ওয়াদি বেইশে দারূণভাবে মাছ ধরার পর সবার হাত আবারো নিশপিশ করতে লাগল। আযম ভাই, সাইফুল্লাহ ভাই, ইসরাফিল ভাই ও আমি শয়নে স্বপনে খালি মাছ ধরা দেখি। ইসরাফিল ভাইয়ের সাথে দেখা হলেই উনি চারপাশ মাছময় করে তোলেন, মনে হয় এখনি ছিপ/বড়শি নিয়ে মাছ ধরায় নেমে যাই।
কিন্তু মাছ ধরতে হলে অনেক দূর যেতে হয়, তাই উইকেন্ডের জন্য অপেক্ষা না করে উপায় নাই। ফেব্রুয়ারির মাঝমাঝি এক শুক্রবার বিকালে আমাদের একটি প্রোগ্রাম ছিল। প্রথম সেশন শেষে সাইফুল্লাহ ভাই আযম ভাইকে মেসেজ পাঠালেন, “আবহা লেকে মাছ ধরতে যাবেন?”। আযম ভাই আমার দিকে তাকালেন-“ভাই, যাবেন?” আমি রাজী হতে একটুও দেরী করলাম না। মূহুর্তেই সিদ্ধান্ত হলো পরের সেশনে আর থকব না, আগে মাছ ধরা হোক। পাশেই মাহমুদ ভাই ছিলেন। উনিও ইংরেজি ডিপার্টমেন্টে আছেন। উনি প্রায়ই আমাদের সাথে মাছ ধরতে যেতে চান, কিন্তু আমরা এত হুটহাট সিদ্ধান্ত নেই যে আমাদের সাথে কখনো যেতে পারেননি। আজ রাজী হয়ে গেলেন।
আমাদের বাড়ীর পাশেই “আবহা লেক”। বিভিন্ন সময় এখানে আড্ডা দিয়েছি, সময় কাটিয়েছি। লেকে প্রচুর মাছ আছে, খোলা পানিতে পানকৌড়িরা প্রায়ই সাঁতরে বেড়ায়। কিন্তু এখানে মাছ ধরা নিষেধ, লেকের চারপাশ বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। তারপরও দু/একজন লোককে গোপনে মাছ ধরতে দেখেছি। আমরা কখনো সাহস করিনি।
মাগরিবের নামাজ শেষে আমরা সবাই আবহা লেক পৌছে গেলাম। আমাদের মাছ ধরার কথা শুনে আরো অনেকেই এসেছে। লেকে প্রবেশের এক জায়গায় ভাঙ্গা পাওয়া গেল। যারা চুপিচুপি মাছ ধরে তারাই এটা তৈরি করেছে। আমি, মাহমুদ ভাই, সুমন ভাই, ইসরাফিল ভাই, আবুল হাসান ভাই, আবু সাঈদ ভাই বহু কসরত করে ভেতরে ঢুকলাম। বাকীরা তীরে মাদুর বিছিয়ে আড্ডা দিতে থাকলেন।
আমার মাছ ধরার প্রথমেই বিভিন্ন ঝামেলা তৈরি হয়। হয়তো দেখা যাবে বড়শি কোথাও আটকে গেছে, কিংবা ছিড়ে গেছে। আজ শুরুতেই বড়শির সুতা কঠিনভাবে প্যাচ খেয়ে গেল। এদিকে মাহমুদ ভাইয়ের বড়শিতে মাছ ধরতে শুরু করেছে। বড়শি ফেলেন আর মাছ উঠে যায়। মনে হয় যেন বড়শিতে সুপারগ্লু মেখে নিয়েছেন। লেকের শেষ মাথায় একটি বাঁধ আছে, সেখানেই আমরা মাছ ধরছি। লাইটের আলোয় স্বচ্ছ পানিতে মাছ দেখা যাচ্ছে। মাহমুদ ভাই দেখে দেখে নির্মমভাবে মাছ শিকার করেই যাচ্ছেন। আমার তখনো বড়শিই ফেলা হয়নি। আমি যখন প্রথম মাছটি ধরলাম, মাহমুদ ভাই ততক্ষনে ১০টির বেশী মাছ ধরে ফেলেছেন। প্রতিটি মাছ ধরার সাথে সাথে ইসরাফিল ভাই খুশীতে চিৎকার দিয়ে উঠছেন। মাছগুলি কার্প মাছ জাতীয়। এ্যাকুরিয়ামের মাছ, বিভিন্ন রংয়ের মাছ উঠছে। পানির নীচে টকটকে লাল মাছ দেখা গেল, আমি একটাকে ধরলাম।
আজ সত্যিকার অর্থেই মাহমুদ ভাইয়ের দিন। উনি এমন গতিতে মাছ ধরতে লাগলেন, চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া উপায় নেই। আমি বড়জোড় ১০টি মাছ ধরেছি। আধা ঘন্টার মতো মাছ ধরতে পারলাম। সাইফুল্লাহ ভাই আমাদের উঠে যেতে বললেন। আমাদের চিৎকার চেচামেচিতে পুলিশ এসে যেতে পারে। যেভাবে মাছ উঠছিল, এখনি উঠতে মন চাচ্ছিল না। কিছুটা অতৃপ্তি নিয়েই ফেরত এলাম।
ঠান্ডা বাতাস বইছে। সাইফুল্লাহ ভাই বাসা হতে মুড়ি, চানাচুর, আচার নিয়ে এসেছেন। সেখানেই বাংলাদেশ হতে আনা ঘ্রাণ লেবু সহযোগে মুড়ি মাখানো হল। আমরা পরবর্তী মাছ মারার প্ল্যান করতে করতে সুস্বাদু মুড়িমাখা খেলাম। যেন বাংলাদেশেই আছি।
(মাছ ধরা চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:১৯