সৌদিতে এসে প্রথম প্রথম পোড়া মুরগী আর খরখরে ভাত খেতে পারতাম না। যেটাকে ওরা বলে আল-ফাহাম, মানে কয়লার আগুনে পোড়ানো। আরেক ধরনের খাবার হচ্ছে খেবসা- ভাতের সাথে সেদ্ধ মুরগী অথবা অন্য কোন মাংস। মাংসটা শুধুমাত্র লবন পানিতে সেদ্ধ থাকত। মনে মনে ভাবতাম কিভাবে মশলা ছাড়া খাবার এরা খেতে পারে।
আল-ফাহাম
বাসায় বানানো গরুর মাংসের খেবসা
কয়েক বছর আগে জিজানের দিকে যাই। পথে এক রেস্টুরেন্টে মান্দি বানাচ্ছে। মাটিতে গর্ত করে কয়লার আগুনের তাপে আস্ত খাসী সেদ্ধ করা হচ্ছে। ভেতরে সবকিছু দিয়ে গর্তটি সম্পূর্ণভাবে মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। অনেকটা বর্তমানকালে আভেনের মতো। এই খাবার নাকি দেদারসে বিক্রি হয়। প্রথমবার খেতে পারিনি। শুধু লবনে সেদ্ধ মাংস কিভাবে খাওয়া যায়?
মান্দি তৈরি
এখন এসব খাবারে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি যে- এগুলোকে অমৃত মনে হয়। এবার ঢাকা গেলাম। বাসায় দারুনভাবে মুরগী, গরুর ভুনা করা হয়েছে। কিন্তু খেতে পারলাম কই? যাই খাই ঝাল লাগে, পেট খারাপ হয়। শেষ পর্যন্ত মশলা কম দিয়ে আমাদের জন্য রান্না করতে হয়েছে।
একবার অফিসের একটা পার্টি ছিল। আস্ত সেদ্ধ খাসির ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুব মজা নিয়ে খেলাম। প্রত্যেকের সাথে ছুরি থাকে, আস্ত খাসী থেকে মাংস কেটে খেতে হয়। সাথে ভাত, বিভিন্ন ফলফলাদি। সেখানে প্রথম আরেকটি খাবার দেখলাম। খাসী’র ভুড়ির টলটলে ঝোল করা হয়েছে। আমাদের দেশে সাধারণত এই খাবারটি অনেক মশলা দিয়ে ভুনা ভুনা করা হয়ে থাকে যাতে কোন গন্ধ বুঝা না যায়। দ্বিধা নিয়ে ভুড়ি’র ঝোল খেয়ে দেখলাম-সত্যিই মজার ছিল খাবারটি।
হানিদ নামক খাবার (কোয়ার্টার)
আরেকটি খাবার আছে ছোট উটের মাংস দিয়ে রান্না করা হয়। একে ‘হাসি’ বলে। কিউব করে কাটা মাংস, সাথে চর্বির বড় টুকরা আর ভাত। কি যে অসাধারণ! যে না খাবে কোনদিনই বুঝতে পারবে না। এটা খাবার জন্য আমরা দল বেঁধে আল-মারজান রেস্টুরেন্টে যেতাম। দু’জনের জন্য যে খাবার দেয়, অনায়াসেই তা চারজন খেতে পারে।
সৌদি আরবে থেকে চলে গেলে 'হাসি' মিস করব
একদিন মাছের বাজারে গেলাম। দেখি স্কুইড সাজানো। পাশের চুলায় বিভিন্ন মাছ ভেজে দিচ্ছে। আমি আধা কেজি স্কুইড কিনে ভেজে নিলাম। চিপসের মতো দেখতে এবং স্বাদে অনন্য। আমি এত কিছুর স্বাদ নেই, কিন্তু শাকিলাকে খাওয়াতে পারলাম না।
স্কুইডের এত স্বাদ, আগে বুঝিনি
আমার বাসার পাশেই একটি ডিপার্টমেন্টাল শপ। একরাতে মাংসের সেকশনে দেখি এক অদ্ভুত জিনিস শোভা পাচ্ছে। গরুর অন্ডকোষ। এটাও সৌদিরা খায়? এখন আর আমার খাবার নিয়ে কোন অভিযোগ নেই-প্রায় সব কিছুই খাই, খাবারটা হালাল হলেই হলো। আমার সাথে ছিলেন জনৈক শিক্ষক, আমার পাশের এ্যাপার্টমেন্টে থাকেন। ওনাকে এটা কিনে রান্না করতে মোটিভেট করলাম। অনেক শক্তিকর একটা খাবার, ব্লা ব্লা ব্লা। কি ভেবে উনি রাজী হয়ে গেলেন এবং অন্ডকোষ দুটি কিনে নিলেন।
ডিপার্টমেন্টাল শপে অন্ডকোষ শোভা বাড়াচ্ছে
বাসায় ফিরে কিছুক্ষণ পরে ওনার ফোন- ‘ভাই কিছুই তো বুঝতেছিনা। এটা কাটে কিভাবে?’
- আরে ভাই টেনশন নিয়েন না। পারবেন, পারবেন।
রাত ১২ টায় উনি অন্ডকোষ ভুনা করে আমাকে এক বাটি দিয়ে গেলেন। খেয়ে দেখলাম, দারূন মজা হয়েছে। শাকিলাকে বললাম একটু টেস্ট করতে। কিন্তু ওর অগ্নিমূর্তি দেখে আমিই বাকীটুকু খেয়ে নিলাম।
রান্নাকরা অন্ডকোষ
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:১০