somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরু পার্ট-৫ (উপন্যাস)

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ প্রায় তিন দিন আফজাল সাহেবের কোন খোঁজ নেই। মোবাইল বন্ধ। জাহানারা বেগম স্বামীর খোঁজে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সম্ভাব্যসব জায়গায় ফোন করেছেন। একদিন আগের কথা অনেকেই বলেছেন এবং তিনি নাকি অফিসেও গিয়েছিলেন। গতকাল থেকে তাকে আর কেউ দেখিনি। মানহা তার মাকে সান্তনা দিয়ে বলল- দেখ মা, বাবা আজীবন একজন সৎ অফিসার। তার কোন ক্ষতি হতে পারে না। দেখবা ঠিকই বাবা বিপদ কাটিয়ে উঠবেন। সে মুহূর্তে জাহানারা বেগমের মোবাইলে রিং আসল। রিং করেছেন তার ছোট ভাই শুভ। শুভকে সবাই তথ্য ভাণ্ডার হিসেবে জানে। যার যা জানা দরকার তাকেই ফোন করে। খোঁজ-খবরের ক্ষেত্রেও তাই। ছোট ভাইকে জাহানারা বেগম গতকাল বলেছিলেন। ফোন রিসিভ করতেই শুভ বলল-
- বুবু দুলাভাইর খোঁজ পেয়েছি।
- আমি জানতাম তুই খোঁজ বের করবিই।
- গতকাল সারাদিন তিনি কোথায় কী করেছেন বলছি।
- গতকালের কেন, আজকের খবর নেই?
- আগে গতকালের খবর শুন
- আমার ধৈর্যে কুলাচ্ছে না, আচ্ছা বল।
- গতকাল সকালে তিনি নাস্তা করেছেন সদরঘাট, দশটার সময় অফিসে গিয়েছেন তবে তথ্যটি নির্ভরযোগ্য নয়। কারণ পিয়ন কালু মিয়া বলেছে, তিনি পাঁচ মিনিটের জন্য অফিসে গিয়েছেন, আবার সিনিয়র অফিসার রব সাহেব বলেছেন তিনি অফিসে যাননি। এগরোটার দিকে তাকে এয়ারপোর্ট দেখা গেছে। বারটার দিকে চট্টগ্রামের সল্টগোলায় এটিএম বুথ ব্যবহার করেছেন। একটার দিকে দেওয়ানহাট ফ্লাইওভারে হাঁটতে দেখা গেছে। দুপুরে ভাত খেয়েছেন নিউমার্কেটের হোটেল জামাল এ, সঙ্গে অপরিচিতি দু’জন লোক ছিল। সন্ধ্যায় নাস্তা করেছেন উত্তরার একুশে হোটেলে। রাতের আর কোন খবর নেই।
- এত বকবক না করে আজকের খবর বল।
- আজকের খবর হল তিনি সকাল দশটায় পুলিশী পাহারায় অফিসে গেছেন। এগারোটায় বেরিয়ে গেছেন, সম্ভবত দুদক কার্যালয়ে । এখনও সেখানে আছেন।
- তুই ফোন রাখ, আমি এখনি যাচ্ছি। ফোনের লাইন কাটতেই জাহানারা বেগমের মোবাইল বেজে উঠল। স্ক্রীনে চোখ পড়তে চোখ বড় বড় হয়ে গেল। মানহা বলল- কী হয়েছে মা?
- তোর বাবার ফোন।
তিনি ফোন রিসিভ করলেন- হ্যালো, তোমার কী হয়েছে, তুমি কোথায়?
- আমার কিছু হয় নি। আমি বাসায় আসছি। আমার জিনিসপত্র, সহায়-সম্পত্তি, কাগজপত্র যা তোমার জানা আছে সব কিছুর একটি তালিকা তৈরি করে রাখ। উকিল সগীরের কাছে ইনকাম ট্যাক্সের ফাইল আছে। তা এখনি এনে রাখ।
- তোমার কিছু হয়েছে? এমন মুখস্থ পড়ার মত কথা বলছ কেন?
লাইন কেটে গেল। বার বার রিং করে মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেল। ইতোমধ্যে গাড়ির ড্রাইভার এলো, জিজ্ঞেস করল
- ম্যাডাম, গাড়ি কোথায়?
