আগের পর্ব- ব্রেক্সিট ১
ইংল্যান্ডের সাথে ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ড নিয়ে ইউকে গঠিত। বহু ইতিহাসযজ্ঞ পাড়ি দিয়ে এই দেশ কটি মিলে ইউনাইটেড কিংডম গঠন করে।
কিন্তু আইরিশ স্কটিশদের ব্রেক্সিট পরবর্তী হাবভাবে ইংল্যান্ড মহা সমস্যার মধ্যে পড়বে বলে অনেকেই আভাষ দিয়েছেন। হ্যারি পটার সিরিজের জে কে রাউলিং তো একধাপ এগিয়ে আইরিশ স্কটিশদের জ্যাক ইউনিয়ন ভেঙে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। বুঝুন,ও দেশে লেখকের ঝাঝ কতটুকু!
যাক সে কথা, ইতোমধ্যে সবাই জেনে গেছে ব্রিটেন প্লাস এক্সিট (ব্রেক্সিটের) হাল-হকিকত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেড়িয়ে যাবার রায় দিয়েছে ব্রিটিশ জনগণ। সে হিসেবে আর যাচ্ছি না। তবে তরুণ ব্রিটিশরা যারা ব্রেক্সিটের ফলাফলে বেশি লাভবান হত বা ক্ষতিগ্রস্ত হত তাদের অংশগ্রহণ থেকে গনভোটে বুড়ো ব্রিটিশগণ অংশগ্রহণ করেছেনও বেশি ভোটও দিয়েছেন বেশি। কারণ আর কিছুই না। স্বাস্থ্যভাতা, নাক উঁচু তেজ ও প্রবল জাত্যভিমান।
আইরিশ আর স্কটিশদের কথায় পরে আসছি। খোদ ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান- জ্যা ক্লদ জাংকার, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন শুলৎজ সহ আরো অনেক ইউরোপীয় রাষ্ট্রপ্রধান চান এই ডিভোর্স যেন দ্রুত হয়। বিষয়টা এমন সমুদ্রবধু অপেক্ষা করিতে চাহিলেও ইউরোপীয় বাবুদের আর তর সইছে না। ব্রিটেনকে বের করে দাও, ডিভোর্স দিয়ে দাও। ডিভোর্সি ব্রিটেনের মায়াজাল তখন স্কটল্যান্ড, আইরিশরা এমনিতেই ভেঙে খানখান করে দেবে।
সে কথার টানেই কিনা নিকোলা স্টারজেন ওয়ার্ল্ডস্টার হতে চেয়ে দুম করে বলে দিলেন ব্রেক্সিট তো হল এবার আমরা ব্রিটেন থেকে সরে ইইউতে যেতে চাই। ব্যাস, সাথে সাথে শুরু হয়ে গেল আইরিশদেরও কারিকুরি। ব্রিটেন এতদিন খাইয়ে দাইয়ে কাল সাপ পুষেছে। সেটা যত জলদি তারা বুঝবে ততই লাভ। আর সুদর্শন হলেই কিন্তু বুদ্ধিমান হওয়া যায় না। নিকোলা তার প্রমান। রবার্ট ব্রুস সতের বার চেষ্টা করে তবেই ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিলেন। কিন্তু তার প্রিয় স্কটল্যান্ডীয় জনগন স্বাধীনতার ব্যান্ড বাজিয়ে ২০১৪ সালের গনভোটে ৫৫ শতাংশ ভোট দিয়ে ইউনিয়ন জ্যাকের ছায়ায় সুধা খুঁজে নেয়। আজ যখন সে ব্রিটেনটি ইইউকে বাইবাই বলে দিচ্ছে, সুবিধাবাদী নিকোলারা বাণিজ্য সুবিধা, হাবিজাবি ইত্যাদি বলে তখন এক ঢিলে দুই পাখি মেরে ইইউ ধরার চেষ্টা করছেন। বাহ বাহ!!
এদিকে উজির নাজির মারা নেদারল্যান্ড ও বেলজিয়াম ঘনঘন ডান বৈঠকে ইইউ প্রধানদের সাথে নতুন ইউরোপের স্বপ্নে বিভোর। ডিভোর্সি বধু ইংল্যান্ডকে বিদায় দিতে পুরোনো শত্রু ফ্রান্স, ইটালি ও জার্মানি ইইউ প্রধানদের চাপে রেখেছেন। ব্রিটিশ জনগনের দেওয়া ব্রেক্সিট বিচ্ছেদ ইউরোপীয় ভূমিরাজদের অহমে যেন সজোরে এক চপেটাঘাত মেরে দিয়েছে। তাইতো ইইউ কর্তাবাবুদের গলায় চাপাকণ্ঠ ব্রেক্সিটে দুঃখিত বলেলেও পরবর্তীতে নেকড়ে গলায় বলে ওঠেন ইংল্যান্ডের সাথে আর নয়। তাদের বেরিয়ে যেতে হবে।
লিসবন চুক্তির ৫০ ধারার প্রথম শর্তটি পূরণ হয়েছে। ৫০ ভাগ গনভোটে ইংল্যান্ড এখন বেরিয়ে জেতেই পারে তাই দরকার পার্লামেন্টারি অনুমোদন। এই জনগনের রায় ফেলে পার্লামেন্ট কোন রায় দিতে পারে না বলে ব্রেক্সিট ২ বছরের মধ্যে হচ্ছে এটা সুনিশ্চিত। তবে ৮০০০০ হাজার পৃষ্ঠার আইনি ধারার পরিবর্তন সে তো সোজা কথা নয়। সময় লাগবে।
তবে থেরেসা মের যেন তর সইছে না। স্কুলের জেদী মেয়েটির মত তারও আজি সব চাই। দেখতে বলতে মার্গারেট থ্যাচারের কার্বন কপি মনে হলেও সে যে জাস্ট একটা আন-ইলেক্টেড ডামি পলেটিশিয়ান সেটা বোঝাই যাচ্ছে। তবে ব্রেক্সিট পরিস্থিতি যদি সে সঠিক বুদ্ধিতে সামাল দেয় তবেই তাকে রিয়েল মার্গাখ্যায়ী দেওয়া হবে। যদিওবা সেটা করা আর এই মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের চলতি ইংলিশ লীগে শিরোপা জেতার সমান হবে। তাতে কি, ম্যান ইউতে রুনি আছে আর ইইউতে আছে জ্যাংকার! তাই ভাবনার বেলুন ফুলাতে দোষ কি?
