শ্রম উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। এটি পৃথিবীর সব দেশেই অর্থনৈতিক উন্নয়নে অন্যতম চালিকা শক্তির কাজ করে। জাতীয় আয়ের সর্ববৃহৎ অংশ শ্রমের। শ্রমের ফসল হচ্ছে পূঁজি। শ্রম যদি প্রথমে না আসত তবে পূঁজির জন্মই হতো না। গোটা দুনিয়া এখন দুভাগে বিভক্ত। একটি হচ্ছে যাদের আছে (i) Haves (capitalists, landlords, etc) অন্যটি হচ্ছে যাদেও নেই (ii) Have-nots(laborers, workers, peasants, etc) ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরের ‘হে' মার্কেটে অধিকার বঞ্চিত শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজসহ বিভিন্ন দাবিতে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরু করে। বিক্ষোভ সমাবেশে নিরীহ শ্রমিকদের ওপর গুলী চালায় পুলিশ। নিহত হন অনেক শ্রমিক। শ্রমজীবী মানুষের আপসহীন মনোভাব ও আত্মত্যাগের ফলে মালিক পক্ষ শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী, ৮ ঘণ্টা কাজের স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। ১ মে শ্রমিক আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয়। কিন্তু মে দিবস ছুটির দিন ঘোষণা হয়েছে বটে, যারা দিন আনে াদন খায় তাদেরকে ঐদিনও রুটি রুিজর কথা ভাবতে হয়। আসলে সামগ্রীক ব্যবস্থায় পরিবর্তণ জরুরী।
পৃথিবীতে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম বা আদর্শ নেই যা শ্রমিক, গরীব বা শোষিত শ্রেনীর অধিকারের সুরক্ষা দিয়েছে। ইসলাম শুধু শ্রমের নয় পুঁজিরও সুরক্ষা দিয়েছে। ইসলামের নীতিপথ বাস্তবায়নে শোষক-শোষিত শ্রেণী গড়ে উঠে না। জীবিকার জন্য সব ধরণের কাজ যেখানে অবিচার নেই তাকেই ইসলাম সম্মান করেছে। শ্রমের মাধ্যমে উপার্জন শুধু দায়িত্বই নয় ইবাদতও বটে।
ইসলামে শ্রম:
১. একজন ইমানদার তার প্রয়োজন পূরণের জন্য বৈধ কারন ছাড়া কাজ থেকে দূরে থাকতে পারেন না। ইসলামে শ্রমের মর্যাদা অত্যধিক। শ্রম দ্বারা অর্জিত খাদ্যকে ইসলাম সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এবং জীবিকা অন্বেষণকে উত্তম ইবাদত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, "ফরজ ইবাদতের পর হালাল রুজি অর্জন করা একটি ফরজ ইবাদত।" (বায়হাকী) এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে এরশাদ করেছেন, "তিনি তোমাদের জন্য ভূমি সুগম করে দিয়েছেন। কাজেই তোমরা এর দিক-দিগন্তে বিচরণ কর এবং তার দেয়া রিযিক থেকে আহার কর।" (সূরা: মুলক, আয়াত-১৫) মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ন কর। বিশ্ব নবী (দ) শ্রমের মর্যাদা ও মুল্যায়ন করতে গিয়ে অনেক সময়ই বলতেন- ‘তোমরা কেউ দড়ি নিয়ে পাহাড়ের দিকে চলে যাবে, লাকড়ি জমা করে পিঠে বোঝা বয়ে এনে তা বাজারে বিক্রি করবে, এমনি ভাবে আল্লাহ তার প্রয়োজন মিটিয়ে দিবেন। দ্বারে দ্বারে ভিা করে করুনা ও লাঞ্চনা পাওয়ার চেয়ে এ অনেক ভাল’।
২. ইসলামে কোন কাজই ছোট নয়। কোন কাজের উপর অন্য কাজ বা পেশার শ্রেষ্ঠতাব নেই। মুচি জুতা সেলাই করেন, নাপিত চুল কাটেন, দর্জি কাপড় সেলাই করেন, ধোপা কাপড় পরিষ্কার করেন, জেলে মাছ ধরেন, ফেরিওয়ালা জিনিসপত্র বিক্রি করেন, তাঁতী কাপড় বুনেন, কুমার পাতিল বানান, নৌকার মাঝি মানুষ পারাপার করেন। এসব কাজ এতই জরুরি যে, কাউকে না কাউকে অবশ্যই কাজগুলো করতে হবে। কেউ যদি এসব কাজ করতে এগিয়ে না আসতেন, তা হলে মানবজীবন অচল হয়ে পড়ত। কোনো কাজই নগণ্য নয় এবং যারা এসব কাজ করেন, তারাও হীন বা ঘৃণ্য নন। “তারা কি তোমার রবের রহমত ভাগ-বণ্টন করে? আমিই দুনিয়ার জীবনে তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করে দেই এবং তাদের একজনকে অপর জনের উপর মর্যাদায় উন্নীত করি যাতে একে অপরকে অধিনস্থ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। আর তারা যা সঞ্চয় করে তোমার রবের রহমত তা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট।” (আজ-জুখরুফ, ৪৩.৩২) নিজের কাজে কে কত বিশুদ্ধ তার উপর তার শ্রেষ্ঠত্ব।
