সামু ব্লগের যে কয়েকজন ব্লগারের সাথে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ আছে, মোজাম ভাই তাদের অন্যতম। যখন স্বপ্নেও ভাবিনি সৌদি আরবে আমি চাকুরী করতে আসব, সে সময়েই আমি ওনার লেখাগুলো আগ্রহভরে পড়তাম। ওনার লেখার সাবলীলতা ও সরল বর্ণনা আমাকে আকৃষ্ট করেছিল।
কেমন করে যেন আমিও সৌদি আরব চলে আসলাম (সে এক লম্বা ইতিহাস, আমার প্রথম দিককার লেখায় আমি তা বলেছি) আর মোজাম ভাইয়ের সাথেও যোগাযোগ ঘটল। ঘটনাচক্রে দাম্মামে মোজাম ভাইয়ের বাসায় বেড়াতেও গেলাম। প্রথম দেখায় মোজাম ভাইকে মনে হয়েছিল উদ্যমী তরুণ যাকে ওনার ব্লগের তখনকার প্রোফাইল পিকের সাথে মেলাতে পারিনি।
সেই মোজাম ভাই অনেকটা হঠাৎ করেই জানালেন –তিনি মাত্র ১ দিনের জন্য অফিসিয়াল কাজে আবহা আসছেন। খুশী হলাম, সাথে সাথে মন খারাপও হল। আবহা কে নিয়ে ব্লগে এত এত লেখা দিয়েছি- কোনটাইতো ওনাকে ঠিকমতো ঘুরিয়ে দেখানো যাবে না।
বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে মনে মনে আধা দিনের একটা সিটি ট্যুর প্ল্যান করে ফেললাম। এপ্রিলের ২১ তারিখ উনি আসবেন। মঙ্গলবার বিধায় আমাকে সকালেই ইউনিভার্সিটি যেতে হবে, তার আগে আমার ওয়াইফকে তার অফিসে ড্রপ করতে হবে। উনি ঠিকমতো পৌছাতে পারবেন কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। আবহায় রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন কাজ চলছিল, রোড সাইন তেমন দেয়া নেই। তবে আমাদের মাঝে ফোনে যোগাযোগ চলছিল। উনি বিমান থেকে নেমে গাড়ী ভাড়া নিয়ে আমার ইন্সট্রাকশন মতো সিটি সেন্টার চলে আসেন। আসার পথে উনি ওনার অফিসিয়াল মিটিং প্লেসটিও দেখে এসেছেন।
শেষ মূহুর্তে আমি আমার ওয়াইফকে আলিম ভাইয়ের সাথে তার কলেজে পাঠিয়ে দেই। আর আমি মোজাম ভাইকে সিটি সেন্টার থেকে আমাদের এ্যাপার্টমেন্ট কাম হোটেলে নিয়ে আসি। মোজাম ভাই কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ১১টার দিকে অফিসিয়াল মিটিং এ যাবেন। আমি নাস্তার ব্যবস্থা করে ইউনিভার্সিটি চলে যাই।
ইউনিভার্সিটি থেকে ১২টার দিকে বের হয়ে গেলাম। ইতমধ্যে মোজাম ভাইও ওনার অফিসিয়াল কাজ শেষ করে ফেলেছেন। এখন ঘুরাঘুরির পালা। প্রথমেই উনাকে নিয়ে গেলাম বেনি মাজিনের পাশের এক পাহাড়ে। এখান থেকে জিজান যাবার আঁকাবাকা রোডটি দেখা যায়। কোন কোন জায়গায় রোডটি খাড়া নেমে গেছে। আমি এই পাহাড়ে কখনো গাড়ী নিয়ে উঠিনি। কি মনে হতে আল্লাহ’র নাম নিয়ে উঠে গেলাম। সেখানে কিছুক্ষণ থেকে ফেরার পথে পড়লাম বিপদে। সংকীর্ণ রাস্তা, উচু নিচু পাথর আর গর্তের কারনে ভয় পেয়ে গেলাম। উপরে উঠার সময় কিভাবে কিভাবে যেন উঠে গিয়েছিলাম। তবে মোজাম ভাই গাড়ীর বাহির হতে দারূণভাবে ইন্সট্রাকশন দিলেন, আমিও খারাপ পথটুকো ভালোভাবে পেরোতে পারলাম।
এরপর গেলাম আবহা ড্যামের কাছে। গ্রীষ্মের ছুটিতে এখানে আঁতশবাজি ফোটে, চারপাশ সরগরম থাকে। এখন বিপরীতভাবেই একদম নীরব। শুধু কয়েকটি বন্য হাঁস পানিতে খেলা করে বেড়াচ্ছিল।
আমাদের মাঝে অনেক আলাপ হচ্ছিল- সমকালীন রাজনীতি, ব্লগীয় পরিবেশ, পুরনো ব্লগারদের সামু ছেড়ে যাওয়া আরো কতো কি। এই মোজামভাই কতোদিন ধরে ব্লগে লেখেন না। আবহা ঘুরে এসে অনেকদিন পর একটি লেখা দিয়েছেন। যেই আমি প্রতিদিন ভালো ভালো লেখকদের লেখার জন্য ব্লগে পড়ে থাকতাম, এখন ব্লগে তাকালে মনে হয় সবকিছু শূন্য।
আমরা ততক্ষণে গ্রিন মাউন্টেনের পাশে চলে এসেছি। পাহাড়টিতে রাতে কৃত্রিম সবুজ বাতি জ্বালানো হয় আর তাই এই নাম। আমরা সেখানে থামলাম। কিছু দূরেই “হাই আল দাবাব” ফ্যামিলি পার্ক। সৌদি ফ্যামিলিরা সেখানে নরম মাদুর বিছিয়ে মিস্টি বাতাসে আরাম করছে। এদের দেখলে কখনো কখনো হিংসে হয়। নিজেরা কিছু না করেও কেমন আলসে জীবন যাপন করছে।
রাতের গ্রিন মাউন্টেন
চা খাবার তেষ্টা পেয়ে গিয়েছিল। মোজাম ভাইকে নিয়ে চললাম আমার প্রিয় একটি জায়গায়। এখানে প্রায় সময়ই আমি, জহির ভাই ও মাহমুদ ভাই গভীর রাতে চা খেতে আসি। সবুজ ঘাসের মাঠের পাশেই একটি ক্যাফে। ক্যাফের সবাই বাংলাদেশি, আমাদেরকে বেশ খাতির করে। আমরা যখন সেখানে পৌছলাম-ক্যাফের সামনের রাস্তাটি বেগুনী ফুলে ছেয়ে আছে। রাস্তার ধারের সারি সারি জাকারান্ডা ফুল গাছগুলো দেখলে জায়গাটিকে সৌদি আরব বলে মনে হয় না। আমরা দুই কাপ চা নিয়ে সবুজ মাঠের চেয়ারে গিয়ে বসলাম।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৩৮