somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়াদি লাজাবঃ গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন অব এ্যারাবিয়া-২ (আরব ডায়েরি-৯৯)

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১ম পর্ব

গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের কথা বললেই চোখের সামনে এ্যারিজোনা’র গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন আর বয়ে চলা মোহময়ী কলোরাডো নদীর ছবিই ভেসে উঠে। তার কাছে ওয়াদি লাজাবতো নস্যি। কিন্তু আরব উপদ্বীপ, কেউবা বলেন পুরো মিডল ইস্টে এটাই সবচেয়ে বড় গিরিখাত। এটাই এ অঞ্চলের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।

ওয়াদি লাজাব জিজান শহরের ১২০ কিমি উত্তরে অবস্থিত। এর একপাশে “কাহার” ও অপরপাশে “জাহওয়ান” পাহাড়দ্বয় অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে আছে। দুই পাহাড়ের মাঝখানের ওয়াদি লাজাব প্রকৃতির এক বিষ্ময়। বিভিন্ন সবুজ গাছগাছালি, পাথরের মাঝ দিয়ে প্রবাহমান পানি, ছোট ছোট লেক, পানির কুলকুল শব্দ সবকিছু কেমন যেন আরবের চিরচেনা রুক্ষতার সাথে মেলে না।





আমরা নিশ্চিত ছিলাম না গাড়ী নিয়ে ঠিক কতদূর ভেতরে যাওয়া যাবে। ভেজা ও পাথুরে রাস্তাটি মোটেও ১০ ফিটের বেশী নয়। ১ টি গাড়ী কোনমতে ঢুকতে পারবে। আমাদের দু’পাশে আগ্নেয় শিলায় গঠিত পাহাড়ের দেয়াল উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও কোথাও তা ৩০০-৮০০ মিটার পর্যন্ত উঁচু। কিছু কিছু জায়গায় পাথর চুইয়ে পানি বের হতে দেখলাম। অনেক ঠান্ডা ও নির্জন একটা পরিবেশ। আস্তে আস্তে রাস্তার প্রশস্ততা বড়তে লাগল। বিপরীত দিক থেকে একটি গাড়ী আসলে আমরা কোলাহলের অস্তিত্ব টের পেলাম। প্রায় ২/৩ কিমি পথ চলার পর অনেক প্রশস্ত এক জায়গায় পৌছে গেলাম। আরো গাড়ী সেখানে পার্ক করা ছিল। জায়গাটি চওড়ায় ১০০ ফিটের মতো হবে। গাড়ী হতে নামতেই ফারুক ভাই সহ জিজান ইউনিভার্সিটির অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে সাক্ষাৎ ঘটল।





জায়গাটির পাশ দিয়ে পাথুরে একটি পানিধারা বয়ে গেছে। আশেপাশে আযম ভাইকে দেখলাম না। পানি প্রবাহের উৎসমুখের খোঁজে এগিয়ে যেতেই ছোট একটি ঝর্ণাধারা পেলাম। সাথে সাথে আযম ভাইও কোথা থেকে উপস্থিত। তিনি জানালেন ভেতর দিকে আরো বিষ্ময় আছে। আরেকটু এগিয়ে যেতেই আরো বড় একটি ঝর্ণা পেলাম, নীচেই ছোট একটি লেকের মতো তৈরি করেছে। অনেকেই আরো ভেতরে ট্রেকিং এ গেল। কিন্তু আজকের জন্য আমাদের তেমন প্রস্তুতি ছিল না। ভেতরে যে আরো অনেক বিষ্ময় ও সৌন্দর্য্য অপেক্ষা করছিল তা আরেকদিনের জন্য রেখে দিলাম। আযম ভাই ও আমি ঠিক করলাম খুব শীঘ্রই অনেককে সাথে নিয়ে ফ্যামিলি ছাড়া ঘুরে যাব। যতদূর ভেতরে সম্ভব ট্রেকিং করব।







আমদের গাড়ীতে দুপুরের সব খাবার ছিল। আমি ও আযম ভাই এসেই জিজান দলের খাবারে ভাগ বসিয়েছি। ওদিকে “ওয়াদি বেইশে” যারা মাছ ধরছিল তারা ক্ষুধায় অস্থির। আমরা ফিরতি পথ ধরলাম। সাথে ফারুক ভাইকে নিয়ে নিয়েছি, আমাদেরকে মাছ ধরার গোপন পদ্ধতি শেখাবেন।

পথে আমরা বরফ কিনে নিয়েছি। “ওয়াদি বেইশে” পৌছে সবার মুখে ক্লান্তির ছাপ দেখতে পেলাম। মাছ তেমন ধরতে পারেননি। প্রচন্ড রোদ ও ক্ষুধায় সবাই কাহিল। সাথে সাথে সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হল। ওদিকে ফারুক ভাই পৌছেই মাছ ধরতে লেগে গেছেন। আমি বড়শি ফেলতেই ছিপে টান লাগল। ভাবলাম বড় মাছ উঠেছে নিশ্চয়ই। কিন্তু নাহ, কোন কিছুতে বড়শি আটকে তা ছিড়েই গেল। শুরুতেই ভেজাল!



