-আপু, তুই আসলে, আসলে একটা ই, মানে চরম বিরক্তিকর।
হেডফোন টা কান থেকে খুলতে খুলতে আদৃতা জবাব দিলো
:কিছু বলছিস?
-কি যেনো বলে? ও, বয়রা হয়ে গেছিস নাকি? বলছি তুই একটা উচ্চমাত্রার বিরক্তিকর বস্তু।
:বয়রা হব কেন? বিরক্তিকর মানে? তোর সমস্যা কি?
-এই যে সারাক্ষন কানের ভিতর হেডফোন লাগিয়ে রাখিস, একটা সময়ের জন্য তো কান থেকে ওই বস্তু তোর সরে না।
:তাতে তোর কি? যা পড়তে বস
-তোর দেখিস কানের ডাক্তারের সাথে বিয়ে হবে। যে সবসময় তোর কানের চিকিৎসা করবে।
:জ্বী না। আমার বিয়ে হবে একটা গায়কের সাথে, যে শুধু আমার জন্য গান গাইবে।
-হুম, হেডফোন আর মোবাইল টাকেই বিয়ে করে ফেল, সারাদিন তোর কানের কাছে প্যাঁ প্যাঁ করবে।
:বেশি প্যাঁচাল পাড়িস না, যা ভাগ।
-যাচ্ছি যাচ্ছি >_< আজ গ্রাম থেকে সেই ছেলেটা আসছে।
:কোনটা?
-সজল
:ভেজাল ! আব্বুর ওই গাইয়্যা ক্ষ্যাত টা!?
তিশা আর আদৃতার কাছে ঢাকার বাইরে মানেই গ্রাম, আর সেখান কার মানুষেরা গ্রাম্য ক্ষ্যাত। গ্রামের ক্ষ্যাত রা মূর্খ হয়। সুগন্ধ-দুর্গন্ধের মাঝে পার্থক্য বোঝেনা।
-আচ্ছা আপু, সজল ভাইয়া কে দেখে তো আমার গ্রামের ক্ষ্যাত মনে হয় না, ভালই তো স্মার্ট লাগে। তুই তার নাম শুনলে এমন করিস ক্যান?
:হ বলেছে তোকে? তোর ভালো লাগলে তুই ওই ভেজালের সাথে প্রেম কর। আমার কানের কাছে ঘ্যনর ঘ্যনর করিস না।
-আপু, আমার বয়ফ্রেন্ড আছে, আমি কেনো আরেকজনের সাথে প্রেম করব? তোমার বয়ফ্রেন্ড নাই তাই তুমি কর।
:আমার বয়ফ্রেন্ড নাই তো কি হয়েছে? আমার পিছনে কত ছেলে ঘোরে জানিস? আমিই তাদের পাত্তা দেই না।
-পাত্তা দাও না নাকি চান্স পাও না তা আমি কিভাবে বলব?
:তোর পাকনামি বন্ধ করলি? এইটুকু মেয়ের বয়ফ্রেন্ড আছে সেটা আবার আমাকে বলছে, আম্মুকে সব বলে দেবো
-আপু আমি এইটুকু না, এক বছর পর আমার আঠারো হবে, আর তুইও আমার চেয়ে মাত্র তিন বছরের বড়।
:ওকে, মেনে নিলাম আপনি বড়, আমার চেয়েও বড়। এবার ওই ভেজাল টা আসলে আপনি তাকে সামলিয়েন একটু
-আমার স্কুল আছে, কোচিং আছে, তোকেই সামলানো লাগবে রে। আর সম্মান দেয়ার জন্য তোকে থ্যাঙ্কস
ভেজাল টা আদৃতার ঘাড়েই চাপছে। আদৃতার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। রাগ হলে আদৃতা ঘরের ভিতর পায়চারি করে। ভেজাল টা আসলেই তার মাথায় এক বালতি জল ঢেলে দিতে হবে।
-দেখতো আদৃ কে এলো? দরজা টা খুলে দিয়ে আয়।
আদৃতার আম্মুর গলা শুনেই আদৃতা বুঝে গেলো ভেজাল টা চলে এসেছে। এবার ওকে আচ্ছামত টাইট দিতে হবে। দরজা খুলেই অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ভেজাল টার দিকে।
-আ_আমি সজল, আন্টি আংকেল কেউ বাসায় নেই।
গলা খাকারী দিয়ে কথা গুলো বলল সজল
:আসুন >_<
সজল কে একটা ঘর দেখিয়ে দিয়ে রান্নাঘরে গেলো আদৃতা।
-আম্মু, ক্ষ্যাত টা কতদিন থাকবে?
:কিসের ক্ষ্যাত?
-ওই যে সজল না ভেজাল কি যেনো নাম
:কি আবোল তাবোল বলছিস? ছেলেটা ভালো স্টুডেন্ট, দেখতেও ভালো, আর তুই ওকে ক্ষ্যাত বলছিস??
-তুমি তো ওর চুলের অবস্থা দেখোনি আম্মু। দেখলে বুঝতে ক্ষ্যাত না পাখির বাসা
:তোর ওতো চুল নিয়ে ভাবা লাগবে না , ওকে গিয়ে বল কিছু লাগবে নাকি, যা লাগে দিস
-আপনার কিছু লাগবে?
:না লাগবে না। (কিছুটা নড়েচড়ে সজল কথাটা বলল)
আদৃতা চলে যেতে গিয়ে আবার ঘুরে তাকিয়ে বলল
-আপনার চুল গুলোর ওই অবস্থা কেনো?
