হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে,হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এই গানটি এত বেশি অন্যরকম যে ঠিক মনের অনুভূতিটা বুঝে ওঠা যায় না। কত বেশি সত্য,কত বেশি সুন্দর এই লাইনগুলো।
এই রবিবাবু আমার উপর,আমার মত হাজারো বাঙ্গালীর উপর যে কত বেশি প্রভাব বিস্তার করেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যতই তার সৃষ্টির সাথে পরিচয় ঘটেছে ততই মুগ্ধ হয়েছি।
কত সুন্দর আর সহজ করেই না তিনি একদম আমদের মনের কথাগুলো বলে গেছেন।যতই ভাবি ততই শ্রদ্ধা বেড়ে যায় তা্র উপর।তত বেশি আবিষ্ট হয়ে যাই তার কবিতা,গান,ছোটগল্প আর উপন্যাসের সাথে।
মনেপড়ে প্রথম কৈশরে তার ‘শেষের কবিতা’ পড়ে পবিত্র প্রেমের স্বাদ কি বুঝতে পেয়েছিলাম। লাবণ্য যেন অমিতের নয়,আমারই কল্পনার প্রেয়সী। কি সুন্দর উপমা ব্যাবহার করেছেন তিনি ভালবাসার আতিশয্যে প্রকাশে , “For God sake!Hold your tongue and let me love!”
আসলে আমাদের মন গড়ার সবচেয়ে বড় কারিগর ছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বাঙ্গালিয়ানা কল্পনা করা যায় না।
রবিবাবুর সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসে। না, এর আগে ছোট্ট বেলায় বিশ্ব কবি কে এর প্রশ্ন-উত্তর জেনেছি। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তার গানের অসচেতন উপস্থাপনে বিরক্ত হয়েছি যারপনাই। ভাল লাগত না তার গান কবিতা তখন। এই দোষ আমার নয়,রবীন্দ্রনাথেরও নয়। দোষ হচ্ছে ঐ টিভিওয়ালাদের যারা তাকে অমন একঘেয়েমি ভাবে উপস্থাপন করেছেন বারবার।
কই,হুমায়ুন আহমেদ তো রবীন্দ্রানাথকে আমাদের কাছে উপস্থাপন করতে পেরেছেন অত্যন্ত সহজ ও আকর্ষণীয় ভাবে।তাহলে বাকিরা কেন পারল না। হুমায়ূন আহমেদ আমার মত আরও কত শত তরূণকে হাত ধরে রবিবাবুর বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন বেড়াতে।এর পর তো রবিবাবু আমাদের প্রাণের আত্নীয়। আর আমরা কৃত্তজ্ঞ প্রিয় হুমায়ূনের কাছে। তুমি ভাল থেকে হুমায়ূন!আমাদের হুমায়ূন!
রবিঠাকুরের গানের কথা আলাদা করে বলতে হয়।তার গান শুনে সত্যি মনে মনে বলি,
“তুমি কেমন করে গান কর হে গুনী!আমি অবাক হয়ে শুনি! ”
তার প্রতিটি গান কত-শতবার শুনেছি। কিন্তু প্রতিবারই কেন তার গানগুলো নতুন মনে হয়? গানগুলো কখনো পুরনো হয় না।ভাললাগা প্রতিবারই বেড়ে যায়। কি যাদুই না আছে তার গানগুলোতে!
এইতো আমার রবীন্দ্রনাথ,আমাদের সবার রবীন্দ্রনাথ।আজ ২২ই শ্রাবণ। এই দিনে তার পার্থিব প্রস্থান ঘটেছে কিন্তু তিনি শত শত বছরের জন্য মানুষের মনের একটা বড় কুঠুরী দখল করে রাখার দাবী রেখে গেছেন।
শ্রদ্ধা জানাই এই মহান গুনী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৩৩