বক্তব্য সত্য হলে শত শত অবসরপ্রাপ্ত সেনা-অফিসার সবাই কর্পোরেট প্রধান হওয়ার কথা. সবাই যখন তা হয়নি, জনাব শূন্যের '‘গ্যারান্টি’' কিছুতেই ‘'নিশ্চিত'’ নয়, বোঝাই যাচ্ছে. ৩৫-৪৫ বৎসরে অবসর নেয়া একজনের আরও ১০-২০ বছর চাকুরি করার আইনগত ও মানবিক অধিকার কেউ হরণ করতে পারে না. বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা-অফিসাররা সেখানে উঁচু পদগুলোতেই আছেন, একান্তই নিজেদের যোগ্যতায়, যে যোগ্যতার ভিত সেনাবাহিনী গড়ে দিয়েছে. তেমন একজন নিজ যোগ্যতাবলে কর্পোরেট প্রধান হলে ঈর্ষাকাতর না হয়ে তার যোগ্যতার প্রসংশা করা উচিত, এতে মানুষ হিসাবে নিজের মর্যাদা বাড়ে.
১৫. * শূন্য আরণ্যকের তালিকা: '‘সিডরের পর বিদেশী সাহায্য কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাট’'.
সাহায্য লুটপাটের ঘটনা এ দেশে পুরনো, সংবাদপত্রে, মিডিয়ায় এর নানান বর্ণনা, শিরোনাম থাকে. সিডরের সাহায্য সেনাবাহিনী কর্তৃক লুটপাটের কোন অভিযোগের খবর আমাদের করিৎকর্মা মিডিয়া এখন পর্যন্ত করতে পেরেছে বলে আমার জানা নাই, কারও জানা থাকলে দয়া করে লিন্ক দিন. আমিতো জানি, এটা লুটেরা রাজনীতিক আর বেসামরিক আমলাদের অভিযোগ, যারা লুটপাট করতে পারেননি বলে সেনাবাহিনীর উপর খাপ্যা. তাদের অভিযোগের প্রতিধ্বনির সাথে সাথে প্রমাণটাও হাজির করুন. তখন সকল সাধারণ নাগরিকের মত দূর্নীতির বিচার ও দোষীদের শাস্তি আমিও চাইব. আমি বিশ্বাস করি, সকল সেনাসদস্যও চাইবে.
১৬. * শূন্য আরণ্যকের তালিকা: ‘'আদিবাসীদের উপরে ৭১ স্টাইলে বছরের পর বছর নির্যাতন’.'
চলেশ রিসিলের খবর জানি, আর কোন আদিবাসী নির্যাতনের ঘটনা? আমার জানা নাই, কারও জানা থাকলে দয়া করে লিন্ক দিন. চলেশের বিষয়টি বিতর্কমুক্ত নয়. চলুন, প্রমাণ দিই-
প্রথম ছবিটি দৃষ্টিপাত ব্লগ থেকে নেয়া - পাচ সন্তানের জনক পঞ্চাশোর্ধ চলেশকে কি সরু কোমর যুবক মনে হচ্ছে? না. এবার সামহোয়্যারের ব্লগার টোনাটুনির দেয়া দ্বিতীয় ছবিটি দেখুন - এটি নির্যাতনের চিহ্ণ যুক্ত এক সরু কোমর যুবকের. এবার তৃতীয় ছবিটি দেখুন, মুক্তমনা ব্লগ থেকে নেয়া - মৃত চলেশের কাঁধের ঠিক নিচে বাম হাতে নির্যাতনের কালো চিহ্ণ. এবার দ্বিতীয় ছবিতে ফিরে যান এবং চলেশের বাম হাতের ঐ কালো চিহ্ণটি খুঁজুন - অন্য নির্যাতনের চিহ্ণ আছে কিন্তু হাতের কালো চিহ্ণটি নাই. এটা কীভাবে গায়েব হল? কীভাবে সম্ভব? উত্তর একটাই - ডিজিটাল ফটো এডিটিং. এটুকু প্রমাণের পর তথাকথিত মানবতাবাদীদের উদ্দেশ্য মহত্ নয়, বলাই বাহুল্য.