:কি অবস্থা?
-এই যে পাখির বাসার মত।
:ও, বাসের জানালার পাশে বসে ছিলাম তো তাই বাতাসে এলোমেলো হয়ে গেছে
-বিদ্ঘুটে পাখির বাসা
:আচ্ছা এই মেয়ে শুনুন, আমাকে এক গ্লাস পানি দিন প্লিজ
-আমি এই মেয়ে না, আমার নাম আদৃতা, আর একটু আগেই বললেন আপনার কিছু লাগবে না, ওকে দিচ্ছি
:আ...দৃ….তা, ছোট্ট নাম, অনেক সুন্দর। আমি কোনো গল্পের বই টই আনিনি, আমাকে কিছু বই দিয়ে যেতে পারবেন?
-ছোট নাম এতো টেনে বলার কি আছে? আদৃতা ছোট না মাঝারী নাম । যা দরকার একবারে বলুন, বারেবারে বিরক্ত করবেন না।
:আচ্ছা ঠিক আছে, আমি একটু শেভ করব। শেভিং ক্রীম আর স্যভলন আনতে ভুলে গিয়েছি। আংকেলের থাকলে একটু দিয়ে যাবেন প্লিজ
-উফ! ডিসগাস্টিং। ওক্কে
আদৃতা সজল কে ঈশপের গল্পের বই দিয়ে গেছে। ঈশপের গল্প পড়ার ইচ্ছা নেই সজলের।
মুখে খোচা খোচা দাড়ি বিশ্রী লাগছে। শেভ টা করে ফেলতে হবে। শেভ করতে গিয়ে বাধল বিপত্তি। কিছুতেই ফেনা হচ্ছে না। সম্ভবত শেভিং ক্রিম টা ভালোনা।
আদৃতা কে ডাক দিয়ে সজল বলল
:আপনার বাবার শেভিং ক্রিমে ভেজাল আছে , কিছুতেই ফেনা হচ্ছে না।
-মোটেও না। বাবা তো ঠিকই শেভ করেন।
আদৃতা খেয়াল করল স্যাভলনের টিউব খোলা। আদৃতা রাগ চরমে নিয়ে বলল
-ভেজাল আপনার মাঝে। আপনি স্যাভলন ক্রিম লাগিয়ে বলছেন শেভিং ক্রীমে ভেজাল! আসলেই আপনি ভেজাল
সুন্দরী মেয়েদের রাগের অভিব্যাক্তি খারাপ লাগে না। সজলেরও খারাপ লাগছে না। তাই সে হাসি ছাড়া কিছুই দিতে পারছে না। হাসি টা আসলেই ক্ষ্যাত মার্কা ছিল যা আদৃতা কে আরো রাগিয়ে দিল
“ডুবুরি হয়ে ডুব দিয়েছি প্রেমেরই সাগর জলে, চাতুরি জানে ঝিনুকমালা ভুলব না তার ছলে” সন্ধ্যার পর গীটারের বাজনার সাথে সুন্দর একটা গান ভেসে আসছে। গানটা বাসারই কেউ গাইছে। ভালই লাগছে গানটা। গানের উৎসের দিকে এগিয়ে গিয়ে আদৃতা বুঝল গানটা সজল গাইছে। বাহ কন্ঠ টা তো খারাপ না, গীটারও ভালোই বাজায়। কিছুক্ষন দরজায় দাঁড়িয়ে গান শুনতে লাগলো আদৃতা । একি আদৃতা ক্ষ্যাত টার গান শুনছে কেন? নিজেকেই প্রশ্ন করে । দরজা ঠেলে ধমকের সুরে বলে
-গান গাইছেন কেন?
গান থামিয়ে সজল জবাব দিল
:গান গাওয়া তো খারাপ না
-হ্যা খারাপ। তাও আবার প্রেমের গান গাইছেন
এটা বলেই বেরিয়ে যেতে গেলো আদৃতা
“আকাশ কাদে বাতাস কাদে কাদে আমার মন…”
-একি? আবার গান গাইছেন?
:স্যাড, স্যাড গান। আপনি বললেন প্রেমের গান গাওয়া যাবে না তাই স্যাড গান গাচ্ছি
-প্রেম ভালোবাসা ছাড়া আপনার মাথায় কিছু নেই?
:আছে তো,
“আমি ফাইস্যা গেছি, হো আমি ফাইস্যা গেছি, আমি ফাইস্যা গেছি মাইনকা চিপায়”
এবার আর হাসি থামিয়ে রাখতে পারলোনা আদৃতা। হাসতে হাসতেই বলল।
-এটা আবার কি গান ?
:প্রেমের কিংবা স্যাড গান না । কমেডি গান
-থাক থাক আপনাকে আর গাওয়া লাগবে না। অনেক সুন্দর গান গাইতে পারেন আপনি
গ্রামের ক্ষ্যাত টা গীটার বাজাতে পারে ভালোই, সাথে গলাটাও দারুন। স্মার্ট গ্রামের ক্ষ্যাত টা গায়ক হিসেবে ভালই।
“এই মেয়ে ভাবছো কি আনমনে? পড়েছি তোমার প্রেমে, ভালোবাসবে কি আমায়?”
-এমন গান তো আগে শুনিনি
:কিছু কিছু গান নতুন করে তৈরী হয় যার শ্রোতা একজন থাকে সবসময়
কিছু কিছু গানের একমাত্র শ্রোতা হতে পারাটাও ভাগ্যর ব্যাপার…