somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেনাবিদ্বেষ : আত্মপক্ষ সমর্থন-৭

১১ ই জুলাই, ২০০৯ সকাল ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১০. * শূন্য আরণ্যকের তালিকা: ‘'২০০৯ বিডিআর বিদ্রোহ (বন্চনার অভিযোগ)’'.

বিদ্রোহটি যে রাজনীতিকদের আস্কারায় বিডিআর জওয়ানদের ষড়যন্ত্রের ফসল, তা তো বিভিন্ন তদন্তেই বেড়িয়ে এসেছে. ষড়যন্ত্রীদের কাছে আবেদন সৃষ্টিকারী বঞ্চনার গল্পের প্রয়োজন ছিল, যা তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃনা ছড়াবে - আর তা কিছু সত্য, কিছু অতিরঞ্জিত ও অনেকটুকু মিথ্যার বেসাতি দিয়ে তৈরি - এই বিষয়টি এখন স্পষ্ট. অভিযোগ আর সত্যতা এক নয়. বাস্তবতা হল, ২০০০ সালের পর থেকে বিডিআর ব্যাটালিয়নগুলোতে দুইজনের স্থলে চারজন সেনা-অফিসার করা হয় এবং তৎকালিন প্রচলন ভেঙ্গে অনেক উঁচু পেশাগত মানসম্পন্ন অফিসার বদলি করা হয়. এতে আভ্যন্তরীণ নজরদারির কারণে সীমান্তে চোরাচালানের সহযোগীতার মাধ্যমে অবৈধ অর্থোপার্জনের সুযোগ কমে যায় –- এটি ক্ষোভের প্রধানতম কারণ. তবে, ষড়যন্ত্র করার মত কিছু অনিয়ম ছিল, এটাও সত্য.

তারা সেনা-অফিসার না চেয়ে নিজেদের অফিসার চেয়েছে – কিন্তু, প্রতিরক্ষার প্রথম ব্যূহ হিসাবে বিডিআর-এর অন্যতম দায়িত্বের জন্যই এ বিধান যাতে যুদ্ধকালীন সেনাবাহিনীর সাথে ইন্টিগ্রেশন সহজ হয়. বিডিআর-এর নিজস্ব অফিসাররা ভিনদেশ থেকেও আসবে না. বস্তুত, কোন অফিস বা প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের প্রতি কর্মচারিদের কিছু ন্যায্য ও কিছু অন্যায্য ক্ষোভ থাকে না? বিডিআর-এও হাবিলদারের উপর সিপাহি থেকে নায়েকদের কিংবা, জেসিওদের উপর হাবিলদার থেকে সিপাহির ক্ষোভের অনেক ঘটনা/কারণ পাওয়া যাবে. বিডিআর-এ, মনে করি, যুদ্ধকালীন বিবেচনা বাদ দিয়ে বিসিএস অফিসার নিয়োগ দেয়া হল, তাদের উপর ক্ষোভ থাকবেনা, সে নিশ্চয়তা কই পাওয়া যাবে? আনসারে বিসিএস অফিসার আছেন, তাদের উপর সাধারণ আনসারদের ক্ষোভ নাই? প্রকৃতপক্ষে, কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের চাওয়া কর্মচারিদের চাওয়া-পাওয়ার চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ভিন্ন হয়. কারণ, কর্মকর্তাদের চাওয়া হয় প্রতিষ্ঠানের লক্ষ অর্জনের দিকে ধাবিত, অন্যদিকে কর্মচারিদের চাওয়া হয় ব্যক্তিগত সুযোগসুবিধার দিকে –- এই সাংঘর্ষিক অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় উভয়ের মাঝে ঘনিষ্ট সংস্রব ও সকলের বৃহত্তর কল্যাণের বিষয়ে নিয়মিত মোটিভেশন. বস্তুত, একজন সেনা-অফিসার তার কমিশন-উত্তর চাকুরির প্রথম দিন থেকে যে সবক পান তা হল –- সৈনিকদের ছুটি, রুটি (খাওয়াদাওয়া অর্থে) ও ওয়েলফেয়ার নিশ্চিত করা. বিরল ব্যতিক্রম ব্যতিত তাদের পক্ষে বিডিআর সদস্যদের সাথে কথিত দূর্ব্যবহারের অভিযোগ সাধারণভাবে সত্য হতে পারে না. কিন্তু তার পক্ষে একজন রাজনৈতিক নেতা, একজন ফোরম্যান বা একজন ম্যানাজারের মত আচরণ করা সম্ভব নয়, এটাই সামরিক শিক্ষা, এটাই মিলিটারি লিডারশিপ. শান্তিকালীন সেনাবাহিনীর প্রধানতম কাজ প্রশিক্ষণ বা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া. যুদ্ধ এক ভয়াবহ বাস্তবতা - সেই জীবনমৃত্যুর লড়াইয়ে নিরন্কুশ আনুগত্যের অপরিহর্যতা এবং সেই সাথে শান্তিকালীন সময়ে তার চর্চার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য (Small Unit Leadership –- A Commonsense Approach, লেখক Col Dandridge M Malone, USA (Ret), প্রকাশক Presidio Press). একজন সেনা-অফিসার কর্তৃক অধীনস্থের প্রতি তার আচরণের মর্মার্থ না জেনে তা অভিযোগ হিসাবে আমলে নেয়া উচিত কিনা তা ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি.

