সুক তালাতা ও আরবের বেদুঈনঃ
আবহায় সপ্তাহে একদিন একটি নির্দিষ্ট স্থানে বাজার বসে। ঠিক অনেকটা আমাদের দেশের হাট-বাজারের মতো। আমাদের দেশের বাজার সাধারণত নদীর ধারে হয়। কিন্তু এখানে নদী পাবে কোথায়? তাই শহরের ভেতরে রাস্তার উপরে বাজারটি বসে। এই বাজারটিকে “সুক তালাতা” বলা হয়। মানে - মঙ্গলবারের বাজার।
সুক তালাতায় এমন কোন জিনিস নাই যে পাওয়া যায়না। হাড়ি পাতিল, বিভিন্ন মশলা, খেজুর, ক্ষেতের সব্জি, হাঁস, মুরগী- কি নেই? সাধারণত লোকাল অধিবাসীরাই (এদের গায়ের রং কালো) জিনিসপত্র বিক্রি করে থাকে। এই লোকালদের সবাই “বদু” বলে থাকে –বেদুঈনের সংক্ষিপ্ত রূপ। অনেক বদু মহিলাকে বাজারে বিভিন্ন মশলা ও ঔষধি গাছপালা নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।
ছোট বেলায় আরব্য কাহিনীতে কতোই না বেদুঈনদের কথা জেনেছি। এক জায়গায় তারা বেশীদিন থাকে না। খেজুর গাছ আচ্ছাদিত মরূদ্যানে তাদের তাবু আর ভেড়ার পাল, একটু পানির জন্য হাহাকার। বিকালের মৃদু বাতাস- আমার চোখেও ঘুম এনে দিত। এখন আর পাক্কা বেদুঈনের দেখা পাওয়া যায় না। সৌদি আরবের পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের জীবনেও পরিবর্তন এসেছে। তারা এখন মার্সিডিজ অথবা ল্যান্ড ক্রুজার হাকায়। তাদের ছাগল চড়ানোর জন্য এখন কোন বাংলাদেশি বা ইন্ডিয়ান অমানুষিক পরিশ্রম করে। এত পরিবর্তনের মাঝেও তারা কিছু নিজস্ব আচার ধরে রেখেছে। তারা এখনো তাদের নিজস্ব পোশাক পরিধান করে। তাদের মাথায় থাকে গাদা ফুল ও সুগন্ধী একধরনের পাতা দিয়ে তৈরি মালা। গলায় হাতে বানানো স্কার্ফ। শরীরের উপরের অংশে শার্ট অথবা এ জাতীয় জামা। নীচের দিকে হাতে বানানো অনেক রঙ্গীন মোটা কাপড়ের লুঙ্গি থাকে। লুঙ্গীটার মাঝখানে কোন সেলাই থাকে না। জামাটা লুঙ্গীর ভেতরে ইন করে দেয়। কোমরে ওরা একটা ছুরি ঝুলায় যাকে জাম্বিয়া বলে। বদু’রা সাধারণত মেজাজী হয়, তাই ওদেরকে কেউ বিরক্ত করে না।
ছবিঃ ইন্টারনেট
এই লোকালরা তাদের হাইলাক্স গাড়ীতে করে মালামাল এনে অস্থায়ী দোকান খুলে বসে। আমি মাঝে মাঝে এখানে সব্জি ও মুরগী কিনতে আসি। দাম ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের চেয়ে অনেক কম থাকে। বিশেষ করে মুরগীর জন্য এই বাজারে আসি-পাহাড়ী বদু মুরগী, স্বাদে অনন্য। বেদুঈনদের মুরগী বলে একে বদু মুরগী বলে ডাকি। একেবারে দেশী মুরগীর স্বাদ।
এই মুরগীটার দাম ৯০০ টাকা
কিন্তু সমস্যা হল – সব্জি কখনো অল্প কেনা যায় না। পুরো ঝুড়ি ধরে কিনতে হয়। একবার আমি ১২ কেজি টমেটো কিনলাম মাত্র ১৫ রিয়ালে। আমরা মোটে দু’জন মানুষ, এত খাবে কে? অর্ধেকই নষ্ট করতে হল। এই বাজারে জ্যান্ত খরগোশ উঠে। যে খরগোশের ছাগলের পায়ের মতো খুড়া থাকে সেটা খাওয়া হালাল। আমি একদিন শাকিলাকে বললাম, “ একটা খরগোশ খাইতে মঞ্চায়”। শাকিলা সাফসাফ জানিয়ে দিল, “আর যাই করো, খরগোশ ঘরে আনতে পারবা না।” আমি বুঝি না- এত কিছু খাই, খরগোশ খেলে কি দোষ? আরো কয়েকজনকে পটানোর চেষ্টা করলাম-কেউ রান্না করবে কিনা। কিন্তু কেউ রাজী হল না।
(চলবে)
২য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:১২