১ম পর্ব
২য় পর্ব
আল উলা
রাত তিনটায় নীচে নামলাম। আমদের ড্রাইভার সাহেব ঠিক সময়েই উপস্থিত হয়েছেন। আমরা মোট ৮ জন। আমি, মিলন ও সাঈদ ওয়াইফ সহ। আর সাথে আছে শাহরিয়ার ভাই ও মামুন। তারা দুজনেই মজার মানুষ, হাসি তামাশায় মাতিয়ে রাখে সবসময়। মামুন এবার নতুন জয়েন করেছে, সে হাবিব স্যারের সাথে আগের ট্যুরেও এসেছিল। তাকে আমাদের সাথে নেয়া হয়েছে যাতে সে স্বাক্ষী হতে পারে- হাবিব স্যারের আগের ট্যুর আসলে তেমনটা ভালো ছিল না। সাঈদ বিভিন্ন কারনে আগের ট্যুরটাকে ব্যার্থই বলতে চায়।
আমরা মদীনার সীমার বাহিরে ছুটে চলছি। রাতে গাড়ী নেই বললেই চলে। শীত শীত করছে। আমরা চলছি "আল উলা'র" পথে। "আল উলা" মদীনা হতে ৩৭০ কিমি. উত্তরে অবস্থিত। নানা করনে "আল উলা" বিখ্যাত হয়ে আছে। "আল উলা" হতে ২৫ কিমি. দূরেই বিখ্যাত "মাদায়েন সালেহ", যেখানে সামূদ জাতি বসবাস করত। হযরত সালেহ (আঃ) এ জাতিকে আল্লাহ'র পথে ডেকেছিলেন। সামূদ জাতি দাম্ভিকতার সাথে তা প্রত্যাক্ষান করে। এক সময় আল্লাহর গযব নামে তাদের উপর। সেই ধ্বংস নগরী এখনও আছে, কিছুটা নিভৃতেই পড়ে আছে "আল উলা" শহরের পাশে।
বর্তমানের আল উলা শহর
আল উলা প্রাচীনকালে "দিদান" (Dedan) নামে পরিচিত ছিল। এটা ছিল প্রাচীন "লিহাইন" জাতির রাজধানী। আল উলা অতীতকাল থেকেই উর্বর জমি ও পানি প্রবাহের জন্য প্রসিদ্ধ। আর এ কারনেই এখানে অনেক কৃষি খামার গড়ে উঠেছে। এটা ছিল ব্যবসায়, বাণিজ্য ও সুগন্ধি দ্রব্যাদির অন্যতম রুট।এ শহরের উপর দিয়ে যাওয়া সকল বাণিজ্যিক কনভয়ের কাছ থেকে লিহাইনরা রাজস্ব আদায় করত। কনভয়গুলো মূলত মিশর ও ইরাকের দিকে যেত। পাশাপাশি তারা খাবার ও পানি বিক্রি করত। অবস্থানগত করনে শহরটির একচোটিয়া আধিপত্য ছিল। শহরটি পাহাড় বেস্টিত এবং পাহাড়গুলো ভঙ্গুর প্রকৃতির। খ্রীষ্টপূর্ব ১০০ সাল পর্যন্ত লিহাইনরা রাজত্ব করে।
পরবর্তীতে নাবাতিয়ানরা (The Nabataeans) এ রাজ্য শাসন করতে থাকে। বর্তমান জর্ডানের পেট্রা ছিল নাবাতিয়ানদের রাজধানী। তারা সে সময় মাদায়েন সালেহ'কে ২য় রাজধানীর মর্যাদা দেয়। মাদায়েন সালেহ সে সময় "হিজর" নামে পরিচিত ছিল। রোমানরা সব সময়ই বাণিজ্যিক পথটি দখল করতে চাচ্ছিল। ১০৬ খ্রীষ্টাব্দে নাবাতিয়ান সাম্রাজ্য রোমানদের অধীনে আসে। রোমানরা বণিজ্যের জন্য রেড সি নৌপথ ব্যবহার করতে থাকে। নৌপথ ছিল নিরাপদ ও দ্রুত। ধীরে ধীরে প্রাচীন আল উলা-মাদায়েন সালেহ বাণিজ্যিক পথটি তার গুরুত্ব হারাতে থাকে। একসময় তা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়।
১৯ জানুয়ারি।
... সকাল ৮ টার মধ্যে আমরা মাদায়েন সালেহ পৌছতে চাই। পথে ফজরের নামাজ পড়ে নিলাম, খাবার কিনলাম। ড্রাইভার যে গতিতে গাড়ী চালাচ্ছে, মনে হচ্ছে ৭ টার মাঝেই পৌছে যাব। সকালের সূর্য উঠলো। মরুর মাঝের রাস্তা দিয়ে একাকী ছুটে চলছি অবিরাম। পাশের পাহাড়গুলো তার রং বদলাচ্ছে।
আল উলা শহরে পৌছার সাথে সাথেই চারপাশের দৃশ্যপট যেন পাল্টে গেল। পাহাড়গুলো লালচে। পাহাড়গুলোকে খুব সহজেই বিভিন্ন আকৃতি সাথে কল্পনা করা যায়। কখনো বা মানুষের, কখনো স্ফিংস, কখনো বাচ্চা হাতে মা – অদ্ভুত। আমরা প্রায়শঃ আকাশের মেঘে এ ধরনের আকৃতি দেখে থাকি। কিন্তু সবই বাস্তব, পাহাড়গুলো ভঙ্গুর প্রকৃতির। সময়ক্রমে ক্ষয়ে ক্ষয়ে এসব আকৃতি পেয়েছে।
বিভিন্ন আকৃতির পাহাড়
মামুন স্মরণ করিয়ে দিল সামূদ জাতির উপর নেমে আসা অভিশাপের কথা। পুরো জাতি ব্জ্রপাত আর অগ্নিবৃষ্টিতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আর তার কারনেই এ শহরের পাহাড় ও মাটি এখনও আগুন রঙা লালচে। ...
ব্জ্রপাত আর অগ্নিবৃষ্টিতে স্নাত লালচে পাহাড়... সৌদির অন্যন্য পাহাড় থেকে একেবারে আলাদা।
আমরা স্মরণ করলাম-
"আর সামূদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার তো এই যে, আমি তাদেরকে পথ নির্দেশ করেছিলাম; কিন্তু তারা সৎপথের পরিবর্তে অন্ধত্ব (ভ্রান্ত পথ) অবলম্ববন করেছিল। অতঃপর তাদের কৃতকর্মের পরিণাম স্বরূপ লাঞ্ছনাদায়ক বজ্র আঘাত হানলো।" (সুরা হা-মীম-আসসাজদাহ -১৭)
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৩১