- আছে অন্য জায়গায়।
তুমি উকিল সগীরের চেম্বারে যাও। তোমার স্যারের ট্যাক্স ফাইলটা নিয়ে আস। জাহানারা বেগম কাগজপত্র ঘুচাতে লাগলেন। ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করছেন নিরুর খোঁজে । তিনি স্বামীকে চিনেন। এমনিতে ভাল মানুষ। খুব কমই রাগ করেন। কিন্তু রেগে গেলে হুঁশ থাকে না। কেউ নিরুর খোঁজ দিতে পারল না। গাড়ির চিন্তা করতে করতে স্বামীর নির্দেশমত তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। দুপুরের খাবার খেয়ে শুয়েছিলেন। একটু তন্দ্রামত এসেছে মাত্র। ডোরবেল বেজে উঠায় দরজায় গিয়ে লুকিং হোলে চোখ রাখলেন। দেখলেন দরজায় তার স্বামী দাঁড়িয়ে আছে দু’পাশে দু’জন ভদ্রলোক। পিছনে পাঁচজন পুলিশ। নিজেকে কোনমতে সামলিয়ে দরজা খুলে দিলেন। আফজাল সাহেবের ডান পাশের লোকটি বলল, ম্যাডাম আপনি বসুন। আমরা জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেবেন। তাছাড়া কোন কথা বলবেন না। ভেতরেও যেতে পারবেন না। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আমাদের কেউ আপনার সাথে যাবে। স্যারের কথা বলার অনুমতি নেই। আমাদের কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত শুধু প্রয়োজন হলে তিনি কথা বলবেন। সবাই গিয়ে সোফায় বসল। পুলিশ সদস্যগণ বাইরে থাকল। জাহানারা বেগমের দু’চোখে পানি ঝরছে, মুখে কোন কথা নেই।
পূর্বের দুদক কর্মকর্তা আবার বললেন, আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রায় শেষ। শুধু একটি বিষয় মেলানো যাচ্ছে না। আমাদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আফজাল সাহেবের একটি প্রাইভেট কার আছে। কিন্তু তা আয়কর রিটার্নে দেখানো আছে কিনা আমরা নিশ্চিত হতে চাই। ডোরবেল বেজে উঠলে জাহানারা বেগম দরজা খুললেন। ড্রাইভার ট্রাক্স ফাইলটি নিয়ে এসেছে। আস্তে করে তাকে বললেন
- তুমি চলে যাও। আস্তে করে তাকে বললেন বাসায় আসবে না। জাহানারা বেগম ফাইলটি নিয়ে স্বামীর সামনে রাখলেন। দুদক অফিসার ছোঁ মেরে ফাইলটি তুলে নিল। অনেকক্ষণ দেখার পর বললেন- গাড়ির কোন হিসাব ফাইলে নেই। আচ্ছা ম্যাডাম বললেনতো, স্যার বলেছেন তার কোন গাড়ী নেই। বিষয়টি কি সত্য?
- হ্যাঁ সত্য।
- তাহলে নিচে গ্যারেজ কেন?
- গাড়ি থাকুক না থাকুক গ্যারেজ ছাড়া এখন বাড়ি হয় না।
- ঠিক আছে, আমরা একটু গ্যারেজ খুলে দেখতে চাই।
- চলুন।
গ্যারেজ খুলে দেখা গেল ফাঁকা। আফজাল সাহেব একটু আশ্চর্য হলেন। সবাই আবার ড্রয়িংরুমে এলেন। দুদক অফিসার বললেন- স্যার, আপনার বিষয়ে আমাদের ইনভেস্টিগেশন শেষ। আমরা যা করেছি সবই কর্তব্যের খাতিরে। গাড়ির বিষয়টি মেলাতে না পারলে রিপোর্ট আপনার বিপক্ষে যেত। সেক্ষেত্রে আপনাকে এখন অ্যারেস্ট করে কোর্টে প্রেরণ করা হত। এখন রিপোর্ট পজিটিভ হবে। তবে পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনি নিয়মিত অফিস করতে হবে, কোন ছুটি নিতে পারবেন না। আমাদেরকে না জানিয়ে স্টেশন লিভ করতে পারবেন না। আমরা এখন যাই। আপনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য দুঃখিত।
- একটু চা খেয়ে যান।
- আজ নয় স্যার।
- দুদকের লোকজন বেরিয়ে যেতেই জাহানারা বেগম স্বামীকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদা শুরু করল। ভেতর থেকে মানহা এসে বাবাকে ধরে কাঁদতে লাগল। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হয়ে এলে জাহানারা বেগম বললেন
- তুমি আজ কয়দিন এক কাপড়ে। হারাম-জাদারা একটা জামাও দিতে পারেনি?
