরে তমিজ বানানো হয়। সাধারণত আফগানীরা এখানে তমিজ বানিয়ে থাকে। তমিজের দোকানগুলোতে সকাল কিংবা সন্ধ্যায় লাইন ধরে পাকিস্তানী ও সৌদিরা তা কিনে থাকে। পাকিস্তানীরা একজনে শুধু মাত্র চায়ের সাথে ১ টি রুটি শেষ করে ফেলতে পারে। আমি কখনো অর্ধেক রুটি শেষ করতে পারিনি।
রুটিটি খেতে বেশ মজার। আমার পছন্দের তালিকার শীর্ষে। তবে গরম গরম না খেলে অল্পক্ষনেই রুটিটি শক্ত হয়ে যায়। আমি মাঝে মাঝে তমিজের সাথে ‘ফুল’ কিনে আনি, অথবা ঘরে মাংসের তরকারী দিয়ে খাই। ‘ফুল’ হচ্ছে কিডনি বিন পিষে তৈরি করা একটি ডাল বিশেষ। দেয়ার সময় অলিভ অয়েল মিশিয়ে দেয়। স্বাদের কথা নাইবা বলি।
আরেকটি খাবার হচ্ছে ‘তামিয়া’। ডাল, সেলারি ও ধনেপাতা পিষে এই বড়া বানানো হয়। মচমচে কিন্তু ভেতরটা নরম। সাধারণত স্যান্ডউইচ বানাতে তামিয়া ব্যবহার করা হয়। আমি শুধু ‘তামিয়া’ কিনে প্রায় সময়ই খেয়ে থাকি। মুখে দেবার সাথে সাথে চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে আসে।
আমাদের পাশেই ইয়েমেনের বর্ডার। আর আমরা যেখানে থাকি তা একসময় ইয়েমেনের অংশ ছিল। তাই এ অঞ্চলে অনেক ইয়েমেনি দেখতে পাওয়া যায়। তারা অনেকেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় জড়িত। তাদের খাবারের খানদানী ঐতিহ্য আছে। সৌদি আরবের প্রায় লোভনীয় খাবারগুলোরই ইয়েমেনি অরিজিন।
আমি, মাহমুদ ভাই ও জহির ভাই রাতে ইয়েমেনি রেস্টুরেন্টে রুটি খেতে যেতাম। তাদের রুটিটা তমিজের মতো মোটা না, পাতলা ও ক্রিসপি। সাথে থাকত-টুনা, ডিম এবং ডাল। আড্ডা ও গল্পে গল্পে কখন খাবার শেষ হয়ে যেত টেরও পেতাম না। এখন ইয়েমেনি রেস্টুরেন্টে তেমন একটা যাওয়া হয়না।
অফিসে বিভিন্ন মিটিং থাকে, প্রায় সময় নাস্তা দেয়া হয়। মিষ্টি, কেক অথবা ক্রোসেন্ট। আমি ক্রোসেন্ট পছন্দ করি। সাধারণত ক্রোসেন্টে ফিলিং হিসাবে পনির অথবা মিস্টিজাতীয় কিছু একটা থাকে। তবে ইউনিভার্সিটি ক্যাটারিং এর ক্রোসেন্ট একটু ভিন্ন রকমের। এতে সসেজ, মাংসের কিমা, পনির, অলিভ অথবা জমাট লাবান (দুধ হতে তৈরি এক ধরনের পানীয়) ফিলিং হিসাবে থাকে। সংক্ষিপ্ত নাস্তা হিসাবে এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না।
এখন মাছের প্রতি ঝোক বেড়েছে। রাতে সবাই মিলে চাঁদা দিয়ে বড় দেখে হামুর কিংবা কোরাল মাছ কিনি। আমাদের জহির ভাই এই সমন্বয়ের দায়ীত্ব পালন করেন। মাছের দোকানেই আভেন আছে। সেখানে বিভিন্ন সব্জি দিয়ে মাছটি গ্রিল করে নেই। সাবাই মিলে কোন একটা পার্কে চলে যাই। উষ্ণ বাতাসে রুটি দিয়ে সেই মাছ খেতে যে কি মজা তা লিখে বোঝানো যাবে না।
আগের কোন এক পর্বে হানিদের কথা বলেছিলাম। ইয়েমেনি এই খাবারটি পুরো আরবেই অনেক জনপ্রিয়। খাসীর মাংস ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে তন্দুরের প্রচন্ড হিটে সেদ্ধ করা হয়। তারপর আলাদা করে রান্না করা ভাতের সাথে খাওয়া হয়। মাংসে অল্প পরিমানে লবন ছাড়া অন্য কোন মশলা ব্যবহার করা হয় না। অথচ তার স্বাদ জীভে লেগে থাকে অনেকদিন। আমরা যখন একসাথে হানিদ খেতে বসি, তখন কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। আস্ত খাসীর মাথা ভেঙ্গে সেদ্ধ মগজ আর জিহবা বের করতে আমাদের লিটু ভাই সব সময় তার মুন্সিয়ানা দেখান। বেশীরভাগ সময়ই অতৃপ্তি থেকে যায়- এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল !
এই খাবারটির কোন কিছুই আর বাকী থাকেনি।
অফিসের একটি পার্টিতে হানিদ খাওয়া হচ্ছে। সাথে ভুড়ির ঝোল এবং সেদ্ধ মাংসের স্যুপ। আফসোস! এর বেশীরভাগ খাবারই নষ্ট হয়েছে। সৌদিরা যে পরিমান খাবারের ব্যবস্থা করে তার অর্ধেকই নষ্ট করে। এরা কখনো পরিমান মতো খাবার নিয়ে বসতে পারেনা।
হানিদ বা মান্দি’র মতো খাবারের সাথে রেস্টুরেন্টে “সালসা” দেয়া হয়। এটা একধরনের সস টাইপ খাবার। টমেটো, কাচা মরিচ, পেয়াজ ও পনির দিয়ে এটা বানানো হয়। রিচ ফুডের সাথে খেতে ভালো লাগে। আমি বাসায় বানাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু কখনোই রেস্টুরেন্টের মতো হয়নি।
কয়েকদিন আগে লিটু ভাই ‘মাসুব’ খাওয়ালেন। খেয়ে এত মজা পেয়েছি যে বারে বারে খেতে গিয়েছি। এই খাবারটির খোঁজ আগে কেন পাইনি তা ভেবে এখন আফসোস হয়। এত মজার একটি খাবার।
দুধের সর, মধু, পনির, পাকা কলার সাথে একধরনের জবের রুটি পিষে দেয়া হয়। খেতে খেতে মনে হবে – অমৃত বলে যদি কিছু থেকে থাকে, তার স্বাদ কি এমন হবে?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৩:১৩