এই ব্লগে অনেক দিন লগইন করা হয় না . ঢুকে বিডিআর ঘটনাকালীন রাগইমনের 'সবুজ সততা দেখানো শুরু হয়ে গেছে , আসল সত্য কি ?’ লেখাটি পড়া হল. আমি সততা বুঝি, সবুজ সততা বুঝি না, এর কোন সাহিত্যিক অর্থ থেকে থাকবে হয়ত ! তিনি লিখেছেন, '‘গল্প বদলে গেছে অনেকের . পিলখানা থেকে বেড়িয়ে আসা মাত্রই সকল নারী ও শিশুকে মিডিয়ার সাথে কথা বলতে দেয়া উচিত ছিল ... গেট থেকে বেড়িয়ে সকলে একবাক্যে স্বীকার করেছেন, কোন নারী ও শিশুকে শারীরিকভাবে অত্যাচার করা হয়নি’'.
প্রথমত, সেখানে সকল মিডিয়া উপস্থিত ছিল, কেউ তাদের আটকায়নি .
দ্বিতীয়ত, শারীরিকভাবে অত্যাচার করা না-করার কোন প্রশ্ন করা হয়নি, করা হয়েছিল- তাদের সাথে ‘ভাল ব্যবহার’ করা হয়েছিল কিনা বিষয়ে .
তৃতীয়ত, সকলে একবাক্যে স্বীকার করেননি, সকলকে প্রশ্নও করা হয়নি, শধু প্রশ্নকৃতদের কেউ কেউ স্বীকার করেছিলেন . [এখানে আমি ঐ সময়ে এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার জন্য কতিপয় অসংবেদনশীল, নির্বোধ টিভি রিপোর্টারের কান্ডজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলছি].
নরক থেকে বেড়িয়ে ট্রমা-আক্রান্ত নারী ও শিশুরা তদের ঘনিষ্টজনদের খোঁজ নেবার, নিজে বেঁচে যাওয়ার ঘোর ও স্বজন হারানোর বিহ্বলতা কাটানোর এতটুকু অবকাশ পাবে না, যা যা সত্য তখনি মিডিয়ায় বলে যেতে হবে, পরে বানিয়ে গল্প বলবেন তা হবে না - – এমন দাবি মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন কারও হতে পারে ভাবতে কষ্ট হয় . ঐ সময় কারও পক্ষে এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে বক্তব্য দেয়া সম্ভব নয়, মিডিয়ায়তো নয়ই . আমি জানিনা তিনি সচেতন নাকি অসচেতভাবে বিডিআর অপরাধীদের ইমডেমনিটি দেয়ার প্রচারণায় নেমেছেন .
নারী ও শিশুরা মিডিয়ায় তখন যেমন কিছু বলেনি, এখনও না . বললে বা বলাতে পারলে কারও হয়তো স্যাডিস্টিক সুখবোধ হতো, কিন্তু বাস্তবে সে বলা আমাদের রক্ষণশীল সমাজে বর্তমান অবস্থায় সম্ভব হবে না . তিনি অতি-প্রগতিবাদী হতে পারেন, সবাই নন, সে জন্য তারা অপরাধীও নন . তারা সামাজিক ট্যাবু মেনে চলেন . তারা হয়ত একান্তে স্বামীকে বলবেন, হয়ত মা-বোন-ভাবিকে এবং নিরালে কাঁদবেন . অথবা হয়ত বলবেনই না . হয়ত মানসিক ভারসাম্য হারাবেন, অকারণে আৎকে উঠবেন . বিষয়টি নিয়ে একবার সাধারণ মানুষের অনুভূতি নিয়ে ভাবলেই যথেষ্ট হয়, মানবতাবাদীর তকমা প্রয়োজন নেই !
রাগইমন বলেছেন, '‘যুক্তি এবং অভিজ্ঞতা বলে, এই রকম হওয়ার কথাও না'
তার ‘'যুক্তি'’ বুঝলাম, '‘অভিজ্ঞতা’' বুঝা হল না . সে অভিজ্ঞতা ভিকটিমের, ক্রিমিনালের, নাকি তৃতীয় পক্ষের ? অভিজ্ঞতা শেয়ার করলে আমাদের পক্ষে সে অভিজ্ঞতার আলোকে বিষয়টিকে হয়ত তার মত করে বুঝা সহজ হত . সে অভিজ্ঞতার দোহাই দিয়ে একটা স্পর্শকাতর বিষয় সামনে এনে কয়েক ঘন্টার মধ্যে বক্তব্য ফিরিয়ে নিলেন, কিন্তু নারী ও শিশুদের কাছে ক্ষমা চাইলেন না . তাহলে ততক্ষণ গলাবাজি করলেন কেন ? কী মতলব তার ? ধর্ষণ-তত্ত্ব প্রচার করা ? কই, মিডিয়াতে তো কেউ এখনও বলেনি যে তিনি ধর্ষিত হয়েছেন !
জনৈকের পোস্টের জবাব দিতে গিয়ে রাগইমন বলেছেন, ‘'কিছুক্ষন আগে নিজের কাজিনের কথা জেনেছি । আর শেষ পর্যন্ত কিছু আই উইটনেস পেয়েছি । …আমি নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নিচ্ছি ,ধর্ষন ঘটেছে । আমার আগের সকল বক্তব্য ফিরিয়ে নিলাম’ ।'
২৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনা, ধর্ষণ-তত্ত্ব ছড়ালেন ২৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে, আর কাজিন ও কজন আই-উইটনেস পেয়েছেন ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে দশটায় ! সেই কাজিন আর কজন আই-উইটনেসদের বিদ্রোহী বিডিআর সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা আমার কাছে প্রবল হয়ে দেখা দিচ্ছে . নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে সহযোগী ছাড়া আর কারও চাক্ষুষ করার যুক্তগ্রাহ্য কারণ নাই . তিনি নিজে প্রতিরক্ষাবাহিনীতে জন্মেছেন বলে দাবি করেছেন,– সে জন্ম বিডিআর ঘটনার ভিকটিম নাকি বিদ্রোহী পক্ষে ? তার কাজিন আর আই-উইটনেসরা কোন পক্ষে ?
রাগইমনকে বলছি, পক্ষ পরিস্কার করেই বক্তব্য দেয়া উচিত . নিজের পক্ষ পরিস্কার করে আত্মপক্ষ নিন, সৎ সাহসের পরিচয় দিন . বর্ণচোরা নিরপেক্ষ আর ভন্ড মানবতাবাদী সেজে বিজ্ঞের মত বক্তব্য রাখা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সামিল . অনুরোধ, বিবেক ও চেতনার কাছে দায়বদ্ধ হোন . আপনার বোধদয় কামনা করি .
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:০৩