- দুদক অফিসে জামা কাপড় থাকে নাকি?
- মানে? রাতে ঘুমিয়েছ কোথায়?
- ঘুমানোর সুযোগ পাইনি। প্রথম রাত তো এদিক ওদিক দৌড়ে, তদবির করেই শেষ করেছি। পরের ২ রাত দুদক অফিসের বেঞ্চে বসে বসে যতটুকু পারা যায় ঘুমানোর চেষ্টা করেছি।
- আমি পানি গরম দিয়েছি। গোসল করে খেয়ে আর কোন কথা নেই ঘুম।
- আচ্ছা তুমি মিথ্যে বললে কেন গাড়ির কথা?
- তোমাকে বাঁচানোর জন্য।
- না মিথ্যে নয়, গাড়িতো আমি কিনেছি তোমার নামে। কিন্তু যেহেতু তোমার কোন টি আই এন নেই তাই আমার ফাইলে গাড়িটা দেখানো উচিত ছিল। এ কারণে আমি ফেঁসে যেতাম। শুধুমাত্র গ্যারেজে গাড়িটি পাওয়া যায় নি সেজন্যই রক্ষা। মোবাইলে গাড়িটি সরিয়ে রাখার কথা বলার চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু ওদের সামনে বলতে পারিনি। ওদের শেখানো ও নিদের্শমত আমি সবকিছু কাছে রাখতে বলেছিলাম। তারপরও গাড়ি সরালে কেন?
- আরে আমি তো এসব জানিÑবুঝি না। নিরু এসে সরিয়ে নিল।
- ছেলেটা এতদিন একটি কাজের কাজ করেছে। আচ্ছা তাকে ফোন কর। আমি কথা বলব।
- সে মোবাইল ব্যবহার করে না।
- যেভাবে হোক তার সাথে যোগাযোগ হওয়া দরকার।
- আচ্ছা আমি দেখছি, তুমি গোসল সেরে এস।
জাহানারা বেগম আবার আগে যাদের কাছে ফোন করেছিলেন তাদেরকে ফোন করলেন। কিন্তু কেউ খবর দিতে পারল না। শেষে ছোট ভাই শুভর কথা মনে পড়ল। বাধ্য না হলে তিনি শুভকে ফোন করেন না। কারণ সে সাথে সাথেই বলবে- আমি না থাকলে তোমাদের কী যে হত? তবে আজকে তেমন কিছু বলল না। শুধু বলল- চিন্তা করো না বুবু। ভোগাবন্ড নিরুর কথা বলছো তো? সমস্যা নেই। দশ মিনিট নিশ্চিন্তে হাওয়া খাও। আমি জানাচ্ছি। সাড়ে নয় মিনিট পর শুভ ফোন করল।
- বুবু পাওয়া গেছে। জামাল সাহেব হতে শফিক সাহেব ভায়া রফিক সাহেব হয়ে জামাই জাহান্ধার। তোমার নিরু এখন জাহান্ধারের পাশেই আছে। মোবাইল নাম্বার লিখ।
জাহানারা বেগম নাম্বার প্রেষ করতে যা দেরি, সাথে সাথেই ডায়াল করলেন। জাহান্ধার ফোন রিসিভ করল
- আস্সালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুমুসসালাম , নিরুকে দাও।
- আপনি কে বলেছেন, আমাকে তুমি বলেছেন কেন?
- আচ্ছা সরি! আমি নিরুর খালা, বড় খালা, তাকে একটু দিন প্লিস
- কথা বলুন
- খালা কী খবর?
- ভাল, গাড়িটা নিয়ে তুই আমাদের খুবই উপকার করেছিস।
- খালু কি বেশি গালাগাল করছে?
