১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব
৬ষ্ঠ পর্ব
“মাদায়েন সালেহ” তে ১৩১ টি পাহাড়খোদিত কবরসারি পাওয়া গেছে। ২০০৮ সালে ইউনেস্কো এটিকে World Heritage Site হিসাবে ঘোষণা করে। এটি সৌদি আরবের প্রথম World Heritage Site। প্রতিটি পাহাড়ের সামনেই সাইনবোর্ড আছে, বর্ণনা আছে। এত গোছানো কোন কিছু আগে সৌদিতে দেখিনি।
আগেই বলেছি এই শহর একসময় নাবাতিয়ানদের শাসনে আসে। খ্রীষ্টাব্দ প্রথম শতাব্দীতে নাবাতিয়ান রাজা ৪র্থ হারিথ এর সময়ে ব্যাপক সংস্কার কাজ হয়। ব্যাবসায় বাণিজ্যে সুবিধার জন্য এ শহরকে নাবাতিয়ানদের দ্বিতীয় রাজধানী করা হয়। একে পরিপূর্ন শহর হিসাবে গড়ে তোলা হয়। নাবাতিয়ানরাও পাহাড় খোদাইয়ে বিশেষভাবে দক্ষ ছিল। মাদায়েন সালেহ’র ভূ-গঠন তাদের সেই কাজকে আরো সহজ করে দেয়। তারাও সেখানে পাহাড় খোদাই করে বাড়ীঘর তৈরি করে। তারা নতুন করে চাষাবাদের ব্যবস্থা করে, কুপ খনন করে।
প্রাচীন লিপি
দরজার উপরে আঁকা ছবি
১০৬ খ্রীষ্টাব্দে নাবাতিয়ান সাম্রাজ্য রোমানদের অধীনে আসে। রোমানরা বণিজ্যের জন্য রেড সি নৌপথ ব্যবহার করতে থাকে। নৌপথ ছিল নিরাপদ ও দ্রুত। ধীরে ধীরে প্রাচীন আল উলা-মাদায়েন সালেহ বাণিজ্যিক পথটি তার গুরুত্ব হারাতে থাকে। একসময় তা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়।
চতুর্দশ শতাব্দীতে ইবনে বতুতার ভ্রমণ বর্ণনায় হিজর শহরের কথা জানা যায়। কিন্তু তিনি সেখানে কোনপ্রকার মানুষ বসবাসের কথা উল্ল্যেখ করেননি। ঊনবিংশ শতাব্দিতে আশেপাশের গ্রামের লোকজন সেখানকার পানি ব্যবহার করত। বিংশ শতাব্দীতে অটোমান সুলতান ২য় আব্দুল হামিদ সেখান দিয়ে একটি রেললাইন স্থাপন করেন যা দামেস্ক ও জেরুজালেমকে মদীনার সাথে সংযুক্ত করেছিল। (আগের পর্বে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে)। সৌদি আমলে ১৯৩০-৬০ সালে বেশকয়েকবার অনুসন্ধান চালানো হয়। ১৯৭২ সালে সৌদি সরকার একে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসাবে ঘোষণা করে।
আমরা যতই চারপাশ দেখছিলাম, ততই অবাক হচ্ছিলাম। কি বিষ্ময় লুকানো আছে চারপাশে! হঠাৎ মিলন একটি পাহাড় দেখে উল্লাসিত হয়ে উঠল। আমরা গাড়ী থামালাম। ছোট একটি পাহাড়, কিন্তু তার মাঝেই অবিকল একটি মানুষের মুখ। বুঝতে পারলাম না এটা কি হাতে খোদাইকরা নাকি প্রাকৃতিক খেয়াল।
মানুষের মুখ
ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সাঈদের মন খারাপ থাকলেও সে বেশ খুশী। সফলভাবে সে প্রোগামটা করতে পেরেছে। এতদূর আসতে পারাটা স্বার্থক হয়েছে। সাঈদ মামুনকে চেপে ধরল, ‘তোমরা কি আগেরবার এত ভালো একটা ট্যুর করতে পেরেছ?’
মামুন ইনিয়ে বিনিয়ে বলল, ‘আসলে মাদায়েন সালেহ আমরা ভালোভাবে দেখতে পারি নাই, অনেককিছুই বাকী রয়ে গেছে। এবারের ট্যুরে অনেককিছুই নতুন দেখছি।’
সাঈদ অনেকটা জোড়াজুড়ি করেই মামুন ও শাহরিয়ার ভাইকে নিয়ে এসেছে। শাহরিয়ার ভাইও স্বীকার করেছেন এখানে না আসলে অনেক কিছু মিস হত।
ড্রাইভার সাহেব আমাদেরকে একজায়গায় থামালেন। গম্বুজ আকৃতির কয়েকটি পাহাড় দেখা যাচ্ছে। আগের পাহাড়গুলোর মতো তেমন আকর্ষনীয় নয়। আমরা ঝটপট কিছু ছবি তুলে আবার গাড়ীতে চড়ে বসলাম। আমাদের ড্রাইভার সাহেব মনে হয় অবাকই হলেন, যারা একেক জায়গায় ১০টি ছবি তোলে, তারা এটা না দেখেই অবজ্ঞাভরে চলে যাচ্ছে? আমরাও অবাক হলাম, কি আছে এখানে? ড্রাইভার সাহেব আমাদেরকে সামনে নিয়ে গেলেন। পাহাড় ঘুরতেই আমরা বিষ্মিত। এটা না দেখেই চলে যাচ্ছিলাম? দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে পথ চলে গেছে। ঠিক যেন পেট্রার মতো। এটা ছিল এই মাদায়েন সালেহ ঢুকার প্রধান পথ।
‘আদ দিওয়ান’
প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া সরু এই পথ দিয়েই এক সময় কাফেলা শহরে ঢুকত। পাশেই মজলিস কক্ষ (‘আদ দিওয়ান’) বানানো আছে। এখানে বিশ্রাম নিত, পানি পান করত। ব্যবসায় বাণিজ্যের আশায় মূর্তি পূজা করত। এ এক অসাধারন সৃষ্টি। আমি বিভিন্নভাবে এই সৃষ্টিকে ক্যামেরায় ধরে রাখতে চাইলাম। আমার ভেতরে অবশ্যই উত্তেজনা কাজ করছিল। কিন্তু কোন কারন ছাড়াই তখনি বালিতে আমার পা দেবে গেল। আমি পিছলিয়ে গেলাম, আর আমার ক্যামেরাটি পাহাড়ের দেয়ালে বাড়ি খেল। এত কষ্ট জীবনে পাইনি, আমার ক্যামেরা আর কাজ করছেনা। চারপাশের এত এত সৌন্দর্য্য, কিন্তু তার ছবি তুলতে পারছিনা। আমরা সরু পথের মাঝ দিয়ে অন্য পাশে গেলাম। প্রাচীন পথটি দেখতে পেলাম।
আমার ক্যামেরার ম্যামোরি কার্ড পরীক্ষা করলাম, ভালো আছে। সারাদিনের তোলা ছবিগুলো ঠিক আছে, একটু শান্তি পেলাম। বাকী সময়টা মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়েই কাজ চালাতে হল। প্রথমে সাঈদের ক্যামেরা নষ্ট হল, এখন আমারটা। এটা কি শুধুই কাকতালীয়?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:২৭