somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরব ডায়েরি-৪৬ (অভিশপ্ত সামূদ জাতির দেশে-৬)

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব

তোমরা নৈপূণ্যের সাথে পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করছো। (সুরা শু'আরা-১৪৯)
অতঃপর শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করলো, এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন ছিল না। (সুরা শু'আরা-১৫৮)



সামূদ জাতির ইতিকথাঃ

নূহ (আঃ) এর জাতির পর প্রাচীন আরবে আ’দ জাতি ছিল। ধারনা করা হয় আ’দ জাতি হযরত নূহ (আঃ) এর জাতির বংশধর। হযরত হূদ (আঃ) আ’দ জাতিকে আল্লাহর পথে আহ্বান করেন। তারা তা না মানায় ঈমানদাররা ছাড়া বাকী আ’দ জাতি ধ্বংস হয়ে যায়। আ’দ জাতি বিশালদেহী ও শক্তিশালী ছিল। তারা পাহাড় কেটে ঘর বাড়ী বানাত। অনেকে মনে করেন এই আ’দ জাতি মিশরের পিরামিড বানিয়েছিল।

সামূদ জাতি ছিল এই আ’দ জাতির বংশধর। তারা মদীনা ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসবাস করত। পবিত্র কোরআনে যাকে “হিজর” নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। যাকে আমরা এখন মাদায়েন সালেহ (সালেহ’র শহর) নামে চিনি।

হিজরবাসীগনও রাসুলদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিল। (সুরা হিজর-৮০)
তারা পাহাড় কেটে গৃহ নির্মান করতো নিরাপদ বাসের জন্য। (সুরা হিজর-৮২)


সামূদরাও আ’দ জাতির মতো পাহাড় কেটে ঘর বাড়ী বানাতে পারত। তাদের জমি ছিল উর্বর আর পানির কোন অভাব ছিল না। এসব কারনে তারা ছিল অহংকারী, স্বার্থপর ও অত্যাচারী। তারা অন্যদেরকে পানি ব্যবহার করতে দিতনা, গরীবদেরকে তার প্রাপ্য হতে বঞ্চিত করত। যদিও তারা হযরত হূদ (আঃ) সময়ে ঈমানদার ছিল, কিন্তু কালক্রমে সামূদ জাতি মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়।




আল্লাহ সালেহ (আঃ) কে নবী হিসাবে মনোনীত করেন। সালেহ (আঃ) তাদেরকে মূর্তিপূজায় বিরত থাকতে বলেন ও আল্লাহর পথে আসতে বলেন।


আর আমি সামূদ জাতির নিকট তাদের ভ্রাতা সালেহ (আঃ) কে প্রেরণ করেছিলাম, সে বললো হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কোন সত্য মা'বুদ নেই।... (সুরা 'আরাফ-৭৩)


সালেহ (আঃ) অনেকদিন ধরে আল্লাহর বানী প্রচার করলেন। কিন্তু সামূদরা হযরত সালেহ (আঃ) কথা শুনতে চাইল না এবং তাকে অবিশ্বাস করল। তখন তারা সালেহ (আঃ) কে একটি অলৌকিক নিদর্শন দেখাতে বলল যাতে তারা বিশ্বাস করতে পারে যে সালেহ (আঃ) সত্যিই আল্লাহ’র নবী।
সালেহ (আঃ) তাদেরকে চারপাশে তাকাতে বললেন। তাদের প্রতি আল্লহর অশেষ মেহেরবানী, জমির উর্বরতা, পানির সহজলভ্যতা আর পাহাড় কেটে বাড়ি বানানোর দক্ষতার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। সে সময় অন্যান্য জাতির তুলনায় সামূদরা উৎকৃষ্টতম ছিল। সালেহ (আঃ) বারবার তাদের পূর্বপুরুষ আ’দ জাতির কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন যারা তাদের পাপের কারনে ধ্বংস হয়েছিল।