- না, না তোকে ধন্যবাদ দিচ্ছে।
- আচ্ছা ইয়ার্কি করো না। খালুকে দাও। আমি বুঝিয়ে বললে মাথা ঠাণ্ডা হবে।
- মাথা ঠাণ্ডাই আছে। একটু আগে পর্যন্ত অচল ছিল তবে গরম ছিল না।
- খালু ঠিক কী বলেছে বলতো।
আফজাল সাহেব বাথরুম থেকে বের হয়ে এলেন। বললেন নিরু নাকি? দাও দাও আমি কথা বলব।
- নিরু
খালুর কণ্ঠ শুনেই নিরু লাইন কেটে দিল। বার বার রিং করে মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেল। জাহানারা বেগম আবার শুভর দ্বারস্থ হলেন। জানতে পারলেন নিরু এখন গাউছিয়া আছে। কোন কথা বলেই স্বামীকে থামাতে পারলেন না জাহানারা বেগম। শেষে নিজেও স্বামীর সাথে গাউছিয়া মার্কেটে গেলেন। গাউছিয়া এসে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও নিরুকে পাওয়া গেল না। অবশেষে আফজাল সাহেব বললেন, চল গাড়ি খুঁজি। প্রায় এক ঘন্টা ঘুরে পার্কিং অবস্থায় গাড়ি পাওয়া গেল। গাড়ির বিকল্প চাবিটি জাহানারার বেগম সাথে এনেছিলেন। লক খুলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এসি ছেড়ে দিলেন। ভেতরে দুই জন বসে গল্প করা শুরু করলেন। একটু পর নিরু এল জাহান্ধারকে সাথে নিয়ে। যথারীতি গাড়ির লক খুলে দরজার টান দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসল। জাহান্ধারকে বলল মাল পিছনে রাখুন। পিছনে তাকাতে গিয়ে খালা-খালুকে দেখে ভয়ানক চমকে উঠল। আফজাল সাহেব হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেলেন। বললেন, তুমি খুবই হিসেবী ভাল মানুষ।
- জ্বি?
- মানে তোমার ভাল কাজগুলো সঠিক সময়ে হয়ে থাকে। আগামী এক সপ্তাহ তুমি গাড়িটি ব্যবহার করবে। দরকার হলে আরো বেশি। এই নাও দশ হাজার টাকা, গাড়ীর জ্বালানি খরচ।
- নিরুকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে স্বামী-স্ত্রী দু’জন নেমে চলে গেলেন। জাহান্ধারকে নিয়ে নিরু নারায়ণগঞ্জের পথে চলল। তারা গাড়ি নিয়ে ঢাকার যানজট পেরিয়ে যখন সুনয়নাদের বাড়ির উঠোনে পৌঁছল তখন রাত প্রায় নয়টা। চারদিকে সুনসান নিরবতা। গাড়ি থেকে নেমে দেখা গেল সুনয়নাদের ঘরের একটি কোনা নেই। কেউ যেন কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলেছে। আশেপাশে বেশ কয়েকটি গাছ এবড়ো থেবড়ো হয়ে পড়ে আছে। টিউবওয়েলের মাথা উঠে আছে প্রায় দশ হাত উপরে। গাড়ির আওয়াজ শুনে ঘর হতে প্রায় সবাই বের হয়ে এল। রফিক সাহেব জানালেন সন্ধ্যায় এখানে খুব অল্প জায়গা অর্থাৎ সাত-আট হাত ব্যাস নিয়ে একটি টর্নেডো হয়েছিল। ব্যাপক গাছপালার ক্ষতি হয়েছে। এলাকার বিশ-পঁচিশটি ঘর সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। পুকুরের উপর দিয়ে ঘূর্ণি যাওয়ার সময় অর্ধেক পানি ডাঙ্গায় উঠে গেছে। সাথে মাছ-সাপ অনেক কিছু। বড় প্রাচীন বটবৃক্ষটিও প্রায় উপড়ে গেছে। নিরুর বুকটা চ্যাঁৎ করে উঠল। নিরু গাছের দিকে এগিয়ে গেল। সাথে রফিক সাহেব এবং জাহান্ধারও গেল। নিরুর মাথাটা মনে হয় চক্কর দিয়ে উঠল। গাছটি বলা যায় একটি বিশাল পুকুর তৈরী করে প্রায় উপড়ে গেছে। যে কোনো মুহূর্তে পুরোপুরি পড়ে যাবে। নিরুর মাথায় হালকা অনুরণন হচ্ছিল। মনে হচ্ছে গাছটি কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা। নিরু রফিক সাহেবদের চলে যেতে বলল- সে একা থাকতে চায়। তারা চলে গেল। দুর্বল ও কাতর কিন্তু পরিষ্কার কণ্ঠে গাছের আওয়াজ নিরু অনুভব করল।
- বৎস! তুমি এসেছ? তোমার আগমনের অপেক্ষায় অনেক কষ্টে নিজেকে ধরে রেখেছি। বেশিক্ষণ পারা যাবে না।
- হায় হায়! আমি এখন কী করব? আমি কী করতে পারি? আমি কিছু করলে উপকার হবে?
