বিরহ
সমুদ্র কখনো এক বিরহী মেয়ে,
চঞ্চল ঢেউয়ে মাইলের পর মাইল ছেয়ে
সুদীর্ঘ নিঃশ্বাস, বাতাস হাপরে ফুলে ওঠা বুক,
খোঁজে প্রেমিকের আলিঙ্গন উচ্ছাস!
অজস্র সুসজ্জিত ঝাউগাছ নীড়ে জোছনার স্নানে রুপোলি রাতের সৈকত ফেলে
সমুদ্র কখনোবা শুধুই নিশি আর ভোর,
কখনো শব্দঋণে নির্বাক কবির কবিতার বুনন,
কখনোবা এঁকে যাওয়া বিশালতার ব্যাথা।
কখনো আকণ্ঠ পিয়াসে ছুটে চলা নদীর গর্ভে,
ছুড়ে দেওয়া জল, অশ্রুর নোনাজল,
বাষ্পসলিল তরল।
আর আমরা তাকে জেনেছি প্রেম মোহনায়,
সুখের ফল্গুধারায় এঁকেছি বিশালতার বিম্বে,
যার প্রতিফলিত রশ্মিপাত বোঝেনি আগন্তুক হৃদয়,
মাপেনি তার উষ্ণতা, গভীরতর স্পন্দন,
শুধুই ফুটেছে বিপরীত আপাতন এঙ্গেল।
আয়নার ওপারে সমুদ্র শুধু জড় বৃন্দাবন,
যে দেখেও দেখেনি
দুঃখবিলাসী এক কিশোরী রাধার মন,
দেখেনি কৃষ্ণ বিরহে থমকে যাওয়া বিধুরতর ক্ষণ।
রুদ্রতা
পসাইডন কখনোবা সমুদ্র সাজিয়েছে
উপকূলীয় বাতিঘরে,
গেঁথেছে বুকের মাঝে নগরীর নিয়ন বাহার,
ভুলেছে ইতিহাসবেত্তার হেলেন, আর্ফিয়াস, প্যারিস, আলেকজান্দ্রার মিশর, ট্রোজান হেক্টর, বৃদ্ধ প্রিয়াম। সমুদ্র তখন শুধুই বাণিজ্যিক জাহাজের স্রোত,
গ্লাসগো টু নিউইয়র্ক,
কিংবা লাসভেগাসের উম্মাদ পবন।
পসাইডন কেড়েছে তার নিরবতা, প্রেমের ভেনাস, জল্লাদপনায় খুলে সমস্ত আব্রু,
এঁকেছে আধুনিক প্রোসাইডন।
তাইতো সমুদ্র কখনো ভিসুভিয়াস হয়ে ওঠে,
নেশাগ্রস্থ মোহনীয় ভঙ্গিতে ডানে বামে দোলে,
প্রেমিকার খোঁজে অতৃপ্ত লাল জোড়া ঠোট,
সুদীর্ঘ লাভা নিশ্বাসে ফুঁসে ওঠা ঢেউ,
আছড়ে পড়ে নটবর, প্রলয়নাচনে,
অনাবৃত সমতল বুকের পাঁজর চাষে,
ফুলে ওঠা সাইক্লোন, খুঁজে ফিরে সমুদ্র শিকার,
খোঁজে ভূমির পসাইডন।
তছনছ করে বুকের এ গলি ও গলি,
কিলবিল করা সাপের মত ফণা তুলে,
সমুদ্র নদীতে, সমুদ্র বনে, সমুদ্র মাঠে, কখনো বা
দশমাথা দশানন, অজস্র পাপের প্রেম,
আর নিরীহ প্রজার চোখে সুনামিদুর্গত অঞ্চল।
প্রেমময়
সমুদ্র কখনোবা ভারী শান্ত বুকে গজলডোবা প্রেম,
নীল জমিনে বেণী গেঁথে দেয়,
গ্রামের ঢেমনা মরদের অন্তরের মত,
বুকের জলরাশি সাজায় অন্তরীক্ষের আরশিনগর,
চাঁদের কেশে গুঁজে দেয় বাহারি তারার ফুল,
সযত্নে ভালবেসে বুকের পাঁজরে, ফুঁলে ওঠে নিয়ম করে কামারের হাপরের মত।
কখনোবা,
সমুদ্র কিশোরীর সমুদ্র চঞ্চল প্রেম,
উতলা হাওয়ায় উড়ে যাওয়া ওড়না,
উত্তাল বক্ষের ভীরু ভীরু নিঃশ্বাস,
ফুলে ওঠা ঢেউ গুনে রাখালের চোরা চোখ,
কিশোরীর ঠোটটেপা হাসি,
কখনোবা তার কানাইয়ের বাঁশি।
বাস্তবতা
কখনোবা সমুদ্র ভেসে ওঠা বুদবুদ,
অজস্র তারার ভীড়ে দিগন্ত ধ্রুবতারা,
কখনোবা সমুদ্র শুধুই একভাগ
তোমার কখনোবা তিনভাগ আমার,
অন্তহীন যুদ্ধজাহাজের মাইন টর্পেডো,
কখনোবা পীত, কখনোবা ভূমধ্যসাগর,
কখনো আয়লান কখনোবা নাফ,
আর অন্ত নীলের টংকার,
কখনোবা, যৌথ উদ্দ্যোগে সমুদ্র দেহ প্রসারে জাতিসংঘ নিয়মাদি, মানবতায় নামা ইউ বোট,
গুন্টার পাউলির সমুদ্র অর্থনীতি আর কনকোফলিস বাস্তবতায় বেঙ্গল বেসিনের অফুরান গ্যাস হাইড্রেট।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৭