মিস্টার ক্যামেরুন ২০১২ সালে ওয়াদা করেছিলেন অভিবাসী কমিয়ে আনবেন। কিন্তু তা তিনি করেন নি। জনগণ তাকে রায় দিয়েছে। বেচারা নাইজেল ফারাজের ঘুঘু দেখেছি ফাদ দেখিনি ফাদে পা দিয়ে ব্রেক্সিটের ষোলআনা মাশুল দিয়ে গেলেন।
বেচেরা ক্যামেরুনের আর কি দোষ। ব্রিটেনকে আগে থেকেই বলা হত গনতন্ত্রের সূতিকাগার। সে কথা শুধু বলা হত না ব্রিটিশ জনগন তা প্রমান করেই ছেড়েছেন। ব্রিটেনবাসী নিজের অবস্থা বুঝে শুনে কোন সেলিব্রেটি বা অন্য কারো দ্বারা প্রভাবিত না হয়েই ন্যায্য বিচারক হয়েই তাদের ভোট প্রদান করেছেন। সে ভোটে অনেক কিছুই ব্রিটিশগন বিচার করেছেন যেমন নাগরিক সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা, চাকুরী, অভিবাসী সমস্যা ইত্যাদি। বাংলাদেশ হলে কি করত ভাবুন? অনেক মজা পাবেন।
এবার ঘুরেফিরে মনে আইরিশ, স্কটল্যান্ডীয় জনগণ এল। আসলে কারা এরা? ব্রেভহার্টের সেই সুদর্শন নায়ক? নাকি রবার্ট বুশের মহান চরিত্রায়ন! না এরা বর্তমানে আর তেমনটি নেই। এরা সুবিধাবাদী আধুনিক জনগন যারা ভুলে গেছে ইংল্যান্ড এখনো জাতিসংঘের স্থায়ী পরিষদের সদস্য, জি ৭, জি- ২০ সহ ন্যাটোর অন্যতম প্রধান চালক ও বাহক। ব্রিটিশ আর্মি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে ছিল ইউরোপের রক্ষাকবজ। মার্কিনদের সহায়তায় ইউরোপে ব্রিটিশরা না নামলে হিটলার আর রাশিয়ান বাহিনী ইউরোপে কি করত ইউরোপবাসী তা আজ ভুলে গেছে। তারা ভুলেগেছে ইউরোপীয় রেনেসাঁয় ইংল্যান্ডের অবদান, শিল্প বিপ্লবের অবদান। স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ড আজ ভুল ভাল রাজনীতির খেলায় ইংরেজরাজের ছক্কাপাঞ্জা করতে গিয়ে কোনদিন জানি নিজেই অক্কালাভ লাভ করে। এতো সহজ নয় বাছাধন ইইউ পিয়াসী। ব্রিটিশরা তোমাদের নাচনকোঁদন দেখে পরে আচ্ছাসে ধুয়ে শুকোবে।
যতদিন ব্রিটেনবাসী তাদের বন্ধু মার্কিনদের আতিথ্য পাবে ততদিন তাদের শত্রুরা ভেতরে বাইরে ইদুরবেড়াল খেলবে ঠিকই কিন্তু ছড়ি ঘোরাতে পারবে না। ব্রিটিশ রাজের সীমানায় আজ সূর্য ওঠে সূর্য ডোবে কিন্তু যে দেশ সমুদ্রের বধু তাকে শাসন করে শক্তি কার। স্কটল্যান্ড আইরিশ চুনোপুঁটিদের খবর আছে। ব্রিটেন থেকে বেরিয়ে গেলে স্কটল্যান্ড আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স আর রাশিয়ার পেটে যাবে। সেখানে গেলে ওদের কি হবে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফ্রান্সের ঘনঘন আত্নঘাতী হামলা উত্তর সাগরের বরফ রক্তাভ করে দেবে সে সন্দেহ নেই। রাশিয়ার ভারী ভারী সাজোয়া যান পিষ্ট করে দেবে আইরিশ আর স্কটিশ স্বপ্নঘোর। তবে ব্রিটেনের সাথে লাগবে না তারা। সে শক্তি হয়েও আজো হয়ে উঠল না কারো!
আর ইউরোপের মানচিত্রে, স্কটল্যান্ড আয়ারল্যান্ড হয়ত নতুন দাগ কেটে আলাদা হতে পারে তবে সে দাগ হবে তাদের কলংকের দাগ। সে দোষ ব্রিটেনের তো নয়ই বরং হবে আরেক ভারমুক্তির আনন্দ!
সূত্র ও ছবি- গুগল
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:০১