- না, তোমার কিছুই করার নেই। এটাই পৃথিবীর নিয়ম। আমি জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি তোমাকে বলেছিলাম সব বলব। সংক্ষেপে যা পারি বলছি। তোমার মা তুমি পেটে থাকাকালীন তোমার নানা বাড়ি যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ভীষণ ব্যথায় আর যেতে পারছিল না। এ বাড়ীটি তার আত্মীয়ের বাড়ি হিসেবে চেনা-জানা ছিল। পেছনের রাস্তায় রিক্সা হতে নেমে অল্প কোনাকুনি পথ দিয়ে এ বাড়িতে প্রায় পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু আমার পায়ের কাছে এসে পড়ে যায়। তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। রাতের বেলা আর কেউ এদিকে আসেও না। তোমার মা বেহুঁশ অবস্থায় তোমার জন্ম হয়। তোমার নাড়ীর বন্ধন আমার শরীরে আটকে যায়। আমি রস ছেড়ে তোমার নাভী কেটে দিই, কিন্তু আমার সাথে তা আটকে থাকে। এ বাড়িতে তেমন কোন পুরুষ মানুষ থাকে না। পরদিন বিকাল পর্যন্ত নাভী দিয়ে আমি তোমাকে খাবার দিই এবং আমার প্রকৃতির তুমি কিছুটা পেয়ে যাও। তোমার সাথে আমার নাড়ির বন্ধন প্রতিষ্ঠিত হয়। তোমার মা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দুর্বল হয়ে যায়। হাসপাতালে নেয়ার পথে মরা যায়। পাঁচশ’ বছরের অধিক বয়স যেসব গাছের তাদের মধ্যে দূরত্ব কোন বিষয় নয়, ভাবের আদান প্রদান সহজ। আমার চেয়ে অধিক বয়সের দু’টি গাছ আছে। একটি আমাজনে নাম মাদেরা আরেকটি সিরিয়ায় নাম হাউট তুমি আমার কাছে তোমার মায়ের পক্ষ হতে প্রাকৃতিকভাবে অর্পিত হয়েছ। তোমার প্রয়োজনের মুহূর্তে তোমার স্নায়ুতে আমি তথ্য পাঠিয়ে দিতাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমি অনস্তিত্বে চলে যাব। বান্দরবানে জোং নামে আটশ’ বছর বয়সের একটি গাছ আছে।
তাজিংডং পাহাড়ের একটু আগে। তার সাথে আমি সব শেয়ার করেছি। আমাজন বা সিরিয়ায় যাওয়া তোমার জন্য কঠিন। সেজন্য বান্দরবান যাবে সুযোগ করে। জোং এর সাথে কথা বলে এসো। সে তোমাকে মনে রাখবে। আমার কাজটি সে করবে। কখনো আমাজন বা সিরিয়ায় গেলে মাদেরা এবং হাউট এর সাথেও দেখা করবে। তারাও তোমাকে একইভাবে গ্রহণ করবে। বিদায়। নিরু কিছুই বলার সুযোগ পেল না। গাছটি বিকট শব্দ করে মাটিতে পড়ে গেল। নিরু হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। কাঁদতে কাঁদতে গাছের পাশেই ঘুমিয়ে পড়ল।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×