১ম পর্ব
এক মঙ্গলবারে উসামা ফোন দিল। সে সুক তালাতা যাবে, আমি যাব কিনা? না করার প্রশ্নই আসেনা। উসামা’র গাড়ীতে ফারুক স্যারও ছিলেন। উসামা রাফসানের জন্য বাচ্চা বদু মুরগী কিনবে। রাফসানের ১ বছর হতে চলল, বদু মুরগী খাইয়ে তাকে শক্ত সামর্থ বানাতে হবে। বাজার অনেক জমজমাট। স্যার ও উসামা কয়েকটি মুরগী কিনল। আমি কিছুই কিনলাম না, বাসায় যথেষ্ট মজুদ আছে। শুধু বাজার ঘুরে দেখার জন্য এসেছিলাম।
ফেরার পথে হঠাৎই থমকে দাঁড়াতে হলো। এক সৌদি খাচায় ভরে বিশাল এক সজারু নিয়ে এসেছে। সজারুর কাটাগুলো ভয়ংকরভাবে খাড়া হয়ে ছিল। আমাদের উৎসুক চোখ দেখেই সৌদি আমোদিত কন্ঠে ডাকতে লাগল-
“মিয়া মিয়া, সেম সেম দিজাজ” ( এটা দারূণ, একদম মুরগীর মতো)। আমরা ভেবে পেলাম না- সজারু খাওয়াও কি হালাল নাকি?
গাড়ী নিয়ে বেরোবার পথে প্রচন্ড ভীড়। উসামা তাই এক নতুন পথে গাড়ী চালাল। কিছুদূর যেতেই এক প্রশস্ত জায়গায় “সিভিলাইজেশন মিউজিয়াম” চোখে পড়ল। এখানে একটা মিউজিয়াম আছে জানতাম, কিন্তু মূল রাস্তা থেকে তা সবসময়ই বন্ধ মনে হয়েছে। ভেতর দিক দিয়ে আরেকটি রাস্তা থাকবে ভাবিনি। আমি উসামাকে গাড়ী থামাতে বললাম। এসেছি যখন একটু দেখেই যাই। মাগরিবের নামাজের সময় প্রায় হয়ে এসেছে, মিনিট দশেকের মতো পাওয়া যাবে। ভেতরে ঢুকতেই ট্রাউজার/টি শার্ট পরিহিত এক সৌদি আমাদেরকে স্বাগত জানাল। সে চমৎকার ইরেজি বলে। আলাপ পরিচয়ে জানা গেল- তার নাম হামুদ আলগামধি। ১২ বছর ধরে তিল তিল করে ব্যক্তিগত এই জাদুঘরটি সে তৈরি করেছে। এখন পর্যন্ত তার ১০/১২ লাখ রিয়াল খরচ হয়েছে । প্রবেশ পথেই পুরনো হাতে লেখা একটি কোরআন শরীফ রাখা আছে। ১০ হাজার রিয়ালে কেনা এই কোরআনের দাম ৫০ হাজার রিয়াল পর্যন্ত উঠেছে।
সময় ছিল না, তাই এক নজর চোখ বোলালাম। গ্রিক ও মোঘলদের অনেক জিনিসই চোখে পড়ল। ছোট্ট ছিমছাম জাদুঘরটিতে সারাটি দিন কাটিয়ে দেয়া যাবে। একপাশে দেখলাম বিভিন্ন দেশের নোট ও মুদ্রা সাজিয়ে রাখা। বাংলাদেশের কোন নোট দেখলাম না অথচ পাকিস্তানি জিন্নাহ’র নোট ঠিকই শোভা পাচ্ছে। কোথায় যেন পড়েছিলাম বাংলাদেশের ২ টাকার পুরানো নোটটি সবচেয়ে সুন্দর নোট হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। ভাবলাম বাংলাদেশের ২ টাকার নোটটিতো এখানে জায়গা নিতে পারে।
হামুদকে বললাম – অল্প সময়ে আমি সবকিছু দেখতে পারব না। তোমার মিউজিয়াম ভালোভাবে দেখতে হলে আরো সময়ের দরকার। আমি একদিন বিকালে চলে আসব। সাথে আমার ওয়াইফ ও আরো কয়েকটি ফ্যামিলি থাকতে পারে।
হামুদ আনন্দচিত্তে বলল – কোন সমস্যা নেই। তুমি যে কোনদিন আসরের পরে চলে আস। তবে আসার আগে একটা ফোন দিয়ে এস।
মনে মনে একটা ২ টাকার নোট খোঁজার প্রতিজ্ঞা নিয়ে মিউজিয়াম হতে বের হয়ে এলাম।
(চলবে)
৩য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:১৫