আমার ধারণা, জনাব শূন্য আদিবাসীদের পার্বত্য উপজাতিদের সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন. পার্বত্য এলাকায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের ফলেই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠিগুলো সরকারের সাথে চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে. দেশ ও সার্বভৌমত্বের জন্য তাদের আত্মত্যাগের প্রতিদানে তারা ভৎর্সনা পেতে পারে না. শান্তিবাহিনীই প্রথম নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল, নির্যাতনের শুরুটা তাদেরই. তাদের নির্যাতনের কাহিনীগুলো জানুন. এক কল্পনা চাকমার গল্প তারা (শূন্য, টোনাটুনি, মানবাধিকার গোষ্ঠি) খুব জানেন (অনেকগুলো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান অকুস্থলে এটিকে মিথ্যা কাহিনী বলে মতামত দিয়েছিল, এর একটি প্রমাণ মনে আছে - কল্পনা চাকমার পাঠ্য বইখাতা তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি. অপহরণকারীরা নিশ্চই সাথে করে বইখাতাও অপহরণ করে নিয়ে যায় না!) অথচ শান্তিচুক্তির অব্যবহিত পূর্বে রাঙামাটিতে ৩৩ জন কাঠুরিয়াকে কুপিয়ে হত্যা ও লাশ বিকৃতির ঘটনা জানেন না. পাশের দেশে অসম, মনিপুরে কী হচ্ছে? সেখানে হত্যা, নির্যাতন, যৌন-নিপীড়ন বিষয়ে জানুন এবং আমাদের সেনাবাহিনীর সাথে তুলনা করুন. বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৩৫ বছর ধরে সেখানে মোতায়েন আছে, ৩৫টি নির্যাতনের (সত্য) তথ্যও তারা দিতে পারবেন না. সেখানে অর্ধাঅর্ধি বাঙ্গালির বসবাস, ধরে নিচ্ছি তারা সবাই নিষ্কলুশ, সব দোষ সেনাবাহিনীর - তারপরেও প্রমাণ দিক কয়টি পাহাড়ি মহিলার গর্ভে বাঙ্গালির ঔরসজাত সন্তান জন্মেছে! যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য দোষী ব্যক্তিদের সাজা হয়েছে, এটা সেনাবাহিনী বলেই সম্ভব হয়েছে. পাশাপাশি, অসংখ্য সরকারি/বেসরকারি ব্যক্তি সেখানে চাকুরি, ব্যবসা করেন - না, একজনেরও শাস্তি হয়নি, অন্তত আমি শুনিনি. বস্তুত, সেনাবাহিনীর মূল যুদ্ধকৌশল ছিল - pacification বা শান্তকরণ কর্মসূচি. এই কৌশলের ফলে শান্তিবাহিনী জনবিচ্ছিন্ন হয়ে শান্তিচুক্তিতে বাধ্য হয়. আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনীর জাতিসঙ্ঘ মিশনে এত সুনামের কারণও এটাই, দেশে এই প্যাসিফিকেশনের হাতেকলমে অভিজ্ঞতার যথার্থ ব্যবহারের সুফল. সে জন্যই সিয়েরালিওনের জনগণ মিছিল করে জতিসঙ্ঘের প্রতিনিধির কাছে স্মারকলিপি দেয় যেন সর্বশেষ প্রত্যাহারকারী দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে রাখা হয়, নিজ মহাদেশীয় নাইজেরিয়ার পরিবর্তে. সে জন্যই লাইবেরিয়ায় বিদ্রোহী লার্ড ও মডেল বাহিনী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিজ অধিকারভূক্ত এলাকায় মোতায়েনের জন্য মিশন-প্রধানের সাথে দর কষাকষি করে. পাশাপাশি থেকে নাইজেরীয় কনটিনজেন্ট দেশে ফেরার পর যখন ১১ শতাংশের মধ্যে এইচআইভি ভাইরাস পাওয়া যায় এবং বাংলাদেশি কনটিনজেন্টের একজনের মধ্যেও পাওয়া যায় না, তখন দেশবাসীর এই শৃঙ্খলার দৃষ্টান্ত নিয়ে গর্ব করা উচিত আর মেলানো উচিত যে, এমন শৃঙ্খলার মান দেশে ছিল বলেই বিদেশের মাটিতে তা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে. জনাব শূন্যরা কখনও নারী নির্যাতনের তথ্য-উপাথ্য নিয়ে গবেষণা করলে (মনের মাধুরি মেশানো ঘৃণা-গল্প নয়) শান্তিবাহিনীর হাতে নির্যাতনের তথ্যও খুঁজে দেখবেন আশা করি.
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৪