এখন রাত দুইটা একচল্লিশ।দুঃস্বপ্ন
দেখে ঘুমটা ভেঙে গেছে।এবারের
দুঃস্বপ্নেও কাক দেখলো কাব্য।
দুইটা কালো কাক আর একটা হলুদ কাক।খুব
সাবধানে লেপের নীচ থেকে বেরুলাম।
বেশ পুরোনো লেপ।জাগায় জায়গায়
ছেড়া তাই এই বিশেষ
সাবধানতা অবলম্বন।চাদর বিহিন
তোষকের নিচে হাত দিয়ে দেখলাম
সিগারেটের
প্যকেটটা খালি হয়ে পরে আছে অথচ এখন
একটা খাওয়ার ইচ্ছে ছিলো।প্যন্টের
পকেটে হাত দিতেই মনে পড়ল
সেখানে কোনো টাকা নেই।
এই রুমে একটা বিশেষ পড়ার টেবিল
আছে কাব্যর বিশ্বাস
এটা একটা টাকা খোর পড়ার টেবিল।গত
বৈশাখেও কাব্যের ৫০০ টাকার
একটা কচকচে নোট খেয়ে ফেলেছে।
সেটা ভুলে সে এমাসের ১০০০ টাকার
আস্তা নোটটা ঐ টেবিলেই
রেখেছে ফলাফল পুর্বের পুনার্পণ।
কয়েকবার কোন
হুজুরকে নিয়ে এসে টেবিলটাকে ঝাড়ফুক
করানোর কথা ভেবেছে সে কিন্তু
কোনোবারই সে কাজটা সম্পন্ন
করতে পারেনি আর এর পেছনেও কাব্যর
সন্দেহ টেবিলটা।
এ মাসে রাজনিতি খুবই হিট বিষয়।
চা সিগারেট
খেতে হলে যে কোনো একটা চায়ের
দোকানে ঢুকে প্রথমে শিকার বাছাই
করতে হয় তারপর কথায় কথায় কোন দলের
সাপোর্টার সেটা বুঝে খুব হাই
প্রফাইলে তার প্রিয় নেত্রীর
প্রশংসা করতে হয়।কখনো ৫ মিনিটেই
হাতে চা আর দুই আঙ্গুলের
মাঝে একটা গল্ডলিপ উঠে যায়।
কখনো অবশ্য ৫ মিনিটের আর একটু
বেশী সময় লাগে।এভাবেই আজ মাসের
২৫ তারিখ চলে এসেছে।
প্রায় ভোর হয়ে এসেছে আজ কাব্যের কাক
দেখতে যাওয়ার দিন।কিন্তু
একেবারে খালি পকেটে কাক
দেখে আনন্দ পাওয়া যায় না।তাও নিয়োম
তো ভাঙ্গা যায়না।নিয়োম ভাঙ্গাটা খুব
খারাপ একবার ভাঙ্গলে বার বার
ভাঙ্গতে ইচ্ছে করে।খালি পকেটেই
হাটতে হাটতে সংসদ ভবনের
পেছনে চলে এলাম।ভোরের
আলো এখোনো ফোটা শুরু করেনি।পেছন
থেকে একটা কিশোরীসুলভ ডাক
শুনতে পেলাম,এই!শুন্ছেন।
আমি পেছনে ফীরে তাকালাম।
গলাটা কিশোরীর কিন্তু ২৩ ২৪ বছর
বয়সী একটা মেয়েকে দারিয়ে থাকতে দেখলাম।
চোখ দুটা অসম্ভব সুন্দর।পায়রার চোখ
টাইপের চোখ।চোখে তার হলুদ রঙ্গের
ফতুয়াটার ছায়া পরছে।সবার
চোখে ছায়া পরেনা যাদের মধ্য অদ্ভুত
কিছু থাকে তাদের চোখে ছায়া পরে।
আমার বাবার চোখেও ছায়া পরতো।
অনেকেই বলতো আমার
বাবা নাকি মানুষিক অসুস্থ ছিলেন।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় কোনো এক