কিন্তু সামূদরা তা মানল না। তারা বড় একটি পাহাড় দেখিয়ে তার মাঝ থেকে একটি গর্ভবতী উষ্ট্রী (মাদী উট) বের করে আনতে বলল। সামূদরা ভেবেছিল সালেহ (আঃ) এবার মিথ্যা বলে প্রমানিত হবেন। সালেহ (আঃ) তাদের প্রতিজ্ঞা করালেন যদি তিনি মাদী উট বের করে আনতে পারেন তবে তারা তাকে বিশ্বাস করবে এবং এক আল্লাহ’র উপর ঈমান আনবে। সামূদরা প্রতিজ্ঞা করল। সালেহ (আঃ) আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করলেন, এবং পাহাড় ফেটে একটি সুন্দর ১০ মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রী বের হয়ে আসল।


তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট নিদর্শন তোমাদের নিকট এসেছে, এই আল্লাহর উষ্ট্রী তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন স্বরুপ। সুতরাং তোমরা একে ছেড়ে দাও- আল্লাহর যমীনে চরে খাবে, ওকে খারাপ উদ্দেশ্যে স্পর্শ করোনা। ওকে কোন কষ্ট দিলে, এক যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে। (সুরা 'আরাফ-৭৩)

সামূদরা বিষ্মিত হল। তারা আল্লাহর নিদর্শন দেখতে পেল। বেশ কিছু লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল। কিন্তু বেশীরভাগই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করল।

আমি তাদেরকে আমার নিদর্শন দিয়েছিলাম; কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করেছিল। (সুরা হিজর-৮১)

(অতঃপর) তার সম্প্রদায়ের অহংকারী প্রধানরা তখন তাদের মধ্যকার দুর্বল ও উৎপীড়িত মুমিনদের বললোঃ তোমরা কি বিশ্বাস করো যে, সালেহ (আঃ) তার প্রতিপালক কর্তৃক প্রেরিত হয়েছেন? তারা উত্তরে বললোঃ নিশ্চয়ই যে পয়গামসহ তিনি প্রেরিত হয়েছেন, আমরা তা বিশ্বাস করি। (সুরা 'আরাফ-৭৫)

তখন অহংকারীরা বললোঃ তোমরা যা বিশ্বাস কর আমরা তা অবিশ্বাস করি। (সুরা 'আরাফ-৭৬)


শীঘ্রই উষ্ট্রীটি বাচ্চা জন্ম দিল। উষ্ট্রীটি বাচ্চা সহ চরে বেড়াত। উষ্ট্রীটি আল্লাহর নির্দেশ মতো সামূদদের কুপ হতে ১মদিন পানি পান করত এবং প্রতি ২য় দিন সামূদদের পানি ব্যবহার করতে দিত।

সালেহ (আঃ) বললেনঃ এই যে উষ্ট্রী, এর জন্য আছে পানি পানের পালা এবং তোমাদের জন্য আছে পানি পানের পালা নির্ধারিত একদিনে। এবং তোমরা ওর অনিষ্ট সাধন করোনা; করলে মহাদিবসের শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হবে। (সুরা শুআ’রা ১৫৫-১৫৬)

আর তুমি তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাদের মধ্যে পানি বণ্টন নির্ধারিত এবং পানির অংশের জন্য প্রত্যেকে হাজির হবে পালাক্রমে। (সুরা কামার ২৮)


উষ্ট্রীটি ছিল বিশাল। অন্যান্য ভেড়া ও উট একে দেখে ভয়ে পালাত। যেদিন এটি পানি পান করত সেদিন প্রচুর দুধ দিত। কিন্তু অবিশ্বাসীরা বলতে থাকল যে, এই বিশাল উষ্ট্রীটি প্রচুর পানি পান করে ফেলে আর অন্যান্য পশুরা উষ্ট্রীটিকে ভয় পায়। তাদের সমস্ত ক্ষোভ উষ্ট্রীটির উপর গিয়ে পড়ল। তারা উষ্ট্রীটিকে মেরে ফেলার বুদ্ধি করল। অবিশ্বাসীরা শহরের ৯ বদমাশকে উষ্ট্রীটিকে মারার জন্য নিয়োগ দিল। তারা রাতে উষ্ট্রীটিকে এবং বাচ্চাটিকে নির্দয়ভাবে জবাই করল।