৩. উপার্জনের ব্যাপারে কোন সীমানা নেই। তবে অবশ্যই তা শরীয়তের অনুমোদিত পন্থায় হতে হবে। সংসারের ভরণপোষণের জন্য হালাল উপায়ে উপার্জনকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের সঙ্গে তুলনা করেছে এবং শ্রমিককে 'আল্লাহর পথের মুজাহিদ' বলে উল্লেখ করেছে। আল্লাহ হলেন রিজিকদাতা। তিনি সব সৃষ্টির রিজিক বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন। বান্দা পরিশ্রম করে তা অন্বেষণ করবে। এটিই আল্লাহর বিধান। আল্লাহ বলছেন, 'অ মা মিনদাব্বাতিন ফিল আরদ্বি ইল্লা আলাল্লাহি রিযকুহা'- অর্থাৎ পৃথিবীতে অবস্থিত প্রত্যেক প্রাণীর রিজিকের জিম্মাদার আল্লাহ। (সুরা হুদ : ০৬)।
৪. হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সব নবীই ছিলেন একেকজন শ্রমিক। কর্মবিমুখ, শ্রমবিমুখ হয়ে কোনো নবী-রাসুল আরাম-আয়েশের জিন্দেগি যাপন করেননি। প্রিয় নবী (সা.)ও মজুরির বিনিময়ে অন্যের ক্ষেতে পানি সেচ ও কূপ থেকে পানি তোলার কাজ করেছেন। সাহাবি হজরত সালমান ফারসি (রা.)-কে দাসত্ব থেকে মুক্ত করার জন্য বিনিময় হিসেবে স্বীয় হস্তে বৃক্ষরোপণ করেছেন। হজরত আলী (রা.) খলিফা হওয়ার আগে বাইতুল মাল থেকে একটি কানাকড়িও গ্রহণ করতেন না। ইহুদির বাগানে শ্রমিকের কাজ করে উপার্জিত অর্থে স্বীয় পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতেন। সুতরাং শ্রম এক অতি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কাজ, যা নবী-রাসুল এবং বিশ্বের বরেণ্য ব্যক্তিরা পছন্দ করেছেন। নবীজি (সা.) কখনো কায়িক পরিশ্রম করতে দ্বিধাবোধ করতেন না। ঘর-সংসারের কাজেও তিনি স্ত্রীদের সাহায্য করতেন। কর্মবিমুখ ও বিলাসী জীবনযাপন ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। কোনো মুসলমান বিলাসবহুল জীবনযাপনের অধিকার রাখে না, বরং প্রিয় নবী (সা.)-এর পবিত্র বিবিদের বেলায়ও বিলাসী জীবনযাপন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে হারাম ঘোষণা করেছেন। (সুরা আহজাব : ২৮)। রসূল স. ভীক্ষাবৃত্তি ও অলসতাকে প্রচ- মাত্রায় ঘৃণা করতেন। কোদাল চালাতে চালাতে একজন সাহাবীর হাতে কালো দাগ পড়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর হাত দেখে বললেন, "তোমার হাতের মধ্যে কি কিছু লিখে রেখেছ ? সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) এগুলো কালো দাগ ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি আমার পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের জন্য পাথুরে জমিতে কোদাল চালাতে গিয়ে হাতে এ কালো দাগগুলো পড়েছে। নবীজী (সা.) এ কথা শুনে ওই সাহাবীর হাতের মধ্যে আলতো করে গভীর মমতা ও মর্যাদার সাথে চুমু খেলেন। এভাবে অসংখ্য কর্ম ও ঘটনার মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।
৫. কিছু পেশা ও শিল্পকে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। যেমনঃ নৃত্য, অনৈতিক অভিনয় এবং এজাতীয় নির্লজ্জ কাজ। মূর্তি তৈরী ও এজাতীয় শিল্প। নেশাজাত দ্রব্য ও পানীয় তৈরী, বাজারজাতকরণ ও উৎপাদন। নাইট ক্লাব, নাচের আসর, পাব বা মদের হাউজ, জুয়ার আসর বা ক্যাসিনো এ জাতীয় ক্ষেত্রে চাকুরী নেয়া। সুদের কারবারী বা মধ্যস্থতা করা। গ্যাম্বলিং, সুদ-ঘুষ, লটারী এবং অপরাপর সমাজের ক্ষতিকর কাজের চর্চায় শামিল না হওয়া।
ইসলামে শ্রমিকঃ
ইসলামের সুফল পেতে হলে সামগ্রীক ভাবে ইসলামকে অনুসরণ করতে হবে। অবস্থার পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ বলেন নিশ্চয় আল্লাহ কোন কওমের অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।নিশ্চয় আল্লাহ কোন কওমের অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। (আল কোরআন ১৩:১১)