এদিকে ফারুক ভাই বড় বড় মাছ ধরতে শুরু করেছেন। অনেকটা আমাদের দেশের গ্রাসকার্প মাছের মতোই দেখতে। বড়শি ঠিক করে পানিতে ফেলতেই আমার ছিপে মাছ ধরতে শুরু করল। আমি বড়শি ফেলেছি পাড়ের কাছে, তাই মাছের সাইজ ফারুক ভাইয়ের তুলনায় অনেক ছোট। কিন্তু আমার ছিপে নিয়মিত বিরতিতে মাছ ধরছে। ফারুক ভাই লেকের মাঝে বড়শি ফেলছেন ও কিছুটা সময় নিয়ে বড় মাছ পাচ্ছেন।

মজা পেয়ে গেলাম। আমার আশে পাশে অনেকেই মাছ ধরছে কিন্তু তাদের বড়শিতে মাছ নেই। ইসরাফিল ভাই একবার এদিকে আরেকবার ওদিকে বড়শি ফেলেন, মাছ আর ধরে না। সাইফুল ভাইও বিরক্ত হয়ে গেছেন। আযম ভাই চেষ্টা করেই যাচ্ছেন, মাছ উঠে না। লেকের কিনারে আযম ভাইয়ের মেজ মেয়ে হানিন বাবার দিকে তাকিয়ে আছে – কখন বাবা একটা মাছ ধরতে পারবে।
এদিকে আমার আজকে মাছের দিন। লেকে মাছ বোঝাই। কোন পরিশ্রম ছাড়াই আমার বড়শিতে মাছ ধরে যাচ্ছে। মনে হল বড়শি উঠানো দরকার, কোন মাছ হয়তো বড়শির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, মাছের পেটে বড়শি লেগে আটকে গেল। আবার আমি বড়শি ফেলে পাশে তাকিয়েছি, মাছ এমনি এমনি আটকে আছে। দেখতে দেখতে ৩০ টির বেশী মাছ ধরে ফেললাম। আযম ভাই প্রথম মাছটি ধরার সাথে সাথে হানিনের সেকি খুশী। আমার আশে পাশে অন্যান্য শিকারীরাও জড় হয়েছে, তারা আমার জায়গাতেই বড়শি ফেলতে চায়। আমি না করিনি। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ কোন কারনে মাছ আমার বড়শিতেই ধরা পড়ে। সাইফুল ভাই ও ইসরাফিল ভাই বিরক্ত হয়ে আবহার পথ ধরলেন।

আবুল হাসান ভাই একসাথে ২ টি মাছ ধরে ফেললেন। আমি মাছ ধরলেই সবাই তা গুনতে শুরু করেছে। সন্ধ্যা হয়ে আসছিল, ফিরতে হবে। শেষ পর্যন্ত মাত্র ২ ঘন্টায় ৪১টি মাছ ধরতে পেরেছিলাম। ২ টি মাছ ছিল বড়, বাকীগুলি মাঝারি ও ছোট সাইজের। আমার মাছ ধরা জীবনে এটাই সেরা দিন। আযম ভাই ৪ টি মাছ ধরেছিলেন। ফারুক ভাই ১০ টির মত বড় মাছ ধরেছিলেন। সবাই মিলে প্রায় ১০ কেজি মাছ ধরেছিলাম।

মাছ ধরা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে ছবি তোলার কথা ভাবিনি। রান্না করা মাছের ছবিটি সবার প্রত্যাশা মেটাবে আশা করি। মাছ ধরা শেষে ফারুক ভাইকে জিজান শহরে নামিয়ে দিলাম। কিন্তু ফারুক ভাই সাথে সাথেই ছাড়তে নারাজ। রাতের খাবার খেয়ে ফিরতে হল। বলাবাহুল্য রাতের খাবারে ওয়াদি বেইশের তাজা মাছ ছিল। স্বাদ অসাধারণ।





জিজান হতে রওনা দিয়ে রাত ১২টায় বাসায় ফিরলাম। শেষ হলো আমার জন্য মাছময় একটি দিনের। সিদ্ধান্ত নিয়েছি সবাই মিলে আবার সারাদিন মাছ মারব। মণখানেক মাছ নিয়ে বাসায় ফিরব।


(শীঘ্রই আবারো ট্রেকিং এবং মাছ ধরতে যাব। তখন এই লেখা আবারো চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০০
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×