জাতিসংঘ মিশনে বিডিআর কেন নেয়া হয় না, এ জন্যও দোষ সেনা-অফিসারদের! শান্তিরক্ষার জন্য জাতিসংঘ সামরিক বাহিনী চায়, আধা-সামরিক বাহিনী নয়. একইভাবে, জাতিসংঘের চাহিদা অনুযায়ীই পুলিসিং কর্মকান্ডের জন্য পুলিস শান্তিরক্ষায় যায়, সেনা-অফিসারদের সেখানে নাক গলানোর সুযোগ নাই.

বিদ্রোহীদের অন্যতম অভিয়োগ অপারেশন ডালভাত নিয়ে. এ বিষয়ে সেনা তদন্ত কমিটি সত্যতা পেয়েছে বলে পত্রিকান্তরে জানা গেছে, অবশ্য বিস্তারিত আসেনি (সেই জেনারেল শাকিল আর কর্নেল মুজিবুল হক আর নাই, তাদের আত্মপক্ষ নেয়ারও সুযোগ নাই).

প্রথমত, এই অপারেশন বিডিআর স্বউদ্যোগে করেনি, মূল্যবৃদ্ধিতে ব্যর্থ সরকার কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া হয়েছে –- এটা সরকারের ভুল.

দ্বিতীয়ত, এই কাজটি কিছুতেই বিডিআর-এর দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে না, এই বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণও নাই, তারপরেও এমন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে –- এটাও সরকারের ভুল.

তৃতীয়ত, বিডিআর অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ন্যূনতম লাভের মার্জিন রেখে পণ্য বিক্রয় করেছে, কোন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়. এমতাবস্থায়, অপারেশন ডালভাতের কোটিকোটি টাকা লুটপাটের অভিয়োগ সত্য হতে পারে না.

চতুর্থত, পণ্য ক্রয়ে অনিয়ম ও সদস্যদের ভাতা পরিশোধে বিলম্বের কথা জানা গেছে. এ ব্যপারে দোষীদের বক্তব্য না শুনেও সাধারণভাবে বলা যায়, এই অপারেশনে গুটিকয়েক অফিসার জড়িত ছিলেন এবং জড়িতের সবাই অনিয়মে জড়িত ছিলেন না. কতিপয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের জন্য সকল অফিসার দায়ী হতে পারেন না, হলেও এমন করুণ মৃত্যু কাম্য হতে পারে না.
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০০৯ সকাল ৮:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×