১৯. জাতিশ্বর বলেছেন: ‘'অফিসারদের বউদের গা_ভরা গয়নাগাটি। প্রতি বউ সমান মিনিমাম ৪০/৫০ ভরি’.'
তথ্যটি কোন জরিপে পাওয়া জানাননি. কয়জন সেনা-অফিসারের বউয়ের গয়নাগাটির খোঁজ নিয়েছেন তাও জানাননি. এই তথ্য তার বিষ-কল্পনার বিষ-আবিস্কার বলেই প্রতীয়মান. বাস্তবতা হল, সেনা-অফিসার ও তাদের পত্নীরা সাধারণত মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছেন. তাদের গয়নাগাটিতে সেইসব পরিবারের (পরিবারগুলো সিভিলিয়ান) প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে. আর সেনা-অফিসাররা ২০-২১ বৎসর বয়স থেকে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসাবে বেতন-ভাতা পান, জাতিসঙ্ঘ মিশনে ন্যূনতম এক বছর ৭০ থেকে ২৫০ ডলার পর্যন্ত দৈনিক ভাতা পান -– তার পক্ষে প্রিয় স্ত্রীকে শতভাগ হলাল রুজি দিয়ে ২-১০ ভরি গয়না কিনে দেয়া কোন অপরাধ নয়.
২০. জাতিশ্বর বলেছেন: ‘'৯০% মেজর রাতে এমবিএ পড়ে,কারণ মে.জে. হতে না পারলে চাকরি ছেড়ে কোন কর্পোরেশনের প্রধান হয়ে সম্রাট আকবরের মত জীবন যাপন’.'
জ্ঞানার্জনও যখন আক্রমণের শিকার হয়, তখন আমার কাছে মানসিক বৈকল্যই চোখে পড়ে. যোগ্যতা বৃদ্ধিতে অন্যায় কোথায় আমার বোধগম্য হয় না. আর কর্পোরেশনের প্রধান যদি হয় সেখানেও অন্যায় কোথায়? অবসরপ্রাপ্ত সেনা-অফিসার একজন বেসামরিক নাগরিক, প্রতিযোগীতামূলক যোগ্যতাবলে তার যে কোন পদে অধিষ্ঠানের আইনগত ও নৈতিক নাগরিক অধিকার রয়েছে, কেউ তা কেড়ে নিতে পারে না. আর হ্যা, ষড়যন্ত্রী বিডিআর জওয়ানেরা লিফলেট ছাপিয়ে লিখেছিল ‘'অর্ধ-শিক্ষিত সেনা-অফিসার’' আর জনাব জাতিশ্বর বলছেন ‘'৯০% মেজর রাতে এমবিএ পড়ে'’ - কোনটা সত্য? সেনা-অফিসাররা কী করবে? শিক্ষিত হয়ে বিডিআর জওয়ানদের তাচ্ছিল্য থেকে মুক্তি পাবে, না কি শিক্ষিত না হয়ে, এমবিএ না পড়ে জাতিশ্বরদের ক্ষোভ থেকে বাঁচবে?
... সম্রাট আকবরের মত জীবন যাপন ... সম্রাট আকবর সর্বশ্রেষ্ট মোগল সম্রাট ছিলেন. তার জ্ঞান, মেধা, মনন, দক্ষতা, কৌশল, কর্ম-তৎপরতা, মহানুভবতা – এসবও দেখা প্রয়োজন; একচক্ষু হয়ে শুধু তার বিলাসী জীবনযাপনটাই দেখলে সমস্যাটা যে প্রথমত নিজের, অন্তর্দৃষ্টির উন্মীলনের জন্য সেটা বুঝা খুব প্রয়োজন.
২১. * জ্বিনের বাদশা বলেছেন, 'রেবেল হান্টের নাম করে সেনাবাহিনী যাকে পাবে তাকেই ধরে নেবে'. আর শূন্য আরণ্যক হা হা করে উঠেছেন, ‘'আপনে তো জাপানে বইসা বাইচা যাইবেন ~~~ আতংকে আমার হাত পা ..’'. তো রেবেল হান্টের পাচ মাস হতে চলল, যাকে তাকে ধরে নেয়া হয়নি, আর শূন্য আরণ্যকের আশঙ্কাও প্রমাণিত হয়নি. কিন্তু একটা সত্য প্রকাশ পেয়েছে, জ্বিনের বাদশা ও শূন্য আরণ্যক -– দুজনই গোয়েবলসীয় এক্সপার্ট!
* জ্বিনের বাদশা আরও বলেছেন, ‘একটা দেশের নানান সংস্থায় যখন মাথা হিসেবে একটা করে সেনা অফিসার জুড়ে দেয়া হয়, তখন সেই দেশের যে রোগটা ধরা পড়ে তারে বলে, "বানানা রিপাবলিক সিন্ড্রোম" ...’. জনাব শূন্য তার মোক্ষম অনুবাদও করে ফেলেছেন, ‘বেগুন রিপাবলিক’.
জ্বিনের দেশের অমন সংগা আমি আমি কোথাও খুঁজে পাইনি. তবে, বানানা রিপাবলিক হল যেসব দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ভঙ্গুর এবং অর্থনীতি বিদেশি কোম্পানি দ্বারা প্রভাবিত ও একটি মাত্র রফতানি-পণ্য নির্ভর, তারা. এই সংগায় বাংলাদেশও বানানা রিপাবলিক বৈকি! কিন্তু এখানে সেনাসদস্যের সংস্থা প্রধান হওয়ার সম্পর্ক কোথায়? বানানা রিপাবলিক হওয়ার দায় দেশের রাজনীতিক, বেসামরিক আমলা, উকিল-এডভোকেট-ব্যারিস্টার, বিচারক, পুলিস, শিক্ষক, ছাত্র, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বুদ্ধিজীবি, কৃষক, জেলে, ভিক্ষুক তথা আপামর জনসাধারণের -– সেনাবাহিনীর একলার নয়. জাতি হিসাবে আমাদের নিজের দায়িত্বটুকু নিতে হবে, নিজের দায় অন্যের কাধে ঠেলে দিয়ে ইর্ষাকাতর দোষারোপের অর্থ হল, কাজটি অসম্পন্ন রেখে দেয়া. পরশ্রীকাতরতা মানুষের জীবনীশক্তি ক্ষয়ে ফেলে -– চূড়ান্ত বিচারে এই ক্ষতি দেশের.