কিছুদিন আগে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগিং নিয়ে একটি লিখা বিভিন্ন ব্লগে এবং ফেইসবুকে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়েছিলো। আমি এখানে ভাইরাস শব্দটি উল্যেখ করলাম এই জন্য যে , ভাইরাস হলো এমন একটি জীবানু যেটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। এমনকি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটায় এই ভাইরাস ।এখন প্রশ্ন হলো এই লিখা কিভাবে ভাইরাস হয় এবং মানুষের জীবনে কিভাবে ক্ষতি করে । এই লিখাটি কিভাবে মানুষের ক্ষতি করতে পারে সেটি একমাত্র জাহাঙ্গীর নগরে যেইসব ছাত্র ছাত্রী আছেন তারাই বলতে পারবেন ভালো করে । এই ভাইরাসের কারণে জাবির ছাত্র ছাত্রীরা যেখানেই যাচ্ছে সেখানেই মানুষের প্রশ্নের শিকার হচ্ছে, তোমাদের এখানে এইসব কি হচ্ছে , ওখানেকি ভালো মানুষ থাকে নাকি সব পশুরাই থাকে ? আর জাবির ছাত্রীদের অবস্থাতো আরো করুন । বাবা মা দিধা সংশয়ে ভুগছেন তাদের মেয়েকে পরের দিন ক্লাসে পাঠাতে । আর ভবিষ্যতে যাদের স্বপ্ন ছিল মেয়েকে জাবিতে পড়াবে সেই মা বাবা হয়তো ভাবছেন প্রয়োজনে বেসরকারীতে পড়াব তবুও জাবিতে না । আর আমাদের মতো আম পাবলিকরা ভাবছি জাবিতে কি এই ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মতো কোনো ভালো ছাত্র ছাত্রী নেই ?
কিন্তু আনন্দের বিষয় হলো জাবিতে এখনো সমস্ত অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মতো হাজার ছাত্র ছাত্রী আছেন। তার প্রমান হলো কিছুদিন আগে সমস্ত ছাত্র ছাত্রীরা একতাবদ্ধ হয়ে কাধে কাধ মিলিয়ে হাতে হাত রেখে প্রতিবাদ করেছিল ভিসির দির্নীতি এবং ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের সমস্ত অন্যায়ের বিরুধ্যে। এই জন্য তাদেরকে রক্তও দিতে হয়েছিলো। তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি জাবির ভাই বোনেরা তাদের রক্তের বিনিময়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে থাকে । তাই এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। আমাদের আম পাবলিকের চোখে তোলে ধরেছেন তাদের প্রতিবাদের ভাষা। তারা খুজেছেন সেই মেয়েটিকে সাহায্য করার জন্য , কিন্তু তারা কিছুই খুঁজে পাননি । তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য এবং সেই অসহায় মেয়েটির পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করছিল । কিন্তু দুঃখের বিষয় পরে দেখা গেলো জাবির সমস্ত ভাই বোনেরাই ভিকটিম হয়ে গেলো এই ধরনের একটি কাল্পনিক গল্প লিখার কারণে ।
এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে , বাংলাদেশ হলো আমাদের মাতৃভূমি এই মাতৃভূমিকে নিয়ে যদি ভিনদেশের কেও কখনো কটুক্তি করে তাহলে আমাদের ইচ্ছা করে তাদের জিহবা ছিরে ফেলতে। ঠিক জাহাঙ্গীর নগরে যেই সমস্ত ভাই বোনেরা পড়াশুনা করছেন তাদের কাছে তাদের এই বিদ্যাপিঠ হলো সেই মাত্রই ভূমির ভিতরে আরেকটি পবিত্র স্থান । যাকে কিনা সেই মাতৃভূমির পরেই সম্মান করে থাকে জাহাঙ্গীর নগরের ভাই বোনেরা । সেই পবিত্র স্থান কে যারা অপবিত্র করতে চায় তাদের জিহবা টেনে ছিরে ফেলার জন্য উদ্গ্রীভ হয়ে আছে সেই পবিত্র শিক্ষাঙ্গনের ভাই বোনেরা । যারা এই পবিত্র শিক্ষাঙ্গন কে অপবিত্র করতে চায় তাদের জন্ম পরিচয় নিয়ে আমার নিজেরও অনেক সন্দেহ আছে।
এবার আসা যাক ওই লিখাটিতে প্রবলেম কোথায় ছিল। লিখাটি ছিল একটি মিথ্যা বানোয়াট কল্পকাহিনী নিয়ে এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। উদ্দেশ্য প্রণোদিত আমি এই কারণে বললাম, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে রেগিং হয় কিন্তু তাহলে কেন শুধু মাত্র জাবি কে নিয়ে এই ধরনের লিখালিখি ? তাই আমরা ধরে নিতে পারি এখানে জাবি কে নিয়ে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই এই লিখার জন্ম । উদ্দেশ্য প্রণোদিত মনে হবার আরো অনেক কারণ আছে। ওই গল্পের মূল চরিত্রের নায়িকাকে আজও কেও খুঁজে পায়নি । এমন কি জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্র ছাত্রীরা তাকে হারিকেন দিয়েও খুঁজে পায়নি । যেখানে victim এর কোনো অস্তিত্ব নেই সেখানে OFFENDER দেরকে খুজা মানে হলো চিলে কান নিয়ে গেছে এই জন্য কানে হাত না দিয়ে চিলের পিছনে দৌড়ানোর গল্পের মতো ছাড়া আর কিছুই নয়। তাহলে যেখানে এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি সেখানে এই ঘটনা জন্ম দিয়ে লিখার পেছনে কি কোনো কারণ নেই আমরা ধরে নেব ? না,,--- ঘটিত ঘটনার জন্য ওই লিখাটি লিখলে আমার কোনো সমস্যা ছিল না । কিন্তু অঘটিত ঘটনার জন্য যদি কেও এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরী করে তাহলে ধরে নিতে হবে নিশ্চয়ই এখানে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল । আমি জানি না কি উদ্দেশ্য সে এই কাজটি করেছিল। তবে জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্র ছাত্রীরা বিক্ষিপ্ত ভাবে বলেছেন নানান উদ্দেশ্যের কথা। তবে এর মধ্যে আমার কাছে মনে হয়েছে হয়ত কেও একজন জাহাঙ্গীর নগরে ভর্তির সুযোগ পায়নি সেই ক্ষোভে সে কাওকে দিয়ে এই লিখাটি লিখিয়েছেন। অথবা জাহাঙ্গীর নগরের কোন ছাত্রছাত্রীর সাথে তার কোন ক্ষোভ ছিল তাই সে প্রতিশোধ নিতে এই কাজটি করাতে পারে। আবার এমনও হতে পারে সে নিজেকে হিট বানাবার জন্য এইরকম একটি ভিত্তিহীন কল্পকাহিনীকে পুজি করে ব্লগ জগতে সবার সামনে আসতে চেয়েছেন । এইগুলো হতেও পারে আবার নাও হতে পারে তবে এটা ঠিক, কোনো না কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই সে লিখেছিল এই ভিত্তিহীন লিখাটি ।
যিনি প্রথমে লিখাটি লিখলেন তার কিছু কমেন্ট আমি দেখেছি ফেইসবুকে এবং ব্লগে । তিনি বলেছেন তাকে নাকি ফোন করে মেয়েটি বলেছিল সেই ঘটনার কথা কিন্তু সে নাকি এখন এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি না । তাহলে আমি ধরে নিচ্ছি আপনি হয়তো মেয়েটিকে সাহায্য করতে গিয়ে লিখাটি লিখেছেন । যেহেতো সে এখন কথা বলতে রাজি না, তাহলে এই ঘটনার কোন অস্তিত্ব পাওয়া সম্ভব না । আর যদি ঘটনার অস্তিত্ব পাওয়া না যায় তাহলে আপনি অপরাধী । কারণ আপনার জন্য ঐতিয্যবাহী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে । যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন সেলিম আলদিন স্যারের মতো একজন নাট্যকার। যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা নিজের রক্তের বিনিময়ে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসী এবং দুর্নীতিবাজ ভিসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে । শফিকুর রহমান শান্তনু ভাইয়ের মতো গুনি নাট্যকার যেই ভার্সিটিতে জন্ম নেয়। সেই ভার্সিটির প্রিয় প্রাঙ্গনে কালিমা লেপন করেছেন আপনি । আপনার কি মনে হয় না যে একবার হলেও তাদের কাছে আপনার ক্ষমা চাওয়া উচিত? ভাই কেও যদি কখনো কারো কাছে ক্ষমা চায় তাহলে সে কোনো দিন ছোট হয়ে যায় না । তাই আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলব আমি , আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনি নিজেও কারো কাছ থেকে ভুল তথ্য পেয়ে এই ধরনের একটি জঘন্য কাজ করেছেন । তাহলে দয়া করে আবার আরেকটি লিখার মাধ্যমে জাবির বন্ধুদের কাছে ক্ষমা চান । এবং সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে দিন আপনার ওই লিখাটি ছিল অসত্য । এর জন্য আপনি নিজেও দায়ী নন । তাহলে হয়তো জাবির ছাত্র ছাত্রীদের দিকে কেও কখনো আড় চোখে তাকাবে না আর । জাবিতে তাদের মেয়েকে ভর্তি করতেও হয়তো ভয় পাবেনা বাবা মাগণ। প্রয়াত সেলিম আলদিন স্যারের প্রতিষ্ঠানের কালিমা মুছে যেতে পারে আপনার একটি ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে ।
জাবির এই কালিমা লেপনের পেছনে একটু হলেও আমি নিজে দায়ী । কারণ আমি নিজেও ওই অসত্য লিখাটিকে আমার ওয়ালে শেয়ার করেছিলাম। আর সেই জন্য আমি জাবির ভাই বোনদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। আসা করব জাবির ছাত্র ছাত্রীরা আমাকে ক্ষমা করবেন।
আমার খুব কাছের একজন ছোট ভাই জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরে ফাইনাল ইয়ারে । তার সাথে গতকাল কথা হচ্ছিল আমার ফোনে। সে আমাকে বেখ্যা করছিল তাদের পরিস্থিতির কথা তাদের ক্ষোভের কথা। তখনি মনে মনে ভাবলাম কোনো কিছু না জেনে না শুনে এই ধরনের একটি লিখা শেয়ার করাটা আমার মোটেও ঠিক হয় নি। এর জন্য আমি একটু হলেও দায়ী । সেই দায় বদ্ধতা থেকেই আজকে এই লেখাটি লিখলাম। জানিনা এতে করে হাসনাতরা কতটুকো উপকৃত হবে । তবে নিজের মনকে সান্তনা দিতে পারব এই জন্য যে যারা আমার ভুল শেয়ারের কারণে ভুল তথ্য জেনেছিলেন আজকে তাদেরকে সঠিক তথ্য জানিয়ে দিলাম ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৪