মাঝরাতে আমি মানুষিক অসুস্থ
হয়ে যাবো তারপর আর ভালো হবো না।
আমি সামনে এগিয়ে গেলাম
সে আমাকে জিগ্ঞেস করলো,সিগারেট
খাবেন?তারপর হাত ব্যাগ
থেকে প্যাকেট বের
করে আমাকে একটা দিলো আর
সে নিজে একটা ধরালো।তারপর
সে বললো চলুন না সামনের দিকটায়
গিয়ে বসি যেখানে বিকেলে বন্ধু
বান্ধবেরা আড্ডা দেয়
তাছারা ওখানে এক ভ্যানে খুব
ভালো চা বিক্রি করে।আপনি খেয়ছেন
কখনো?আমি তাকে বললাম আমি খাইনি।
আমি তার সাথে এখন সেখানটায়
বসে আছি।সে ক্লাস সিক্সে নতুন
ওঠা ছেলেদের মতো হাত
বাড়িয়ে দিয়ে বললো,আমি চৈতি।কিন্তু
সেই হাতে সেই অনুভুতি ছিলো না।
সে বলতে লাগলো আমি জানতাম
আপনি আসবেন।আপনি আমার বন্ধু।
সত্যি সত্যি বন্ধু তাদের
মতো না যে একটা মেয়ে তার বন্ধুদের
একজনের ভালোবাসার
ডাকে সারা দেয়নি বলে সে সবাই যখন
নদনে গেলো তাকে সেখন থেকে জোর
করে টেনে আরেকটা জায়গায়
নিয়ে গেলো।ওদের টানাটানিতে কাচের
চুরিগুলো ভেঙে যাচ্ছিলো।মেয়েটা
অসহায় দুপুর রোদে এদিক ওদিক
দেখছিলো তামাশা দেখতে থাকা লোকগুলোর
মধ্য থেকে কেউ এগিয়ে আসে কি না।
কিন্তু বাতাসের আটশে গন্ধে মেয়েটির
চিত্কার টিনের দেয়ালেই
প্রতিদ্ধন্নি হয়ে ফিরে আসছিলো।আর
সেই শব্দেই হাসছিলো সেই ছেলেটি আর
তার বন্ধু নামের বন্ধুরা।তারপর
থেকে আমার মনে হয় যেখানেই যাই
না কেনো সব যাগায় শুধু সেদিনের
তামাশা দেখা লোকগুলি।তারপর সেই
লজ্জা কাটাতে একটু শক্ত হলাম আর এতেই
আমার জিবনের সবকিছু বদলে গেলো।
এই বলে সে অদ্ভুত আচরন শুরু
করলো,ফোঁপানোর মতো জোরে স্বাস
নিতে লাগলো।আমার
দিকে তাকিয়ে ক্রুদ্ধ
দৃষ্টিতে বললো,আমি কোনো বন্দ্ধু চাই
না।এই বলে সে ব্যাগ
থেকে কয়েকটা টাকা আমারদিকে ছুরে মেরে উঠে গেলো।
সে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই
আমি টাকা তুলে পকেটে ভরে নিয়ে সুন্দর
একটা হাসি দিয়ে সে স্থান ত্যাগ
করলাম।
কারন নং ১এতে তার কষ্ট
কিছুটা হালকা হয়েছে এবং কারন নং ২
তার সাথে আমার আবার
দেখা হচ্ছে সে পর্যন্ত তার
টাকাটা দেখাশোনা করা।সকালের
ঝকঝকে রোদে কাকেদের কাক
সঙ্গীতে কানে তালা লেগে গেলো।একটু
পরেই কাকেরা সঙ্গীত বাদ দিয়ে ব্যস্ত
হয়ে যাবে এরই মধ্য আকাশের দিকে চোখ
পড়লো,মনে হলো দেখলাম দুটা কাক
একটা হলুদ কাকের পেছনে ছুটছে।
আচ্ছা,হলুদ কাকটা চৈতি না তো!