অতঃপর তারা তাদের এক সঙ্গীকে আহ্বান করল, সে ওটাকে ধরে হত্যা (উষ্ট্রীকে) করল (সুরা কামার ২৯)

অতঃপর তারা সেই উষ্ট্রীটিকে মেরে ফেললো এবং (গর্ব ও দাম্ভিকতার সাথে) তাদের প্রতিপালকের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে চলতে লাগলো এবং বললো হে সালেহ! তুমি সত্য রাসূল হয়ে থাকলে আমাদেরকে যে শাস্তির ভয় দেখাচ্ছ তা আনয়ন কর। (সুরা 'আরাফ-৭৭)


সালেহ (আঃ) তাদেরকে সতর্ক করলেন। তিনি তাদেরকে অনুতপ্ত হবার জন্য আরো তিন দিনের সময় দিলেন।

অনন্তর তারা ওকে মেরে ফেলল, তখন সে বলল; তোমরা নিজেদের ঘরে আরো তিনটি দিন সুখভোগ করে নাও, এটা এমন ওয়াদা যাতে বিন্দু মাত্র মিথ্যা নেই। (সুরা হূদ-৬৫)


কিন্তু তারপরও তারা অনুতপ্ত হলো না, বরঞ্চ তারা সালেহ (আঃ) কে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু তারা সে সুযোগ আর পেলনা। তৃতীয় দিনে প্রচন্ড ব্জ্রপাত ও শব্দ আর ভূমিকম্প তাদেরকে ধ্বংস করেদিল। শুধু সালেহ (আঃ) ও তার অনুসারীরা বেঁচে রইলেন।


অতঃপর প্রভাতকালে এক বিকট আওয়াজ তাদেরকে পাকড়াও করলো। (সুরা হিজর-৮৩)

সুতরাং তাদেরকে একটি প্রলয়ংকারী ভূমিকম্প এসে গ্রাস করে নিলো, ফলে তারা নিজেদের গৃহের মধ্যেই (মৃত অবস্থায়) উপুড় হয়ে পড়ে গেল। (সুরা 'আরাফ-৭৮)

আর সেই যালিমদেরকে এক প্রচন্ড ধ্বনি এসে আক্রমণ করলো, যাতে তারা নিজ নিজ গৃহে (মৃত অবস্থায়) উপুড় হয়ে পড়ে রইলো। (সুরা হূদ-৬৭)

তারা যদি বিমুখ হয় তবে বলঃ আমি তো তোমাদেরকে সতর্ক করছি এক (আযাবের) বজ্রের ; আ'দ ও সামূদের বজ্রের অনুরূপ। (সুরা হা-মীম-আসসাজদাহ -১৩)

অতঃপর যখন আমার হুকুম এসে পৌছল, আমি সালেহকে (আঃ) এবং যারা তার সাথে ইমানদার ছিল তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে রক্ষা করলাম , আর বাঁচালাম সেই দিনের বড় লাঞ্ছনা হতে; নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক শক্তিমান, পরাক্রমশালী । (সুরা হূদ-৬৬)






আগুনের চিহ্ন এখনো বর্তমান। পাহাড় গলে গিয়েছিল।

জায়গাটি এমনভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলো যে, যেন কেউ কখনো সেখানে পূর্বে বসবাস করেনি। হযরত সালেহ (আঃ) ও তার অনুসারীরা সেই জায়গা ত্যাগ করলেন।

সেই থেকে আজও “মাদায়েন সালেহ” তেমনি আছে এবং অভিশপ্ত।


সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×