মোহাম্মদ হাসান, সিলেটে বাড়ী, আছেন প্রায় ২০ বছর ধরে। উনি আমাকে উনার ছোট রেস্টুরেন্ট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন। এখানে “মান্দি” ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। মান্দি ইয়েমেন ও সৌদি আরবের একটা ট্রাডিশনাল ফুড। এখানকার সবাই এটা আয়েশ করে খেয়ে থাকে। আমার আগের লেখা খাবার দাবার প্রসঙ্গ এ “মান্দি” নিয়ে অনেকেই সরস বর্ণনা দিয়েছেন। আমার ভাগ্য ভালো যে তখন মান্দি তৈরি হচ্ছিল। আমিও ছবি তোলার সুযোগ হাতছাড়া করলাম না।
মান্দি হচ্ছে মাটির নীচে বিশেষভাবে রান্না করা ভাত ও মাংসের সংমিশ্রন। মাটিতে গর্ত করা চুলায় কয়লার আগুনের তাপে ভাত ও মাংস সেদ্ধ করা হয়। ভাতের মধ্যে কিছু দারুচিনি, এলাচ, কিসমিস দেয়া হলেও মাংসে কোন মশলাই দেয়া হয় না। আমি যা শুনলাম তাতে অনেকেই হয়তো এ খাবার খেতে চাইবে না। ছাগল বা দুম্বা জবাইয়ের পর রক্ত পরিস্কার করে কিছু লবণ ও তেল মেখে আস্ত শরীরটিই চুলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়। আমার দেখা ছাগলটিতে জিহ্বা, চোখ, দাত এমনকি ভূড়ি’র কিছু অংশ পেচানো ছিল। চুলার নীচে থাকে ভাতের পাতিল, উপরে ছাগল ঝোলানো। প্রচন্ড তাপে ছাগলের শরীরের চর্বি’র খন্ড নীচে ভাতের উপর পড়তে থাকে। আর এতে নাকি মজাও বৃদ্ধি পায়। আমি জিঙ্গেস করলাম এত বড় বড় ডেকচিতে যে রান্না করছেন- বিক্রী হয়তো? হাসান সাহেব জানালেন, সব বিক্রী হয়ে যায় এবং এই মান্দির রেস্টুরেন্ট দিয়ে অনেক বাংলাদেশিই নাকি কোটিপতি। কোয়ার্টার দুম্বা’র মান্দি ২০০ রিয়াল বা তারো বেশী দামে বিক্রী হয়। মনির জানালো চর্বি’র গন্ধে অনেকেই এ খাবার খেতে পারবেনা। সে নাকি একবার টেস্ট করেছিল। হাসান সাহেব আমাকে একটু মাংস খেতে দিলেন- আমার তেমন খারাপ লাগেনি।
মান্দির জন্য ছাগল ও দুম্বা
মান্দি তৈরির চুলা
মান্দি তৈরি হয়ে গেছে
উঠানো হচ্ছে
রাইস ...
রাইস ...
রাইস ... চর্বিসহ
আস্ত ছাগল ... দাঁত, জিহবা, চোখসহ
যোহরের আযান হচ্ছিল। আমরা ফ্রেশ হয়ে যোহর ও আসর একসাথে পড়ে নিলাম। তারপর কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে বিদায় নিলাম। বিদায় নেবার সময় দেখলাম অনেক সৌদি গাড়ি নিয়ে এসেছে মান্দি কেনার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৯