১. ইসলাম একজন গোলাম ও মুনিবের সমান মানবিক মর্যাদা প্রদান করেছে। প্রিয় নবী (সা.)-এর ঘোষণা মোতাবেক মানুষে মানুষে অধিকারের ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য নেই। শুধু যার যার কর্মক্ষেত্রে, ব্যক্তিত্বের বিকাশের ক্ষেত্রে তারা ভিন্ন মাত্র। সুতরাং ইসলামি অর্থনীতির ব্যবস্থায় একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মর্যাদা বা অধিকার একজন মালিকের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।
২. স্পষ্ট ও যথার্থ চুক্তি শ্রমিকের একটি অধিকার। আর তা অবশ্যই ন্যয্য ও আইন সম্মত হতে হবে। শ্রমিকগন শিক্ষিত হোক অশিক্ষিত হোক তাদেও অধিকার, দায়িত্ব-কর্তব্য, সুযোগ-সুবিধা, বতেন-ভাতা, ছুটি ও চাকুরীর শর্ত সমূহ জানতে হবে। আল্লাহ বলেন: মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ন কর।(মায়িদা:১) রসূল স. বলেন মুসলমানদের অবশ্যই চুক্তি মেনে চলতে হবে যদি না তা হালালকে হারাম করে বা হারামকে হালাল করে। (তিরমিযি) একইভাবে শ্রমিকের সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন - "মহান আল্লাহ বলেন, ক্বিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির প্রতিপক্ষ হব। যে আমার নামে কোন চুক্তি করে তা বাতিল করেছে। যে ব্যক্তি কোন স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করেছে এবং যে শ্রমিকের দ্বারা পুরোপুরি কাজ আদায় করে নিয়েছে, কিন্তু তার পারিশ্রমিক প্রদান করেনি। রাসূল (সা.) বলেছেন, "তোমাদের অধীন ব্যক্তিরা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তায়ালা যে ভাইকে তোমার অধীন করে দিয়েছেন তাকে তা-ই খেতে দাও, যা তুমি নিজে খাও, তাকে তা-ই পরিধান করতে দাও, যা তুমি নিজে পরিধান কর।" (বুখারী, আবু হুরায়রা রাঃ) হযরত আবুবকর (রাঃ) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, "ক্ষমতার বলে অধীন চাকর-চাকরানী বা দাস-দাসীর প্রতি মন্দ আচরণকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।" (ইবনে মাজাহ) তিনি আরো বলেন, "কেউ তার অধীন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে এক দোররা মারলেও কেয়ামতের দিন তার থেকে এর বদলা নেয়া হবে।"
৩. ইসলামের দৃষ্টিতে কাজ শেষ করামাত্রই শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক প্রদান করা মালিকের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব, তবে অগ্র্রিম বা অন্য কোনো রকম শর্ত থাকলে তা ভিন্ন কথা। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘শ্রমিকের কাজ বা কাজের মেয়াদ শেষ হলেই তার মজুরি পুরোপুরি দিতে হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ) মাসের পর মাস চলে যায় শ্রমিকরা বেতন পায় না। বেতনের দাবিতে শ্রমিককে মালিকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হয়। শ্রমিকের বেতন-ভাতার ব্যাপারে বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, "শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তাদের প্রাপ্য মজুরি পরিশোধ কর।" শ্রমজীবী মানুষ বা কোনো শ্রমিক অবসর নেয়ার পর তার বাকি জীবন চলার জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা বা পেনশনের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। এ ব্যাপারেও ইসলাম নীরব নয়। হযরত ওমর (রাঃ) বলেছেন, "যৌবনকালে যে ব্যক্তি শ্রম দিয়ে রাষ্ট্র ও জনগণের খেদমত করেছেন বৃদ্ধকালে সরকার তার হাতে ভিক্ষার ঝুলি তুলে দিতে পারে না।
৪. ইসলাম শ্রমিকদের অধীকারের প্রতি সম্মান প্রর্দশন করে। হযরত শোয়াইব আ. এর ঘটনা আল্লাহ বলেন: পিতা মূসাকে বললেন, আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহে দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার চাকুরী করবে, যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর, তা তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ চাহেন তো তুমি আমাকে সৎকর্মপরায়ণ পাবে। [সুরা কাসাস: ২৭) শ্রমিককে কষ্ট দেয়া জাহেলিয়াতের যুগের মানসিকতা মনে করে। এ ব্যাপারে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, "তোমাদের কেউ যেন আমার দাস, আমার দাসী, না বলে। কেননা আমরা সবাই আল্লাহর দাস-দাসী।" ওমর ইবনে হুরাইস (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী করিম (সা.) বলেছেন, "তোমরা তোমাদের কর্মচারীদের থেকে যতটা হালকা কাজ নিবে তোমাদের আমলনামায় ততটা পুরস্কার ও নেকী লেখা হবে। শ্রমিকদের শ্রমের বিনিময়ে তিল তিল করে গড়ে উঠে শিল্প প্রতিষ্ঠান। একটি শিল্পের মালিক শ্রমিকদের শ্রম শোষণ করে অল্প সময়েই পাহাড় পরিমাণ অর্থ-বিত্তের মালিক হয়। শ্রমিকদের কম মজুরি দিয়ে, তাদের ঠকিয়ে গড়ে তোলে একাধিক শিল্প-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কারখানায় তাদের কোনো অংশিদারিত্ব থাকে না। এ ব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেছেন, "মজুরকে তার কাজ হতে অংশ দান কর, কারণ আল্লাহর মজুরকে বঞ্চিত করা যায় না।" (মুসনাদে আহমাদ)। শ্রমিকরা পরিবেশ বান্ধব বন্ধু। তাদেরকে সুস্থ্য পরিবেশে রাখতে হবে। পরিবেশের কারনে তারা স্বাস্থ্য থাকবে। তারা সুস্থ্য থাকলে কাজের পরিবেশ ফিরে আসবে। শ্রমিকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার ব্যাপারে ইবনে হামজা (রা) বলেন, ‘মালিকের জন্য উচিত শ্রমিকের দ্বারা এমন কাজ না করানো, যার দ্বারা তার স্বাস্থ্যহানি ঘটে এবং তার লোকসান হয়’। মালিক এবং শ্রমিকের সর্ম্পক হবে পিতা পুত্রের মত। কাজ করার ক্ষেত্রে শ্রমিকের উচিৎ হবে কাজে ফাকি না দেয়া। মালিকের লাভ হলে শ্রমিক সে লাভের অংশ পাবে। তাছাড়া ইমাম আযম বলেন, ‘যাকে নিদিষ্ট সময়ের জন্য শ্রমিক হিসাবে রাখা হয়েছে, তার হাতে যদি কোন কিছু তি বা নস্ট হযে যায, তাতে তি পুরনের দায়ীত্ব শ্রমিকের উপর বর্তায় না। হ্যা যদি তি করার ইচ্ছা নিয়ে তা করে তবে অন্য কথা। আর এই ব্যাপারে কোন সাী না থাকলে কসমসহ শ্রমিকের কথাই গ্রহন যোগ্য হবে”
৫. "তোমরা আল্লাহর বন্দেগী বা দাসত্ব কর৷ কোন কিছুকে তার শরীক করবে না৷ বাবা-মা আত্মীয়স্বজন এতিম বা দরিদ্র নিকট ও দূরের প্রতিবেশী সঙ্গী সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভূক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে ৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক ও অহংকারীকে ভালোবাসেন না৷" যারা কৃপণতা করে ও মানুষকে কৃপণতার শিক্ষা দেয় এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দান করেছেন তা গোপন করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন না৷ তিনি সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। (আন নিসা ৩৬-৩৭) যার যা প্রাপ্য কম দেয়া যাবেনা বা ঠকানোর সুযোগ নেই। “আমি মাদইয়া নের প্রতি তাদের ভাই শোয়ায়েবকে প্রেরণ করেছি। সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রমাণ এসে গেছে। অতএব তোমরা মাপ ও ওজন পূর্ন কর এবং মানুষকে তাদের দ্রব্যদি কম দিয়ো না এবং ভুপৃষ্টের সংস্কার সাধন করার পর তাতে অনর্থ সৃষ্টি করো না। এই হল তোমাদের জন্যে কল্যাণকর, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও। [সুরা আরাফ: ৮৫]
ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রমিকের আরো অনেক দায়ীত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। যেমন-বৃদ্ধ, পঙ্গু, অসুস্থ্য, এতিম, বিধবাসহ অসহায়দের যাবতীয় ভরনপোষনের ভারসহ যাবতীয় দেখা শোনার দায়ীত্ব গ্রহন করবে।